পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিচারহীনতার সংস্কৃতি দেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অন্যতম আলোচিত বিষয়। রাজনৈতিক কারণে অপরাধীরা যেমন পার পেয়ে যাচ্ছে, একইভাবে রাজনৈতিক কারণে মিথ্যা মামলার শিকার হচ্ছে অসংখ্য মানুষ। এই রাজনৈতিক সংস্কৃতির সুযোগে একশ্রেণীর পুলিশ কর্মকর্তাও নানাভাবে সাধারণ মানুষকে মিথ্যা মামলার ফাঁদে ফেলে কোটি কোটি টাকা কামানোর সুযোগ পেয়েছে। সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দলগুলোর লাখ লাখ নেতাকর্মী থেকে শুরু করে সাধারণ ব্যবসায়ী- শহরে ও মহাসড়কে প্রতিদিন চলাচলকারী লাখ লাখ যাত্রী, পথচারী অসৎ পুলিশ সদস্যদের টার্গেট। বিরোধী দলের আন্দোলন দমাতে গণমামলা,গায়েবি মামলা, গণগ্রেফতারের মতলববাজির সাথে যে কোনো ব্যক্তিকে ফাঁসিয়ে দেয়ার আইনগত সুবিধা কাজে লাগিয়ে রাতারাতি কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার যে সংস্কৃতি চালু রয়েছে তার পাশাপাশি এক শ্রেণীর পুর্লিশ সদস্য রাস্তায় চলাচলরত মানুষকে মাদক মামলায় ফাঁসিয়ে দেয়ার জুজু দেখিয়ে সর্বস্ব হাতিয়ে নিয়ে প্রকারান্তরে ডাকাত-ছিনতাইকারীর ভ’মিকায় অবতীর্ণ হয়েছে। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে মাদকদ্রব্য দিয়ে মিথ্যা মামলায় অসংখ্য মানুষের কারাভোগের তথ্য উঠে এসেছে। রিপোর্টে যে সব কেস-স্টাডি তুলে ধরা হয়েছে, তা এখনকার সমাজ বাস্তবতার সাধারণ চিত্র হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনৈতিক-নেতাকর্মী, পুলিশের ইনফর্মার এবং থানার বিটপুলিশের বিতর্কিত ও অপরাধমূলক তৎপরতার খবর প্রায় প্রতিদিনই নানা মাধ্যমে উঠে আসছে।
বর্তমানে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ৩৯ লাখের বেশি । দেশের আদালতগুলোতে মামলা নিষ্পত্তির যে গতি, নতুন কোনো মামলা না হলেও এসব মামলা নিষ্পত্তি করতে কয়েক দশক লেগে যাবে। নানা কারণে মামলার সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে চলেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিশাল সংখ্যক মিথ্যা মামলা। বহুদলীয় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় সরকারের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ থাকাই স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত। কিন্তু বিরোধী দলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা ও গায়েবি মামলা দিয়ে কারাগারে ও আদালতে দৌঁড়ঝাঁপ ও অর্থনৈতিক হয়রানির প্রভাব দেশের সমাজ, অর্থনীতি ও উৎপাদন ব্যবস্থায় পড়তে বাধ্য। প্রতিটি আদালতে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষের মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলায় হাজিরা দেয়া, কারাভোগের মর্মান্তিক কাহিনী রচিত হচ্ছে। কোনো সভ্য সমাজে, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় পুলিশ ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের এমন অপকর্ম চলতে পারেনা। লাখো শহীদের রক্তে অর্জিত স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসে আমাদের রাষ্ট্র ও সমাজ এমন মাৎস্যন্যায় মেনে নিতে পারেনা। পুলিশ জনগণের বন্ধু, আইনের শাসনের রক্ষক। জনগণের ট্যাক্সের টাকায় তাদের বেতন-ভাতা, পোশাক, অস্ত্র ও সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয়। এক শ্রেণীর পুলিশ, র্যাব ও ডিবি সদস্যের অপরাধমূলক কর্মকান্ডের কারণে পুরো বাহিনী আস্থা হারাচ্ছে। মিথ্যা মামলা ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি থেকে জাতিকে মুক্ত করতে দলমত নির্বিশেষে সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐকমত্য গ্রহণ করতে হবে।
আইনগতভাবে দেশের বিচারবিভাগকে স্বাধীন বলা হলেও বাস্তবে তা নয়। বিচারবিভাগে রাজনৈতিক নিয়োগ, আইন মন্ত্রনালয় ও এটর্নি জেনারেলের অফিসের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাব দেশের বিচার বিভাগকে একটি দ্বৈতশাসনের জালে আটকে রেখেছে। এর ফলে একদিকে বিচারবিভাগ সরকারের রাজনৈতিক প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারছে না, অন্যদিকে নি¤œ আদালত থেকে হাইকোর্ট পর্যন্ত বিচার প্রক্রিয়া পদে পদে দুর্নীতি-অব্যবস্থাপনার শিকার হয়ে পড়েছে। তা নাহলে বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার গায়েবি মামলায় লাখ লাখ মানুষকে এমন দুর্ভোগ পোহাতে হত না। বিদেশে কর্মরত ব্যক্তি, আশি বছরের বৃদ্ধ, ৭ বছরের শিশু, এমনকি মৃত ব্যক্তিদের মিথ্যা মামলায় আসামি করে পুলিশ এজাহার দায়ের করার পরও সে সব পুলিশ কর্মকর্তার পুলিশ বিভাগে এবং আদালতে কোনো জবাবদিহি করতে হয়না বলেই এ ধরণের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না। মিথ্যা মামলা এবং নি¤œ থেকে উচ্চ আদালত পর্যন্ত দুর্নীতির যে চিত্র ইতিমধ্যে গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, তা নিরসনের দায়িত্ব সরকারের এবং উচ্চ আদালতের। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নব নিযুক্ত প্রধান বিচারপতি তাঁর সম্বধর্না অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, তিনি বিচার বিভাগে কোনো দুষ্টক্ষতকে ন্যুনতম প্রশ্রয় দেবেন না। এরই প্রেক্ষাপটে বিচার বিভাগের যে কোনো ধরণের অস্বচ্ছতা ও দুর্নীতি নির্মূল করতে প্রধান বিচারপতির নির্র্দেশে দুই সদস্যের একটি কমিটি গঠনের কথাও পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। ইতিমধ্যে বছরের ৯ মাস পেরিয়ে গেলেও বিচারবিভাগের পুরনো চিত্রে এতটুকু পরিবর্তন ঘটেনি। আদালতের বিভিন্ন স্তরে দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা, নিরীহ-নিরপরাধ মানুষকে মিথ্যা মামলায় হয়রানি ও কারাভোগের মত ঘটনা বন্ধে প্রধান বিচারপতিকেই বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। মিথ্যা ও সন্দেহজনক মামলা দ্রæত নিষ্পত্তি ও দুর্নীতির সাথে জড়িত ও পুলিশ ও মামলা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের অবশ্যই জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।