Inqilab Logo

শুক্রবার ০১ নভেম্বর ২০২৪, ১৬ কার্তিক ১৪৩১, ২৮ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

ফের ফুটবলকে ঘিরে স্বপ্ন!

| প্রকাশের সময় : ১১ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

স্পোর্টস রিপোর্টার : দেশের ফুটবলের জনপ্রিয়তা কমতে কমতে শূন্যের কোটায় নেমেছে, সে অনেকদিন আগের কথা। তারপরও জাতীয় দলকে নিয়ে আশার শেষ ছিল না ফুটবলপ্রেমীদের। তারও সলীল সমাধী ঘটেছে গেল অক্টোবরে। এএফসি এশিয়ান কাপ বাছাইয়ের প্লে-অফে মামুনুল বাহিনী ৩-১ গোলে হেরে যেভাবে ভুটানের কাছে নাস্তানাবুদ হয়েছে তা এক কথায় লজ্জাজনক। এরপরও কি দেশের ফুটবলকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা চলে? ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে যে দেশটির অবস্থান ১৮৩তম স্থানে সেই দেশটির ফুটবলকে ঘিরে ফের স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছে এবং তা দেখছেন স্বয়ং বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তার দায়িত্বের গেল দু’মেয়াদে যা পারেননি, তৃতীয় মেয়াদে এসে তিনি তা করে দেখাতে চাইছেন। যদিও এরই মধ্যে সালাউদ্দিনের তৃতীয় মেয়াদের আট মাস পেরিয়ে গেছে। এই সময়ের পর যেন ঘুম ভেঙেছে তার। মহাপ্রলয় থেকে দেশের ফুটবলকে বাঁচানোর জন্য চার বছরের একটি পরিকল্পনা হাতে নিলেন তিনি। যা গতকাল মিডিয়ার সামনে মেলে ধরলেন। যেখানে রয়েছে দেশের ঘরোয়া আসর থেকে আন্তর্জাতিক পরিমÐলে বাংলাদেশের ফুটবলের ইমেজ উদ্ধারের পরিকল্পনা। থাকছে ক্লাবগুলোকে গতিশীল করার প্রস্তাবনা। এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কাজী সালাউদ্দিন বদ্ধপরিকর থাকলেও সন্দিহান ফুটবলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অনেকেই।
গত ১০ অক্টোবর ভুটানের বিপক্ষে হারের পর যেন মহাপ্রলয় ঘটে গেছে বাংলাদেশের ফুটবলের উপর দিয়ে। ধুলিস্যাত হয়ে গেছে সব স্বপ্ন। এর ঠিক দু’মাস পর আবারও স্বপ্ন দেখাচ্ছেন সালাউদ্দিন। দেশের ফুটবল উন্নয়নের স্বপ্ন, জনপ্রিয় এই খেলাটিকে জাগ্রত করার স্বপ্ন। তার মেয়াদের আগামী প্রায় চার বছরের জন্য পরিকল্পনা হাতে নিয়ে তিনি দেশের ফুটবলকে আগের জায়গা ফিরিয়ে আনতে চাইছেন। মনে হচ্ছে লাল-সবুজের ফুটবলকে অন্ধকার গহŸর থেকে টেনে তুলতে এবং নিজ ইমেজ রক্ষা করতে বেশ আটঘাট বেঁধেই নেমেছেন সালাউদ্দিন।
‘এক খেলা, এক লক্ষ্য, এক স্বপ্ন’- আগামী প্রায় চার বছরে এটাই হলো সালাউদ্দিন বা বাফুফে পরিকল্পনার মূল ¯েøাগান। নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী মূলত আটটি ধারায় কাজ করবে দেশের ফুটবলের অভিভাবক সংস্থাটি। এগুলো হলোÑ এলিট খেলোয়াড় উন্নয়ন, প্রশিক্ষকদের শিক্ষা প্রদান ও উন্নয়ন, প্রতিযোগিতা, রেফারি উন্নয়ন, স্বাস্থ্য ও ক্রীড়া বিজ্ঞান, পেশাদার ক্লাব ও লিগ, মহিলা ফুটবল এবং তৃণমূল পর্যায়ের ফুটবল।
আগের দু’মেয়াদে বেশ কিছু টুর্নামেন্টকে পুনর্জাগরণের ঘোষণা দিয়েও তা মাঠে গড়াতে পারেননি সালাউদ্দিন। এবার সেগুলোকে মাঠে ফেরাতে চান তিনি।
সালাউদ্দিন বলেন, ‘এই পরিকল্পনা নিয়ে ৩/৪টি সভা করেছি। যার মধ্যে তিনটিই কার্যনির্বাহী কমিটির সঙ্গে। তারপরও সবাইকে এই সংবাদ সম্মেলনে আসতে বলেছিলাম। কিন্তু দেশের বাইরে থাকায় এবং ব্যক্তিগত কারণে অনেকেই আসতে পারেননি। এই পরিকল্পনায় বাফুফেকে দু’ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এক, প্রশাসনিক। ফুটবলের মূল কাজ বলতে যা বুঝায় যেমন লিগ, টুর্নামেন্ট এবং ক্লাবগুলোকে দেখবে প্রশাসনিক বিভাগ। দুই, ডেভেলপমেন্ট। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক খেলোয়াড় উন্নয়নের দিকটা দেখবে ডেভেলপমেন্ট বিভাগ।’ তিনি আরও বলেন, ‘ক্লাবগুলোকে আর ছাড় দেয়া হবে না দরকষাকষির জন্য। এমনকি তাদের অন্যায় আবদারও আর মানা হবে না। এ ক্ষেত্রে আমি শতভাগ শক্ত থাকব। শুধু তাই নয়, আয়-ব্যয়ের ব্যাপারে আমরা থাকবো শতভাগ স্বচ্ছ। এখন থেকে অডিট রিপোর্টের পুরোটাই আমাদের ওয়েবসাইট এবং ফেসবুক ফ্যান পেজে দিয়ে দেয়া হবে। বাফুফেতে টাকা এসেছে এবং কোথায় যাচ্ছে তা যেন স্বচ্ছ থাকে।’
ডেভেলপমেন্ট কার্যক্রম নিয়ে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘প্রতি বছর জানুয়ারিতে পাঁচ বিভাগে সাতদিন করে প্রতিভা অন্বেষণ কার্যক্রম পরিচালিত হবে। যেখানে কোনো প্রতিভাই বাদ যাবে না। দেশের বড় ২০ ক্লাব যদি ৯০ জন করে খেলোয়াড় নিয়ে তাদের একাডেমিতে রাখতো, তাহলে বছরে আমরা এক হাজার আটশ’ খেলোয়াড় পেতাম। আমরা এবার ছেলে এবং মেয়ে দু’বিভাগেই দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণ ক্যাম্পের আয়োজন করবো। এই ক্যাম্পে থাকবে ছেলেদের অনূর্ধ্ব-১৪, ১৬, ১৮ ও ১৯ দল। এবং মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৪ ও ১৬ দল।’ নতুন ফুটবলার তুলে আনতে তিনি যাই বলুন না কেন, শেরেবাংলা ও সোহরাওয়ার্দী কাপের মতো প্রতিভাবান ফুটবলার বের হওয়ার টুর্নামেন্টের খেলা কিন্তু ক’বছর বন্ধ রয়েছে। তবে এবার তা চালু করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বলে জানান সালাউদ্দিন। যদিও এমন উদ্যোগ আগেও বেশ ক’বার নেয়া হয়েছিল।
সালাউদ্দিনের বক্তব্যের পর বাফুফে সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ তুলে ধরেন ২০১৭ সালের ঘরোয়া আসর ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাফুফের পরিকল্পনার আগাম ফিরিস্তি। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) এবং বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লিগের (বিসিএল) দলবদল এক সঙ্গে এপ্রিল মাসে হবে। মে মাসে মাঠে গড়াবে ফেডারেশন কাপ। এ আসরে ১৬টি দল অংশ নেবে। বিপিএলের ১২টির সঙ্গে বিসিএল, সার্ভিসেস দল এবং বিকেএসপির মধ্য থেকে আরও চার দল নেয়া হবে ফেডারেশন কাপে। লিগ নিয়ে বাফুফের পরিকল্পনা, ‘জুন থেকে অক্টোবর পর্যন্ত চলবে প্রিমিয়ার লিগের খেলা। তবে মধ্যবর্তী দলবদল হবে আগস্টে। সেখানেও বিপিএল-বিসিএল এক সঙ্গে হবে। সেপ্টেম্বর/অক্টোবরে শেষ হবে লিগ। আর নভেম্বরে স্বাধীনতা কাপ দিয়ে মৌসুম শেষ হবে। এ টুর্নামেন্টে শুধু বিপিএলের দলগুলোই খেলবে। এরপর আন্তর্জাতিক ম্যাচের দিকে নজর দেয়া হবে।’
সোহাগ বলেন, ‘বছরের শুরুতেই স্কুল ফুটবল হবে। ফেব্রæয়ারি মাসে মাঠে গড়াবে পাওনিয়ার লিগ। প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় বিভাগ লিগ বছরের বিভিন্ন সময় সূচি অনুযায়ী হবে। জনপ্রিয় সোহরাওয়ার্দী কাপের নতুন নামকরণ করা হয়েছে জাতীয় জেলা অনূর্ধ্ব-১৮ চ্যাম্পিয়নশিপ। নারী টুর্নামেন্ট, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক যেসব টুর্নামেন্ট রয়েছে সেগুলো আমরা আমাদের সূচি অনুযায়ী বছরের বিভিন্ন সময় আয়োজন করব। সোহরাওয়ার্দী কাপ শেষ করে আমরা জেলাগুলোকে পাঁচ মাস সময় দেব এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই এবং আগস্ট। বছরের শুরুতে যে আমরা অনূর্ধ্ব-১৮ লিগ করছি সেখান থেকে ভালো মানের খেলোয়াড় ওঠে আসবে। তারাই পরে জেলা লিগে খেলার সুযোগ পাবে। জেলা লিগ শেষে আমরা আয়োজন করবো শেরেবাংলা কাপের। এই টুর্নামেন্ট সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হবে।’ তিনি যোগ করেন, ‘এছাড়া বছরের শেষদিকে বিপিএল এবং বিসিএলের ক্লাবগুলোর অনূর্ধ্ব-১৮ দল নিয়ে আয়োজন হবে একটি টুর্নামেন্ট। এটা আপাতত টুর্নামেন্ট আকারে হলেও ভবিষ্যতে লিগে রূপান্তরিত হবে। বছরের শেষের দিকে আমাদের সিনিয়র খেলোয়াড়দের জন্য এক থেকে দেড় মাসের জন্য একটা ট্রেনিং ক্যাম্প রেখেছি আমরা। যেন ভালো প্রস্তুতি নিয়ে সাফ কিংবা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে অংশ নিতে পারে জাতীয় দল।’
২০১৭ সালের কার্যক্রম পর্যায়ক্রমে পরের বছরগুলোতেও চলবে। বাফুফের এমন মহা পরিকল্পনা দেশের ফুটবল উন্নয়নে কতটা সহায়ক ভূমিকা রাখে তাই এখন দেখবার বিষয়।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ফুটবল

২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ