Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ৫ বছরে ১০৪ হত্যাসহ ২ হাজার ৪৩৮ মামলা, আসামী ৫ হাজার ২২৬

কক্সবাজার জেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ৪ অক্টোবর, ২০২২, ১২:৫৭ পিএম

প্রত্যাবাসন যত বিলম্বিত হচ্ছে ততোই নিরাপত্তায় ঝুঁকি বাড়ছে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে। গত ৫ বছরে ক্যাম্পে ১০৪ খুন সহ মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮। এসব মামলায় আসামী হয়েছে ৫ হাজার ২২৬ জন। আর এই রোহিঙ্গা খুনিদের মূল টার্গেট হল তাদের নেতা ও স্বেচ্ছাসেবক।
সম্প্রতি অস্ত্র হাতে এক রোহিঙ্গা যুবকের ভিডিও ভাইরাল হয় ফেসবুকে। যেখানে তাকে বলতে শোনা যায় অস্ত্রের যোগান ও টাকার বিনিময়ে তিনি চারটি হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছে। এছাড়া শুধু তার সাথেই রয়েছে আরো ২৫ জন অত্যাধুনিক অস্ত্রধারী যুবক। এই ভিডিও ভাইরালের পর থেকে এই যুবককে হন্যে হয়ে খুঁজছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী রোহিঙ্গা আগমনের সময় ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট থেকে ২০২২ সালের ২০ আগস্ট পর্যন্ত গত ৫ বছরে অস্ত্র, মাদক, ধর্ষণ, অপহরণ, ডাকাতি, পুলিশের উপর হামলা, হত্যা, মানব পাচার সহ নানা অপরাধে মামলা হয়েছে ২ হাজার ৪৩৮ জন। এতে আসামী হয়েছে ৫ হাজার ২২৬ জন। এরমধ্যে খুন করা হয়েছে ১০৪ জন। এসব হত্যাকান্ডের মধ্যে বেশিরভাগই হল রোহিঙ্গাদের নেতা, মাঝি ও স্বেচ্ছাসেবক।

গত বছরের ২৯ পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয় রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহকে। যিনি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের পক্ষে জোরালো ভূমিকা রাখছিলেন। এছাড়া ২১ অক্টোবর ক্যাম্পের একটি মাদ্রাসায় গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করেছে ছয়জনকে। ক্যাম্প সংলগ্ন স্থানীয়রা বলছেন যেসব রোহিঙ্গা নেতা প্রত্যাবাসন নিয়ে কথা বলছে তাদের হত্যা করছে সন্ত্রাসী গোষ্টি। এই ক্ষেত্রে গোয়েন্দা নজরদারী আরো জোরদার কারা উচিৎ।
উখিয়া প্রেসক্লাবের সভাপতি সাঈদ আনোয়ার জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মাঝি বা নেতা ও স্বেচ্চাসেবক যারা আছেন তারা প্রশাসনের সাথে কাজ করে। তারা প্রত্যাবাসনের পক্ষে কথা বলে। রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা তাই এসব নেতাদের হত্যার জন্য টার্গেট করে। যেমনটা করেছে রোহিঙ্গাদের অন্যতম শীর্ষ নেতা মহিবুল্লাহকে। ক্যাম্পে আরো বেশি গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানো দরকার।
উখিয়া পালংখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, ক্যাম্পের সামগ্রিক অপরাধ দমনে রোহিঙ্গাদের অবাধ চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। তাদের কাছ থেকে ব্যবসা নিয়ে ফেলতে হবে। তাদের কাছ থেকে স্টার্মফোন নিয়ে নিতে হবে। পাশাপাশি আইনশৃংখলা রক্ষাকারী’র সদস্য সংখ্যা বাড়াতে হবে।
রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্টির কারণে সাধারণ রোহিঙ্গারা আতংকে রয়েছেন। তারা শান্তি কামনা করছেন। তারা বলছেন বাংলাদেশ সরকার তাদের নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু কিছু রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীর কারণে তারাও আতংকের পাশাপাশি প্রশ্নবিদ্ধ।
মোহাম্মদ লিয়াকত হোসেন নামে এক রোহিঙ্গা জানান, এই দেশ তাদেরকে শান্তিতে রাখলেও জীবন অনিরাপদ করে তুলেছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। কিছু রোহিঙ্গার কারণেই তারা সবাই বদনামের ভাগী হচ্ছে। এই অবস্থায় তারা শান্তি প্রত্যাশা করছেন।
কবির হোসেন নামে আরেক রোহিঙ্গা জানান, এই দেশের প্রশাসন তাদের নিরাপত্তার জন্য পাহারা দেয়। আর তাদের ভাইয়েরাই নিজেদের খুন করছে। এরচেয়ে দুঃখ আর কিছুই হতে পারেনা।
এ ব্যাপারে জেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ জানান, রোহিঙ্গা শিবিরের সার্বিক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। সব দপ্তর নিয়ে একাধিক সভার সিন্ধান্ত অনুযায়ী সবাই খুব সতর্ক অবস্থানে রয়েছে। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হচ্ছে। নিয়ন্ত্রনে রয়েছে আইনশৃংখলা পরিস্থিতি।
এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ছোট্ট একটি জায়গার মধ্যে অসংখ্য লোকের বসবাস। তাদের মধ্যে ঘটে যাওয়া ঘটনার মামলাগুলো সঠিকভাবে তদন্ত করা হয়। ক্যাম্পে অপরাধ দমনে পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করছে অন্যান্য আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। জোরদার রয়েছে গোয়েন্দা নজরদারী।
ক্যাম্পে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো তৎপরতা বাড়ায় কোণঠাসা হয়ে আছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী। উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি আশ্রয়শিবিরে বর্তমানে প্রায় ১২ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা ক্যাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ