Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

ইউক্রেনের ওপর আরো বিধ্বংসী হামলার দাবি ক্রেমলিনপন্থীদের

‘কিয়েভ সরকার বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ সন্ত্রাসী সেল’ রাশিয়ার সঙ্গে সংলাপ বজায় রাখা প্রয়োজন : ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী লিভিভ, জাপোরোজিয়াতে ফের বিস্ফোরণ :: নভেম্বর-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউক্র

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১২ অক্টোবর, ২০২২, ১২:০০ এএম

সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে পশ্চিমাপন্থ মিডিয়ায় যুদ্ধক্ষেত্রে রাশিয়ার ক্রমাগত বিব্রতকর পরিস্থিতির খবর শুনতে শুনতে বিরক্ত রুশরা সোমবার কিয়েভসহ ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থানে হামলার খবরে উল্লসিত। তাদের দাবির প্রতি সম্মান দেখিয়ে ক্রেমলিন বাহিনী যে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে তাতে যেন তাদের সেনাবাহিনীর মাঝে প্রাণসঞ্চার হয়েছে। অনেকেই যুক্তি দিয়েছেন যে, মস্কোর উচিত এখন যুদ্ধে জয়ী হওয়ার জন্য সোমবার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার তীব্রতা বজায় রাখা।

পুতিনের সমর্থকরা কয়েক সপ্তাহ ধরে ইউক্রেনের যুদ্ধক্ষেত্রে কঠোর পদক্ষেপের আহ্বান জানিয়ে আসছিলেন। রাশিয়ার সাথে ক্রিমিয়াকে সংযুক্তকারী কের্চ ব্রিজে একটি বিস্ফোরণ ঘটার পরপরই এসব আহ্বান সপ্তাহান্তে তীব্র হয় এবং সারা বিশ্বে শকওয়েভ পাঠিয়েছিল। ইউরোপের দীর্ঘতম সেতুটি রাশিয়ান সামরিক শক্তির একটি বিশিষ্ট প্রতীক এবং ২০১৮ সালে পুতিন নিজেই এটি ওপেন করেছিলেন। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের ৭০তম জন্মদিনের পরদিন গত শনিবার বিস্ফোরণে ক্রিমিয়া সেতু মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ক্রিমিয়া উপদ্বীপের সঙ্গে রাশিয়ার মূল ভূখণ্ডের একমাত্র সংযোগ সেতু এটি। বিস্ফোরণের ঘটনাটি ইউক্রেনের গোয়েন্দাদের কাজ বলেই ব্যাপকভাবে ধারণা করা হচ্ছে।

এর জবাবে গত সোমবার ইউক্রেনজুড়ে একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ১১ জন নিহত হন। বহু আহত হন। পশ্চিমে লিভিভ থেকে শুরু করে পূর্বে খারকিভ পর্যন্ত বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। ক্রিমিয়া সেতুর ওপর হামলার পাল্টা হিসেবেই যে এ ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে, তা গোপন করেননি পুতিন। তিনি এ হামলাকে ইউক্রেনের ‘সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের’ প্রতিক্রিয়া হিসাবে বর্ণনা করেছেন, রাশিয়ার মাটিতে ভবিষ্যতে ইউক্রেনীয় আক্রমণ ঠেকাতে তাদের একক আক্রমণ হিসাবে বর্ণনা করেছেন। তার নিজের শহর সেন্ট পিটার্সবার্গে, যেখানে তিনি শুক্রবার তার ৭০তম জন্মদিন উদযাপন করতে ভ্রমণ করছেন, পুতিন জাতীয় টেলিভিশনে মাত্র তিন মিনিটের জন্য বক্তৃতা করেছিলেন যা ক্রেমলিন তার নিরাপত্তা পরিষদের সাথে বৈঠকের শুরু হিসাবে বর্ণনা করেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, সামরিক বাহিনীর উদ্যোগে এ হামলা হয়েছে।

মি, পুতিন বলেছেন, ‘আজ সকালে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবে এবং রাশিয়ান জেনারেল স্টাফের পরিকল্পনা অনুসারে ইউক্রেনের জ্বালানি, ইউক্রেনের নেতৃত্ব এবং সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে উচ্চ-নির্ভুল আকাশ, সমুদ্র এবং স্থল-ভিত্তিক দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে একটি বিশাল হামলা চালানো হয়েছে’।

‘যদি আমাদের ভূখণ্ডে সন্ত্রাসী হামলা চালানোর প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকে, তাহলে রাশিয়ার গৃহীত ব্যবস্থা কঠোর হবে এবং রাশিয়ান ফেডারেশনের জন্য হুমকির মাত্রার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। এতে কারো সন্দেহ করা উচিত নয়’।
তার বক্তৃতায়, মি. পুতিন একটি উল্লেখযোগ্য বাদ দিয়েছেন: তিনি শনিবারের ক্রিমিয়ান ব্রিজ বিস্ফোরণ বা অন্যান্য সন্দেহভাজন ইউক্রেনীয় হামলার পেছনে চূড়ান্ত অপরাধী হিসাবে পশ্চিমকে উল্লেখ করেননি। স্থানান্তরটি একটি সম্ভাব্য ইঙ্গিত ছিল যে, রাশিয়ান নেতা যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান নিয়ন্ত্রণে আগ্রহী এবং তিনি ন্যাটোর সাথে সরাসরি সংঘাতের উদ্রেক করতে চাননি।

রাশিয়ার সংবাদমাধ্যমজগতে কর্মরত ক্রেমলিনপন্থী ব্যক্তিত্বরা এসব হামলার প্রশংসা করেছেন। রাশিয়ান রাজনৈতিক বিশ্লেষক আব্বাস গালিয়ামভ সোমবারের হামলা সম্পর্কে বলেছেন, ‘এটি একটি অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে প্রথমে এবং সর্বাগ্রে গুরুত্বপূর্ণ। শাসক শ্রেণিকে দেখানো গুরুত্বপূর্ণ ছিল যে, পুতিন এখনও সক্ষম, সামরিক বাহিনী এখনও কিছু করার জন্য ভাল’।
গালিয়ামভ বলেছেন ‘প্রতিক্রিয়াটি শক্তি দেখানোর কথা ছিল, কিন্তু আসলে এটি দুর্বল শক্তি দেখায়। সামরিক বাহিনীর আর কিছু করার নেই’।

রুশ সংবাদমাধ্যম আরটির এডিটর-ইন-চিফ হচ্ছেন মার্গারিটা সিমোনিয়ান। তিনি নিয়মিত টক শোতে অংশ নেন। এর আগে কের্চ সেতুতে হামলায় রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলে ইউক্রেনীয় স্থাপনায় হামলার পরামর্শ দিয়েছিলেন মার্গারিটা। ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর প্রবাদের মাধ্যমে নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন তিনি। মার্গারিটার প্রবাদের ভাবার্থটা অনেকটা এরকম- রাশিয়া ধীরে জবাব দিতে পারে, কিন্তু যখন জবাবটা দেয়, সেটা নিয়ে কোনো সংশয় থাকে না।

রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের ডেপুটি চেয়ারম্যান দিমিত্রি মেদভেদেভ সোমবারের হামলাকে কেবলই সূচনা বলে অভিহিত করেছেন। টেলিগ্রাম চ্যানেলে তিনি লেখেন, ‘প্রথম পর্ব সম্পন্ন হলো। পরবর্তী সময়ে আরো এ ধরনের হামলা হবে।’
কোমসোমোলস্কায়া প্রাভদা ট্যাবলয়েডের যুদ্ধবিষয়ক প্রতিবেদক আলেক্সান্দার কোটস টেলিগ্রাম পোস্টে লেখেন, ‘আশা করা যায়, এটি প্রতিশোধ গ্রহণে মাত্র একবারের পদক্ষেপ নয়; বরং ইউক্রেন রাষ্ট্রের গভীরে যুদ্ধের একটি নতুন ব্যবস্থা হিসেবে চলবে, যতক্ষণ না রাষ্ট্রটি অকার্যকর হয়ে পড়ে’।

পুতিনের মিত্র চেচেন নেতা রমজান কাদিরভ ব্যক্তিগতভাবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিকে লক্ষ্যবস্তু করেছেন। তার উদ্দেশে কাদিরভ বলেন, ‘জেলেনস্কি, আমরা তোমাকে সতর্ক করেছি যে, (আসল যুদ্ধ) রাশিয়া এখনো শুরুই করেনি। তাই বাচ্চার মতো নালিশ না করে হামলার শিকার হওয়ার আগে পালাও। পশ্চিমাদের দিকে ফিরে না তাকিয়ে দৌড়াও জেলেনস্কি, দৌড়াও।’

রাশিয়া টোয়েন্টি ফোর ও রাশিয়া ওয়ান চ্যানেলের প্রতিবেদক ইভজেনি পদুবনি টেলিগ্রামে একটি ছবি পোস্ট করেন। এতে কিয়েভের আকাশে অগ্নিকুণ্ডলীর দৃশ্যের সঙ্গে কয়েকজন নারী-পুরুষকে উল্লসিত হয়ে ছবির জন্য পোজ দিতে দেখা যায়।

ইভজেনি পদুবনি লেখেন, ‘ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক অঞ্চলের বুর্শটিনস্কা তাপবিদ্যুৎকেন্দ্রে আঘাত হানা হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। কেন্দ্রটি শুধু ইউক্রেনের পশ্চিমাঞ্চলীয় শহরগুলোতেই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে না, হাঙ্গেরি, সেøাভাকিয়া ও রোমানিয়ায়ও বিদ্যুৎ সরবরাহ করে থাকে।’
জনপ্রিয় ক্রেমলিনপন্থী সংবাদপত্র কমসোমলস্কায়া প্রাভদা-এর যুদ্ধ সংবাদদাতা আলেকজান্ডার কোটস লিখেছেন, ‘এটি এমন একটি ক্ষেত্রে যেখানে রাষ্ট্রকে দেখাতে হবে যে, আমরা প্রতিক্রিয়া জানাতে পারি’।

রাষ্ট্র-সমর্থিত ‘জাস্ট রাশিয়া’ পার্টির নেতা, বিশিষ্ট রাশিয়ান আইন প্রণেতা সের্গেই মিরোনভ শনিবার টুইটারে লিখেছেন, ‘লড়াই করার সময়! প্রচণ্ডভাবে, এমনকি নির্মমভাবে। পশ্চিমের কোন দোষ না দেখে। এর থেকে বড় কোনো শাস্তি হবে না। তারা কোন খারাপ কথা বলবে না। আমাদের জিনিস করতে হবে. আমরা এটি শুরু করেছি - আমাদের অবশ্যই শেষ পর্যন্ত যেতে হবে। ফেরার পথ নেই। এটা সাড়া দেয়ার সময়’!

মস্কো-স্থাপিত ক্রিমিয়ার গভর্নর সের্গেই আকসিওনভ এ হামলাকে ‘সুসংবাদ’ বলে বর্ণনা করেছেন।

তবে, ক্রেমলিন সমর্থকদের উৎসাহ পুতিন এবং রাশিয়ান সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে আক্রমণের ফ্রিকোয়েন্সি এবং তীব্রতা এবং ইউক্রেনীয় অবকাঠামোর ক্ষতির সাথে তাল মিলিয়ে চলার দাবি নিয়ে এসেছে। তার বিবৃতিতে আকসিওনভ জোর দিয়ে বলেন যে, ‘প্রতিদিন শত্রুর অবকাঠামো ধ্বংস করার জন্য এ ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হলে আমরা মে মাসে সবকিছু শেষ করে ফেলতাম এবং কিয়েভ সরকার পরাজিত হত’। আকসিওনভ লিখেছেন, ‘আমি আশা করি প্রক্রিয়াটির গতি এখন ধীর হবে না’।

আরটি’র প্রধান হোস্ট আন্তন ক্রাসভস্কি জেড লেখা ক্যাপ পরে একটি বারান্দায় নাচের একটি ভিডিও পোস্ট করার পরে, টেলিগ্রামের অন্য একটি পোস্টে বলেছেন, ইউক্রেনীয় পাওয়ার লাইনের ক্ষতি ‘যথেষ্ট ছিল না! যথেষ্ট নয়’!
রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের আরেক সাংবাদিক আন্দ্রেই মেদভেদেভ সোমবারের হামলাকে ‘একটি যৌক্তিক পদক্ষেপ বলে বর্ণনা করেছেন, যা সমাজ দীর্ঘদিন ধরে দাবি করেনি - সামরিক পরিস্থিতির জন্য লড়াইয়ের জন্য ভিন্ন পদ্ধতির প্রয়োজন’।

‘এবং এটি কি ঘটেছে। কিন্তু এটি কি অনেক পরিবর্তন করে’? মেদভেদেভ, যিনি রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন গ্রুপ ভিজিটিআরকে এর জন্য কাজ করেন এবং মস্কো সিটি কাউন্সিলে একটি আসন রাখেন, টেলিগ্রামে লিখেছেন।
‘যদি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোতে হামলা নিয়মিত হয়ে যায় এবং যদি রেল, সেতু এবং বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা আমাদের কৌশলের অংশ হয়ে যায়, তবে হ্যাঁ, এটি (পরিস্থিতি) পরিবর্তন হয়। কিন্তু এ মুহূর্তে (সরকারি) তথ্য অনুযায়ী, কোনো সিদ্ধান্ত নেই। মধ্যযুগে ইউক্রেনকে বন্যায় পরিণত করা হয়েছে’ মেদভেদেভ লিখেছেন।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক স্তানোভায়া সোমবার একটি টেলিগ্রাম পোস্ট বার্তায় উল্লেখ করেছেন যে, পুতিনের ওপর ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ এবং ব্যাপক বোমা হামলার দিকে যাওয়ার’ জন্য ‘জোর চাপ’ দেওয়া হচ্ছে যা তাকে কাজ করতে প্ররোচিত করেছিল।

আজ অবধি, পুতিন যুক্তিযুক্তভাবে আরো আক্রমণাত্মক অবস্থান অবলম্বন করতে রাজি হয়েছেন। এটা তার পরিস্থিতি বোঝার সাথে মেলে। কিন্তু এটি একটি পিচ্ছিল ঢাল - ফিরে যাওয়ার কোন উপায় নেই’ স্ট্যানোভায়া লিখেছেন।

ক্রেমলিনপন্থী ভাষ্যকার সের্গেই মার্কভ যিনি প্রায়শই রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে উপস্থিত হন, টেলিগ্রামে লিখেছেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহর কিয়েভে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেখতে পারা আমাদের জন্য তিক্ত’। কিয়েভে হামলার সম্পূর্ণ দায় দখলদার এবং তাদের সহযোগীদের ওপর বর্তায়। এটি, ব্যক্তিগতভাবে বাইডেন এবং জেলেনস্কির ওপর’।

কিয়েভ সরকার বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ সন্ত্রাসী সেল : রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা গতকাল কিয়েভের সাম্প্রতিক পদক্ষেপকে সবচেয়ে জঘন্য সন্ত্রাসী সংগঠনের সাথে তুলনা করেছেন। রুশ কূটনীতিকের মতে, কিয়েভ বছরের পর বছর ধরে পশ্চিমাদের কাছ থেকে অর্থ, অস্ত্র, গোয়েন্দা তথ্য এবং রাজনৈতিক সমর্থন পেয়ে আসছে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, কিয়েভ সরকার সম্প্রতি ‘সবচেয়ে খারাপ সন্ত্রাসী কোষের পদ্ধতিতে সঙ্ঘটিত বেআইনি কাজগুলোর’ জন্য পশ্চিম থেকে ঠিক একই জিনিস পেয়েছে। জাখারোভা বলেন, ইউক্রেনে সাম্প্রতিক সন্ত্রাসী হামলা কোনো ব্যতিক্রম নয় বরং দেশটির কয়েক দশকের পুরনো নীতির ধারাবাহিকতা।

রাশিয়া সঙ্গে সংলাপ বজায় রাখা প্রয়োজন -ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী : প্যারিস বিশ্বাস করে যে, মস্কোর সাথে সংলাপের জন্য চ্যানেলগুলি বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ এবং ফ্রান্স রাশিয়াকে বিচ্ছিন্ন করার প্রচেষ্টার বিরোধিতা করে, ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাথরিন কলোনা মঙ্গলবার বলেছেন।

ফ্রান্স ইন্টার রেডিও স্টেশনে তিনি বলেন, ‘রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিনের সাথে যোগাযোগের জন্য চ্যানেল থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, বিচ্ছিন্নতা সবচেয়ে খারাপ বিকল্প নীতি হবে,’ তিনি জোর দিয়ে বলেছিলেন। কোলোনা উল্লেখ করেছেন যে, ‘যোগাযোগ বজায় রাখার প্রচেষ্টার জন্য জাপোরোজিয়া নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে একটি আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার মিশন পাঠানো সম্ভব করেছে। এটি সংলাপ ফলাফল অর্জনে সাহায্য করে,’ তিনি যোগ করেন।

ফরাসি শীর্ষ কূটনীতিক জোর দিয়ে বলেন, ‘একটি সময় আসবে যখন সংঘাতের অবসান হবে। এটি দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে কিন্তু রাশিয়া সবসময় আমাদের প্রতিবেশী হবে।’ ক্রিমিয়ান ব্রিজে ৮ অক্টোবরের বিস্ফোরণটি ইউক্রেনীয় হামলার ফলাফল কিনা জানতে চাইলে, কোলোনা এই বিষয়ে ‘মন্তব্য করতে’ অস্বীকার করেন, এই বলে যে, তিনি ঘটনার কারণ সম্পর্কে অবগত নন।

শনিবার সকালে, ক্রিমিয়ান সেতুতে একটি ট্রাক বিস্ফোরণ ঘটায়, এর সড়ক বিভাগের দুটি পূর্বদিকের অংশ ভেঙে পড়ে এবং সেতুর রেল অংশে জ্বালানি ট্যাঙ্কের একটি ট্রেনে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে সেতুটি যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন এই বিস্ফোরণটিকে গুরুত্বপূর্ণ বেসামরিক অবকাঠামোতে সন্ত্রাসী হামলা বলে নিন্দা করেছেন এবং এর জন্য ইউক্রেনের গোয়েন্দা সংস্থাকে দায়ী করেছেন।

খেরসন দখলের কোনো আশা ইউক্রেনের নেই : সোমবার খেরসন আঞ্চলিক সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের উপপ্রধান কিরিল স্ট্রেমাসভ বলেছেন, শত্রুর সক্ষমতা না থাকায় তাদের জন্য খেরসন দখল করার কোন সুযোগ নেই। ‘এখন পর্যন্ত তাদের জন্য খেরসন দখল করার কোন সুযোগ নেই। শত্রু, ইউক্রেনীয় নাৎসিদের জনশক্তি, যুদ্ধক্ষেত্রে যা ঘটছে তার তুলনায় এত কম যে এই সমস্ত প্রচেষ্টাগুলো অকার্যকর এবং অকেজো,’ তিনি টেলিগ্রামে বলেছিলেন। তিনি যোগ করেছেন যে, ‘রাশিয়া আমাদের রক্ষা করছে। কেউ খেরসন ছাড়বে না।’ যাইহোক, ইউক্রেনের গোলাগুলি থেকে এই অঞ্চলের বাসিন্দাদের রক্ষা করার জন্য, তাদের ছুটি কাটাতে রাশিয়ার প্রতিবেশী রিসোর্ট অঞ্চলে ভ্রমণ করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল।

লভোভ, জাপোরোজিয়াতে ফের বিস্ফোরণ : গতকাল সাসপিলনে টিভি চ্যানেল জানিয়েছে, লভভ-এ বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে। এর আগে গতকাল কিয়েভ, ওডেসা, ভিন্নিতসা, খমেলনিটস্কি এবং নিকোলায়েভ অঞ্চলের পাশাপাশি রোভনো এবং ক্রিভোই রোগে বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। ‘উই আর টুগেদার উইথ রাশিয়া’ সিভিল সোসাইটি গ্রুপের চেয়ারম্যান ভøাদিমির রোগভও বলেছেন যে, আজ সকালে অন্তত ১৬টি বিস্ফোরণ জাপোরোজিয়া কাঁপিয়ে দিয়েছে এবং শহরের কিছু জেলায় আগুন লেগেছে। পরে, জাপোরোজিয়াতে আরও বিস্ফোরণের খবর পাওয়া গেছে। আজ দ্বিতীয়বারের মতো সমগ্র ইউক্রেন জুড়ে এয়ার অ্যালার্ট বাজছে।

নভেম্বর-ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইউক্রেন অভিযানের টার্নিং পয়েন্ট আসতে পারে : ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানের একটি টার্নিং পয়েন্ট নভেম্বর এবং ফেব্রুয়ারির মধ্যে আসতে পারে, বেলারুশিয়ান স্টেট সিকিউরিটি কমিটির (কেজিবি) চেয়ারম্যান ইভান টারটেল দেশ ও বিদেশের বর্তমান সামরিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর একটি প্রতিবেদনে বলেছেন।

‘যদি রাশিয়ান ফেডারেশন তার বাহিনীকে প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগত সরঞ্জাম এবং উন্নত অস্ত্র সরবরাহ করে একটি কার্যকর পদ্ধতিতে তার সংহতি অভিযান পরিচালনা করে, তাহলে লড়াই একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে পৌঁছে যাবে। আমাদের অনুমান অনুযায়ী, এই বছরের নভেম্বরের মধ্যে টার্নিং পয়েন্ট আসবে এবং পরের বছর ফেব্রুয়ারি,’ বেলটিএ নিউজ এজেন্সি দ্বারা উদ্ধৃত টারটেল উল্লেখ করেছে।

বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ১০ অক্টোবর বলেছিলেন যে, ন্যাটো এবং বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশগুলির নেতারা পারমাণবিক হামলা চালানো পর্যন্ত বেলারুশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন চালানোর বিকল্পগুলি বিবেচনা করছেন। তার মতে, বেলারুশ এবং রাশিয়ার ইউনিয়ন রাজ্যের পশ্চিম সীমান্তে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার মধ্যে মিনস্ক এবং মস্কো একটি যৌথ সামরিক বাহিনীকে একত্রিত করতে চলেছে।

ইউক্রেনের ৩০০টিরও বেশি এলাকা এখনও বিদ্যুৎবিহীন : ইউক্রেনের পাঁচটি অঞ্চলের ৩০০টিরও বেশি এলাকা এখনও বিদ্যুৎবিহীন, দেশটির জরুরি পরিষেবা মঙ্গলবার জানিয়েছে। ‘কিয়েভ, সুমি, টেরনোপোল এবং খমেলনিটস্কি অঞ্চলে ৩০১টির মতো জনবসতি বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে বিচ্ছিন্ন রয়েছে,’ পরিষেবাটি তার টেলিগ্রাম চ্যানেলে একটি বিবৃতিতে বলেছে। ইউক্রেনের জরুরী কর্মকর্তারা উল্লেখ করেছেন যে, সোমবারের বিস্ফোরণের পরে যে ৩০টি দাবানল ছড়িয়ে পড়েছে তা স্ট্যাম্প আউট করা হয়েছে।

রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন সোমবার নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠকে বলেছেন যে ইউক্রেনের শক্তি, সামরিক কমান্ড এবং যোগাযোগ সুবিধাগুলিতে ‘দূরপাল্লার নির্ভুল অস্ত্র’ সহ একটি বিশাল হামলা চালানো হয়েছে। তিনি বলেন, ইউক্রেনীয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে সন্ত্রাসী কৌশল ব্যবহার করেছে, যেমন তুর্কি স্ট্রিম গ্যাস পাইপলাইনের একটি অংশ উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা, জাপোরোজিয়া এনপিপিতে যে হামলা চালানো হচ্ছে এবং কুরস্ক এনপিপিতে তিনটি সন্ত্রাসী হামলা। রুশ প্রেসিডেন্ট কিয়েভকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, এসব পদক্ষেপের কঠোর জবাব দেয়া হবে। সূত্র : নিউইয়র্ক টাইমস, এপি, তাস, বিবিসি নিউজ, রয়টার্স।



 

Show all comments
  • হামজা ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০০ এএম says : 0
    এ যুদ্ধে রাশিয়া জয়ীে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০১ এএম says : 0
    ইউক্রেনের উচিত রাশিয়ার সাথে সমঝোতা করা। নয়তো তারা নিজেরাই ধ্বসের দিকে যাচ্ছে
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০৩ এএম says : 0
    এ যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে বিশ্ব ঝুঁকির মধ্যে পড়বে।
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ১২ অক্টোবর, ২০২২, ৮:০২ এএম says : 0
    এ যুদ্ধের জন্য আমেরিকাই দায়ী। তারা নিজেদের ক্ষমতার জন্য এ যুদ্ধ লাগিয়েছে। তবে, আমার বিশ্বাস আমেরিকা এ যুদ্ধ থামানোর উদ্যোগ নিবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ