হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির খড়গ : আসামের এনআরসি এবং বাংলাদেশ
কিশোর শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক দাবীর আন্দোলনে ঢাকাসহ সারাদেশে তীব্র রাজনৈতিক উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তা দেখা যাচ্ছিল,
কামরুল হাসান দর্পণ : প্রচ্ছন্ন একটা শঙ্কা মনে ভর করেছে। ঠিক ইদানীং নয়, বেশ কয়েক বছর ধরে শঙ্কাটা কাজ করছে। বিভিন্ন ঘটনায় শঙ্কাটা চাপা পড়ে গেলেও এখন যতই দিন যাচ্ছে শঙ্কা গাঢ় থেকে গাঢ় হচ্ছে। শঙ্কাটা দেশ নিয়ে। তা জাগিয়েছে প্রতিবেশী ভারত। আমাদের প্রতি তার আচার-আচরণ বিগ ব্রাদার সুলভ স্বাধীনতার পর থেকে ভারতের এই আচরণ পরিলক্ষিত হলেও বিগত বছরগুলোতে তা অনেকটা বৃদ্ধি পেয়েছে। শঙ্কাটা এখানেই। তার আচরণ এবং কর্মকা- দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, আমি ছাড়া তুমি এক পা-ও নড়তে পারবে না। যা বলব, তা-ই করতে হবে। ভারত যা বলছে, আমরা তা-ই করছি। যা চাচ্ছে তাই দিয়ে দিচ্ছি। শঙ্কার কথা কেন বলছি, তার সঙ্গত অনেক কারণ রয়েছে। এই সময়ে ভারত যেভাবে বিভিন্ন ইস্যুতে তার প্রয়োজনে আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করছে, তাতে মনে হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌম যেন অনেকটাই দুর্বল হয়ে পড়েছে। অনেকে এ কথা শুনে আঁতকে উঠতে পারেন। কেউ কেউ তীব্র প্রতিবাদও করতে পারেন। ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতায় মিইয়ে যাওয়ারা লাফিয়ে উঠে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলতে পারেন, এ বলে কি! ভারত আমাদের পরম বন্ধু! তার মতো বন্ধু এ দুনিয়াতে আর একটিও নেই। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে সহায়তা না করলে আমরা কি কোনো দিন স্বাধীন হতে পারতাম? তার ঋণ কোনো দিনও শোধ করতে পারব না। তাদের কথা হয়তো ঠিক। তবে আমরা যে কথায় কথায় ‘বীর বাঙালির’ কথা বলি, তাদের এই মনোভাব কি কিছুটা হলেও বীর বাঙালিদের খাটো করে না? সহায়তা করলেই কি কাউকে ‘নমস্য’ মনে করতে হবে? মানুষ মানুষকে উপকার করবে, দেশ দেশের পাশে দাঁড়াবেÑ এটাই স্বাভাবিক। তার অর্থ কি, কেউ উপকার করলে তার ঋণ জাতীয় স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে শোধ করতে হবে? আর পৃথিবীতে কোনো কিছুই তো স্বার্থের ঊর্ধ্বে নয়। প্রকারভেদে স্বার্থ ছাড়া কোনো সম্পর্কই হয় না। ভারত বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে সহায়তা করেছে এটা যেমন ঠিক, তেমনি বিনা স্বার্থে সহায়তা করেছেÑ এটা ভাবাও বোধ হয় একেবারে ঠিক নয়।
দুই.
এখনকার যুগে যুদ্ধ করে দেশ দখল বা জয় করার প্রয়োজন পড়ে না। দেশ চালাতে যে অর্থ লাগে, তার উৎসের টুঁটি চেপে ধরলেই হয়। দেশটি আপনাআপনিই নুয়ে পড়ে। আমাদের দেশে ভারতের ব্যাপক বাণিজ্য থাকলেও তার টুঁটি চেপে ধরলে যে আমরা মরে যাব, এমন নয়। তবে আমাদের স্বাধীন চিন্তাভাবনার ওপর তার যে প্রভাব, তা খুবই উদ্বেগজনক। ব্যাপারটা এরকম হয়ে দাঁড়াচ্ছে, সে তার আচরণ দিয়ে বুঝিয়ে দিচ্ছে, তার কথার বাইরে যাতে আমরা না যাই। অর্থনীতির দিক থেকে সে আমাদের ওপর প্রভাব বিস্তার করতে না পারলেও অনেকটা গায়ের জোর দেখানোর প্রবণতা তার মধ্যে রয়েছে। ভারতের অর্থনীতি অতটা শক্তিশালী নয় যে, আমাদের অর্থনীতির টুঁটি চেপে ধরতে পারে। এ কাজ করলে সেও কিছুটা বিপদে পড়ে যাবে। তার বিশাল বাণিজ্য বন্ধ হয়ে যাবে। তার স্বার্থেই আমাদের সাথে তাকে বাণিজ্য করতে হবে। ভারত ভালো করেই জানে, আমাদের অর্থনীতি তার থেকে কোনো অংশে কম শক্তিশালী নয়। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে ভারতের জন্য হুমকি চীনের মতো বড় একটি দুয়ার রয়েছে। ফলে চীনকে ঠেকাতে হলেও তাকে আমাদের সাথে বাণিজ্য করতে হবে। তাহলে ভারতকে কী করতে হবে? জবরদস্তি করতে হবে? ভারতের আচরণ অনেকটা এরকমই হয়ে উঠেছে। তার স্বার্থ হাসিলে এখন আমাদেরকে যে কোনোভাবে ব্যবহার করার মানসিকতা প্রকাশিত হচ্ছে। এই যে গত সপ্তাহে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর গোপালকৃষ্ণ পারিকর প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সফর করে গেলেন, তার সফর কি এমনি এমনি হয়েছে? এটা কি কোনো শুভেচ্ছা সফর ছিল? মোটেই না। তার সফরের নিগূঢ় রহস্য হচ্ছে, বাংলাদেশকে তার প্রভাব বলয় থেকে বাইরে যেতে না দেয়া এবং তার গ্রিপের মধ্যে রাখা। একটা কথা না বললেই নয়, উপমহাদেশে ভারতের চিরশত্রু পাকিস্তান ও চীন। এই দুই দেশের সাথে সে পেরে উঠছে না। পাকিস্তানের সাথে প্রায় ০স০১ারা বছরই সীমান্তে তার যুদ্ধ লেগে থাকে। চীনের সাথে ¯œায়ুযুদ্ধ বহুকালের। চীন বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সামরিক খাতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে। তার বিনিয়োগ বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার। সহায়তাও তেমনই। অর্থাৎ চীন বাংলাদেশের উন্নয়নে যেভাবে ভূমিকা রেখে চলেছে, ভারত তার কিঞ্চিতও করতে পারছে না। বরং বাংলাদেশ থেকে উল্টো নিয়ে নিচ্ছে। যেহেতু চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ ও সহায়তার মাধ্যমে বড় একটি ভূমিকা রাখছে, তাই ভারতের তা সহ্য হচ্ছে না। আর ভারত উচ্চহারের সুদের বিনিময়ে যে ঋণ সহায়তা দেয় তাতে নিজের ষোল আনা উসুল করে নেয়। চীন তা করে না। স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশ তার উন্নয়নের জন্য চীনের প্রতি ঝুঁকবে। এখন এটাই ভারতের মর্মপীড়ার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তার ভেতর ভয় ঢুকে গেছে, বাংলাদেশ না আবার তার প্রভাব বলয় থেকে ছুটে যায়। এ ভয় ঢুকেছে গত মাসে চীন থেকে বাংলাদেশ বানৌজা নবযাত্রা ও বানৌজা জয়যাত্রা নামে দুটি সাবমেরিন কেনার পর থেকে। ০৩৫ জি ক্লাসের এই কনভেনশনাল সাবমেরিন দুটি টর্নেডো ও মাইন দ্বারা সুসজ্জিত এবং এগুলো শত্রুপক্ষের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন আক্রমণ করতে সক্ষম। এর আগে গত অক্টোবরে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিন পিং বাংলাদেশ সফরকালে প্রায় আড়াই হাজার কোটি মার্কিন ডলারের ২৭টি বাণিজ্যিক চুক্তি হয়। খুব অল্প সময়ে চীনের এই সহায়তা দেখে ভারতের ‘মাথা খারাপ’ হয়ে গেছে। তার মনে হয়েছে, বাংলাদেশ তার বলয় থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। এটা সে কিছুতেই মানতে পারছে না। ভারত নিজেও জানে, চীন বাংলাদেশকে যেভাবে সহায়তা দেয়ার সক্ষমতা রাখে, তার পক্ষে তা দেয়া সম্ভব নয়। আর সে তা চায়ও না বাংলাদেশ অর্থনৈতিকভাবে তাকে ছাড়িয়ে যাক। সামরিক দিক থেকে তো নয়ই। তার ভাবটা এমন, তোমার তিন দিকে আমি আর তুমি আমার পেটের ভেতর, তোমার নিরাপত্তা নিয়ে এত চিন্তার কী আছে! আমি আছি না! তার এই ধরনের মনোভাবের মধ্যে যখন বাংলাদেশে দুটি সাবমেরিন ঢুকে যায়, তখনই সে অস্থির হয়ে ওঠে। তড়িঘড়ি করে তার প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকরকে পাঠিয়ে প্রস্তাব দিয়েছে, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর ‘সামর্থ্য ও সক্ষমতা’ বাড়াতে নতুন পদক্ষেপ নিতে। অর্থাৎ আমাদের সশস্ত্র বাহিনীকে তার পরামর্শ ও কথামতো শক্তিশালী করতে হবে। তার এমন মনোভাবের কারণেই আমাদের স্বাধীন ও সার্বভৌমত্ব নিয়ে শঙ্কা জাগে। ভারতের পত্র-পত্রিকা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো যেসব মন্তব্য করেছে, তাতে শঙ্কা আরো বেড়ে গেছে। ভারতের গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি রিসার্চের গবেষক অধ্যাপক ভরত কনরাড বলেছেন, এই অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান অগ্রযাত্রা প্রতিহত করতে চায় ভারত। চীন থেকে বাংলাদেশ যে দুটি সাবমেরিন পেয়েছে, তা থেকে বেইজিং হয়তো সুবিধা আদায় করতে চাইবে। মোদির সরকার তা হতে দেবে না। বিবিসি বাংলা জানিয়েছে, ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত বেশির ভাগ সংবাদে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে চীনের অর্থনৈতিক ও সামরিক প্রভাব যেভাবে বাড়ছে তাতে ভারত উদ্বিগ্ন। বিশেষ করে চীন বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে দুটি সাবমেরিন দেয়ার পর বিষয়টি ভারতকে বেশ ভাবনায় ফেলেছে। এসব মন্তব্য ও প্রতিবেদন থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না, ভারত বাংলাদেশকে কী দৃষ্টিতে দেখে।
তিন.
দুঃখের বিষয় হচ্ছে, ভারতের সিনেমা থেকে শুরু করে সেখানের অনেকে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলে তুলে ধরে। আগামী ১৭ ফেব্রুয়ারি বলিউডের করণ জোহর প্রযোজিত ও পরিচালিত ‘দ্য গাজি অ্যাটাক’ নামে যে সিনেমাটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে, তার কাহিনীও আমাদের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে। এতেও দেখানো হয়েছে পাকিস্তানের সাথে তার যুদ্ধের ঘটনা। ভাবটা এমন বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ নয়, এ যুদ্ধ হয়েছে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে। ভারতের চলচ্চিত্রে এ ধরনের তথ্য হরহামেশাই তুলে ধরা হয়। এ বিষয়টি নিয়ে আমাদের এখানে প্রতিবাদ দূরে থাক, টুঁ শব্দটি পর্যন্ত অনেকেই করে না। তারা ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতায় এতটাই আচ্ছন্ন যে, মনে করে ভারত যা বলে তা-ই সত্যি। আমাদের আত্মমর্যাদা যে ক্ষুণœ করা হচ্ছে, তা তারা মানতেই চায় না। তাদের ভাবগতি দেখে মনে হয়, ভারত যদি আমাদের সব নিয়ে নেয়, তাতেও কোনো আপত্তি নেই। অথচ গত বছর যখন ৪৩ বছর আগে মীমাংসা হওয়া ছিটমহল চুক্তি বাস্তবায়ন করা হয়, তখন কলকাতায় এক ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে কথা হলে, তার মধ্যে কী আকুতিই না দেখেছি। তিনি হাহাকার করে বলে ওঠেন, আপনাদের তো অনেক বেশি জায়গা দিয়ে দিয়েছি দাদা। তার কথাবার্তায় এমন ভাব প্রকাশ হলো, যেন আমাদের সব দিয়ে দিয়েছে। তার এই হাহাকার দেখে আমাদের দেশের একশ্রেণির লোকের কথা মনে পড়ে। মনে হলো, ভারত যদি এই চুক্তি বাস্তবায়ন না করত বা ছিটমহলগুলো নিয়ে নিত, তাহলেও তাদের বোধকরি কোনো আপত্তি থাকত না। যেমনভাবে আপত্তি করা হচ্ছে না, নামমাত্র মাশুলে ট্রানজিটের নামে করিডোর দিয়ে দেয়া নিয়ে। মানবিক কারণে বিনা মাশুলে ভারতের এক রাজ্য থেকে আরেক রাজ্যে খাদ্য সরবরাহ করা নিয়ে। এখন আবার সে বিনা মাশুলে সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করার আবদার করছে। এর অর্থ হচ্ছে, নিজ দেশের বন্দর ব্যবহার করার মতোই সে বাংলাদেশের বন্দর ব্যবহার করতে চাচ্ছে। অথচ আমাদের জীবনমরণ সমস্যা হয়ে থাকা অভিন্ন নদ-নদীর পানির ন্যায্য অধিকার না পাওয়ায় উত্তরাঞ্চলের বিশাল অংশ মরুভূমিতে পরিণত হওয়াসহ উপকূল যে লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে, এ নিয়ে কোনো কথা নেই। আমাদের কৃষক পানির অভাবে কৃষিকাজ করতে পারছে না, তাদের জীবনধারা বদলে গেছে, জীবনযাপন কঠিন হয়ে পড়েছে, পরিবেশ-প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র্যসহ আবহাওয়া পরিবর্তনজনিত কারণে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে, এগুলো নিয়ে কোনো সভা-সেমিনার নেই। এক তিস্তা চুক্তি নিয়ে ভারত কত অজুহাত ও টালবাহানা করছে। নিজেরা যে পানি ধরে রেখে কাজে লাগাব, সেই বিকল্প গঙ্গা ব্যারাজ নিয়েও ভারতের কত আপত্তি! সীমান্তে পাখির মতো গুলি করে মানুষ মারা থেকে শুরু করে ধরে নিয়ে নির্যাতন করা এবং পিটিয়ে মেরে ফেলার মতো ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। এসব অত্যাচার দেখেও আমাদের অনেকের মধ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া হয় না। ভাবটা যেন এমন, ভারতই তো করছে, অন্য কেউ তো করছে না। কারো কারো মনোভাব এমন যে, ভারত বিশাল দেশ, আমাদের বড় প্রতিবেশী, তার তরফে অমন একটু-আধটু নিপীড়ন হতেই পারে। তারা এটা ভাবে না, আমরা ছোট হলেও ৩০ লাখ মানুষের আত্মদান এবং লাখ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে স্বাধীন হয়েছি। পাকিস্তানের মতো শক্তিকে পরাজিত করে আত্মমর্যাদাশীল জাতিতে পরিণত হয়েছি। ছোট বলে তার ওপর অত্যাচার করার অধিকার যেমন কারো নেই, তেমনি তা সহ্য করাও উচিত নয়। ভারতের যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকর বাংলাদেশ সফর করে গেলেন, গত ১ অক্টোবর ভারতের উত্তরখ- প্রদেশের পৌরি গাঢ়ওয়াল এলাকায় এক অনুষ্ঠানে রামের লঙ্কা জয়ের সাথে তুলনা করে সেই তিনি বলেন, ‘লঙ্কা জয় করে রাম যেমন তা বিভীষণকে দিয়েছিলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ক্ষেত্রেও ভারত তাই করেছে।’ পারিকরের এমন বক্তব্যের সরল অর্থ করলে দাঁড়ায়, বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ভারতের করুণায় এবং বাংলাদেশ স্বাধীন করে বাঙালিদের হাতে তুলে দেয়া ঠিক হয়নি। অবশ্য এসব কথায় আমাদের কিছু লোকের কিছুই যায় আসে না। তারা এসব বক্তব্য ‘গ্ল্যাডলি’ নেয়, সন্তুষ্টচিত্তে গ্রহণ করে। শুধু তাই নয়, ভারতের বিশ্ব হিন্দু পরিষদ কয়েক মাস আগে হুমকি দিয়ে বলেছে, বাংলাদেশের টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া দখল করে নেবে। বাংলাদেশের ১৭টি জেলা নিয়ে হিন্দুদের জন্য আলাদা আবাসভূমি প্রতিষ্ঠা করার কথাও বলেছে। এসব কথা যখন বলা হয়, তখন এসব কথার জবাব আমাদের এখান থেকে দেয়া হয় না।
চার.
ভারতের যে প্রতিরক্ষামন্ত্রী পারিকর বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে বক্তব্য দিয়েছেন, সেই তিনিই বাংলাদেশ সফরে এসে আমাদের সশ¯্র বাহিনীর সক্ষমতা ও সামর্থ্য বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছেন, যার সরলার্থ, ভারত আমাদের সশ¯্র বাহিনীকে সাজিয়ে-গুছিয়ে সক্ষম করে তুলবে। এর বিশেষ অর্থ হচ্ছে, সে বাংলাদেশকে ক্রমান্বয়ে তার ওপর একটি নির্ভরশীল রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়, যা সে ভুটান ও নেপালের ক্ষেত্রে করেছে। বিলম্বে হলেও নেপাল এর প্রতিবাদ করছে। আমাদেরও বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে ভাবতে হবে। কারো প্রভাব বলয়ে আবদ্ধ হওয়া ঠিক নয়। এতে প্রভাবিত বা হস্তক্ষেপের শিকার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের মানুষকে সচেতন হতে হবে। সরকারকেও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে বুঝে-শুনে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।