Inqilab Logo

রোববার ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

রাখাইন রাজ্যে নির্মূল অভিযানে বিপন্ন রোহিঙ্গা জাতিগোষ্ঠী

| প্রকাশের সময় : ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : ২০ বছর বয়সী রোহিঙ্গা মোহসেনা বেগম। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সাম্প্রতিক সহিংসতায় স্বামীকে হারিয়েছেন। নিজেও হয়েছেন ধর্ষণ-নির্যাতনের শিকার। হারিয়েছেন ঘর-বাড়ি। মোহসেনার মতো আরেক রোহিঙ্গা ওসমান গণি। মার্কিন বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া সাক্ষাৎকারে মোহসেনা ও গণি বর্ণনা করেছেন কীভাবে স্থানীয় আর সেনা সদস্যদের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে তাদের গ্রামের বাসিন্দাদের। এভাবেই ফেলে আসা পোড়া ঘর, ধর্ষণের দুঃসহ স্মৃতি, বীভৎস হত্যাকা- আর ছেড়ে আসা স্বজনের কথা উঠে আসে রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানুষের মুখ থেকে। উঠে আসে মিয়ানমার নামের এক জাতি রাষ্ট্রের সীমায় ‘অনাগরিক’তার দুঃসহ যন্ত্রণার গাথা।
এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, মোহসেনা ও গণির মতো এমন হাজারো রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দমন-নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ করলেও বিপরীতে মিয়ানমার সরকার দাবি করছে এগুলো ঘটনার অতিরঞ্জন। অথচ ঘটনাস্থলে বহিরাগতদের এমনকি সাংবাদিকদেরও প্রবেশে বাধা দিচ্ছে মিয়ানমার সরকার। আর মোহসেনার মতো নির্যাতিত রোহিঙ্গারা বলছেন, নিজেদের গ্রামে যে ভয়াবহতা দেখেছেন তা অতিরঞ্জিত করার দরকার পড়ে না। মোহসেনা মিয়ানমারের কাইরা ফারা গ্রামের বাসিন্দা। যেদিন ঘরহারা হয়েছেন সেদিনের স্মৃতি বর্ণনা করতে গিয়ে এপিকে তিনি বলেন, তারা আমাদেরকে ঘর-বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে। নারী ও পুরুষকে আলাদা আলাদা সারিতে দাঁড় করিয়ে, হাত ভাঁজ করে মাথার পেছনে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে বলেছে। মোহসেনা জানান, সকালের দিকে বাড়িতে বাড়িতে হানা দেয় মিয়ানমারের সেনারা। ঘর-বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়। এরপর গ্রামবাসীকে এক জায়গায় জড়ো হওয়ার জন্য বাধ্য করে। ওই অবস্থায় যারা ক্ষেত-খামারের দিকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে তাদেরকে গুলি করা হয়। আর তখন বেশিরভাগ মানুষই ভয়ে পালানোও বন্ধ করে দেন। স্থানীয় এবং সেনা সদস্যরা মিলে ৫০ জনের মতো লোক সম্মিলিতভাবে চার গ্রামের নেতাদেরকে ভিড় থেকে টেনে নিয়ে আসে এবং তাদের গলা কেটে দেয়।
মোহসেনা বলেন, চার গ্রাম্য নেতাকে হত্যার পর গ্রামজুড়ে সহিংসতা ভয়াবহ আকার ধারণ করে। অন্য কয়েকজন গ্রামবাসীর সঙ্গে তার ক্ষেতমজুর স্বামীকেও পিটিয়ে এবং গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহগুলোকে একটি ট্রাকে করে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলেও জানান মোহসেনা। তিনি জানান, হামলাকারীরা তার কোল থেকে ছেলেকে কেড়ে নিয়ে যায়। এরপর তাকে ধর্ষণ করে। কিন্তু সেনা সদস্যরা সেদিকে দৃষ্টিপাতই করছিলেন না। শেষপর্যন্ত ছেলেকে আঁকড়ে ধরে পাশের পাহাড়ের দিকে ছুটে যান। সেখানে দুইদিন লুকিয়ে থাকার পর তার ভাই তাকে ৩৮ ডলার সমপরিমাণ অর্থ দেয় যেন সে টাকাগুলো দালালদের দিয়ে মোহসেনা ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবির সদস্যরা তাদেরকে আটকে দেন। আর তাতে কান্না শুরু করেন মোহসেনা। তিনি বলেন, আমি তাদেরকে বললাম ওই দেশে আমাকে রক্ষা করার কেউ নেই। আমার সন্তানকে দেখুন। আমি ফিরে গেলেও মরে যাবে। মোহসেনা জানান, এরপর বিজিবি সদস্যরা তাকে ছেড়ে দেন। মোহসেনার মতো ঘরহারা আরেক রোহিঙ্গা ওসমান গণি জানান, গত ১১ নভেম্বর তার গ্রাম গৌজো বিলে হামলা হয়। নাফ নদীর কাছে দাঁড়িয়ে থাকা গণি এপির কাছে সেদিনের সেই ভয়াবহতার বর্ণনা দেন। আরবির শিক্ষক গণি বলেন, তারা আসল এবং নির্দয়ভাবে হত্যা করতে লাগল। তারা আমাদের ঘর-বাড়ি পুড়িয়ে দিল। আমাদেরকে বাঁচানোর কেউ ছিল না।
ওসমান গণি জানান, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে গ্রামের কাছাকাছি একটি জায়গায় লুকিয়ে ছিলেন। কিন্তু তল্লাশি জোরালো হওয়ায় এবং পুরুষদের লক্ষ্য করে করে সেনা সদস্যরা আক্রমণ শুরু করায় পরিবারকে রেখেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হন তিনি। গণি বলেন, তাদেরকে ফেলে আসা ছাড়া আমার অন্য কোনো উপায় ছিল না। আমি নদীর তীরে এলাম এবং সাঁতার কাটতে শুরু করলাম। এপি, ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • শেখ মোহাম্মদ হোসাইন ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:৫৭ এএম says : 0
    বিশ্ববাসীর উচিত তাদের পাশে দাঁড়ানো।
    Total Reply(0) Reply
  • ৮ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১:৪৮ এএম says : 0
    where human
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: রোহিঙ্গা


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ