পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা রুমের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের দরুণ পানি-স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে। গতকাল জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে খতীব সাহেব এসব কথা বলেন।
রাজধানীর মহাখালীস্থ মসজিদে গাউছুল আজমের খতীব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান এদিন জুমার খুৎবা-পূর্ব বয়ানে বলেন, আল্লাহ তা‘আলার নিয়ামত অশেষ-অফুরন্ত। তার মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত হচ্ছে পানি। সুপেয় পানি আল্লাহ তা‘আলাই আসমান হতে নাযিল করেন এবং এর দ্বারা প্রাণিজ সবকিছু সৃষ্টি করেন (সূরা আম্বিয়া, আয়াত-৩০)।
আল্লাহ তা‘আলা সূরা নাহালের ১০ম ও ১১তম আয়াতে বলেন, তিনিই আকাশ হতে পানি বর্ষণ করেন; এ পানি থেকে তোমরা পান কর এবং এ থেকেই বৃক্ষরাজি উৎপন্ন হয়, (উৎপন্ন হয় তৃণলতা) যাতে তোমরা পশুচারণ কর। এ পানিতেই মহান আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য উৎপন্ন করেন ফসল, জয়তুন, খেজুর ইত্যাদি নানা প্রকার ফল। নিশ্চয়ই এতে চিন্তাশীলদের জন্য রয়েছে নিদর্শন।
কোরআনে আর এক স্থানে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, তোমরা যে পানি পান করো সে সম্পর্কে কি তোমরা চিন্তা করে দেখেছ? তোমরা কি তা মেঘ হতে নামিয়ে আন, না আমি তা বর্ষণ করি? আমি ইচ্ছে করলে তা লবণাক্ত করে দিতে পারি। তবুও তোমরা কেন কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর না? (৫৮:৬৮)
আসমানে, জমিনে, পানিতে, স্থলে অন্তরীক্ষে তথা নিখিল বিশ্বে যা কিছু আছে সব মহান আল্লাহ তা‘আলা মানুষের জন্য সৃষ্টি করেছেন, আর মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত ও আনুগত্যের জন্য। আফসোসের বিষয়, সৃষ্টির সেরা এই মানুষ তার সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ভুলে গিয়ে যখন লিপ্ত হয় পাপাচারে, জুলুম অত্যাচারে, সৃষ্টি করে বিপর্যয়। সেসব অপরাধের অধিকাংশ আল্লাহ ক্ষমা করে দিলেও কিছু কিছু ক্ষেত্রে নাযিল করেন আজাব গজব, যেন মানুষ তা আস্বাদন করে আল্লাহর পথে আবার ফিরে আসে। পবিত্র কোরআনুল কারীমের সূরা রুমের ৪১ নং আয়াতে আল্লাহ বলেছেন, ‘মানুষের দরুণ পানিতে স্থলে বিপর্যয় ছড়িয়ে পড়ে, যার ফলে তাদেরকে কোনো কোনো কর্মের শাস্তি তিনি আস্বাদন করান যাতে তারা ফিরে আসে।
কিয়ামত সম্পর্কিত একটি হাদীসে এমন কতগুলো আলামতের কথা বলা হয়েছে, যার অধিকাংশ এখন সঙ্ঘটিত হতে দেখা যাচ্ছে। এ হাদিসের শেষের অংশে বলা হয়েছে, তখন একের পর এক কঠিন বিপদ আসতে থাকবে যেমন, মালার সূত্র ছিন্ন হয়ে গেলে ঝরে পড়তে থাকে একের পর এক দানা।
সাম্প্রতিক সময় আমরা তাই দেখতে পাচ্ছি, মানব যুদ্ধ-বিপর্যয় তো আছেই, সেই সঙ্গে আমরা দেখতে পাই নানা ধরনের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ও যার মাধ্যে রয়েছে নানা প্রকার ভাইরাসের আক্রমণ, অনাবৃষ্টি, প্লাবন ইত্যাদি। গত এক মাসের বিপর্যয়গুলোর মধ্যে দেখতে পাই, ইউরোপে ৫০০ বছরের বছরের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ খরা, এতে শস্য উৎপাদনে পড়েছে মারাত্মক প্রভাব। ভুট্টার উৎপাদন কমেছে ১৬ শতাংশ, সয়াবিন ১৫ শতাংশ এবং সূর্যমুখীর উৎপাদন কমেছে ১২ শতাংশ। চলমান তাপদাহে ইউরোপের প্রায় সব নদীই কিছুটা হলেও শুকিয়ে গেছে। পানিবিদ্যুৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ২০ শতাংশ। বড় ধরনের দাবানলে মুখে পড়েছে চীনের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চল। তাপ প্রবাহের কারণে টানা ১২ দিন রেড অ্যালার্ড জারি ছিল। চীনে চলমান দীর্ঘ এই খরার প্রভাব আগামী মাস পর্যন্ত স্থায়ী হবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এতে আগামী মৌসুমে ফসলগুলো ঝুঁকিতে পড়েছে বলে জানিয়েছে সরকারি কর্মকর্তারা।
চীনের সিচুয়ান প্রদেশের সরকার জানিয়েছে, সেখানকার পানিবিদ্যুৎ প্রকল্পের পানির স্তর প্রায় অর্ধেক হয়ে গেছে। সেখানে শতাধিক কারখানায় আধারের পানির স্তর অর্ধেক হয়ে গেছে। মাত্রাতিরিক্ত খরার কারণে এ পানিবিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলোর কাজ প্রায় বন্ধে হয়ে গেছে।
এ বছরের আগস্ট পর্যন্ত ৪৩টি বড় দাবানলে অন্তত ৫০০ হেক্টর এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দাবানলে আলজেরিয়ার পাহাড়ি এলাকায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৭ জনে, আহতের সংখ্যা ১৮৩ জন। খতীব বলেন, অপরদিকে বিশ্বের কোথাও কোথাও গজব আকারে নেমে এসেছে পাহাড়ি ঢল, ভয়াবহ বন্যা। আমাদের দেশেও সিলেট, সুনামগঞ্জে ভারত থেকে মারাত্মক পাহাড়ি ঢল আসায় সর্বস্বহারা হয়েছে অগণিত মানুষ। বিভিন্ন মিডিয়া, পত্র-পত্রিকায় আমরা দেখেছি ও পড়েছি যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে ভয়াবহ বন্যার কথা। তেমনি ভারতের হিমাচল, উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, গুজরাট, জম্মু-কাশ্মির, উত্তরাখÐে বন্যার তোড়ে ভ‚মিধসে ভেসে গেছে অনেক বাড়িঘর, ভারি বৃষ্টি ও বন্যায় বিপর্যস্ত হয়েছে ঝাড়খÐ ও উড়িষ্যা।
পানি-বৃষ্টি আল্লাহ তা‘আলার অন্যতম শ্রেষ্ঠ নিয়ামত। এর অভাবে যেমন সৃষ্টি হয়েছে হাহাকার, মরু হয়েছে মানুষের বসবাসের অযোগ্য বিরান, তেমনি আল্লাহর দয়ায় এই ভয়াল মরুর কোথাও কোথাও সৃষ্টি হয়েছে মরুদ্যান। আবিষ্কৃৃত হয়েছে মানুষের বসবাসযোগ্য এলাকা। মোজেজাও রয়েছে বহু। শিশু ইসমাইল (আ.)-এর কচি পায়ের আঘাতে মরুমাটি ও পাথর ফেটে বেরিয়ে এসেছে সুপেয় পানির ধারা মায়ে জমজম। প্রিয় নবী (সা.)-এর হাতের আঙুলের ফাঁক দিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত পানির ধারা প্রবাহিত হওয়ার মোজেজা রয়েছে অনেক। হযরত মুসা (আ.)-এর লাঠির আঘাতে আল্লাহর হুকুমে ১২টি নহর প্রবাহিত হওয়ার ঘটনা তো পবিত্র কোরআনেই বর্ণিত আছে।
অতীত জমানায় আদ-সামুদ-লুত প্রভৃতি কওমের খোদাদ্রোহী ও পাপাচারী লোকেরা যেসব অপরাধ করার কারণে খোদায়ী আজাব-গজবে ধ্বংস-নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, অনুরূপ অপরাধসমূহ বর্তমান বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে সঙ্ঘটিত হচ্ছে। কিন্তু অতীত জমানার মতো পাইকারীভাবে খোদায়ী আজাব-গজব নাজিল হচ্ছে না। তেমনি ধ্বংসলীলার সম্মুখীন হচ্ছে না এখনকার মানুষ ও জনপদ। কারণ এ জমিনে শুয়ে আছেন খোদার প্রিয় হাবীব রহমাতুল্লিল আলামীন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তবে আমাদের সঠিক পথে ফিরিয়ে আনার জন্য কখনো কখনো আল্লাহ পাক সীমিত আকারে আজাব-গজব পাঠান। এসব দেখে আমাদের সাবধান হতে হবে।
আমাদের এসব ভয়াবহ বিপর্যয় থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহর কাছে তওবা করতে হবে, আল্লাহর কাছে সবিনয়ে প্রার্থনা জানাতে থাকতে হবে, সকল গর্হিত কাজ পরিহার করে ইবাদত-বন্দেগি ও পুন্যের কাজে মশগুল থাকতে হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের তৌফিক এনায়েত করুন। আমীন।
বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব মুফতি মো. রুহুল আমিন বয়ানে বলেন, আল্লাহর ভয়ে জমিনে বসে চোখের পানি ফেলতে পারলে জাহান্নামের আগুন নিভে যাবে। নিজের প্রয়োজনে পরিবারের প্রয়োজনে মহান আল্লাহর কাছ থেকে মঞ্জুর করিয়ে নিতে হবে। আল্লাহর অফুরন্ত ভাÐারে কোনো কিছুর অভাব নেই। অন্য ভাইয়ের জন্যও আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে। তিনি বলেন, পরকালের সঞ্চয় দুনিয়া থেকেই করে নিতে হবে। গুনাহ ও নাফরমানির পরিমাণ বেশি হলে অন্তরে মরিচা পড়ে যায়। বেশি বেশি তওবাহ ও যিকিরের মাধ্যমে আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সর্বদা সজাগ থাকতে হবে। সামান্য জমি-জমা সম্পদের লোভে আজ বাপ ভাইকেও খুনের শিকার হতে হয়। এমন পাপাচারের পথ থেকে মানুষকে আল্লাহর পথে ফিরে আসতে হবে। খতীব বলেন, মৃত ব্যক্তি ও মা-বাপের জন্য দোয়া করতে হবে। মা-বাপের জন্য আল্লাহই দোয়া শিখিয়ে দিয়েছেন। প্রত্যহ গুনাহ মাফ চেয়ে আল্লাহর কাছে রোনাজারি করতে হবে। আল্লাহ সবাইকে গুনামুক্তি জীবন দান করুন। আমীন।
মিরপুরের বাইতুল আমান কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের খতীব মুফতি আবদুল্লাহ ফিরোজী বয়ানে বলেন, হিজরি বছরের প্রথম মাস মুহাররামুল হারামের গতকাল ছিল শেষ জুমা। সফর মাস দরজায় কড়া নাড়ছে। আরবি ‘সফর’ অর্থ শূন্য, খালি, রিক্ত। ক্রিয়াভেদে কেউ কেউ অর্থ করেছেন ফ্যাকাশে, রক্তশূন্য, তামাটে, বিবর্ণ ইত্যাদি। সে সময় আরবে সফর মাসে প্রচন্ড খরা হতো। ফলে মঙ্গা, খাদ্যাভাব দেখা দিতো। মাঠঘাট শুকিয়ে বিবর্ণ হয়ে যেতো। ক্ষুধার্ত মানুষের চেহারাতে রক্তশূন্যতা ও ফ্যাকাশে ভাব পরিলক্ষিত হতো। এজন্য অবস্থার সঙ্গে মিলিয়ে তারা এই মাসকে ‘আস সাফারুল মুসাফফার’ অর্থাৎ বিবর্ণ সফর মাস বলতো। জাহেলিয়্যাতের যুগে আরবরা এই মাসকে দুঃখের মাস মনে করে এ মাসের চাঁদ দেখা থেকে পর্যন্ত বিরত থাকতো। অথচ ইসলামের বিধান হচ্ছে, সময়ের সাথে কোনো কল্যাণ-অকল্যাণ নেই। সব ধরনের কল্যাণ-অকল্যাণ আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই হয়ে থাকে। এটাই ঈমান। এর উপর দৃঢ় বিশ্বাস এবং শিরক থেকে বেঁচে থাকা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য জরুরি। কারণ শিরকযুক্ত ঈমান আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য নয়। শিরক ফলাফল বা পরিণতিতে কুফরের সমান। আল্লাহ তা’আলা শিরককারীকে ক্ষমা করবেন না বলে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা দিয়ে বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তাকে ক্ষমা করেন না, যে তার সঙ্গে শরিক করে। ইহা ব্যতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে, সে যেন আল্লাহর প্রতি মারাত্মক অপবাদ আরোপ করলো।’ (সূরা- নিসা, আয়াত: ৪৮)। পবিত্র কোরআনের অন্যত্র আল্লাহ তাআলা শিরককে মহা জুলুম হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
খতীব আরও বলেন, শিরকযুক্ত এসব কুসংস্কার ও রুসূমাত থেকে বেঁচে থাকা জরুরি। এছাড়া গাইরুল্লাহর নামে মান্নত করা, মাজারে সেজদা দেয়া, পীরের কাছে সন্তান চাওয়াও মারাত্মক শিরক ও কবীরা গুনাহ। আল্লাহ তায়ালা যেন এসব কাজে থেকে আমাদেরকে হেফাজত করেন, আমীন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।