Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেনকে মোট সাড়ে ১৩ বিলিয়ন ডলারের সাহায্য দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের

রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা সফল হয়নি : হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৩ এএম | আপডেট : ১২:১৫ এএম, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২

ইউক্রেন এবং রাশিয়ান আক্রমণের ঝুঁকির মুখে থাকা অন্যান্য ১৮টি দেশকে দীর্ঘমেয়াদী সামরিক সহায়তার জন্য আরও ২০০ কোটি ডলার দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। মার্কিন সেক্রেটারি অফ স্টেট এন্টনি বিøঙ্কেন গতকাল ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ সফরের সময় এ ঘোষণা দিয়েছেন। এর ফলে ফেব্রæয়ারিতে রাশিয়ার অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে বাইডেন প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে দেয়া সম্মিলিত সাহায্যের পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে মোট ১ হাজার ৩৫০ কোটি ডলার।
এর মধ্যে, প্রেসিডেন্ট বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও ৬৭ কোটি ৫০ লাখ ডলারের সামরিক সহায়তা অনুমোদন করেছেন, প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড জে. অস্টিন বলেছেন, কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা এবং রাশিয়ার কাছে হারানো অঞ্চল পুনরুদ্ধার করার প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে চায়। ইউক্রেনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিøঙ্কেনের সফর ছিল রাশিয়ার অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে তার দ্বিতীয় সফর। স্টেট ডিপার্টমেন্ট নিরাপত্তার কারণে তার ভ্রমণের কথা আগে থেকে প্রকাশ করেনি। প্রতিরক্ষা সচিব অস্টিন ইউক্রেন কন্টাক্ট গ্রæপের একটি মাসিক সমাবেশে মিত্র প্রতিরক্ষা মন্ত্রীদের সাথে দেখা করার সময় বিøঙ্কেন এ সফরে গেলেন, যার লক্ষ্য ইউক্রেনে সামরিক সহায়তার প্রবাহকে সমন্বয় করা। তবে সামরিক বিশেষজ্ঞরা যুক্তি দেন যে, সাহায্য এখন পর্যন্ত অপর্যাপ্ত। পশ্চিমা সরঞ্জামের আগমন, বিশেষ করে দীর্ঘ-পাল্লার হিমারস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে খুব একটা সুবিধা দিতে পারছে না।
রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা সফল হয়নি : রাশিয়াকে দুর্বল করার চেষ্টা সফল হয়নি। গতকাল হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অরবান একথা জানিয়েছেন। ‘এগারো হাজার নিষেধাজ্ঞা বর্তমানে রাশিয়ার বিরুদ্ধে কার্যকর কিন্তু যুদ্ধ অব্যাহত রয়েছে এবং রাশিয়ানদের দুর্বল করার প্রচেষ্টা সফল হয়নি,’ এমটিআই সংবাদ সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে অরবান বলেছেন। হাঙ্গেরিতে শীতকালে ‘পর্যাপ্ত গ্যাস থাকবে’ এবং দেশের প্ল্যান্টে উৎপাদন বন্ধ করার দরকার নেই, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন। ‘প্রত্যেকের জন্য যথেষ্ট জ্বালানি থাকবে এবং যারা বিনিয়োগ করতে চায় এবং উৎপাদন করতে চায় তারা এখানে এসে বিনিয়োগ করতে পারে,’ তিনি যোগ করেন।
বালাক্লিয়া ঘেরাওয়ের কিয়েভের ব্যর্থ প্রচেষ্টা প্রতিহত : খারকভ অঞ্চলের সামরিক-বেসামরিক প্রশাসনের প্রধান ভিটালি গানচেভ গতকাল বলেছেন যে, ইউক্রেনীয় বাহিনী বালাক্লেয়া শহর ঘেরাওয়ের চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তারা তৎরতায় তা ব্যর্থ হয় এবং শহরটি মিত্র বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তিনি রসিয়া-২৪ টেলিভিশনকে বলেন, ‘বালাক্লেয়া এলাকায় ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী শহরটিকে ঘেরাও করে দখলের চেষ্টা করেছিল। তা সত্তে¡ও, তারা শুধুমাত্র কিছু এলাকা জুড়ে প্রতিরক্ষা লাইনকে কিছুটা ছিন্ন করতে সক্ষম হয়েছিল এবং তারপরে তাদের পেছনে ঠেলে দেওয়া হয়, শহরটি আমাদের নিয়ন্ত্রণে’।
গানচেভ বলেছেন, ইউক্রেনের সামরিক বাহিনী এ অঞ্চলে তাদের বসতি স্থাপনে গোলাবর্ষণ বাড়িয়েছে, শিশুদের প্রতিষ্ঠানসহ অবকাঠামোগত সুবিধাগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা এ মুহূর্তে জনসংখ্যার কেন্দ্রীভ‚ত স্থানান্তর ঘোষণা করিনি, তবে আমরা বলেছিলাম যে, কিছু লোক যদি শিশুদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যেতে চায় তবে মূলত এতে কোন বাধা নেই। গোলাগুলি আরো বেড়ে যাওয়ায় লোকেরা এখন শহর ছেড়ে চলে যেতে পারে।
মার্কিন সমর্থন ধরে রাখতে জেলেনস্কি সবকিছু করতে প্রস্তুত : রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বলেছেন, ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের সামরিক সমর্থন বজায় রাখতে যেকোনো পর্যায়ে যেতে প্রস্তুত।
তিনি গতকাল এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘জেলেনস্কি সবকিছু করছে এবং ইউক্রেনের নাগরিকদের দেখানোসহ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা বজায় রাখার জন্য সবকিছু করতে ইচ্ছুক, সবকিছু ঠিক আছে, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী চলছে’।
তার দৃষ্টিতে, খারকভের দিকে ইউক্রেনের পাল্টা আক্রমণের প্রচেষ্টার অর্থ হল পশ্চিমকে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহ চালিয়ে যেতে রাজি করানো। ক‚টনীতিক বলেন, ‘এ পদক্ষেপ জার্মানির রামস্টেইনে ইউক্রেন ডিফেন্স কন্টাক্ট গ্রæপের আজকের পঞ্চম বৈঠকের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এসব কিছুর উদ্দেশ্য এই ‘মিটিং’-এর অংশগ্রহণকারীদের সামরিক সরবরাহ আরো বাড়ানোর প্রয়োজন সম্পর্কে বোঝানো, প্রথমত, আধুনিক আক্রমণাত্মক অস্ত্র’।
খারকভে ইউক্রেনের গোলাবারুদ ডিপো নিশ্চিহ্ন : রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইগর কোনাশেনকভ গতকাল বলেছেন, রাশিয়ার সশস্ত্র বাহিনী ডিপিআর-এর জাপোরোজিয়ে অঞ্চল এবং খারকভ অঞ্চলের বালাক্লিয়ার আশেপাশে ক্ষেপণাস্ত্র ও গোলাবারুদসহ পাঁচটি ডিপো নিশ্চিহ্ন করেছে। তিনি বলেন, ‘কৌশলগত এবং সেনা বিমান চালনা, ক্ষেপণাস্ত্র বাহিনী এবং আর্টিলারি ইউক্রেনীয় ভ‚খÐে সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। কুরাখোভোর জাপোরোজিয়ে অঞ্চলের ট্রুডোভয়ে এর জনবহুল এলাকার আশেপাশে পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র/আর্টিলারি অস্ত্র ও গোলাবারুদ ডিপো নির্মূল করা হয়েছে’।
আভদেয়েভকাকে ঘিরে ফেলতে পেস্কির কাছে মিত্র বাহিনী : ডিপিআর পিপলস মিলিশিয়ার মুখপাত্র এডুয়ার্ড বাসুরিন বলেছেন, মিত্রবাহিনী পেস্কি গ্রাম থেকে টোনেনকোয়ে স¤প্রদায়ের দিকে পা বাড়াচ্ছে, যা আভদেয়েভকা শহরটিকে সম্পূর্ণরূপে ঘিরে ফেলা সম্ভব করবে, যেখান থেকে ইউক্রেনীয় সামরিক বাহিনী দোনেৎস্ক এবং মেকেয়েভকাকে বোমাবর্ষণ করে।
রাশিয়ার টিভি চ্যানেল ওয়ানকে তিনি বলেন, ‘আমরা পেস্কি এলাকায় পার্ভোমাইসকোয়ে, ওপিটনোয় এবং আরো টোনেনকোয়ে পর্যন্ত প্রবেশাধিকারের মাধ্যমে আভদেয়েভকাকে সম্পূর্ণরূপে ঘেরাও করার জন্য পাদদেশ প্রসারিত করছি’। তিনি স্মরণ করেন যে, মিত্রবাহিনী কোডেমা গ্রামের নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছে, যেটি ইউক্রেনের সেনাবাহিনী গ্রীষ্মের মাঝামাঝি থেকে রক্ষা করে আসছিল এবং যেখান থেকে তারা বারবার পাল্টা আক্রমণ করার চেষ্টা করেছিল।
বসুরিন ব্যাখ্যা করেন, ‘এটি একটি বড় দুর্গ, যা আর্টিওমভস্কের চাবিকাঠি। দক্ষিণ থেকে পরবর্তী প্রবেশদ্বার হল জাইতসেভো। এটি আসলে আর্টিওমভস্কের দরজা’। ‘সোলেদারেই তুমুল যুদ্ধ চলছে। আবাসিক এলাকার এই এলাকা মুক্ত করা খুবই কঠিন’।
কিয়েভের ক্ষতি সত্তে¡ও সঙ্ঘাতকে টেনে আনছে ইউক্রেন : বিদেশী গোয়েন্দা পরিষেবা পরিচালক সের্গেই নারিশকিন বলেছেন, ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং ইউরোপের মুখোমুখি অর্থনৈতিক সমস্যা সত্তে¡ও ওয়াশিংটন ইউক্রেনের সঙ্ঘাতকে দীর্ঘায়িত করতে চাইছে’।
‘গত কয়েক সপ্তাহের ঘটনাগুলো দেখায় যে, ইউক্রেনের সশস্ত্র গঠনগুলোর ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি এবং তার ইউরোপীয় উপগ্রহগুলো যে দারিদ্র্যের মুখোমুখি হতে পারে উভয়কেই উপেক্ষা করে ইউক্রেনের সংঘাত দীর্ঘায়িত করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যথাসাধ্য চেষ্টা করছে’ তিনি বলেন, রাশিয়ান হিস্টোরিক্যাল সোসাইটিতে একটি রাশিয়ান-চীনা গোলটেবিল আলোচনায় তিনি সভাপতিত্ব করেন।
নারিশকিন বিস্তারিতভাবে বলেছেন, ‘ইউক্রেনীয় রাষ্ট্রত্বের অন্তর্নিহিত ত্রæটিগুলোর সুযোগ নিয়ে আমেরিকানরা এবং তাদের মিত্ররা এ অঞ্চলকে রাশিয়ার ওপর আক্রমণের জন্য একটি স্প্রিংবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করেছিল এবং সেখানে সরাসরি নব্য-নাৎসিদের ক্ষমতায় বসিয়েছিল, যারা রাজনৈতিক সন্ত্রাসের বিরোধিতাকারীদের ভয় দেখায় এবং একটি সত্যিকারের গৃহযুদ্ধ শুরু করেৎ।
কর্মকর্তা জোর দিয়ে বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার আধিপত্য বজায় রাখতে সারা বিশ্বে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে। তিনি পূর্বদিকে ন্যাটোর স¤প্রসারণ সম্পর্কে রাশিয়ার উদ্বেগ এবং মার্কিন রাজনীতিবিদদের একটি সংখ্যক দ্বারা তাইওয়ানে ‘নিষ্পাপ, কৌশলহীন’ সফরের প্রতি সম্পূর্ণ অবহেলা উভয় ক্ষেত্রেই দেখা ‘সাম্রাজ্যিক অভিমান’-এর প্রকাশকে বিস্ফোরিত করেছেন।
নারিশকিন বলেন, ইউরোপীয় দেশগুলো কার্যত ওয়াশিংটনের অধীনস্থ হয়ে উঠেছে, বেশিরভাগ ইউরোপীয় রাজনীতিবিদ নাগরিকদের উচ্চাকাক্সক্ষা দ্বারা পরিচালিত হয়নি, বিশ্বব্যাপী আধিপত্য দাবি করার যে কোনো প্রচেষ্টা ইতিহাসে আগে ব্যর্থ হয়েছিল। তিনি উপসংহারে বলেন, ‘আমি আশা করি যে, মানবজাতির শেয়ার করা একটি সাধারণ ভাগ্যের চীনের ধারণা এবং বহু মেরুত্বের রাশিয়ার ধারণা উভয়ের ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের আরো টেকসই ব্যবস্থার মাধ্যমে মানবজাতি এ বৈশ্বিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসতে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হবে’। সূত্র : তাস, নিউইয়র্ক টাইমস।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ