Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ড. মোর্শেদকে অব্যাহতি আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খানকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া আন্তর্জাতিক মানবাধিকারের লঙ্ঘন বলে অভিহিত করেছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। গত বুধবার সংগঠনটির ওয়েবসাইটে এ তথ্য জানানো হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট আব্দুল হামিদ বরাবর একটি চিঠিতে এই মন্তব্য করে অ্যামনেস্টি। ড. মোর্শেদের নিরাপত্তাসহ একাধিক বিষয়ে জরুরি ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়ে ‘পদচ্যুত অধ্যাপক হুমকিতে’ শীর্ষক চিঠিতে বলা হয়েছে- প্রফেসর মো. মোর্শেদ হাসান খান রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। এমনকি পত্রিকায় মত প্রকাশের জন্য তাকে পেশাগত অবস্থান থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। ড. মোর্শেদ অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের কাছ থেকে একাধিক মৃত্যুর হুমকি পেয়েছেন। তাকে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় না যাওয়ার ব্যাপারে বলা হয়েছে। যেখানে তার ক্যান্সার আক্রান্ত স্ত্রী ও ছোট সন্তান থাকেন।
অ্যামেনেস্টির বিবৃতিতে বলা হয়- শুধু ২০১৯ সালেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) এর আওতায় ৭৩২ টি মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৩২৫ জনকে আটক করা হয়েছিল। দোষী প্রমাণিত হলে প্রফেসর মোর্শেদ যাবজ্জীবন কারাদন্ডের মুখোমুখি হতে পারেন। এমতাবস্থায় প্রেসিডেন্ট তথা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলরকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানানো হয়েছে।
অ্যামনেস্টির দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক গবেষক সুলতান মুহাম্মদ জাকারিয়া কলম্বো থেকে এই চিঠির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি ড. মোর্শেদ ও তার পরিবারকে নিরাপত্তা দেয়া এবং চাকরিতে পুনর্বহালের বিষয়ে সরকারের কাছে আবোন জানান। জাকারিয়া বলেন, সারাবিশ্বে প্রায় ৮০ লাখের মতো অ্যামনেস্টির সদস্য রয়েছেন। তাদের দ্বারা এধরনের মানবাধিকারের বিষয়ে বিষয়গুলো তত্ত্বাবধান করা হয়।
চিঠিতে অ্যামনেস্টি জানায়, একটি পত্রিকায় মতপ্রকাশের কারণে ঢাবির মার্কেটিং বিভাগের প্রফেসর ড. মোর্শেদ হাসান খানকে হয়রানি, ভয় দেখানোর বিষয়ে আমি উদ্বিগ্ন। রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগে এবং মৃত্যুর হুমকির মুখেই ঢাবি সিন্ডিকেট ড. মোর্শেদকে চাকরি থেকে বাদ দিয়েছে। এটি খুবই আশঙ্কার বিষয় যে, একজন একাডেমিক শুধু তার বাকস্বাধীনতার অধিকার প্রয়োগের জন্য তার জীবন আজ হুমকির মুখোমুখি। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত’ করার অভিযোগে তদন্ত কমিটির ত্রুটিপূর্ণ রিপোর্ট পর্যালোচনা ছাড়াই ড. মোর্শেদকে ১৯৭৩ সালের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আদেশের বিধি ৫৬(৩) এর অধীনে ‘নৈতিক স্খলন’ বা ‘অদক্ষতা’ এর ভিত্তিতে বরখাস্ত করা হয়েছে।
এছাড়া শুধু মতপ্রকাশের কারণে বাংলাদেশ দন্ডবিধি ১৮৬০ এর ১২৪(এ) ধারার অধীনে ড. মোর্শেদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হয়েছে। এ জাতীয় অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এতে ‘নাগরিক ও রাজনৈতিক অধিকার’ বিষয়ক আন্তর্জাতিক চুক্তি (আইসিসিপিআর) এর ১৯ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন করেছে।
অ্যামনেস্টি জানায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৩’র আদেশের ৫৬(৩) অনুসারে একজন শিক্ষককে কেবল- ‘নৈতিকস্খলন, অদক্ষতা, বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও চাকুরিবিধি পরিপন্থী’ কাজের সাথে যুক্ত থাকার অপরাধে টার্মিনেট করা যেতে পারে। তবে তদন্ত কমিটির মাধ্যমে তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে। এমনকি তদন্ত কমিটিতে শিক্ষক বা কর্মকর্তা কর্তৃক মনোনীত কোনো ব্যক্তি প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন। ততক্ষণ পর্যন্ত কোনো শিক্ষক বা কর্মকর্তা বরখাস্ত হবেন না। ড. মোর্শেদের বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির এক সদস্য উক্ত আইনের উল্লেখ করে কমিটির সিদ্ধান্তের বিষয়ে মতবিরোধের একটি নোট (নোট অব ডিসেন্ট) দিয়েছেন। তিনি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন যে ‘এই মামলায় একটি গুরুতর প্রক্রিয়াগত ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়েছে। যেহেতু বিধি ৫৬(৩) প্রদত্ত দুটি কারণের কোনোটিই নয়। প্রফেসর মোর্শেদ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালকে বলেছেন যে, ১৯৭৩ সালের আদেশের ৫৬(৩) বিধি তাকে তদন্ত কমিটিতে প্রতিনিধি রাখারও অধিকার দিয়েছে। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সেটা করা হয়নি’।
ড. মোর্শেদ জানান, অসাবধানতাবশত আমার একটি নিবন্ধে ‘বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি’র অভিযোগ তোলা হয়। এ নিয়ে সমালোচনা হলে আমি ওইদিনই তাৎক্ষণিকভাবে ক্ষমা ও দুঃখ প্রকাশ করে উক্ত প্রবন্ধে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যেসকল বাক্য ব্যবহৃত হয়েছে তা প্রত্যাহার এবং বঙ্গবন্ধুর প্রতি আমার সম্মান ও শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দেই। তবুও আমাকে চাকুরি থেকে অব্যাহতির সিদ্ধান্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯৭৩’র আদেশ এবং ঢাবির প্রথম স্ট্যাটিউটের সম্পূর্ণবিরোধী। আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের সবধরনের নিয়ম মেনে আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের বিরুদ্ধে বক্তব্য তুলে ধরেছি। আমার প্রতি কোনো ন্যায় বিচার করা হয়নি। বর্তমানে তাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসায় না যাওয়ার জন্য অজ্ঞাত ব্যক্তিরা হুমকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানবাধিকার-লঙ্ঘন
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ