Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমার যুদ্ধ বিমানের আবারো বাংলাদেশের আকাশ সীমা লঙ্ঘন

সীমান্তে ৮০ কি মি জুড়ে স্থল মাইন আতঙ্ক, কড়া প্রতিবাদও কেয়ার করছেনা মিয়ানমার, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকিয়ে রাখার দুরভিসন্ধি

বিশেষ সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ৭:৩২ পিএম | আপডেট : ৭:৫৩ পিএম, ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২২

সীমান্তে বাড়াবাড়ি নিয়ে বাংলাদেশের কড়া প্রতিবাদেও থামছেনা মিয়ানমারের ঔদ্ধত্তপূর্ণ আচরণ। এটি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ঠেকিয়ে রাখার দুরভিসন্ধি বলেই মনে করা হচ্ছে। গত রবিবার রাতেও মিয়ানরমার যুদ্ধবিমান বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে। রাত ১০টায় মিয়ানমারের সামরিক ড্রোনও নাইক্ষ্যংছড়ির বাইশফাঁড়ি এলাকায়

বাংলাদেশ অভ্যন্তরে ৩ বার ঢুকে পড়েছে বলে জানা গেছে।
পাশাপাশি নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ও ঘুমধুম ইউনিয়নসহ সীমান্তের ৮০ কিলোমিটার সীমান্তজুড়ে স্থলমাইন বসিয়ে আতঙ্ক সৃ্ষ্টি করে চলেছে মিয়ানমার।
বাংলাদেশ সীমান্তের সীমানা পিলার ৩৯, ৪০ থেকে ৪৫নং পিলার বরাবর মিয়ানমার অভ্যন্তরে ও নো-ম্যান্সল্যান্ডে এসব স্থলমাইন বসানো হচ্ছে বলে জানা গেছে। এ কারণে সীমান্তে বসবাসকারী বাংলাদেশী নাগরিকরা হতাহত হচ্ছে এবং আতঙ্কের মধ্যে রয়েছে।
সূত্র মতে, সীমান্তের জিরো লাইনে স্থলমাইন বসানোর বিরুদ্ধে কড়া প্রতিবাদ জানিয়ে বিজিবি একাধিক পত্র পাঠিয়েছে মিয়ানমার বিজিপির কাছে। তার পরও দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনী এক তরফা সিদ্ধান্তে স্থলমাইন বসিয়ে চলেছে। তারা বাংলাদের প্রতিবাদের কোন কর্ণপাতই করছেনা।
এতে গত ৪ দিনে মাইন বিস্ফোরণে মারা গেছে ২টি গরু। উপড়ে গেছে এক যুবকের পা। তুমব্রু মিয়ানমার সীমান্তে মাইন বিস্ফোরণে পা উড়ে যাওয়া উপজাতি অংথোয়াইং তংচইঙ্গার অপারেশন শেষে বর্তমানে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে।
প্রর্যবেক্ষকদের মতে হতে পারে মিয়ানমারের একরুখাভাব রোহিঙ্গা প্রত্যাসন ঠেকিয়ে রাখার জন্য এটি দুরভিসন্ধি।

এদিকে আরাকান আর্মির রাজনৈতিক উইং ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান এর মুখপাত্র খাইং থুখার রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে কথা বলেছেন। তিনি একাধিক শর্তে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তাতে রয়েছে, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আরাকান আর্মি ও রাজনৈতিক শাখা ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান এর সাথে আলোচনা করতে হবে।
আরাকান আর্মি ও ইউনাইটেড লীগ অফ আরাকান কে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের স্বীকৃতি দিতে হবে। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ও মুসলিম বিশ্বের দেশগুলোর প্রতি এই আহবান জানানো হয়েছে।
রাখাইন ও চিন স্টেটের পালেতোয়া টাউনশীপের লড়াই আরও তীব্র হবে এবং শত শত সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য তাদের দলে যোগ দিয়েছে বলেও দাবী করেছেন তিনি।

পর্যবেক্ষদের মতে এটিও বাংলাদেশ- মিয়ানমার বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে ফাটল ধরানোর আরেকটি কৌশল হতে পারে।

নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের ভেতরে গতকালও গোলাগুলির সংবাদ পাওয়া গেছে। দিনভর মোটামুটি শান্ত থাকলেও সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে বাড়ে গোলাগুলি। এদিকে সীমান্তের ওপারে রাখাইন ও চিন স্টেটের পালেতোয়া টাউনশিপের লড়াই আরও তীব্র হবে
বলে আভাস পাওয়া গিয়েছে। আরাকান আর্মির রাজনৈতিক উইং ইউনাইটেড লিগ অব আরাকানের মুখপাত্র খাইং থুখার তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক বার্তায় এমন তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, শত শত সেনা কর্মকর্তা ও সদস্য তাদের দলে যোগ দিয়েছে। এতে করে নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত পরিস্থিতি আরো সংঘাতপ্রবণ হয়ে উঠতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয়রা।

গত কিছুদিন ধরে এ পরিস্থিতি চলায় আতঙ্ক বিরাজ করছে বিস্তীর্ণ সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে। সীমান্তে গোলাগুলি ও ভীতিকর পরিস্থিতির মধ্যে প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার লোকজনকে সরিয়ে নেয়ার কথা ভাবছে স্থানীয় প্রশাসন। গোলাগুলি অব্যাহত থাকায় ইতিমধ্যে নিজ উদ্যোগে সীমান্ত এলাকার অনেকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে শুরু করেছেন এমন খবরও পাওয়া গেছে।

গত কাক পর্যন্ত ঘুমধুম সীমান্তের ৩৫টি স্থানীয় পরিবার এবং কোনারপাড়া শূন্যরেখার আশ্রয় ক্যাম্প থেকে আতঙ্কিত রোহিঙ্গাদের অনেকে ইতোমধ্যে সরে গিয়েছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে। ঘুমধুম ইউপির ৩নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোহাম্মদ আলম বলেন, গত রোববার রাতেও মিয়ানমারের মংডুর তুমব্রু, পানিরছড়া ও রাইম্মাখালী গ্রামগুলোতে প্রচণ্ড গোলাগুলি হয়েছে। গুলির শব্দে জেগে সময় কেটেছে সীমান্তে বসবাসকারীদের। আতঙ্কে ধান চাষ, ক্ষেত খামার ও শাকসবজির ক্ষেতেও যাওয়া যাচ্ছে না।

ইতোমধ্যে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি, ও পুলিশ সুপার (এসপি) মো. তারিকুল ইসলামসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উখিয়ার কুতুপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করে সীমান্ত এলাকায় যান। এসময় জেলা প্রশাসক ইয়াছমিন পারভিন তিবরীজি সাংবাদিকদের বলেন, দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সরকার।
তিনি আরো জানান,
সীমান্ত বিষয়ে জেলা প্রশাসন সার্বক্ষণিক নজরদারি রাখছে। সংঘাতপ্রবণ এলাকায় ঝুঁকির মুখে থাকা স্থানীয় বাসিন্দাদের সরিয়ে নিতে উচ্চ পর্যায়ে আলোচনা হয়েছে। আপাতত ৩০০ পরিবারকে সরিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করা হয়েছে। মূলত তুমব্রু, ঘুমধুম, ফাত্রাঝিরি সীমান্তের খুব কাছে বসবাসকারী পরিবারগুলোকে সরানো হবে। সরানোর পরিকল্পনায় থাকা পরিবারগুলোর আশ্রয়ের জন্য জায়গা খোঁজা হচ্ছে। মূল কথা সরিয়ে নেয়ার ব্যাপারে সব কিছু গুছিয়ে রাখা হয়েছে।

উখিয়া উপজেলার পালংখালী ইউপি চেয়ারম্যান গফুর উদ্দিন চৌধুরী জানান, গত শুক্রবার মিয়ানমার থেকে আসা গোলায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে হতাহতের ঘটনার পর উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করে। ইউএনও সেখানে নির্দেশ দিয়েছেন, সীমান্তের শূন্যরেখার ৩০০ থেকে ৫০০ মিটারের মধ্যে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে তালিকা তৈরি করার। ইতোমধ্যে জরিপ করে ঝুঁকিতে থাকা পরিবারের তালিকা করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লঙ্ঘন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ