মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
মিয়ানমার থেকে গোপনে ভারতের মিজোরাম যাচ্ছেন হাজার হাজার শরণার্থী। গত বছরের পয়লা ফেব্রুয়ারি মিয়ানমারে সামরিক বাহিনীর ফের ক্ষমতা দখলের পর থেকেই দলে দলে আতঙ্কিত মানুষজন টিয়াউ নদী পেরিয়ে গোপনে মিজোরামে চলে যাচ্ছেন, আর সেই যাওয়া যেন থামছেই না।
এই শরণার্থীরা মূলত মিয়ানমারের চিন স্টেটের (প্রদেশ) বাসিন্দা, সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনীর নির্যাতন থেকে বাঁচতেই তারা ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। সোমবার (২৯ আগস্ট) বিবিসি বাংলার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। প্রতিবেদনটি ইনকিলাব পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।
বিবিসি জানায়, সবশেষ সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী-মিজোরামে এই শরণার্থীদের সংখ্যা প্রায় ৩১ হাজার, যদিও বিভিন্ন এনজিও বলছে আসলে সংখ্যাটা আরও অনেক বেশি। মিয়ানমারে ২০২০ সালের সাধারণ নির্বাচনে জিতে সে দেশের পার্লামেন্টের সদস্য হয়েছিলেন, এমন অন্তত ১৪জন এমপি-ও এই দলে আছেন।
ভারত সরকার তাদের শরণার্থীর মর্যাদা না দিলেও মিজোরামের রাজ্য সরকার ও স্থানীয় মানুষজন তাদের দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। গত দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে মিজোরামের প্রশাসন, বিভিন্ন এনজিও ও চার্চের সক্রিয় উদ্যোগে রাজ্য জুড়ে তাদের জন্য বহু আশ্রয় শিবির চালু করা হয়েছে।
মিজোরামের প্রত্যন্ত ও দুর্গম চাম্পাই হিলস এলাকার একটি শরণার্থী শিবিরে থাকেন মোয়েত অ্যালো শোয়ে সিন। তিনি মিয়ানমারের একটি প্রাইমারি স্কুলে বাচ্চাদের ইংরেজি পড়াতেন। বাবাসহ তার পরিবারের বেশ কয়েকজনকে যখন সৈন্যরা ধরে নিয়ে যায়, বাধ্য হয়ে পাঁচ মাস আগে তিনি ভারতে চলে যান।
জোখাওথর শরণার্থী ক্যাম্পের উঠোনে দাঁড়িয়ে তিনি বলেন, ‘পরিবারের বাকিদের ফেলে এভাবে চলে আসাটা মোটেই সহজ ছিল না। ঘন জঙ্গল আর পাহাড়ের ভেতর দিয়ে পুরো দশদিন লেগেছে ভারতে আসতে। দুদিন পথ চলার পরই হয়তো কোথাও সংঘর্ষ বা গণ্ডগোল, তখন আবার গা ঢাকা দেওয়া- আবার হয়তো টানা চব্বিশ ঘণ্টা পথ চলা, এভাবেই কোনওমতে সীমান্ত পেরিয়েছি আমি।’
চিন স্টেটের আরেক চাষী পরিবারের গৃহবধূ ছিলেন এস্থার। তিনি, মিয়ানমারের ‘সেপয়াঁ’, অর্থাৎ সিপাইরা যখন তাদের ক্ষেত আর বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় তারও ভারতে চলে যাওয়া ছাড়া কোনও উপায় ছিল না।
তিন বাচ্চা মেয়ে আর সবচেয়ে ছোট দুই বছরের কোলের ছেলেকে নিয়ে অন্য গ্রামবাসীদের সঙ্গে মিলেই ভারতের দিকে পাড়ি দিয়েছিলেন তিনি। তার স্বামী সেই দলে আসতে পারেননি, তিনি এখনও মিয়ানমারে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছেন। এস্থার মিজোরামে বসে মাঝে মাঝে তার খবর পান, কখনও দু-তিনদিন পর পর, কখনও বা দুতিন সপ্তাহ কেটে যায়!
চিন স্টেটে অন্তত দুটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী-চিন ডিফেন্স ফোর্স ও চিন ন্যাশনাল আর্মি সে দেশের সেনা ও প্রশাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র আন্দোলন চালাচ্ছে বহু দিন ধরেই। গত বছর থেকে সে দেশের গণতন্ত্রকামীরাও আর্মির বিরুদ্ধে নিয়মিত বিক্ষোভ দেখাচ্ছে, সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছে। সেই সঙ্গেই পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সেনাবাহিনীর ক্র্যাকডাউন ও নির্যাতন।
তবে চাম্পাইয়ের কাছে জোটে শরণার্থী শিবিরে বছর তিরিশের যুবক কোহ্ কোহ্ বলছিলেন, যে চিন বিদ্রোহীরা মিয়ানমারের সেনার বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছে, তাদের সঙ্গে তার কোনও সম্পর্কই ছিল না- তারপরও একদিন আর্মি এসে তাদের পুরো গ্রাম জ্বালিয়ে দিয়ে যায়। মোবাইলে নিজের দোতলা মাটির বাড়ির ছবি দেখাচ্ছিলেন তিনি, যেটা এখন পুরোপুরি ছাই হয়ে গেছে। মাত্র দুই মাসের শিশুকে কোলে নিয়ে সীমান্ত পেরিয়েছিলেন কোহ্ কোহ্-র স্ত্রী মেরেম, এখন তাদের বাচ্চার বয়স সবে এক বছর।
মিয়ানমারের সেপয়াঁর অত্যাচার থেকে পালিয়ে এসে ভিনদেশে নতুন জীবন পাবেন, এ তিনি স্বপ্নেও ভাবেননি। মিজোরামের আতিথেয়তায় শরণার্থী শিবিরেই নতুন করে সংসার পেতেছে এই পরিবারটি।
মিজোরাম কিন্তু এই হাজার হাজার বহিরাগতকে সাদরে অভ্যর্থনা জানিয়েছে, নিজেদের সাধ্যমতো তাদের আশ্রয় দিয়েছে- খাবারের ব্যবস্থা করেছে। গত দশ-বিশ বছরে মিয়ানমার থেকেই ভারতেরই অন্যত্র বেশ কয়েক হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থীরাও এসেছেন, বিভিন্ন ঝুপড়ি বা অস্থায়ী কলোনি তৈরি করে তারা বিভিন্ন শহরে বা তার আশেপাশে বসবাসও করছেন বহুদিন ধরে। জম্মু, হায়দ্রাবাদ বা দিল্লিতে এই রোহিঙ্গাদের প্রতি স্থানীয়দের যে ধরনের বিদ্বেষপূর্ণ মনোভাব চোখে পড়ে, মিজোরামে এই চিন স্টেটের শরণার্থীদের প্রতি কিন্তু সেই ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা।
মিজোরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা বলেন, ‘এদের সঙ্গে আমাদের রক্তের সম্পর্ক, এটা আপনাকে বুঝতে হবে। ঐতিহাসিক কারণে আমাদের মধ্যে হয়তো সীমান্তর বিভেদ তৈরি হয়েছে, কিন্তু মিজো আর চিন-রা আসলে একই জাতিগোষ্ঠীর।’
মিজো জাতীয়তাবাদের নায়ক ও একদা গেরিলা আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া জোরামথাঙ্গা আরও জানান, ‘আমার নিজের মা ও তার বোন ভারতের দিকেই জন্মেছেন ও মারা গেছেন। অন্যদিকে তাদের দুই ভাই, অর্থাৎ আমার দুই মামা-তাদের জন্ম ও মৃত্যু কিন্তু মিয়ানমারে। কাজেই আমরা একই পরিবার, শুধু সীমান্তের দুদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছি। আজ পরিবারের কিছু সদস্য ওদিকে বিপদে পড়েছেন, ফলে তাদের তো আমাদেরই সাহায্য করতে হবে, তাই না? এটা একান্তভাবেই আমাদের ফ্যামিলি ম্যাটার।’রাজ্যের শাসক দল মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের ভাইস-
প্রেসিডেন্ট ও সাবেক এমপি ভ্যান লালজাওমাও বলছিলেন, ‘মিজোরাম এদের আশ্রয় দিয়েছে, কারণ আমরা একই ক্ল্যানের, মিজো আর চিন-রা একই এথনিসিটির। ব্রিটিশরা ভাগ করার আগে আমরা সবাই একই ভূখণ্ডে ছিলাম, আজ যেটা মিজোরাম, মিয়ানমারে যেটা চিন হিলস এবং এখন যেটা বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম-এগুলোর সব জায়গাতেই আমরা থাকতাম।’
‘কিন্তু এরা তো সবাই আমাদেরই ভাই-বোন... এখন বিপদে পড়েছে, ওখানে ওদের পক্ষে থাকা খুব সমস্যা- তো আমরা কেন আশ্রয় দেব না বলুন তো?’, পাল্টা প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন তিনি।
মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের মহিলা শাখার প্রেসিডেন্ট কে লালরেংপুই জানান, তার জন্মস্থানের গ্রাম আর নদীর পার থেকেও শত শত মানুষ গত কয়েক মাসে মিজোরামে এসেছেন। তাদের সংগঠন সেই সব মানুষের খাওয়া-পরার ও থাকার ব্যবস্থা করেছে।
মিজো ন্যাশনাল ফ্রন্টের সদর দফতর ‘মিজো নাম রুনে’র কক্ষে বসে তিনি দুদিন আগে মিয়ানমারের চার এমপির সঙ্গে বসে বৈঠক করেছেন বলে জানান।
মিয়ানমার থেকে এখনও কত লোক আসছেন, কোন রুটে আসছেন এবং কোন কোন শিবিরে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হবে, সে সব নিয়ে তাদের মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বস্তুত মিয়ানমার থেকে আসা কাউকেই মিজোরাম ফেরাচ্ছে না।
সূত্র: বিবিসি বাংলা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।