পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
সমাজকে নৈতিক অধঃপতন, নবজাতক হত্যা ও অন্যায়-অশ্লীলতা থেকে উদ্ধারে মানুষের মধ্যে তাকওয়াগুণ সৃষ্টির কোনো বিকল্প নেই। গত ২৩ সেপ্টেম্বর দৈনিক ইনকিলাবে প্রকাশিত ‘বাড়ছে নবজাতক হত্যাকাÐ’ শিরোনামের প্রতিবেদনটি পড়ে অনেকেই স্তম্ভিত হয়েছেন, হয়েছেন হতভম্ব। অনেকেই বিস্ময়ে হতবাক হয়ে ফোন করে প্রকাশ করেছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। বলে কি!
গত এক বছরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ৩০০ নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এসময় শুধু রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার এলাকা থেকে পাঁচটি নবজাতকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ তো গেলো কেবল যেসব লাশ ডাস্টবিন থেকে উদ্ধার করা হয়েছে তার সংখ্যা। রাজধানীর মসজিদে গাউছুল আজমের খতীব মাওলানা কবি রূহুল আমীন খান গতকাল জুমা-পূর্ব বয়ানে এসব কথা বলেন।
খতীব বলেন, স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, এমন অবৈধ মানব শিশুদের শুধু কি ডাস্টবিনেই ফেলা হয়েছে? নদীতে, নালা-ডোবায়, মাটিতে পূঁতে ফেলা হয়েছে যেসব লাশ তাদের নিয়ে এ সংখ্যা তাহলে কত? ভ্রƒণ অবস্থায় হত্যা করা হয়েছে, তাদের সংখ্যা কত?
কেবল রাজধানী ঢাকার শহরই তো নয়, অন্যান্য বিভাগীয় শহর, জেলা শহর, নগর-বন্দর, গ্রামগঞ্জ মিলে ৫৬ হাজার বর্গমাইলের যে দেশ সেখানে সবমিলিয়ে বছরে এভাবে হত্যা করা হয়েছে কত নবজাতক, কত ভ্রƒণ? আর হঠাৎ করেই কোনো নারীর পেটে জন্ম হয়নি এমনি শিশু।
এর পেছনে তো অনিবার্যভাবে রয়েছে কয়েকটা পর্যায়। ওইসব জন্মদাতা আর জন্মদাত্রীরা অবাধ মেলামেশা করেছে, যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হয়েছে অবৈধ সন্তান যেন জন্ম নিতে না পারে সাধ্যমতো সে চেষ্টাও করেছে। লুকানোর সব চেষ্টা করার পরেও যখন ঠেকানো যায়নি, তখন ভ্রƒণ হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে। এরপরে যারা ব্যর্থ হয়েছে এবং এসে গেছে শিশু, তাকে পানিতে, জঙ্গলে, আড়ালে-আবডালে ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া হয়েছে।
এটা যে মানবতার অপরাধ সে সত্য বলা যাবে, তার দলিল প্রমাণ পেশ করা যাবে, কিন্তু তাতে করে সেই পাপাচারীদের থামানো যাবে কি? পাপাচারের এটা চতুর্থ পর্যায়। আমাদের সমাজ রাষ্ট্রের অধঃপতন কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে সুস্থ বিবেকবান মানুষদের তা চিন্তা করতে হবে। এর থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে বের করতে হবে, তা কার্যকর করতে হবে, নইলে আমরা কোন নরকে গিয়ে পৌঁছাব তা অনুমান করা কঠিন নয়।
আমরা মুসলমান। ২০২২ সালের জনশুমারির তথ্যমতে আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫১ লাখ ৫৮ হাজার ৬১৬ জনের মধ্যে ৯১.০৪ শতাংশ মুসলমান। আমরা আল্লাহ, রাসূল (সা.), পরকাল, জান্নাত-জাহান্নামে বিশ্বাস করি। আমরা আমেরিকা-ইউরোপের মত পশুবাদী সমাজ চাই না। যেখানে পরস্পরের সম্মতিতে যেনা-ব্যভিচারে লিপ্ত হওয়া কোনো দূষণীয় ব্যাপার নয়। যেখানে বিবাহ না করে স্বামী-স্ত্রীর মতো একত্রে বসবাস করা, একের পর এক সন্তান জন্ম দিয়ে যাওয়া নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার। জারজ সন্তান অবৈধ বলতে যেখানে কিছুই নেই, যেখানে নারীতে-নারীতে পুরুষে-পুরুষে বিয়ে কেবল হচ্ছেই না বরং এর শাসনতান্ত্রিক স্বীকৃতি আদায়ে জোরদার আন্দোলন চলছে। যেখানে একদিকে তো বিজ্ঞান-প্রযুক্তির চরম উৎকর্ষ সাধিত হচ্ছে, অপরদিকে নৈতিকতার দিক দিয়ে পশুকেও হার মানিয়েছে।
এদের সম্পর্কে মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলেন, ওদের হৃদয় আছে, কিন্তু এদ্বারা ওরা উপলব্ধি করে না, ওদের চক্ষু আছে এদ্বারা দেখে না, ওদের কান আছে কিন্তু এদ্বারা শোনে না, ওরা পশুর ন্যায়, কিন্তু পশুর চেয়েও নিকৃষ্টতর। ওদেরকে নিক্ষেপ করা হবে জাহান্নামে (সূরা আরাফ, আয়াত- ১৭৯)।
আল্লাহপাক সূরা ত্বীনে বলেন, আমিতো মানুষকে সৃষ্টি করেছি সুন্দরতম গঠনে অতঃপর কর্মদোষে তারা পরিণত হয় হীনতা গ্রস্তদের হীনতমে (আয়াত ৪-৫)। খবর নিয়ে দেখুন আমেরিকা, হন্ডুরাস, ডোমিনিকান রিপাবলিক, ওয়েস্টইন্ডিজ, পানামা দেশের অধিকাংশ বাসিন্দাই পিতৃপরিচয়হীন। আমরা যদি সেই পরিণতির সম্মুখীন হতে না চাই তবে এখন থেকেই উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।
খতিব সাহেব আরো বলেন, সামাজিক অবক্ষয় কিন্তু শুরু হয়ে গেছে। ইন্টারনেটের ভয়াবহতা, মাদকের আগ্রাসন, পর্নোগ্রাফি, ইভটিজিং, কিশোর গ্যাং, আরো কত আলামত দেখা যাচ্ছে তার হিসেব নেই। এর চেয়ে জঘন্য আর কী হতে পারে যে, দেশের ঐতিহ্যবাহী একটি মহিলা কলেজের একটি ছাত্র সংগঠনের এক নেত্রীকে যখন বলতে শোনা যায় যে, তাদের নেত্রীরা কলেজটির পড়–য়া ছাত্রীদের জোর করে দলের শীর্ষ নেতাদের কাছে উপঢৌকন পাঠান মনোরঞ্জনের জন্য। কেউ নেতাদের বিছানায় যেতে না চাইলে তাদের নির্যাতন করা হয়। আর কলেজটির কর্তৃপক্ষ নীরবে ঘুমিয়ে থাকেন।
পিতা-মাতা, অভিভাবকরা সময় দিচ্ছেন না সন্তানদের, ওরা কাদের সাথে মিশছে খেয়াল রাখছে না তার প্রতি। ধর্মীয় শিক্ষা, নৈতিক শিক্ষা দিয়ে তাদের আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার প্রতি হচ্ছে না মনোযোগী। এসবের কুফল দেখা দিতে শুরু করেছে। যেনা ব্যভিচারের প্রতি প্রলুব্ধ হওয়ার যেসব কারণ, ইসলাম সেসব নিষিদ্ধ করে। এরমধ্যে হিজাব অন্যতম নারীর সর্বাঙ্গ আবৃত করে রাখা, তথা মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত হলো নারীর সতর। আর পুরুষের সতর হলো নাভি থেকে হাঁটুর নীচ পর্যন্ত। অথচ উগ্রআধুনিকদের মধ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে এর বিপরীত চিত্র। পুরুষ মাথার হ্যাট থেকে পায়ের মোজা পরিধান করে ঢেকে রাখছে সমগ্র দেহ, অপরদিকে নারীর মাথা, পেট, পিঠ, গলা, হাঁটুর ওপর থেকে সরিয়ে দিচ্ছে বস্ত্র। এতে তাদের প্রতি প্রলুব্ধ হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছুই নয়। তারপর রয়েছে অবাধ মেলামেশা। এর পরিণাম ঠেকছে গিয়ে অবৈধ দৈহিক সম্পর্কে।
ইসলামে এরূপ অপরাধের শাস্তি অত্যন্ত ভয়ানক। যদি এই অপরাধীরা অবিবাহিত হয় তবে তাদের ১০০ বেত্রাঘাত করা, আর যদি বিবাহিত হয় তবে তাদের রজম করা অর্থাৎ পাথর মেরে হত্যা করা হলো কোরআনের বিধান। যেনার শাস্তি (হদ) প্রকাশ্য স্থানে জনসম্মুখে দেয়ার আদেশ করা হয়েছে।
সূরা নূরে আল্লাহ বলেছেন, ব্যভিচারের শাস্তি কার্যকর করার সময় মুসলমানের একটি দল উপস্থিত থাকা বাঞ্ছনীয়। যাতে দর্শকরা এর থেকে শিক্ষা লাভ করে সাবধান হয়। এর সুফলও ফলেছে। আইয়্যামে জাহেলিয়াতে মদখোরী, মাতলামী, যেনা-ব্যভিচার ছিল নিতান্ত স্বাভাবিক ব্যাপার। রাসূল (স.) এর আবির্ভাব এবং ইসলামী আইন কার্যকর হওয়ার পর সেই সমাজের চিত্র পাল্টে গেল। অবসান ঘটল সব অন্যায় অশ্লীলতার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। সেই আরবরা হয়ে গেলেন সর্বকালের সেরা মানুষ।
পরকালে আল্লাহর সম্মুখে দাঁড়াতে হবে, প্রতিটি কাজের জবাবদিহি করতে হবে, এই বিশ্বাস ও অনুভ‚তি তাদেরকে সোনার মানুষে পরিণত করলো। এরই নাম তাকওয়া। আমাদের সন্তানদের এ তাকওয়ার গুণে ভ‚ষিত করার শিক্ষা দিতে হবে। ঘরে ঘরে বাবা-মা, মুরুব্বীজনদেরকে দিতে হবে। ওয়াজ-বক্তৃতা, উপদেশ প্রদানে এর প্রাধান্য দিতে হবে। পাঠ্যসূচিতে বিষয়টির প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। মনোবিপ্লব সৃষ্টি করতে হবে। পাপের সব পথ অবারিত রেখে, কেবলমাত্র নবজাতক হত্যা আর ভ্রƒণ হত্যার শাস্তির কথা বলে এ জঘন্য অপরাধ নির্মূল করা যাবে না। আল্লাহ সবাইকে সহীহ বুঝ দান করুন। আমিন। বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতীব মুফতি রুহুল আমিন জুমার বয়ানে বলেন, আল্লাহ মানুষ ও জ্বীনের জন্য করুনা ও রহমত হিসেবে মহানবী (সা.) কে দুনিয়ায় পাঠিয়েছেন। ইহকাল পরকালে সার্বিক কল্যাণে নবী (সা.) আদর্শের বিকল্প নেই। মহানবী (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে হাতে কলমে তার আদর্শ শিখিয়ে গেছেন। নবী (সা.) কীভাবে আমল করেছেন সাহাবায়ে কেরাম তা’স্বচক্ষে দেখেছেন। আল্লাহর পক্ষ থেকে নবী (সা.) উম্মতে মোহাম্মদীকে যে শিক্ষা দিয়েছেন তা’ অনুসরণ করতে হবে। নবী (সা.) এর ভালোবাসার নামে ভ্রান্ত আক্বিদা চালু করা যাবে না। খতীব বলেন, ইউটিউব দেখা বন্ধ করে গোমড়াহির পথ পরিহার করতে হবে। ইউটিউব দেখে দ্বীন অর্জন করা যাবে না। নবী (সা.) আদর্শ অনুসরণ ছাড়া আর কোনো গতান্তর নেই। তিনি বলেন, মহানবী (সা.) চরিত্র সবোত্তম চরিত্র। বাজারে ঘাটে জমিতে যেখানেই যাবেন সেখানেই নবীর (সা.) আদর্শ পাওয়া যাবে। আল্লাহ সবাইকে মহানবী (সা.) প্রকৃত ভালোবাসা অর্জনের মাধ্যমে দুনিয়া আখেরাতের কল্যাণ দান করুন। আমিন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।