Inqilab Logo

রোববার, ২৮ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ বৈশাখ ১৪৩১, ১৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

কার্বন ডাই অক্সাইড গিলে খাবে যে গাড়ি

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ২:২৬ পিএম

গাড়ি চলবে, অথচ দূষণ হবে না! কার্বন ডাই অক্সাইডের কালো ধোঁয়া গিলে নেবে গাড়িরই ইঞ্জিন। নতুন ধরনের পরিবেশবান্ধব চারচাকা বানিয়ে চমকে দিলেন একদল ছাত্র।

নেদারল্যান্ডসের আইনধোবেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ছাত্ররা এই যাত্রিবাহী বৈদ্যুতিন গাড়িটি তৈরি করেছেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘জেম’। গাড়িটি রাস্তা দিয়ে চলতে চলতে দূষিত বাতাস পরিষ্কার করবে বলে দাবি করেছেন নির্মাতারা।

বিশেষ এক ধরনের ফিল্টার এই গাড়ির ইঞ্জিনে লাগানো হয়েছে। বলা হচ্ছে, এই গাড়ি বাতাসে যত না কার্বন ডাই অক্সাইড ছাড়বে, ওই ফিল্টারের সাহায্যে তার চেয়ে বেশি কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নেবে। যার ফলে বিশ্ব উষ্ণায়নেও কিছুটা লাগাম টানা সম্ভব বলে মনে করছেন নির্মাতারা।

এই গাড়ি বছরে ২০ হাজার মাইল পথ পাড়ি দিতে পারে। বিশেষ ফিল্টারের মাধ্যমে বাতাস থেকে এক বছরে টেনে নেয় ২ কিলোগ্রাম কার্বন ডাই অক্সাইড। অর্থাৎ, এমন ১০টি গাড়ি এক সঙ্গে চললে একটি আস্ত গাছের সমান গুরুত্ব তৈরি হবে। একটি গাছ যে পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড বাতাস থেকে টেনে নেয়, সেই সমপরিমাণ গ্যাস টানবে ‘জেম’।

আপাতদৃষ্টিতে যাত্রিবাহী এই গাড়ির কার্বন ডাই অক্সাইড শোষণের ক্ষমতা খুব বেশি নয়। কিন্তু নির্মাতারা বলছেন, যদি ‘জেম’ সকলে ব্যবহার করতে শুরু করেন, আর অন্যান্য গাড়ি যদি সরিয়ে দেওয়া হয়, তা হলেই ঘটতে পারে বিপ্লব। সারা পৃথিবীতে ১০০ কোটির বেশি যাত্রিবাহী গাড়ি চলে। সব ক্ষেত্রে ‘জেম’ ব্যবহার করলে পরিবেশ দূষণ অনেক কমে আসবে, আশাবাদী তারা।

আপাতত গাড়িটিকে একটি প্রাথমিক রূপ দেওয়া হয়েছে। আগামী দিনে তা আরও উন্নত করার চেষ্টা করবেন বলে জানিয়েছেন আইনধোবেন ইউনিভার্সিটির ওই ছাত্ররা। তাদের দাবি, ‘জেম’-এ যে ফিল্টার ব্যবহার করা হয়েছে, তার ক্ষমতা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।

‘জেম’-এর ফিল্টার পুরোপুরি বিষাক্ত গ্যাসে ভর্তি হয়ে গেলে গাড়িতে চার্জ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। ফিল্টার ভর্তি হওয়ার আগে এই গাড়ি চালানো যায় ৩২০ কিলোমিটার পর্যন্ত। তার পর চার্জ দিয়ে ফিল্টার খালি করতে হয়।

আইনধোবেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ছাত্ররা জানিয়েছেন, গাড়িটিকে সম্পূর্ণ কার্বন মুক্ত করার লক্ষ্য নিয়ে তাঁরা এগোচ্ছেন। অর্থাৎ, যখন তাদের এই গাড়ির চাকা ঘুরবে, তখন একটুও বিষাক্ত গ্যাস যাতে না বার হয়, সেই চেষ্টা চালাচ্ছেন ছাত্ররা।

থ্রি-ডি পেইন্টিংয়ের মাধ্যমে গাড়িটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। ছাত্রদের মতে, ‘জেম’ যেমন টেকসই, তেমন দেখতেও চমৎকার। চারচাকার এই গাড়িটিকে অনেকটা স্পোর্টস কারের মতো দেখতে। জেনেশুনেই সেই রূপ দেওয়া হয়েছে ‘জেম’-কে। এতে দু’জনের বসার জায়গা রয়েছে।

আইনধোবেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির মোট ৩৫ জন ছাত্র এই গাড়ি তৈরির কাজে অংশ নিয়েছেন। সময় লেগেছে এক বছর। আগামী দিনে ‘জেম’ ঘিরে শিল্প গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।

পরিসংখ্যান বলছে, গাড়ির ধোঁয়ায় সারা পৃথিবীতে যে পরিমাণ বায়ুদূষণ হয়, তার ৬০ শতাংশের জন্যই দায়ী যাত্রিবাহী গাড়ি। সেই কারণেই এমন একটা গাড়ি তৈরির পরিকল্পনা করেছিলেন আইনধোবেন ইউনিভার্সিটির ছাত্রছাত্রীরা। শুধু গাড়ি থেকে বার হওয়া কার্বন ডাই অক্সাইডের পরিমাণ কমানোই নয়, তাদের লক্ষ্য ছিল গাড়ি তৈরির সময়েও যাতে কম দূষণ হয়।

‘জেম’-এ চার্জ দেওয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ এক ধরনের পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে। এর মাধ্যমে বাড়ির কাজেও প্রয়োজনে বিদ্যুৎ ব্যবহার করা যাবে। গাড়িটিকে একটি বাড়তি ব্যাটারি হিসাবে দেখতে পারেন ব্যবহারকারীরা।

গাড়িটির মাথায় বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল। তার সঙ্গেই চার্জিং প্রযুক্তির সংযোগ ঘটিয়েছেন ছাত্রছাত্রীরা। এর ফলেই ‘জেম’ আরও বেশি টেকসই হয়ে উঠেছে বলে মনে করা হচ্ছে।

গাড়িটির স্বত্বের জন্য আবেদন করবেন আইনধোবেন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির ৩৫ পড়ুয়া। তার তোড়জোড় চলছে।

আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে একটি প্রচারমূলক ট্যুরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ‘জেম’। আপাতত তা সেখানকার বিভিন্ন কোম্পানি ‌এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রদর্শন করা হচ্ছে বলে খবর। সূত্র: অটোউইক।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নেদারল্যান্ডস


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ