Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাগরে মৎস্য আহরণের সঙ্কট দূর করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২ সেপ্টেম্বর, ২০২২, ১২:০৪ এএম

নানাবিধ সমস্যা-সংকটে নাকাল অবস্থায় পড়েছে সাগরে মৎস্য আহরণকারী জেলেরা। একের পর এক বৈরী আবহাওয়া, নি¤œচাপের কারণে দিনের পর দিন জেলেদের নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে হয়। জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণ জণিত কারণে সাগরের মৎস্যক্ষেত্রগুলোতে মাছের সংকটের কারণে মৎস্য আহরণ খুব কম হচ্ছে। তদুপরি সরকারি নিষেধাজ্ঞার কারণে বছরের কয়েক মাস মাছ আহরণ বন্ধ রাখতে বাধ্য হলেও ভারতীয় জেলেরা বাংলাদেশ সীমানায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এতে মৎস্য শিকারে নিষেধাজ্ঞা কোনো কাজে আসছে কি না সে প্রশ্নও উঠেছে। জলবায়ুর পরিবর্তন ও সামুদ্রিক দূষণের কারণে যখন মাছের আকাল দেখা দিয়েছে, ঠিক সে সময়ে জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধি জেলেদের বাড়তি খরচ ও বাড়তি ঝুঁকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। ঝুঁকি ও লোকসানের ভয়ে মহাজনী দাদন নিয়ে জেলেদের অনেকেই মাছ ধরতে সাগরে যাওয়ার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছে। জেলেদের এই সংকট শুধু জেলে সম্প্রদায়ের সংকট নয়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তা, আমিষের চাহিদা পুরণ, হাজার হাজার জেলে পরিবারের কর্মসংস্থান এবং দেশের অর্থনীতির জন্যও এক অশনি সংকেত। এই সেক্টরের সুরক্ষা ও নিরাপত্তায় সরকারের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি হয়ে পড়েছে।

মৎস্য শুধুমাত্র মৎস্য নয়, খাদ্যেরও গুরুত্বপূর্ণ অংশ। বিশেষত প্রাণীজ আমিষের প্রধান উৎস। এমনিতেই খরা-বন্যাসহ নানাবিধ প্রাকৃতিক দুর্যোগে সারাবিশ্বে খাদ্যসশ্য উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। সেই সাথে ইউক্রেন যুদ্ধ, জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি ও রাসায়নিক সার ও সেচ সংকটের কারণে খাদ্য উৎপাদন ও সরবরাহ ব্যবস্থায় বাড়তি দুর্যোগ দেখা দিয়েছে। এহেন বাস্তবতায় মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা শুধুমাত্র অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির মানদন্ডে নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না। কোষাগারে পর্যাপ্ত অর্থ থাকলেও চাহিদা অনুসারে সময়মত খাদ্য আমদানির সুযোগ নাও থাকতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ আমাদেরকে তেমনই এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন করেছে। এ কারণে খাদ্য নিরাপত্তা এখন জাতীয় নিরাপত্তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সিলেটে ও উত্তরাঞ্চলে বন্যার কারণে খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ব্যাহত হলে তা আমাদের সামগ্রিক খাদ্য নিরাপত্তা ও সামাজিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপর বড় ধরণের প্রভাব সৃষ্টি করতে পারে। প্রতিক’ল বাস্তবতায় দিশেহারা ও নি:স্ব জেলে পরিবারগুলোকে নতুনভাবে কাজ শুরুর জন্য সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। নিষেধাজ্ঞার সময় জেলেদের জন্য বরাদ্দ খাদ্য ও অর্থ সহায়তার সঠিক ও সুষম বন্টন নিশ্চিত না হওয়ায় অনেক জেলে চরম দুর্ভোগের সম্মুখীন হচ্ছে। এ অবস্থার পরিবর্তন নিশ্চিত করতে হবে। চিংিড়ি ও মৎস্য রফতানি থেকে গত বছরও ৫ হাজার কোটি টাকার রফতানি আয় হয়েছে, সে খাতের সাথে জড়িত জেলেদের এমন দুর্দশায় সরকারের নিস্ক্রীয় থাকার সুযোগ নেই।

উজানে ভারতের বাঁধ নির্মান, পানি প্রত্যাহারের কারণে দেশের অধিকাংশ নদনদী নাব্য সংকটে পড়েছে। এর উপর নদনদীর উপর শিল্পকারখানার দূষণ, বেপরোয়া দখলবাজি, জলাভ’মি ভরাট ইত্যাদি কারণে প্রাকৃতিক জলাশয় থেকে মৎস্য আহরণের ক্ষেত্র ক্রমেই সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। তবে পরিকল্পিত মৎস্যচাষের মাধ্যমে চাহিদা পুরণে নতুন মাত্রা যুক্ত হলেও এটি কোনো টেকসই ব্যবস্থা নয়। সামুদ্রিক মৎস্য আহরণের মাধ্যমে আমিষের চাহিদা পুরণের পাশাপাশি চিংড়িসহ হিমায়িত মৎস্য রফতানির বিশাল সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর কার্যকর উদ্যোগ প্রয়োজন। সরকারের পরিকল্পনায় ইলিশসহ মৎস্যের প্রজননক্ষেত্র ও উৎপাদন বৃদ্ধির উদ্যোগ যখন সাফল্যের পথ দেখাচ্ছে, তখন শত শত ভারতীয় জেলে নৌকা বাংলাদেশের পানিসীমায় এসে মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। জুনমাসে ৮টি ট্রলারসহ শতাধিক ভারতীয় জেলে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডের হাতে আটক হওয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। বাংলাদেশে অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় জেলে নৌকার খুব কম সংখ্যকই কোস্টগার্ডের হাতে ধরা পড়ে বা তাদেরকে নিবৃত্ত করা সম্ভব হয়। আমাদের পানিসীমা থেকে ভারতীয় জেলেদের মাছ চুরি এবং নৌদস্যুতা বন্ধে কোস্টগার্ড ও নৌবাহিনীর টহল, নজরদারি ও নিরাপত্তাব্যবস্থা আরো বাড়াতে হবে। সাগরে মাছধরা জেলেদের মহাজনী দাদন ব্যবসার দাসত্ব থেকে মুক্ত করতে তাদেরকে সহজ শর্তে ঋণ ও সরকারি ভর্তুকি সহায়তা বৃদ্ধির উদ্যোগ নিতে হবে। সাহসী ও অভিজ্ঞ জেলেদের দক্ষতার সাথে আধুনিক প্রযুক্তি এবং সমন্বিত নিরাপত্তাব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে দেশের বøুইকোনমির অর্থনৈতিক সম্ভাবনা দিগন্ত উন্মোচনের নতুন উদ্যোগ নিতে হবে। জেলেদের জ্বালানি ভর্তুকিসহ ব্যক্তিগত ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রনালয়, স্থানীয় প্রশাসন, কোস্টগার্ড এবং মৎস্যজীবীদের সমন্বয়ে একটি গাইডলাইন ও কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে সামুদ্রিক জেলেদের সংকট উত্তরণের পদক্ষেপ নিতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: সাগরে মৎস্য
আরও পড়ুন