Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আইজিপি বেনজির ও র‌্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার অর্থ কী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১, ১২:০৫ এএম

গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে পুলিশের এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন র‌্যাব এবং এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, তার ফলে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। এরা যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের জন্য অযোগ্য বলেও বিবেচিত হবেন।

আর র‌্যাবও প্রতিষ্ঠান হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের কাছ থেকে যেসব সহযোগিতা পাচ্ছিলো সেগুলো বাতিল হতে পারে। একইসঙ্গে নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত বেনজির আহমেদ ও র‌্যাবের মহাপরিচালক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনসহ র‌্যাবের আরও চারজন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার বিদেশে সম্পদ থাকলে সেগুলো বাজেয়াপ্ত হতে পারে।

গত শুক্রবার মার্কিন অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কন্ট্রোল অফিস (ওএফএসি) বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। যারা মানবাধিকার লঙ্ঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে নিষেধাজ্ঞায় উল্লেখ করা হয়েছে।

তবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, তারা এখনো মার্কিন এই রিপোর্ট দেখেননি এবং দেখার পর তাদের প্রতিক্রিয়া জানাবেন। কিন্তু হঠাৎ করে পুলিশ ও র‌্যাব প্রধান ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে র‌্যাবের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা ছয় কর্মকর্তার ওপর এমন নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ চলছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কারণ কী : ঢাকায় র‌্যাব সদর দফতরে ১১টি উইংয়ের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে র‌্যাব এবং দেশজুড়ে প্রতিষ্ঠানটির ১৫টি ব্যাটালিয়ান আছে সশস্ত্র বাহিনী ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে। এর আগে গুম খুনের মতো ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর তখনকার সেনা কর্মকর্তাকেও আটকের উদাহরণ আছে।

রাজনীতি বিশ্লেষক ও যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেন, দীর্ঘদিন যাবৎ র‌্যাবের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের কথা যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসনের কাছে মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছিলেন। তার চেয়ে বড় কথা হলো গত বছর অক্টোবর মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর কাছে সিনেটের আটজন সদস্য চিঠি দিয়ে র‌্যাবের বিরুদ্ধে কিছু সুস্পষ্ট অভিযোগ করেছিলেন। তারই ভিত্তিতে এমন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে আমরা ধরে নিতে পারি। সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে একত্রে কাজ করে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে সুস্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে বলা হচ্ছে অর্থ বা ট্রেজারি বিভাগের বক্তব্য থেকে।

এ নিষেধাজ্ঞার ফল কেমন হবে : বিএনপি সরকারের সময়ে ২০০৪ সালে র‌্যাব নামে এলিট ফোর্সটি যাত্রা শুরু করেছিলো। শুরু থেকেই মানবাধিকার সংগঠনগুলো এর কাজের ধরণ ও কর্মকান্ড নিয়ে তীব্র সমালোচনা করে আসছে। কিন্তু এতদিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন গুম খুন নিয়ে নানা ধরণের বিবৃতি দিলেও সুনির্দিষ্টভাবে এই প্রথম কোন ব্যবস্থা নিল। সে কারণেই এর প্রতিক্রিয়া কেমন হবে তা নিয়েও আলোচনা শুরু হয়েছে নানা মহলে।

বিশ্লেষক আলী রীয়াজ বলেন, এর একটা হলো প্রশাসনিক। অর্থাৎ প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‌্যাব যেসব সহায়তা পাচ্ছিল বা বিভিন্ন কার্যক্রমে যুক্ত ছিলো বা বিদেশ থেকে সহযোগিতা পাচ্ছিলো নিষেধাজ্ঞার কারণে সেগুলো বাতিল হতে পারে। তার মতে সেটাই স্বাভাবিক, কারণ যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা এ নিষেধাজ্ঞার পর তাদের আর সহযোগিতা করবে না।

আলী রীয়াজ বলেন, সাধারণত এ ধরণের ব্যবস্থার মাধ্যমে কিছু বার্তা দেয়া হয়। সেটা হলো প্রতিষ্ঠান হিসেবে র‌্যাবের বিরুদ্ধে অভিযোগ ধর্তব্যের মধ্যে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। সুনির্দিষ্টভাবে কয়েকজন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থার কথা বলা হয়েছে অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা। তাদের যদি সম্পদ থাকে যুক্তরাষ্ট্রে সেগুলো বাজেয়াপ্ত করতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। বেনজির আহমেদ যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারবেন না। সুনির্দিষ্টভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ক্ষেত্রে তাকে অযোগ্য বলে বিবেচনা করা হবে। তবে তিনি মনে করেন সবচেয়ে বড় বিষয় হলো কূটনৈতিক চাপ। নিষেধাজ্ঞার ফলে এখন বাংলাদেশ সরকারের ওপর বড় ধরনের কূটনৈতিক চাপ তৈরি হল।

এখন কেন এমন পদক্ষেপ : বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠনগুলো দীর্ঘদিন ধরে গুম-খুনসহ নানা অভিযোগ তুলে ধরছিলো র‌্যাবের বিরুদ্ধে। কক্সবাজারে কাউন্সিলর একরাম হত্যাকান্ডের মতো ঘটনা ফাঁস হওয়ার পর তা নিয়ে আলোচনার ঝড় উঠেছিল আন্তর্জাতিক মহলে।

তারও আগে নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের পর হত্যার ঘটনায় র‌্যাবের ১৬ জনের মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেয় আদালত যা এখনো উচ্চ আদালতে বিচারাধীন আছে। যদিও বাংলাদেশে জঙ্গি সংগঠন জেএমবির উত্থান যখন হয়েছিল, তখন শায়খ আব্দুর রহমান এবং বাংলা ভাই নামে পরিচিত সিদ্দিকুল ইসলামসহ মূল জঙ্গিদের গ্রেফতারের বিষয়কে র‌্যাবের সাফল্য হিসেবে দেখা হত।

কিন্তু র‌্যাব প্রতিষ্ঠার ১৭ বছরে বিভিন্ন সময় বিচারবহির্ভ‚ত হত্যাকান্ড বা গুমের অনেক ঘটনা বাহিনীটিকে বিতর্কে ফেলেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি বিভাগ বলছে অন্তত ছয়শ’ মানুষকে গুমের অভিযোগ আছে র‌্যাবের বিরুদ্ধে।
গত শুক্রবার ট্রেজারি বিভাগের রিপোর্টে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র‌্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগ, আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।

আলী রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান বাইডেন প্রশাসন বারবার মানবাধিকার ও গণতন্ত্রের কথা বলছেন এবং এ মুহূর্তে ওয়াশিংটনে গণতন্ত্র নিয়ে ভার্চুয়াল সম্মেলন হচ্ছে। যেখানে একটা বিষয় মানবাধিকার। আবার যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্র দফতরের ওপর চাপ তৈরি হয়েছিলো সিনেট থেকে। সেখানে আটজন সদস্য চাপ দিয়েছিলেন।

ফলে কংগ্রেসের ওপর থেকে চাপ ছিল ও আছে। আর দ্বিতীয় নতুন প্রশাসন শুরু থেকেই বলার চেষ্টা করেছিলেন যে মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও কর্তৃত্ববাদের বিষয়ে গুরুত্ব দেয়া হবে। তার সঙ্গে সঙ্গতি নিয়েই ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। আর এটা শুধু বাংলাদেশ নয়, অনেক দেশ নিয়েই নেয়া হচ্ছে। এখনকার কারণ সম্পর্কে আলী রীয়াজ মনে করেন নতুন প্রশাসন আসলে একটা দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে চাচ্ছেন যে তারা কার্যকর ব্যবস্থা নিচ্ছেন। সূত্র : বিবিসি বাংলা।



 

Show all comments
  • Md Masidul Islam ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৫ এএম says : 2
    যারা আমেরিকান দের তথাকথিত মানবাধিকার রক্ষার নামে পৃথীবির বিভিন্ন দেশে বিশেষ করে প্যালেস্টাইন ইরাক আফগানিস্তান মায়ানমার লিবিয়ায় যে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন ইসরাইলিদের দ্বারা করাচ্ছে ও নিজেরা করছে তার পক্ষের লোকেরাই আমেরিকার এই সিদ্ধান্তের জন্য খুশি হয়েছে অর্থাৎ এরা সবাই ইহুদী নাসারাদের পক্ষের এবং ইসলাম ও দেশের বিরোধী!
    Total Reply(1) Reply
    • Md Helal Karim ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৫ এএম says : 0
      ভাই এখানে ইসলামের কথা আসে নাই। এসেছে র‌্যাব/পুলিশ এর কথা।
  • Md Rubel Chowdhury ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৬ এএম says : 0
    এ সরকারের বিরুদ্ধে কঠোর ভাবে পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার প্রধান বাধা হচ্ছে বর্তমান সরকার
    Total Reply(0) Reply
  • Mohammad Ahsanuzzaman Fahim ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
    এমন সিদ্ধান্ত হঠাৎ করে হয় না। বহু তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাই করার পর সময় নিয়ে তারপর এমন সিদ্ধান্তে পৌঁছেছে আমেরিকার সরকার। সুতরাং বিবিসি বাংলার সাংবাদিক দের বলবো এমন করে সংবাদ পরিবেশন না করে আরও ভালো করে ঘটনা বুঝে শুনে রিপোর্ট তৈরি করতে।
    Total Reply(0) Reply
  • Tariful Mowla ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 3
    আমেরিকা মোদিকে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিলো, আর বর্তমানে সেই মোদির পা চাটে দিন-রাত! আর পৃথিবীতে জার্মানির হিটলারের পর এই আমেরিকাই বেশী মানুষ বিনা বিচারে নিরিহ মানুষ হত্যা করেছে, যুদ্ধ লাগিয়েছে বহু দেশে। কিন্তু তারাই মনবতার ভন্ডামি দেখায়... র‍্যাব যে ১০০% শুদ্ধ তা না, তবে সন্ত্রাস দমনে তাদের র‍্যাবের ভূমিকা অতি গুরুত্বপূর্ণ!
    Total Reply(0) Reply
  • Monjurul Islam ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৭ এএম says : 0
    মিয়ানমারের রোহিঙ্গা দিয়ে অশান্তি সৃষ্টি করতে চেয়েছিল আমেরিকা ব্যার্থ হয়ে নতুন কৌশল খুঁজছে শান্তিময় দেশকে অশান্তি করতে।
    Total Reply(0) Reply
  • Kabir Hossain ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ১:০৮ এএম says : 0
    এটা অন্যায় করা হয়েছে। আমরা শীগ্রই আমেরিকার সাথে সকল ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করে ফেলবো। লাগবেনা আমাদের আমেরিকা।
    Total Reply(1) Reply
    • ১২ ডিসেম্বর, ২০২১, ৮:৫৭ এএম says : 0

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মানবাধিকার লঙ্ঘন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ