মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ভারত বিশ্বের একটি শিল্পোন্নত দেশ হওয়ার চেষ্টা করছে। শিল্পে বিনিয়োগের জন্য, উদ্যোক্তা তৈরির জন্য বিভিন্ন নতুন নতুন সুযোগ সুবিধা দিচ্ছে সরকার। কিন্তু বিভিন্ন কারখানায় অগ্নিকাণ্ডের মত ঘটনা সেদেশে আকছার ঘটছে। আর এসব এসব দুর্ঘটনার বলি হচ্ছেন দরিদ্র শ্রমিক কর্মচারীরা।
প্রতি বছর ভারতে কর্ম ক্ষেত্রে নানারকম দুর্ঘটনায় শত শত লোক মারা যায়। পঙ্গু হচ্ছে আরও অনেকে। কেন্দ্রীয় একজন মন্ত্রী ২০২১ সালে পার্লামেন্টে দেয়া এক বিবৃতিতে বলেন, তার আগের পাঁচ বছরে কল-কারখানা, বন্দর, খনি এবং নির্মাণ শিল্পে কাজ করার সময় কমপক্ষে ৬,৫০০ লোক প্রাণ হারিয়েছে। শ্রমিক অধিকার নিয়ে কাজ করেন এমন লোকজন বিবিসিকে বলেছেন প্রকৃত সংখ্যা অনেক বেশি কারণ বহু দুর্ঘটনার খবর জানাই যায়না অথবা নথিবদ্ধ হয়না।
আন্তর্জাতিক শ্রমিক সংগঠন ইন্ডাস্ট্রি-অলের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ভারতে কর্মক্ষেত্রে মৃত্যুর সবচেয়ে বেশি ঘটনা ঘটছে কল-কারখানা এবং নির্মাণ খাতে। ঐ সংগঠনের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০২১ সালে ভারতে কলকারখানায় প্রতি মাসে গড়ে সাতটি করে দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গেছে যেসব দুর্ঘটনায় মারা গেছে কমপক্ষে ১৬২ জন শ্রমিক।
মিডিয়ায় প্রকাশিত এবং প্রচারিত বিভিন্ন খবর থেকে দেখা যায় কর্মক্ষেত্রে এসব দুর্ঘটনায় সবচেয়ে বেশি প্রাণহানি এবং পঙ্গুত্বের শিকার হচ্ছেন সেসব শ্রমিক যারা ছোটোখাটো এবং লাইসেন্স বিহীন কারখানায় কাজ করেন। ট্রাজেডির শিকার এসব শ্রমিক অধিকাংশ ক্ষেত্রেই খুব গরীব এবং তারা প্রধানত ভিন্ন রাজ্য থেকে বড় বড় শহরে কাজ করতে আসেন। দুর্ঘটনার পর তার প্রতিকারে বা ক্ষতিপূরণ আদায়ের জন্য আইনি লড়াই করার কোনো ক্ষমতা তাদের নেই।
এ বিষয়ে দিল্লি পৌর কর্পোরেশনের শ্রম বিষয়ক কমিশনার এবং কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের কাছে প্রশ্ন পাঠিয়েছিল বিবিসি। কিন্তু কোনও উত্তর আসেনি। দিল্লির একজন শ্রমিক নেতা রাজেশ কাশ্যপ বলেন রাজধানী এবং শহরতলীগুলোতে বহু কল-কারখানায় নিরাপত্তা বিষযক আইন-কানুন কখনই পুরোপুরি মানা হয়না। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার নজির খুবই কম।
কাশ্যপ এবং তার মতে আরও অনেক শ্রমিক নেতা অভিযোগ করেন, কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় মারা যাওয়ার মামলা বছরের পর বছর চলতে থাকে, এবং অভিযুক্তরা সহজে জামিনে মুক্তি পেয়ে যায়। দিল্লি পুলিশের দেয়া পরিসংখ্যান বলছে, গত পাঁচ বছরে রাজধানীতে বিভিন্ন কারাখানায় ৬৬৩টি দুর্ঘটনা নথিবদ্ধ হয়েছে যেসব দুর্ঘটনায় ২৪৫ জন মারা গেছেন। এসব দুর্ঘটনায় পর ৮৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
তবে শ্রমিক অধিকার কর্মীরা বলেন এসব দুর্ঘটনার প্রাথমিক তদন্তেই অনেক গরল থাকে। যদিও পুলিশের বক্তব্য - "অপরাধীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা" যাতে নেওয়া যায় তা তারা নিশ্চিত করেন। পুলিশ অবশ্য স্বীকার করছে, বেশ কিছু কারণে - যেমন, ফরেনসিক তদন্তের রিপোর্ট এবং বিশেষজ্ঞদের মতামত পেতে দেরি হওয়ার কারণে অনেক মামলায় অভিযুক্তরা খলাস পেয়ে যায়।
বিবিসি বেশ কতগুলো পরিবারের সাথে যোগাযোগ করেছে যারা এসব দুর্ঘটনায় ঘনিষ্ঠ স্বজন হারিয়েছে। নিহত অনেকেই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। ,কিন্তু আইনগত জটিলতা এবং অন্য আরও কিছু কারণে কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। ক্ষতিপূরণের এসব কিছুটা মামলায় শ্রমিক এবং তাদের পরিবারের পক্ষ হয়ে লড়েছেন এমন একজন সিনিয়র আইনজীবী বিবিসিকে বলেন, এসব মামলা বছরের পর বছর ধরে চলে।
অনেক সময় এসব দুর্ঘটনার পর সরকার তৎক্ষণাৎ আহত-নিহতদের পরিবারকে এককালীন কিছু সাহায্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করে, যাতে কোম্পানিগুলো বড় কোনো চাপে না পড়ে। এবং শেষ পর্যন্ত যখন মামলা শুরু হয় তখন ভিন রাজ্য থেকে কাজ করতে আসা বিধ্বস্ত, হতাশ শ্রমিক পরিবারগুলো হয়তো নিজেদের গ্রামে বা অন্য শহরে কাজের খোঁজে পাড়ি জমায়।
ভারত সরকার শ্রম আইন সংস্কারের কাজ শুরু করেছে। সেখানে শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ এবং নিরাপত্তার বিভিন্ন নূতন শর্ত যোগ করা হচ্ছে। তবে অধিকার কর্মীরা ভয় পাচ্ছেন প্রস্তাবিত নতুন আইনে শ্রমিক স্বার্থ আরও খর্ব হতে পারে। যেমন, আগের আইনে বলা ছিল কোনো কোম্পানিতে ১০ জনের বেশি কর্মী থাকলেই সেখানে নিরাপত্তা বিষয়ক একটি কমিটি করতে হবে। কিন্তু প্রস্তাবিত নতুন আইনে সেই সংখ্যা করা হয়েছে ২৫০।
কিন্তু ভারতের ২০১৬ সালের অর্থনৈতিক শুমারি অনুযায়ী দেশে অকৃষিখাতের মাত্র ১.৬৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে, ২ শতাংশ কারখানায় এবং নির্মাণ খাতের ১.২৫ শতাংশ কোম্পানিতে কাগজে কলমে ১০ বা তার অধিক শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে। ইনফরমাল বা অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির খাতেই ভারতের শ্রমশক্তির ৯০ শতাংশ মানুষ কাজ করে এবং সেখানকার পরিস্থিতি নিয়ে কোনো পরিসংখ্যানই আসলে নেই।
অনেক কোম্পানি এখন স্থায়ী নিয়োগের বদলে চুক্তি ভিত্তিক শ্রমিক-কর্মচারী নিয়োগ করছে। তাতে করে শ্রমিকদের অধিকার আরও বেশি করে খর্ব হচ্ছে বলে মনে করেন শ্রম অধিকার কর্মী এবং আইনজীবী সুধা ভরদোয়াজ। কাজের জন্য মরিয়া শ্রমিকরা ইউনিয়নের সদস্য হতে দ্বিধা করে। কোম্পানিগুলোর সুবিধার জন্য কর্মস্থলে পরিদর্শন নজরদারি অনেক শিথিল করছে সরকার।
বর্তমান আইনে কাজের জায়গায় নিরাপত্তা রক্ষা নিশ্চিত করার ক্ষমতা রয়েছে সরকারের শ্রম বিভাগের পরিদর্শকদের। কিন্তু নতুন প্রস্তাবিত আইনে তাদের ক্ষমতা কমানো হচ্ছে এবং তারা শুধু মালিক ও শ্রমিক পক্ষের মধ্যে মীমাংসাকারীর ভূমিকা পালন করতে পারবে। ফলে, বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কারখানা মালিকদের কাছে শ্রমিকদের নিরাপত্তার গুরুত্ব আরও কমছে। সূত্র: বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।