বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
দক্ষিণাঞ্চলে বর্ষা পেরিয়ে শরতের শেষ প্রান্তে এসে সেপ্টেম্বর মাসে বছরের সর্বোচ্চ এবং স্বাভাবিকের চেয়ে ৬.৬% বেশী বৃষ্টি হয়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে আগষ্ট মাস পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চল স্বাভাবিক বৃষ্টির মুখ দেখেনি। ভরা বর্ষার শ্রাবন ও শরতের ভাদ্রের ভরা পূর্ণিমার ভরা কোটালে ভর করে কয়েকদিন অতি বর্ষন হলেও মাসের গড় হিসেবে তা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে কম। কিন্তু গত মাসের ২২ দিনে এ অঞ্চলে স্বাভাবিক ৩১৬ মিলিমিটারের স্থলে ৩৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করে আবহাওয়া বিভাগ। এসময়ে সারা দেশে গড় বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৩.৩৪% বেশী। তবে এ অতি বর্ষণ স্বাভাবিক জনজীবনে যেমনি বিরূপ প্রভাব ফেলে, তেমনি কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের ফসল আবাদ ও উৎপাদনেও যথেষ্ঠ বিরূপ প্রভাব ফেলতে যাচ্ছে।
চলতি অক্টোবরেও দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশেই সামগ্রীকভাবে স্বাভাবিক অপেক্ষা কিছু বৃষ্টিপাতের কথা বলেছে আবহাওয়া বিভাগ। এমনকি চলতি মাসে বরিশাল অঞ্চলে ১৭ দিনের স্থলে ১৯ দিনে স্বাভাবিক ১৭৬ মিলিমিটারের পরিবর্তে ১৬০-২১০ মিঃ মিঃ বৃষ্টিপাতের সম্ভবনার কথা জানিয়েছে আহাওয়া বিভাগ।
তবে চলতি মাসের দ্বিতীয়ার্ধেই দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে থেকে বর্ষা নিয়ে আসা মৌসুমী বায়ু বিদায় নেবে বলেও জানান হয়েছে। গত মে মাসের শেষার্ধে বর্ষা মাথায় করে দক্ষিণÑপশ্চিম মৌসুমী বায়ু দক্ষিণ উপক’লে পৌছে জুনের প্রথম দশ দিনেই দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে পরলেও কাঙ্খিত বৃষ্টি হয়নি।
গত এপ্রিলে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে স্বাভাবিক ১৩২ মিলিমিটরের স্থলে মাত্র ১৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়। যা ছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৮৫.৬% কম। মে মাসেও আবহাওয়া বিভাগ বরিশালে স্বাভাবিক ২৬০ মিলিমিটারের স্থলে ২৪৫ থেকে ৩১০ মিঃমিঃ পর্যন্ত বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিলেও বাস্তবে বৃষ্টি হয়েছিল স্বাভাবিকের চেয়ে ৫.৬% কম । অথচ ঐ মাসেই ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’তে ভর করে ৭ থেকে ১১ মে পর্যন্ত অতি বর্ষণে তরমুজ সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জুনে স্বাভাবিক ৪৮৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের স্থলে আবহাওয়া বিভাগের পূর্বাভাস ছিল ৪৬০ থেকে ৫১০ মিলি। কিন্তু ঐ মাসে প্রকৃত বৃষ্টিপাতের পরিমান ছিল স্বাভাবিকের ৪৪.৪৫% কম, ২৬৮.৫ মিলিমিটার। জুলাই মাসেও স্বাভাবিকের প্রায় ৬৫% কম বৃষ্টিপাতের পরে আগষ্টেও বরিশালে স্বাভাবিকের ১৬.৪% কম বৃষ্টি হয়েছে। ঐ মাসে বরিশালে ৪৩৩ মিলিমিটারের স্থলে ৩৬২ মিলি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়।
এমনকি এবার বৃষ্টির অভাবে খাদ্য উদ্বৃত্ব দক্ষিণাঞ্চলে খরিপÑ১ মৌসুমে আউশের আবাদ ও উৎপাদনে বিপর্যয় নেমে এসেছে। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় এবার ২ লাখ ৪ হাজার ৬৭০ হেক্টরে আউশের আবাদ হলেও তা ছিল লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ২৪ হাজার হেক্টর পেছনে। সম্প্রতিককালের সর্বনি¤œ আবাদের পাশাপাশি বৃষ্টির অভাবের সাথে অতি বর্ষণেও দক্ষিণাঞ্চলে লক্ষ্যনুযায়ী ৬.১৬ লাখ টন চাল পাওয়া যায়নি। বৃষ্টির অভাবে আবাদ লক্ষ্য অর্জিত না হবার পাশাপাশি শ্রাবন ও ভাদ্রের পূর্ণিমার অতিবৃষ্টির সাথে জোয়ারের প্লবনেও বিপুল আধাপাকা ও পাকা আউশ ধানের জমি প্লাবিত হয়।
অপারদিকে বৃষ্টির অভাবের সাথে কয়েক দফার অস্বাভাবিক অতিবর্ষণে কৃষি নির্ভর দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদও বিপর্যয়ের কবলে। চলতি খরিপ-২ মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় ৭ লাখ হেক্টরে আবাদের মাধ্যমে সাড়ে ১৫ লাখ টন আমন চাল পাবার লক্ষ্য স্থির করেছিল কৃষি মন্ত্রনালয়। কিন্তু ভরা মৌসুমের শুরুতে বৃষ্টির অভাবে বীজতলা তৈরী যথেষ্ঠ ব্যাহত হয়। এরপরে শ্রাবন ও ভাদ্রের শেষে পূর্ণিমায় ভর করে লঘু চাপ থেকে নি¤œচাপের প্রভাবে অতি বর্ষণের সাথে ফুসে ওঠা সাগরের জোয়ারে দক্ষিণাঞ্চলের বিস্তির্ণ আমন বীজতলা ও রোপা আমনের জমি প্লাবিত হয়। ফলে প্রধান দানাদার খাদ্য ফসলÑ আমনের বীজতলা সহ রোপা অমনেরও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এমনকি আমন বীজতলা বিনষ্ট হওয়ায় বরগুনার প্রায় ২০ ভাগ জমি অনাবাদী রয়েছে এবার।
বরিশাল,ভোলা,পটুয়াখালী, পিরোজপুর ও ঝালকাঠীতেও বীজের অভাবে আমন রোপন যথেষ্ঠ ব্যাহত হলেও কৃষি সম্প্রসাসরন অধিদপ্তর-ডিএই’র মতে বরগুনা বাদে অন্য জেলাগুলোতে কৃষকরা বিভিন্নভাবে বীজ সংগ্রহ করে রোপন প্রায় শেষ করেছে। তবে রোপনের সময় শেষ হয়ে গেলেও বরগুনাতে প্রায় ৮০% সহ দক্ষিণাঞ্চলে এবার গড়ে ৯৬%-এর বেশী জমিতে আমন আবাদ সম্ভব হয়নি। ফলে আমন থেকে যে সাড়ে ১৫ লাখ টন চাল পাবার কথা, সে লক্ষ্যে পৌছান নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। এতে করে প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টন উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে এবার খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে সংশয় প্রকট হচ্ছে কৃষিবীদদের মাঝেও।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।