পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিগত এক যুগের অধিক সময় ধরে সরকারের তরফ থেকে অভূতপূর্ব উন্নয়নের কথা দেশের মানুষ শুনে আসছে। ক্ষমতাসীন দলের মন্ত্রী-এমপি ও নেতা-কর্মীরা অনবরত উন্নয়নের কথা বলছেন। সরকারি পরিসংখ্যানে মাথাপিছু আয়, জিডিপি বৃদ্ধিসহ সবক্ষেত্রে কেবল উন্নয়ন আর উন্নয়নের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। টেলিভিশন টক শো, পত্র-পত্রিকায় সরকারি ক্রোড়পত্র প্রকাশ, রাস্তা-ঘাটের বিলবোর্ড থেকে শুরু করে বিভিন্ন পুস্তকে উন্নয়নের পরিসংখ্যান ডিসপ্লে করা হয়েছে। ‘বাংলাদেশ উন্নয়নের রোল মডেল’ এ শ্লোগান শোনানো হয়েছে বহু কণ্ঠে বহুবার। বাংলাদেশ কানাডা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়ার মতো হয়ে গেছে বলে মন্ত্রী-এমপিদের কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। ক্ষমতাসীন দল থেকে এখন অবশ্য এই উন্নয়নের কথায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। আগের মতো কথায় কথায় উন্নয়নের কথা খুব একটা শোনা যায় না। এ ভাটার মধ্যে এবং সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যেও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলে ফেলেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতের মধ্যে আছে।’ তার এ মন্তব্য নিয়ে দেশব্যাপী সাধারণ থেকে অসাধারণ মানুষের মধ্যেও তোলপাড় হয়েছে। তিনি সমালোচনার তীরে বিদ্ধ হয়েছেন। অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি এই বেহেশতে থাকার কথার ব্যাখ্যা দেন। সাংবাদিকদের ওপর দোষ চাপিয়ে বলেছেন, ‘আমি বলেছি, অন্যদেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। তাদের তুলনায় আমরা বেহেশতে আছি। কিন্তু আপনারা এক্কেবারে উল্টা করে দিয়েছেন।’ তিনি আরও বলেছেন, অন্যদেশের তুলনায় আমরা অনেক ভালো আছি। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইংল্যান্ড, তুরস্ক, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মূল্যস্ফীতির সাথে তুলনা করে বলেছেন, আমরা ভালো আছি। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘আন্তর্জাতিক ও দেশের অবস্থাকে যদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে বাংলাদেশের অবস্থা অনেক দেশের চেয়ে ভালো।’ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘বেহেশতে আছি’ কথাটা আদৌ ঠিক নয়, বেহেশতে কোনো ধরনের বেচা-কেনার বিষয় নেই। সেখানে বিনামূল্যে কল্পনাতীত খানা-খাদ্য ও সুযোগ-সুবিধা চাইবামাত্র পাওয়া যাবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী আমাদের দেশকে যে বেহেশত বলেছেন, এখানে কোনো কিছুই বিনামূল্যে পাওয়া যায় না। মানুষকে সবকিছু কিনে খেতে হয়। বর্তমানে এই দেশে সাধারণ অধিবাসীদের পক্ষে এই কেনা-কাটা করা এতটাই কঠিন হয়ে পড়েছে যে, যতটুকু প্রয়োজন, ততটুকু কিনতে পারছে না। অসংখ্য অধিবাসী প্রয়োজনীয় খাবার কিনতে না পেরে খাওয়া কমিয়ে দিয়েছে, একবেলা খাওয়া বাদ দিয়েছে। ডাল-ভাত জোগাড় করতেও হিমশিম খাচ্ছে। এখানে সাড়ে ৩ কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বাস করে। ৪ কোটির বেশি মানুষ নি¤œবিত্ত এবং দরিদ্র হয়ে গেছে। এসব খবর প্রায় প্রতিদিনই দেশের বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত হচ্ছে। মো. তাজুল ইসলাম নির্দিষ্ট করে কোনো দেশের কথা না বললেও ‘অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছি’ বলেছেন। তার এ কথা অনুযায়ী, আমরা যদি উন্নত বিশ্ব বা আমাদের দেশের চেয়ে এগিয়ে থাকা দেশের সাথে তুলনা করি, তাহলে তাদের ‘অবস্থা খারাপে’র বিষয়টি আমাদের দেশের সচ্ছল মধ্যবিত্ত পরিবারের সাথে তুলনা করা যায়। কারণ, তাদের অর্থনৈতিক ভিত্তি এতটাই মজবুত যে, তা আমাদের সাধারণ মানুষের মতো একেবারে তলানিতে গিয়ে ঠেকেনি। তাদের অবস্থা খারাপের পরিমাপটি হতে পারে স্বাভাবিক দামের তুলনায় একটু বেশি দামে জিনিসপত্র কেনা। এতে তাদের খুব একটা সমস্যা হচ্ছে, তা বলা যায় না। যেমনটি বলা যায় না, জিনিসপত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া হলেও আমাদের ধনী শ্রেণীর কেনা-কাটা করতে অসুবিধা হচ্ছে। এখন মন্ত্রীদ্বয় যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ সাধারণ মানুষের দুর্দশার দিকে না তাকিয়ে ধনী শ্রেণীর দিকে তাকিয়ে এ কথা বলে থাকেন, তাহলে তাদের কথা সঠিক।
দুই.
আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের বর্তমান পরিস্থিতি কী, তা সম্প্রতি একটি দৈনিকের প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীসহ আটটি বিভাগীয় শহরের ৪০টি সীমিত আয়ের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, কারো কারো পরিবারে মাছ, গোশত ও দুধ বাবদ ব্যয় কমানো হয়েছে, বাইরে খাওয়া, ঘুরতে যাওয়া, কাজের ফাঁকে ফাঁকে একাধিকবার হালকা খাবার খাওয়া অনেকেই বাদ দিয়েছেন, সন্তানদের শিক্ষার পেছনে ব্যয় কমাতে বাধ্য হচ্ছেন, একেবারে অসহ্য পর্যায়ে না গেলে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে ব্যয় কমাচ্ছেন, স্বল্প দূরত্বের পথ রিকশার বদলে হেঁটে চলাচল করছেন। এই চিত্র যেসব পরিবারের সীমিত ও নির্ধারিত ইনকাম রয়েছে তাদের। প্রতিবেদনে অনেক পরিবারের কথা তুলে ধরা হয়েছে। একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক পরিবারের অভিভাবক বলেছেন, খাওয়ার সময় সন্তানদের মুখের দিকে তাকাতে কষ্ট লাগে। কারণ, দুই সন্তানের পাতে তাদের পছন্দের খাবার তুলে দিতে পারছেন না। নিত্যপণ্যের দাম এত বেড়েছে যে, সংসারের ব্যয় সামলাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। মাছ, গোশত কেনা কমিয়ে দিয়েছেন। ভাজি, ভর্তা, ডাল দিয়ে দুপুর ও রাতের খাবার খেতে হয়। এতো গেল নির্ধারিত ইনকামের পরিবারের কথা। যাদের তা ইনকাম নেই, দিন আনে দিন খায়, তাদের পরিস্থিতি কী, তা ব্যাখ্যা করে বলার অবকাশ নেই। গত সপ্তাহে পুরানা পল্টনের সিগনালে বসে ছিলাম, এক রিকশাওয়ালা বেশ চড়া গলায় বলছিল, ‘সরকার আমাদের হাতে ভিক্ষার থালা ধরিয়ে দিয়েছে।’ পাশের রিকশাওয়ালা বলল, ‘থালা কিনতেও তো পয়সা লাগবে। এই পয়সা পাবা কোথায়?’ তার পাশের রিকশাওয়ালা তাদের এই কথার প্রতিবাদ করতে গেলে তার উপর তারা ক্ষেপে যায়। কারণ, সে সরকারের পক্ষে। দুই রিকশাওয়ালা কথা দিয়ে তার উপর চড়াও হলে সে চুপ মেরে যায়। রিকশার যাত্রীরাও ঐ দুই রিকশাওয়ালার কথার সাথে সায় দেয়। এ ধরনের খÐ খÐ চিত্র সর্বত্র, যা সরকারের পক্ষে যায় না। সাধারণ মানুষ সরকারের কারণে দুঃখ-কষ্টে ও অভাবে পড়লে তাকেই দোষ দেবে। কারণ, সরকারের দায়িত্ব মানুষের জীবনযাপনকে সহজ করে দেয়া। নিদেনপক্ষে তিনবেলা যাতে খেতে পারে, এ ব্যবস্থা করা। আমাদের দেশের সাধারণ মানুষের এর চেয়ে বেশি কিছু লাগে না। তবে এই মৌলিক চাহিদায় যখন ঘাটতি দেখা দেয় কিংবা একবেলা কমে যায়, তখন তাদের রাগ, ক্ষোভ-বিক্ষোভ ঠেকিয়ে রাখা যায় না। এর সবকিছুই সরকারের উপর পড়ে। সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হিসেবে ধরে নেয়। তখন সরকারের বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্প বা উন্নয়নের কথা তাদের কাছে পরিহাসে পরিণত হয়। তাদের যদি তিনবেলা খাবার জোটে এবং পেট ভরা থাকে, তখন তারা সরকারের উন্নয়নের কথা শুনতে পছন্দ করে। সরকারের বড় বড় মেগা প্রকল্প তাদের কাছে সিনেমা দেখার মতো আনন্দদায়ক হয়ে উঠে। সিনেমার নায়ক-নায়িকাদের যেমন কাছ থেকে দেখা কিংবা ধরা ও ছোঁয়া যায় না, তারা কল্পলোকের ও স্বপ্নের মানুষ ভেবে নেয়, তেমনি বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর ও জনপ্রিয় প্রকল্পগুলোর উন্নয়নের ছোঁয়াকেও তারা সেভাবে দেখে। এ বাস্তবতা মেনে নেয়। যখন তাদের জীবনযাপন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে এবং পেটে খাবার দিতে নিদারুণ কষ্ট হয়, তখন সিনেমা দেখা দূরে থাক, তা দেখার মধ্যে কোনো উৎসাহ খুঁজে পায় না। স্থাপনাগত উন্নয়ন তাদের কাছে কঙ্কালের মতো মনে হয়। সরকারের উন্নয়নের কথা তাদের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা হারায়।
তিন.
সরকারের কথা অনুযায়ী উন্নয়ন যদি হয়ে থাকে, তাহলে হুট করে সাধারণ মানুষকে এত কষ্টে পড়তে হবে কেন? সরকার যতই বলুক, আন্তর্জাতিক বাজার বা সারাবিশ্বে একই অবস্থা, তা এখন আর সাধারণ মানুষের কাছে ধোপে টিকছে না। যে অভুতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে বলে বলা হচ্ছে এবং তার ভিত্তিটি যদি শক্ত হতো, তাহলে হঠাৎ বিপর্যয় নেমে এলেও রাতারাতি ধসে পড়ার কথা নয়। বটগাছের মূল শক্ত ও দৃঢ় হলে প্রচÐ ঝড়েও তা পড়তে সময় লাগে। সাথে সাথে পড়ে যায় না। সরকারের কথা মতো, উন্নয়ন হলে সেই উন্নয়নের ভিত্তিটি যে খুব একটা শক্ত, দৃঢ় ও টেকসই হয়নি, তা বিশ্ব অর্থনৈতিক মন্দার ঝড়ের কবলে পড়ে মাটির কাছাকাছি চলে যাওয়া থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। সরকার এখন অনেকটা দিশাহারা হয়ে তা সামাল দিতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে। এই যে ভিত্তিটি শক্ত হয়নি, তার অন্যতম কারণ দুর্নীতি। উন্নয়ন কর্মকাÐ শুরু করেছে বটে, তার সাথে দুর্নীতির বিষবৃক্ষটিও রোপণ করে দেয়া হয়েছে। উন্নয়নের কর্মসূচিতে যে অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে সে অর্থ নয়-ছয় করে লুটপাট করা হয়েছে। বিভিন্ন আর্থিক খাতসহ এমন কোনো গুরুত্বপূর্ণ খাত নেই, যেখানে কোনো না কোনো দুর্নীতি হয়নি। এসব দুর্নীতির সাথে যারা জড়িত তারা সরকারেরই কাছের লোকজন ও সুবিধাপ্রাপ্ত। নাহলে, বছরে প্রায় ৭২ হাজার কোটি টাকা পাচার হবে কেন? বছরের পর বছর ধরে উন্নয়নের অর্থ এই লুটেরা শ্রেণী নিয়ে গেছে এবং যাচ্ছে। দেশে উন্নয়নের জোয়ার চলছে বলে সরকার যে কথা বলেছে, এই জোয়ারে দেশের টাকা বিদেশে ভেসে যাচ্ছে। দেশে ভাটা পড়েছে। এতে দেশের কোষাগারে অর্থের সংকট দেখা দিয়েছে। হঠাৎ বিপর্যয় নেমে আসায় সরকার এখন তা সামাল দিতে পারছে না। সামাল দিতে ও অর্থের সংকট কাটাতে সরকার এখন জনগণের পকেটে হাত দিয়েছে। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষ পড়েছে নিদারুণ অর্থ সংকটে। বলার অপেক্ষা রাখে না, একটি দেশের উন্নতির অন্যতম শক্তি মুদ্রার মান বৃদ্ধি হওয়া। আন্তর্জাতিক মুদ্রা ডলারের তুলনায় তার মান কতটা বাড়ল, তা উন্নয়নের সূচক নির্দেশ করে। দেখা যাচ্ছে, আমাদের টাকার মান ডলারের তুলনায় এতটাই কমেছে যে, তা রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। টাকার মান সর্বকালের সর্বনি¤œ অবস্থায় রয়েছে। ৮৭-৮৮ টাকার এক ডলারের দাম ১২০ টাকা পর্যন্ত ঠেকেছে। আমাদের উন্নয়ন যদি এতটাই শক্তিশালী হয় এবং জোয়ার বইতে থাকে, তাহলে টাকার মান এত নিচে যাবে কেন? এর কারণ, আমাদের অর্থনীতি শক্তিশালী হয়নি। দুর্নীতি, লুটপাট ও পাচার শক্তিশালী হয়ে অর্থনৈতিক ভিত্তিটিকে দুর্বল করে রেখেছে। আর্থিক এই সংকট কাটাতে এখন সরকারকে জনগণের কাছ থেকে অর্থ আদায় ও বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হচ্ছে।
চার.
বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ এশিয়ায় খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি এখন ১৫ শতাংশ। এর মধ্যে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি ৮.৪ শতাংশ। এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো। তবে তা যে বাড়বে না, এ নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। সরকার যেভাবে জ্বালানি তেল, গ্যাস, সারের দাম বাড়িয়েছে এবং বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছে, তাতে সব ধরনের পণ্যের মূল্য যে আকাশ ছোঁয়া হবে, তা নিশ্চিত করেই বলা যায়। জ্বালানি তেল, সার, বিদ্যুৎ, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সার্বিক উৎপাদন খাত জড়িত। খাদ্য নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দেশের মূল ভরসা হয়ে রয়েছে কৃষিখাত। এই খাতের সাথে তেল, সার ও বিদ্যুৎ জড়িয়ে আছে। এসবের দাম বৃদ্ধির ফলে কৃষকের উৎপাদন খরচ বাড়বে। এই খরচ বাড়লে ফসলের মূল্যও বাড়বে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ায় এই মূল্যে সাধারণ মানুষ চাল, ডাল, শাক-সবজিসহ অন্যান্য কৃষিপণ্য প্রয়োজন অনুযায়ী কিনতে পারবে না। এসব বিষয় বিবেচনায় কৃষকরা চাষবাসে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। ইতোমধ্যে তাদের মধ্যে একধরনের অনীহা দেখা দিয়েছে। তাছাড়া সারের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন স্থানে সংকটও দেখা দিয়েছে। এর মধ্যেই অসাধু ব্যবসায়ীরা সার স্টক করে রাখছে। এমন নানাবিধ সংকটে দেশের খাদ্য উৎপাদনে নিদারুণ ভাটা পড়তে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশে খাদ্য উৎপাদন কমে গেলে বা ঘাটতি দেখা দিলে তা দুর্ভিক্ষাবস্থার ইঙ্গিত দেয়। তৃতীয় বিশ্বের অনেক দেশে এমন নজির দেখা গেছে। শুধু কৃষিপণ্য উৎপাদনই নয়, অন্যান্য পণ্যের উৎপাদন খরচও বেড়েছে এবং তা বাড়তেই থাকবে। সরকার তেল, গ্যাস, বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে তার ক্ষতিপূরণ করতে চাচ্ছে, সাধারণ মানুষের ক্ষতির দিকটি দেখছে না। সাধারণ মানুষকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দেয়ার ব্যবস্থা করছে। যতই দিন যাবে পরিস্থিতি যে অবনতির দিকে যাবে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। এখন অনেকে তিনবেলা খাবারের জায়গায় একবেলা কমিয়েছে, চলমান পরিস্থিতির অবনতি ঘটলে তা আরও কমে একবেলায় গিয়ে ঠেকতে পারে। দিনমজুর ও দরিদ্র মানুষের অবস্থা কী হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাষায় বেহেশত তখন দোজখের মতো হতে সময় লাগবে না। সরকার যে চরম অর্থসংকটে রয়েছে, তা ঋণ নেয়া এবং জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের পকেট খালি করে দেয়া থেকে বুঝতে অসুবিধা হয় না। সরকারও পড়েছে বিপাকে। কোষাগারে টান ধরায় বাধ্য হয়েই এই দুই প্রক্রিয়া অবলম্বন করছে। বিগত প্রায় ১৪ বছর ধরে যে উন্নয়নের কথা বলে আসছে, সেই উন্নয়ন যে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে সহায়ক হচ্ছে না, তা বুঝতে বাকি থাকে না। স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ মানুষ প্রশ্ন করতে পারে, তাহলে কী উন্নয়ন হলো? আমাদের এই দুর্দশা কেন?
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।