Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মানুষের দরুণ পানিতে-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে খুৎবা-পূর্ব বয়ান

স্টাফ রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১২:৫৮ পিএম | আপডেট : ১২:৫৯ পিএম, ২৭ আগস্ট, ২০২২

পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা রুমের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের দরুণ পানি-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে। আজ জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতীব সাহেব এসব কথা বলেন।

রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতীব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান এদিন জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার নিয়ামত অশেষ-অফুরন্ত। তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে পানি। সুপেয় পানি আল্লাহ তা‘আলাই আসমান হতে নাযিল করেন এবং এর দ্বারা প্রাণিজ সবকিছু সৃষ্টি করেন (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৩০)।
আল্লাহ পাক সূরা নাহালের ১০ম ও ১১তম আয়াতে বলেন, তিনিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন; এ পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই বৃক্ষরাজি উৎপন্ন হয়, (উৎপন্ন হয় তৃণলতা) যাতে তোমরা পশুচারণ কর। এ পানিতেই মহান আল্লাহ তা‘আালা তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, জয়তুন, খেজুর ইত্যাদি নানা প্রকার ফল। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
কোরআনে আর এক স্থানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা যে পানি পান করো সে সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করে দেখেছ? তোমরা কি তা মেঘ হতে নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছে করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? (৫৮:৬৮)
আসমানে, জমিনে, পানিতে, স্থলে অন্তরীক্ষে তথা নিখিল বিশ্বে যা কিছু আছে সব মহান আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন, আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য। আফসোসের বিষয়, সৃষ্টির সেরা এই মানুষ তার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে যখন লিপ্ত হয় পাপাচারে, জুলুম অত্যাচারে, সৃষ্টি করে বিপর্যয়। সেসব অপরাধের অধিকাংশ আল্লাহ ক্ষমা করে দিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাযিল করেন আজাব গজব, যেন মানুষ তা আস্বাদন করে আল্লাহর পথে আবার ফিরে আসে। পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা রুমের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের দরুণ পানিতে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে।
কিয়ামত সম্পর্কিত একটি হাদীসে এমন কতগুলো আলামতের কথা বলা হয়েছে, যার অধিকাংশ এখন সংঘটিত হতে দেখা যাচ্ছে। এ হাদিসের শেষের অংশে বলা হয়েছে, তখন একের পর এক কঠিন বিপদ আসতে থাকবে যেমন, মালার সূত্র ছিন্ন হয়ে গেলে ঝরে পড়তে থাকে একের পর এক দানা।
সাম্প্রতিক সময় আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি, মানব যুদ্ধ-বিপর্যয় তো আছেই, সেই সঙ্গে আমরা দেখতে পাই নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও যার মাধ্যে রয়েছে নানা প্রকার ভাইরাসের আক্রমণ, অনাবৃষ্টি, প্লাবন ইত্যাদি। গত এক মাসের বিপর্যয়গুলোর মধ্যে দেখতে পাই, ইউরোপে ৫০০ বছরের বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা, এতে শস্য উৎপাদনে পড়েছে মারাত্মক প্রভাব। ভুট্টার উৎপাদন কমেছে ১৬ শতাংশ, সয়াবিন ১৫ শতাংশ এবং সূর্যমুখীর উৎপাদন কমেছে ১২ শতাংশ। চলমান তাপদাহে ইউরোপের প্রায় সব নদীই কিছুটা হলেও শুকিয়ে গেছে। পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ২০ শতাংশ। বড় ধরনের দাবানলে মুখে পড়েছে চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল। তাপ প্রবাহের কারণে টানা ১২ দিন রেড অ্যালার্ড জারি ছিল। চীনে চলমান দীর্ঘ এই খরার প্রভাব আগামী মাস পর্যন্ত স্থায়ী হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এতে আগামী মৌসুমে ফসলগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি কর্মকর্তারা।
চীনের সিচুয়ান প্রদেশের সরকার জানিয়েছে, সেখানকার পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের পানির স্তর প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। সেখানে শতাধিক কারখানায় আধারের পানির স্তর অর্ধেক হয়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে এ পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাজ প্রায় বন্ধে হয়ে গেছে।
এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৪৩টি বড় দাবানলে অন্তত ৫০০ হেক্টর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাবানলে আলজেরিয়ার পাহাড়ি এলাকায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে, আহতের সংখ্যা ১৮৩ জন। খতীব বরেন, অপরদিকে বিশ্বের কোথাও কোথাও গজব আকারে নেমে এসছে পাহাড়ি ঢল, ভয়াবহ বন্যা। আমাদের দেশেও সিলেট, সুনামগঞ্জে ভারত থেকে মারাত্মক পাহাড়ি ঢল আসায় সর্বস্বহারা হয়েছে অগনিত মানুষ। বিভিন্ন মিডিয়া, পত্র পত্রিকায় আমরা দেখেছি ও পড়েছি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যা। তেমনি ভারতের হিমাচল, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, জম্মু-কাশ্মির, উত্তরাখ-ে বন্যার তোড়ে ভূমিধসে ভেসে গেছে অনেক বাড়িঘর, ভারি বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে ঝাড়খ- ও উড়িষ্যা।
পানি-বৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এর অভাবে যেমন সৃষ্টি হয়েছে হাহাকার, মরু হয়েছে মানুষের বসবাসের অযোগ্য বিরান, তেমনি আল্লাহর দয়ায় এই ভয়াল মরুর কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে মরুদ্যান। আবিষ্কৃৃত হয়েছে মানুষের বসবাসযোগ্য এলাকা। মোজেজাও রয়েছে বহু। শিশু ইসমাইল (আ.)-এর কচি পায়ের আঘাতে মরুমাটি ও পাথর ফেটে বেরিয়ে এসেছে সুপেয় পানির ধারা মায়ে জমজম। প্রিয় নবী (সা.) এর হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত পানির ধারা প্রবাহিত হওয়ার মোজেজা রয়েছে অনেক। হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠির আঘাতে আল্লাহর হুকুমে ১২টি নহর প্রবাহিত হওয়ার ঘটনা তো পবিত্র কোরআনেই বর্ণিত আছে।
রহমাতুল্লিল-আলামীন এ জমিনেই শুয়ে আছেন বলেই আদ-সামুদ লুৎ ইত্যাদি কওমের নাফরমান লোকদের মতো পাইকারি গজবে ধ্বংস-নিশ্চিহ্ন হয়ে যাচ্ছে সেসব অপরাধ করা সত্ত্বেও এ যুগের জনপদ কেবল আল্লাহর পথে ফিরিয়ে আনার জন্য মাঝে মাঝে কোথাও কোথাও দেখা দেয় ভয়াবহ বিপর্যয়।
অতএব আমাদের তওবা করতে হবে। আল্লাহর কাছে সবিনয়ে প্রার্থনা জানাতে থাকতে হবে। সকল গর্হিত কাজ পরিহার করে ইবাদত বন্দেগি ও পুন্য কাজে মশগুল থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।

 



 

Show all comments
  • Karim Rashid ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১:২০ পিএম says : 0
    এ ধরনের আলোচনা আরো অনেক হওয়া উচিত। দৈনিক ইনকিলাব কে ধন্যবাদ জানাচ্ছি এ ধরনের আয়োজন এর জন্য।
    Total Reply(0) Reply
  • মনির হোসেন ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১:২০ পিএম says : 0
    আমাদের বিপদাপদ যদিও পাপের কারণে হয়, কিন্তু দয়াময় আল্লাহ তাআলা আমাদের সব গুনাহের পরিণামে শাস্তি দেননা। পদেপদে আমরা যেভাবে গুনাহ করছি, আল্লাহ তাআলা যদি আমাদের সব গুনাহের শাস্তি দিতেন তবে তো আমরা সুন্দরভাবে বাঁচতেই পারতাম না। আল্লাহ তাআলা আমাদের অনেক গুনাহ ক্ষমা করে দেন এবং শাস্তি বাতিল করেন
    Total Reply(0) Reply
  • Md Ali Azgor ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১:২০ পিএম says : 0
    মানুষের বিপর্যয়ের হাত থেকে রক্ষার জন্য অন্য যে গুণটি বিশেষ প্রয়োজন, তা হলো দায়িত্বশীল হওয়া। সৎকর্ম ও কর্তব্যপরায়ণতা ব্যতীত শুধু ইমান মানুষকে অনিষ্ট, অকল্যাণ ও অমঙ্গল থেকে সম্পূর্ণ রক্ষা করতে পারে না। অন্য যেসব বৈশিষ্ট্য বা গুণাবলি পারস্পরিক, যা সামগ্রিক ক্ষতি, অমঙ্গল ও অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য একান্ত জরুরি তা হচ্ছে সৎকর্ম, সদুপদেশ ও ধৈর্য তথা সহিষ্ণুতা ও সহনশীলতা।
    Total Reply(0) Reply
  • Karim Rashid = ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১:২০ পিএম says : 0
    জাতীয় মসজিদ থেকে এ ধরনের আলোচনা উঠে আসা উচিত এটি যুগ ও জামানার জন্য তথ্য গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।
    Total Reply(0) Reply
  • Ismail Sagar ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১:২১ পিএম says : 0
    সামাজিক ও জাতীয় দুর্যোগের কারণ হলো ‘আমর বিল মারুফ’ তথা ‘সৎকাজের আদেশ’ ও ‘নাহি আনিল মুনকার’ অর্থাৎ ‘অসত্কাজের নিষেধ করা’ ছেড়ে দেওয়া। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় হলো বিশ্বাস, সত্কর্ম, সদুপদেশ ও ধৈর্য।
    Total Reply(0) Reply
  • Kamrun Nahar Ruma ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১:২১ পিএম says : 0
    আল্লাহ বান্দার উপর যখন অনেক বেশি নারাজ হয়ে যায় তখন মানুষের উপর বিভিন্ন ধরনের বিপর্যয় দেয়। আর সেই বিপর্যয় থেকে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া আর কেউ উদ্ধার করতে পারে না। তাই বিপদে আল্লাহকে বেশি বেশি স্মরণ করা উচিত। যাতে আল্লাহ খুশি হয়ে বান্দাকে সকল বিপদ থেকে উদ্ধার করেন।
    Total Reply(0) Reply
  • কাজল হায়দার ২৭ আগস্ট, ২০২২, ১:২১ পিএম says : 0
    মুসলিম জাতিকে এমন নাজুক পরিস্থিতি থেকে ওঠে আসতে হলে- ইমানকে নবায়ন ও শাণিত করতে হবে। নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট হতে হবে। আল্লাহর আনুগত্য করতে হবে। একনিষ্ঠচিত্তে তার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। একজনের বিপদে অন্যজনকে এগিয়ে আসতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: খুৎবা-পূর্ব বয়ান

২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ