পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ইসলাম শান্তির ধর্ম। এ ধর্মের অনুসারীরা সর্বত্র শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে হাজার বছর ধরে নিঃস্বার্থে পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। মদিনা সনদ, হুদায়বিয়ার সন্ধিসহ বিদায় হজের ভাষণ এসবই শান্তির বার্তা। বর্তমানে বিধর্মীসহ শান্তির ধর্ম ইসলাম ধর্মালম্বীদের মাঝেও কিছু সামাজিক ব্যাধী লক্ষ্য করা যায়। যার ফলে সমাজ অস্থিরতা, বিশৃঙ্খলা ও অশান্তির কালো ছায়ায় আচ্ছ্বাদিত হচ্ছে। তন্মধ্যে আত্মহত্যা ও যৌতুক উল্লেখযোগ্য। গতকাল রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমে জুম্মার পূর্ব বক্তব্যে খতিব মাওলানা মাহবুবুর রহমান এসব কথা বলেন।
তিনি সকলকে উল্লেখিত বিষয়ের প্রতি সতর্ক করতে গিয়ে বলেন, আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ্, যার পরিণাম চিরস্থায়ী জাহান্নাম। যিনি আত্মহত্যা করছে কিংবা যার প্ররোচণায় আত্মহত্যার মতো ঘৃণীত কাজ সংগঠিত হচ্ছে উভয়ই জাহান্নামি। লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আমাদের সমাজে যতগুলো আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে তার সিংহভাগের সাথেই সমাজ ও পরিবারের মানুষ প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষভাবে জড়িত। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, প্রত্যেক জীবরই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে। আমাদের সর্বদা সচেষ্ট থাকা উচিত যাতে আমাদের মৃত্যুটা আল্লাহর প্রিয় বান্দাগণের মৃত্যুর মতো হয়। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেন ‘তোমরা নিজেদের হত্যা করো না, নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি পরম দয়ালু এবং যে কেউ সীমালঙ্ঘন করে আত্মহত্যা করবে তাকে অগ্নিতে দগ্ধ করা হবে এটা আল্লাহর পক্ষে সহজ (সূরা আন নিসা আয়াত-২৯,৩০)। আল্লাহ আরও বলেন, তোমরা নিজের হাতে নিজেদের জীবনকে ধ্বংসের মধ্যে নিক্ষেপ করো না (সূরা বাকারা-১৯৫)। হযরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি নিজেকে পাহাড়ের ওপর থেকে নিক্ষেপ করে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজেকে নিক্ষেপ করতে থাকবে। যে ব্যক্তি বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে, সেও জাহান্নামের মধ্যে সর্বদা ঐভাবে নিজ হাতে বিষপান করতে থাকবে। যে কোনো ধারালো অস্ত্র দ্বারা আত্মহত্যা করেছে তার কাছে জাহান্নামে সে ধারালো অস্ত্র থাকবে যার দ্বারা সে সর্বদা নিজের পেটকে ফুঁড়তে থাকবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে, সে দোজখে অনুরূপভাবে নিজ হাতে ফাঁসির শাস্তি ভোগ করতে থাকবে। আর যে বর্শা ইত্যাদির আঘাত দ্বারা আত্মহত্যা করে দোজখেও সে নিজেকে একই শাস্তি দেবে (ছহীহ্ বোখারি)। আরো একটি বর্ণনায় আছে যে নিজেকে যে জিনিষ দ্বারা হত্যা করবে, কেয়ামতের দিন তাকে সেই জিনিষ দ্বারাই শাস্তি প্রদান করা হবে।
আত্মহত্যাকারীর জন্য পরকালে কঠোর আজাবের ঘোষণা এসকল আয়াত ও হাদিস থেকে সুস্পষ্ট বোঝা যায়। এছাড়াও রাসূল (সা.) এর হাদীস ও পবিত্র কোরআনের আরো অসংখ্য জায়গায় নিজেকে ধ্বংস তথা আত্মহত্যার ব্যাপারে সতর্ক করা হয়েছে। আজকাল পত্রিকা, টিভিসহ সোশ্যাল মিডিয়ায় আত্মহত্যা সম্পর্কে প্রায় প্রতিদিনই সংবাদ পাওয়া যায় । বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মাঝে এমন প্রবণতা বেশি দেখা যাচ্ছে। যার প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় বখাটেদের উৎপাত, মা-বাবার ওপর অভিমান, পারিবারিক বিপর্যয়, মানসিক অশান্তি, প্রেমে বিচ্ছেদ, সন্ত্রাস, নারী নির্যাতন, সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা ইত্যাদি। তাই সমাজ থেকে আত্মহত্যা নিরসনে নিজে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি আত্মহত্যার ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বাণী পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে প্রচার করতে হবে। সেইসাথে যেসকল কারণগুলোতে অহরহ এহেন ঘৃণীত ঘটনা ঘটছে, সেগুলোও সমাজ থেকে বিতারিত করায় সর্বদা সচেষ্ট থাকতে হবে। মনে রাখবেন, আত্মহত্যা নয় আত্মশুদ্ধিই মুক্তির একমাত্র মাধ্যম।
খতিব বলেন, আত্মহত্যাসহ সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির পেছনে আরো একটি কারণ ‘যৌতুক’। যা একটি পরিবারকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়ার জন্য যথেষ্ট। ইসলামী শরিয়তের পরিভাষায় যৌতুক নেয়া কবিরা গুনাহ্। ইসলাম যৌতুককে কখনোই সমর্থন করেনি বরং দেনমোহরকে বাধ্যতামূলক করেছে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় আজ সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে নানাভাবে যৌতুক প্রথা প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এবং দেনমোহরের বিষয়টি অজ্ঞতা ও অবহেলায় কাগজে কলমে সীমাবদ্ধ রাখা হচ্ছে। যা সম্পূর্ণ ইসলামবিরোধী। বিবাহের মতো পবিত্র একটি বন্ধনের সূচনায় শেকড় এমন অপবিত্র ঘটনার মাধ্যমে বপণ হলে পরিণাম তো ভয়াবহ হবেই। বর্তমানে অধিকাংশ সংসার টিকছে না, টিকলেও কচুপাতার পানির মতো। প্রায়শই মিডিয়ার মাধ্যমে জানতে পারি, যৌতুকের প্রহসনে সদ্যবিবাহিতা নববধূর আত্মহত্যার খবর। এসবই ইসলামী শরীয়াহ্ থেকে বিচ্যুত হওয়ার কারণে সংঘটিত হচ্ছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন পবিত্র কোরআনের সূরা বাকারায় অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার ব্যাপারে কঠিন হুঁশিয়ারি প্রদান করেছেন। যৌতুকও অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করার মতো একটি বিষয়। পাশাপাশি যৌতুকের কারণে যেসকল অন্যায় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে, সেজন্যও যৌতুক গ্রহণকারী দায়ী। একইসাথে যৌতুক গ্রহণে উদ্বুদ্ধকারী ও সমর্থনকারীরাও জাহান্নামের ভয়বহ শাস্তি থেকে কখনই পরিত্রাণ পাবে না।
খতিব সকলকে আল্লাহর গজব ও আজাব থেকে রেহাই পাবার জন্য এবং সমাজে শান্তি ও শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার নিমিত্তে আত্মহত্যা, যৌতুক, অন্যের হক ও সম্পদ ভক্ষণ থেকে নিজেদের বিরত রাখার আহ্বান জানান। একই সাথে হতাশা, দুশ্চিন্তা, বিপদ থেকে মুক্তির জন্য অন্যায় ও গুনাহের পথ বেছে না নিয়ে ধৈর্যের মাধ্যমে আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনার পরামর্শ প্রদান করেন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি রুহুল আমিন জুমার বয়ানে বলেন, রাসূল (সা.) আল্লাহর কাছ থেকে যে সমাধানের বাণী নিয়ে এসেছিলেন, তার কোনো পরিবর্তন পরিবর্ধন না করে মানবজাতির কাছে পৌঁছে দিয়েছেন। রাসূল (সা.) ও সাহাবায়ে কেরামের অনুসরণ যারা করবে, তারই আখেরাতে নাজাত পাবেন। অনাচার-পাপাচার ও নাফরমানির কারণে মহামারি আসেন। এসব মহামারি থেকে বেঁচে থাকতে আল্লাহর কাছে বেশি বেশি তওবাহ ইস্তেগফার করতে হবে। খতিব বলেন, খরা, অনাবৃষ্টি ও বন্যার দরুণ দুর্ভিক্ষ খাদ্যাভাব দেখা দেয়। পাকিস্তানে বন্যায় ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভিক্ষ যদি চলে আসে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং রোনাজারি করতে হবে। এক ইঞ্চি জমিও খালি রাখা যাবে না। অপচয়কারীকে আল্লাহ পছন্দ করেন না। অপচয়কারী শয়তানের ভাই। বিদ্যুতের অপচয়, পানির অপচয়, খাদ্যর অপচয় কথার অপচয় এবং সময়ের অপচয় বন্ধ করতে হবে। সাগরের মাঝে থাকলেও এক ফোটা পানির অপচয় করা যাবে না। তিনি বলেন, গোনার কাজ ও নাফরমানি থেকে ফিরে আসতে হবে। খতিব বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। মশার উৎপত্তিস্থল ডোবা-নালা নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে। এ ব্যাপারে অবহেলার দরুণও আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে।
ঢাকা উত্তরা ৩নং সেক্টরের ঐতিহ্যবাহী মসজিদ আল মাগফিরাহ-এর খতিব মুফতি ওয়াহিদুল আলম বলেন, দাম্পত্য জীবনে, পারিবারিক জীবনে, কর্মজীবনে আজ সত্যবাদী লোকের বড়ই অভাব। অধিকাংশ মানুষ মিথ্যায় জর্জরিত। হাজারেও একজন সত্য কথার লোক পাওয়া যায় না। সত্য হলো আল্লাহর পথ যা মানুষকে মুক্তি দেয়, জান্নাতের পথ সুগম করে। আর মিথ্যা হলো কবিরা গোনাহ যা মানুষকে জাহান্নামে পৌঁছায়।
খতিব বলেন, নবম হিজরিতে ৩০ হাজার সাহাবীদের বিশাল কাফেলা তাবুকের যুদ্ধে ৪০ হাজার অস্ত্রে সজ্জিত রোমান সৈনিকদের বিরুদ্ধে গিয়েছিলেন। মুনাফিক ও অক্ষম সাহাবী ছাড়া প্রায় সকল সাহাবী অংশগ্রহণ করেন। বিনা ওজরে হজরত কাব বিন মালিক (রা.) হজরত হিলাল বিন উমাইয়া (রা.) হজরত মুররা বিন রাবি যুদ্ধে যাননি। তারা মিথ্যা না বলে অকপটে সত্যটা নবী (সা.) এর নিকট বলছিলেন। একটা পর্যায়ে ৫০ দিন পর তাদের তওবা কবুল হওয়ার আয়াত নাজিল হয়। সাময়িকভাবে কষ্ট হলেও সত্যের জয় হয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, হে ঈমানদারগণ আল্লাহতায়ালাকে ভয় করো, আর যা বলো সঠিক ও সত্য বলো। তিনি তোমাদের আমলকে বিশুদ্ধ করে দিবেন এবং তোমাদের গোনাহসমুহেকে ক্ষমা করে দিবেন। যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (সা.) কে অনুসরণ করে নিশ্চয় সে মহাসফলতা লাভ করে। (আহযাব ৭০,৭১)। আল্লাহতায়ালা আমাদের সকল ক্ষেত্রে মিথ্যা পরিহার করা ও মৃত্যু পর্যন্ত সত্যের ওপর মজবুত থাকার তৌফিক দান করুন- আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।