মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইনকিলাব ডেস্ক : ফেলে যাওয়া ফসলের ক্ষেত, জনশূন্য আগুনে পোড়া গ্রাম। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকার মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় এই দৃশ্যই এখন চোখে পড়ে। গত দু মাস সাংবাদিক অথবা সাহায্য সংস্থার কর্মীদের ঐ অঞ্চলে যাওয়া নিষিদ্ধ। তবে বিবিসি একজন বার্মিজ নাগরিককে ক্যামেরা দিয়ে সেখানে পাঠিয়েছিল। তিনিই গোপনে ছবিগুলো তুলেছেন। দেখা পেয়েছিলেন অল্প যে ক’জন রোহিঙ্গা মহিলার তাদের সাথে কথা বলেছেন তিনি।
বিবিসি’র হয়ে রাখাইন রাজ্যের একটি গ্রামের ছবি তুলেছেন ঐ ব্যক্তি যেটি দু’মাস আগেও ছিল রোহিঙ্গা মুসলিম ভর্তি একটি জনপদ। রোহিঙ্গারা চলে গেছে। গ্রামের ভেতর এখন বার্মিজ সৈন্য। রোহিঙ্গা গ্রামগুলোর ভেতর দিয়ে কয়েক ঘণ্টা চলার পর ক’জন রোহিঙ্গা নারীর দেখা পেয়েছিলেন বিবিসির ঐ প্রতিনিধি। সাথে কয়েকটি শিশু। তাদের ঘর-বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে। তাদের স্বামীরা কোথায়- এ প্রশ্নে তাদের একজন উত্তর দেয় ‘আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে’। অন্য আরেক মহিলা জানায় তার স্বামীকে সৈন্যরা ধরে নিয়ে গেছে। এক হিসাবে গত কয়েক সপ্তাহে ৩০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তাদের অনেকেই বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে। অনেক রোহিঙ্গা তাদের নিজেদের দুর্দশার ভিডিও তুলে বিবিসির কাছে পাঠিয়েছে। ফুটেজে এক মহিলাকে বলতে শোনা গেছে তার মেয়ে, পুত্রবধূ এবং বোনকে যৌন হেনস্থা করা হয়েছে। কে করেছে? প্রশ্ন করলে তিনি বলেনÑ মিলিটারি।
‘ব্রা’র ভেতর টাকা লুকিয়ে রেখেছিলাম। সেগুলো জোর করে বের করে নিয়েছে’।
ক্যামেরার ফুটেজে আরেক মহিলাকে বলতে শোনা যায়, ‘ঘর থেকে বের করে ধানক্ষেতে নিয়ে ধর্ষণ করেছে। একবার নয়। বার বার। আমরা চিৎকার করেছি। বাঁচাবার কেউ ছিল না’।
অবশ্য এই মহিলারা যা বলছেন নিরপেক্ষভাবে তা যাচাই করা সম্ভব নয়। তবে এই ফুটেজটি এসেছে লংডন নামক একটি গ্রাম থেকে। ঐ গ্রাম থেকে অন্যান্য সূত্র থেকেও হত্যা এবং ধর্ষণের অভিযোগ পাওয়া গেছে। রেঙ্গুন থেকে বিবিসির জোনা ফিশার জানান, বিদেশি কূটনীতিকদের মনোভাব দ্রুত বদলাচ্ছে।
সংশয় সত্ত্বেও এতদিন তারা অং সান সুচির বিপক্ষে কোনো কথা বলেননি। কিন্তু কূটনীতিকদের অনেকেই এখন বিস্মিত হচ্ছেন যে, রাখাইন রাজ্যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ নিয়ে সেনাবাহিনী এবং মিস সুচি একই সুরে কথা বলছেন।
মিস সুচির অফিস থেকে এখন নিয়মিত ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে যে, সেনাবাহিনী আইন মেনেই কাজ করছে। কোনো নির্যাতন তারা করছে না। বরঞ্চ রোহিঙ্গারাই তাদের বাড়িতে আগুন দিচ্ছে।
হিউম্যান রাইটস ওয়াচের ডেভিড ম্যাথিসন বিবিসিকে বলেন, মানবাধিকারের রক্ষক হিসেবে যে উঁচু অবস্থান তার ছিল, তা থেকে অং সান সুচি অনেকটাই সরে গেছেন। ‘তিনি কঠোর একজন রাজনীতিবিদ যাকে নির্মম একটি রাজনৈতিক পরিবেশে কাজ করতে হচ্ছে এবং সেনাবাহিনীর মতো নির্মম একটি প্রতিষ্ঠানের সাথে সমঝোতা করে চলতে হচ্ছে। দুঃখজনক হলেও সত্যিÑ যে মূল্যবোধ তিনি ধারণ করতেন, তাকে তিনি সরিয়ে রেখেছেন’।
তবে মিস সুচি চাপের ভেতর পড়েছেন। সেনাবাহিনীর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তদন্তে একটি কমিশন গঠন করেছেন। তবে তার প্রধান করা হয়েছে সিনিয়র একজন জেনারেলকে। ফলে ঐ তদন্ত যে নিরপেক্ষ সে সম্ভাবনা কম। আর সে কারণে রাখাইন রাজ্যে আসলে কী ঘটছে তার পুরো সত্য হয়তো জানা যাবে না। সূত্র : বিবিসি।
রোহিঙ্গাদের নিয়ে টেকনাফের স্থানীয় মানুষদের নেতিবাচক মনোভাব বদল
টেকনাফের কুতুপালং এলাকার একটি গ্রামে কয়েটি বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে পালিয়ে আসা কয়েকটি রোহিঙ্গা পরিবার। পরিবারের একটি পুরুষ সদস্য বলছিলেন কেন তাদের তিনি আশ্রয় দিয়েছেন।
‘এখান থেকে দেখছি হেলিকপ্টার উঠছে ওখানে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়া হচ্ছে। মানুষজন না খেতে পেয়ে পাগলের মতো হয়ে গেছে। তাই থাকতে দিয়েছি, ওরা ওখানে গেলে নাসাকা বাহিনী মেরে ফেলবে, এপারে বিজিবি ধরে ফেলবে’।
এই পরিবারটি মতো টেকনাফের স্থানীয় বাঙালিদের অনেকেই আশ্রয় দিয়েছেন রোহিঙ্গাদের। প্রশাসন জানতে পারলে ঝামেলা হতে পারে, তা জেনেও তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কুতুপালংয়ের পাশের একটি গ্রামে এক বাড়িতে আশ্রয় পেয়েছেন তিনজন রোহিঙ্গা মুসলমান। টেকনাফের স্থানীয় এই আশ্রয়দাতা মহিলা বলছিলেন, তার কাছে মনে হয়েছে জীবন বাঁচানো ফরজ। ‘পরেরটা পরে দেখা যাবে’। শুধু মানবিকতার কারণেই তিনি ওই তিনজনকে আশ্রয় দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গা মুসলমানদের বাংলাদেশে এসে বসবাস করার ইতিহাস দীর্ঘ। সহিংসতার জেরে তারা বিভিন্ন সময়ে পালিয়ে আসে টেকনাফে। আর বসবাস করে সেখানকার স্থায়ী-অস্থায়ী ক্যাম্পগুলোতে। তবে এখানে এসে নানা ধরনের অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তাই তাদের ব্যাপারে স্থানীয়দের রয়েছেন কিছুটা নেতিবাচক মনোভাব। কিন্তু গত দেড় মাস ধরে যে কয়েক হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান নতুন করে এসেছে তাদের ব্যাপারে কেন তাদের এই ইতিবাচক সাড়া?
যে মহিলা তার বাড়িতে পাঁচ সদস্যের গোটা পরিবারকে আশ্রয় দিয়েছেন, তিনি বলছিলেনÑ ‘ওরা এসে নির্যাতনের যে বর্ণনা দিয়েছে, তাতে তার শরীরে কাঁটা দিয়ে উঠেছে’। তিনি বলছিলেন, বাচ্চারা দিনের পর দিন না খেয়ে থাকছে, তাই তাদের আশ্রয় দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম বলছে, নতুন করে সহিংসতায় বাংলাদেশে ২১ হাজার রোহিঙ্গা প্রবেশ করেছে।
বরাবরই তাদের প্রবেশের বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের কঠিন অবস্থান ছিল। টেকনাফের স্থানীয় প্রশাসন থেকেও নিষেধ করা হয়েছে তাদের আশ্রয় না দেয়ার জন্য। তবে কেন এই নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও স্থানীয় বাংলাদেশিরা তাদের সাহায্য করছেন?
কুতুপালং গ্রামের আশ্রয়দাতা ব্যক্তিটি (নাম বলতে চাননি তিনি) বলেন, প্রশাসন জানলে তারা বিপদে পড়তে পারেন এই আশঙ্কায় কয়েকজনকে আশ্রয় দেয়ার কথা তিনি গোপন রেখেছেন।
ওই ব্যক্তি যে পরিবারটিকে আশ্রয় দিয়েছেন, তাদের মধ্যে দু’জন গুরুতর অসুস্থ ছিল। তিনি তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করেছেন। তবে এসব সাহায্য সবই গোপনে।
নাফ নদী থেকে ৩০০ রোহিঙ্গা ফেরত
নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টাকালে ৮টি নৌকা বোঝাই প্রায় ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে ফেরত পাঠিয়েছে বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়ন (বিজিবি)। বুধবার ভোরে সীমান্তের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে তারা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের চেষ্টা করেছিল।
এ প্রসঙ্গে টেকনাফ-২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী জানান, ভোরে নাফ নদী পার হয়ে সীমান্তের তিনটি পয়েন্ট দিয়ে রোহিঙ্গা বোঝাই আট নৌকা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল। এ সময় বিজিবির টহল দলের সদস্যরা তাদের ফেরত পাঠায়।
তিনি আরও জানান, গত ১ নভেম্বর থেকে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৩১ নৌকায় প্রায় দুই হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করার চেষ্টা করেছিল। পরে তাদের বাধা দিয়ে ফেরত পাঠানো হয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।