Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনের বিপুল প্রত্নসম্পদ এখন রাশিয়ার

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৫ অক্টোবর, ২০২২, ১২:৫১ পিএম

গণভোটে রাশিয়ার অংশ হওয়া ইউক্রেনের চার অঞ্চলে রয়েছে বেশকিছু জাদুঘর। এসব জাদুঘরকে এখন নিজেদের মতো করে গোছানোর ঘোষণা দিয়েছে ক্রেমলিন। এর মানে, এসব অঞ্চলের সাংস্কৃতিক সম্পদও রাশিয়ার হয়ে গেছে।

শুক্রবার পূর্ব ইউক্রেনের দোনেৎস্ক, লুহানস্ক, খেরসন ও জাপোরিজ্জাকে রাশিয়ান ফেডারেশনে যুক্ত করার ডিক্রিতে সই করেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। যদিও পশ্চিমারা গণভোটকে জালিয়াতি উল্লেখ করে রাশিয়ার পদক্ষেপের কঠোর নিন্দা জানিয়েছে।

এই চার অঞ্চলের হাজার হাজার প্রত্নসম্পদের নতুন মালিক এখন রাশিয়া; যেগুলোর প্রকৃত মালিক সম্মিলিতভাবে ইউক্রেনীয় সরকার এবং তার সহযোগী সংস্থাগুলো।

কয়েক বছর আগে ইউক্রেনের ক্রিমিয়া থেকে সিদিয়ান আমলের সোনা ধার নিয়েছিল আমস্টারডামের অ্যালার্ড পিয়ারসন মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের পর সেই জিনিস ফেরত নিতে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিল রাশিয়া।

ইউক্রেনের সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী আলেক্সান্ডার টাকাচেঙ্কোকে উদ্ধৃত করে লন্ডনভিত্তিক অনলাইন নিউজপোর্টাল দ্য আর্ট নিউজপেপার বলছে, রাশিয়ানরা আসার আগে জাদুঘরগুলো খালি করতে পারেনি ইউক্রেন সরকার।

আর্ট নিউজপেপার রাশিয়ান ফেডারেশনে যোগ দেয়া চারটি অঞ্চলের জাদুঘরগুলোর একটি তালিকা তৈরি করেছে।

দোনেৎস্ক

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিন দোনেৎস্ক অঞ্চলের দখল নেন। ২০ শতকের গোড়ার দিককার চিত্রশিল্পী আরখিপ কুইন্দঝির জন্ম এই অঞ্চলে। তার অনন্য কাজগুলো সংরক্ষিত আছে স্থানীয় একটি জাদুঘরে।

শিল্পী আরখিপ কুইন্দঝির তেলচিত্র
আর্ট নিউজপেপারের প্রতিবেদন বলছে, শুরুতে রুশ বিমান হামলায় সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের সব ঐতিহ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল। এ কারণে মারিউপোল শহরের কুইন্দঝি আর্ট মিউজিয়াম এবং মিউজিয়াম অফ লোকাল হিস্ট্রির অক্ষত প্রত্নসম্পদগুলো দোনেৎস্ক রিজিওনাল মিউজিয়াম অফ লোকাল হিস্ট্রিতে সরিয়ে নেয়া হয়েছিল।

২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে, দোনেৎস্ক রিপাবলিকান আর্ট মিউজিয়ামের প্রধান কিউরেটর ওলগা জাগোরুইকো রাশিয়ার মস্কোভস্কি কমসোমোলেটস দৈনিককে বলেছিলেন, সংগ্রহগুলো নিরাপদে সংরক্ষণ করা হয়েছে। তবে সেগুলো রাশিয়ায় স্থানান্তরিত হবে কিনা, সে সম্পর্কে তিনি বিস্তারিত বলেননি।

দোনেৎস্ক রিপাবলিকান আর্ট মিউজিয়াম
দোনেৎস্ক লোকাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ডেপুটি ডিরেক্টর লিনা গারমাশ ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে সেন্ট পিটার্সবার্গে একটি গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন; যেটি বিপর্যয়কালে প্রত্নসম্পদ সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনার ওপর দৃষ্টি নিবদ্ধ করেছিল।

হরলিভকা আর্ট মিউজিয়ামের জ্যেষ্ঠ গবেষক ওলেনা পেখকে ২০১৮ সালে রুশপন্থীরা ধরে নিয়ে গিয়েছিল। গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তাকে ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেয় তারা।

লুহানস্ক

লুহানস্কের প্রত্নসম্পদগুলো নবম শতাব্দীর আগের। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক চরম পরিস্থিতিতে ৫ বছর আগে লুহানস্ক আর্ট মিউজিয়ামের একটি প্রতিনিধি দল ছুটে গিয়েছিল রাশিয়ায়। সে সময় রুশ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রতিনিধি দলের সদস্যরা।

লুহানস্ক মিউজিয়াম অফ হিস্ট্রি অফ কালচারে ৫০ হাজার প্রত্নসম্পদ রয়েছে। ইউক্রেন সরকারের দাবি অনুযায়ী, ২০১৪ সালে রাশিয়ান গোলার আঘাতে এটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।

লুহানস্ক মিউজিয়াম অফ হিস্ট্রি অফ কালচার
খেরসন

কৃষ্ণ সাগরঘেঁষা খেরসন অঞ্চল ২০২২ সালের মার্চে রাশিয়ান শাসনাধীনে চলে যায়।

চলতি বছরের জুনে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে শহরটিকে ‘রাশিয়ান শহর খেরসন’ বলে উল্লেখ করে। দাবি করা হয়, লোকাল হিস্ট্রি মিউজিয়ামের ১ লাখ ৭০ হাজার প্রত্নসম্পদ ইউক্রেনীয় জাতীয়তাবাদী নীতির প্রচারের জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল। রাশিয়াপন্থী হওয়ার কারণে জাদুঘরের পরিচালক তাতায়ানা ব্রাচেঙ্কোর সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ইউক্রেন।

খেরসন রিজিওন্যাল আর্ট মিউজিয়াম
খেরসন রিজিওন্যাল আর্ট মিউজিয়ামের পরিচালক আলিনা ডটসেনকো ২০২২ সালের জুলাইয়ে বলেছিলেন, জাদুঘরের নতুন পরিচালক নিয়োগ দিয়েছে রাশিয়া।

জাপোরিজ্জা

মিউজিয়াম অফ লোকাল হিস্ট্রিসহ মেলিটোপোল শহর এখন রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে। জাদুঘরের পরিচালক লেইলা ইব্রাহিমোভাকেও অপহরণ করা হয়েছিল। অবশ্য কয়েকদিন পর তিনি ফিরে আসেন।

মিডিয়া রিপোর্ট বলছে, এভজেনি গোর্লাচেভ নামে রুশভাষী এক ব্যক্তিকে জাদুঘরের নতুন পরিচালক করা হয়েছে। বন্দুকের মুখে জাদুঘরের কর্মী গালিনা কুচারের কাছ থেকে সিদিয়ান সোনার সংরক্ষণাগারের ঠিকানা বের করে রুশ সেনারা।

মিউজিয়াম অফ লোকাল হিস্ট্রি, জাপোরিজ্জা
সিদিয়ান সোনার সংগ্রহটি পরে চুরি হয়ে যায়। দ্য আর্ট নিউজপেপার বলছে, গোর্লাচেভ এখন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের দায়িত্বে আছেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ