Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আব্দুল মোমেনের কুটনীতি : বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্ন

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ২৪ আগস্ট, ২০২২, ১২:০০ এএম

দেশের মানুষ নানাবিধ সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটে দিশেহারা অবস্থায় পড়েছে। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্যের অস্বাভাবাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষের নাভীশ্বাস অবস্থায় বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো খুব ক্ষীণস্বরে এর প্রতিবাদ করছে এবং একই সুরে তারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার হটানোর হুমকি দিচ্ছে। গত ১৫ বছরে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপিকে কার্যত নেতৃত্ব শুন্য করে ফেলা হয়েছে। সেই ২০১৫ সালে গুলশান অফিসের সামনে বালুর ট্রাক রেখে অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে সাজানো মামলায় সাজা পাওয়া আপসহীন নেতা বেগম খালেদা জিয়াকে নিস্ক্রিয় করতে যা কিছু করা প্রয়োজন তার সবই করা হয়েছে। শীর্ষ নেতৃত্বের অনুপস্থিতি এবং হাজার হাজার মামলায় লাখ লাখ নেতাকর্মীর ত্রাহি অবস্থার মধ্যে বিচারহীন গুম-খুন-ত্রাসের বাস্তবতা সামনে রেখে সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বিএনপির আন্দোলনের সক্ষমতা নিয়ে যত্রতত্র টিপ্পনি কাটছেন। তবে বিএনপি বা অন্য কোনো বিরোধী রাজনৈতিক দল আন্দোলন জমাতে না পারলেও দেশের মানুষ সামগ্রিক রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক বাস্তবতায় নিজেদের ক্ষোভ ও প্রতিক্রিয়া জানাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমকে বেঁছে নিয়েছে। অবশ্য চরম বিতর্কিত ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট পাস করে সামাজিক মাধ্যমে মানুষের প্রতিক্রিয়া জানানোর ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ আরোপ করা হয়েছে। দেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এবং গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ প্রশ্নে সাম্প্রতিক সময়ে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা এবং পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে গুরুতর অভিযোগ তোলা হয়েছে তার মধ্যে বার বার ঘুরে ফিরে এসেছে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্টের বিষয়টি। এত কিছুর পরও এই আইন পরিবর্তনে সরকারের প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন হয়নি। আবার নির্বতনমূলক আইনের তোয়াক্কা না করে দেশের লাখ লাখ মানুষকে দেশের চলমান রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রবল জোরালো জনমত গড়ে তুলতে দেখা যাচ্ছে। সরকারের মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ধরাকে সরাজ্ঞান করা বড় নেতা-পাতি নেতা রুই-কাতলা, চুনোপুটিদের বেফাঁস ও ঔদ্ধত্বপূর্ণ বক্তব্য এখন অল্প সময়ের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে তা মূল ধারার গণমাধ্যমের খোরাক হয়ে যাচ্ছে। জনগণের তীর্যক বাণে যখন তখন কপোকাত হয়ে পড়ছেন শীর্ষনেতাসহ প্রভাবশালী মন্ত্রী-এমপিরা। সরকারের বশংবদ মিডিয়াগুলো জনস্বার্থের অনেক কিছু চেপে রেখে পার পেয়ে গেলেও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ভিডিও’র মাধ্যমে হোমরা-চোমরা নেতাদের ইজ্জত বাঁচানোর কোনো উপায়ই যেন থাকছে না।

দেশের জাতীয় সংসদ এবং মন্ত্রী পরিষদের বেশিরভাগ সদস্যপদ এখন ব্যবসায়ীদের দখলে। রাজনীতি এখন সবচেয়ে লাভজনক ব্যবসা। দশ-বিশ কোটি টাকায় নমিনেশন বাগিয়ে নিয়ে দুএক বছরের মধ্যে শত শত কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এমপি-মন্ত্রীর সংখ্যা অনেক। পাশাপাশি সংসদ সদস্যের তালিকায় অবসরপ্রাপ্ত আমলা এবং বিভিন্ন বাহিনীর সাবেক কর্মকর্তাও নেহাত কম নয়। তবে রাজনীতিতে এবং সরকারে পেশাদার ক’টনীতিক এবং সমাজচিন্তকের সংখ্যা খুবই কম। অথচ আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইন প্রণেতা এবং বিভিন্ন প্রাতিষ্ঠানিক কেন্দ্রে এদের সংখ্যা যত বেশি থাকবে রাষ্ট্র তত সুনিয়ন্ত্রণ ও সমাজ তত প্রগতিশীলতা লাভ করবে। ব্যবসায়ীদের দ্বারা প্রভাবিত আওয়ামীলীগ সরকারে যে ক’জন উচ্চ শিক্ষিত ও বিদেশি ডক্টরেট ডিগ্রীধারি এমপি-মন্ত্রী আছেন, তাদের মধ্যে একে আব্দুল মোমেন একজন। প্রায় অর্ধযুগ ধরে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির দায়িত্ব পালনকারী এই ডাকসাইটে ডিপ্লোম্যাট ডক্টর আব্দুল মোমেন এই সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছেন। বিশ্ব দরবারে দেশের রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক স্বার্থ ও মানমর্যাদার অবস্থান সরকার এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলের ভ’মিকার পাশাপাশি একজন যোগ্য পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্বের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। এ ক্ষেত্রে একে আব্দুল মোমেনের নানাবিধ ব্যর্থতার খতিয়ান অনেক দীর্ঘ। তিস্তার পানি চুক্তি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন, সউদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশি কর্মীদের নিয়োগ ও আকামা জটিলতা, চুরি হওয়া বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা ফেরত আনা, দেশ থেকে পাচার হওয়া লক্ষকোটি টাকা ফেরত আনা, বাংলাদেশের বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থার বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা, বাংলাদেশি পাসপোর্টের মানের অবনতি ইত্যাদি কোনো ক্ষেত্রেই একে আব্দুল মোমেন দক্ষতা-যোগ্যতার পরিচয় দিতে পারেননি। আগেই উল্লেখ করা হয়েছে, জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রী পরিষদে বেশিরভাগ সদস্যই ব্যবসায়ী, কেউ কেউ রাজনীতিতেও নবাগত। এসব এমপি-মন্ত্রীর অনেকেই যখন গণমাধ্যমে অত্যন্ত চাতুরতার সাথে কথা বলছেন, দায়িত্ব পালন করছেন, তখন অভিজ্ঞ ক’টনীতিক একে আব্দুল মোমেনের কথাবার্তা ও শব্দ প্রয়োগে ডিপ্লোম্যাটিক টেকনিকের ছিটেফোঁটাও দেখা যাচ্ছে না। গত দুই সপ্তাহ ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একের পর এক ভাইরাল ডেলিভারি দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকগুলোতে বাংলাদেশি অর্থ পাচারকারিরা হাজার হাজার কোটি টাকা পাঠিয়েছে। এসব কালোটাকার মালিকদের তালিকাসহ তথ্য চেয়ে সুইস ব্যাংকের কাছে চিঠি দেয়া নিয়ে একটি বিতর্ক কয়েক বছর ধরেই চলছে। সুইস দূতাবাসের অ্যাম্বাসেডর বলেছেন, সরকার তাদের কাছে এ বিষয়ে তথ্য চায়নি। তার এই বক্তব্য আংশিক সত্য কিংবা মিথ্যা যাই হোক, জবাবে আব্দুল মোমেন বলেন, সুইস রাষ্ট্রদূত মিথ্যা বলেছেন। এটি ক’টনীতির ভাষা নয়। এমনকি পার্লামেন্টেও এ ধরণের শব্দ প্রয়োগ শোভনীয় নয়। এ নিয়ে যখন গণমাধ্যমে শোরগোল চলছে, এর কয়েকদিনের মাথায় তিনি বললেন, অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশের মানুষ বেহেশতে আছে। বিদ্যুৎ, মূল্যস্ফীতিসহ সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটে সাধারণ মানুষের দুর্বিসহ অবস্থায় তার এই মন্তব্য যেন অগ্নিতে ঘৃত সংযোগ ঘটিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক ট্রল চলমান অবস্থায় আব্দুল মোমেনের সর্বশেষ ডেলিভারিটি হচ্ছে, বর্তমান সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে তিনি ভারত সরকারকে বলেছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পাওয়ার পর একে আব্দুল মোমেনের প্রথম বিতর্কিত বক্তব্যটি এখনো নেটদুনিয়ায় বহুল সমালোচিত হচ্ছে, তিনি বলেন, ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক স্বামী-স্ত্রীর মত। আর আগস্ট মাসের সর্বশেষ তোলপাড় সৃষ্টিকারী মন্তব্যকে কেউ কেউ রাষ্ট্রোদোহিতার শামিল এবং ড. মোমেনকে বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য হুমকি বলে মনে করছেন। সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-চীন দ্বন্দের সময় দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ক্ষুদ্র ও দুর্বল রাষ্ট্র ভ’টান-নেপাল পর্যন্ত ভারতের প্রতি এক ধরণের রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে দেখা গেছে। আঞ্চলিক রাজনীতির এক ক্রান্তিকালে ভারতকে সত্যিই বন্ধুহীন দেখা গেছে। কিন্তু পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন বাংলাদেশকে পতিভক্ত স্বামীর বাধ্যগত স্ত্রীর মতই ছায়া হয়ে ভারতের পাশেই রেখেছেন। এমনকি কাশ্মিরে ভারতের আগ্রাসনে বিশ্বসম্প্রদায়ের প্রতিবাদী ভ’মিকার মধ্যেও বাংলাদেশ মোদি সরকারের প্রতি নি:শর্ত সমর্থন দিয়ে গেছে। কিন্তু বার বার প্রতিশ্রæতি দিয়েও আগের কংগ্রেস সরকার অত:পর মোদি সরকার বাংলাদেশের জন্য গভীর সমস্যা তিস্তার পানিবন্টন চুক্তি করেনি। এবারো বর্ষায় তিস্তা-গঙ্গা বাঁধের সবগুলো ¯øুইস গেট খুলে দিয়ে বাংলাদেশকে ডুবিয়ে মারার আয়োজন করেছে ভারত। যে ভারতের হাতে বাংলাদেশের ডেমোক্রেসি, ক্লেপ্টোক্রেসি- অটোক্রেসি নিয়ন্ত্রিত হয়, সে ভারত কেন বাংলাদেশের জনগণের স্বার্থ দেখবে, বাংলাদেশের বশংবদ সরকারের কোনো দাবির প্রতি কর্ণপাত করার গরজ তাদের থাকার কথা নয়। ওয়ান-ইলেভেন সরকার থেকে শুরু করে ২০০৮ সালের নির্বাচন এবং মহাজোটের ক্ষমতালাভের নেপথ্য চোরাইপথের অনেক ঘটনাই ইতিপূর্বে নানাজনের কথাবার্তায় বেরিয়ে এসেছে। নবম থেকে একাদশ পর্যন্ত প্রতিটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভারতীয় কুটনীতিক-আমলাদের দৌড়ঝাঁপসহ নানাবিধ বিতর্কিত ভ’মিকায় দেখা গেছে। এখন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আগামী নির্বাচনে ভারতকে অনুরূপ ভ’মিকায় দেখতে চেয়েছেন। এই গোপন বোঝাপড়ার বিষয়টি ফাঁস করে দিয়ে তিনি একই সাথে বাংলাদেশের গণতন্ত্র, মানুষের ভোটাধিকার এবং সার্বভৌমত্বের মর্যাদাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ তার স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে এসে প্রতিবেশি দেশের হাতে সবকিছু সোর্পদ করার এই বাস্তবতা আমাদের জন্য লজ্জা, গøানি ও হতাশাজনক। ক্ষমতার হালুয়া-রুটির ভাগিদার ও কিছু সংখ্যক দলান্ধ ব্যক্তি ছাড়া পুরো জাতি এ অবস্থা থেকে দেশের উত্তরণ চায়। তবে ক্ষমতাসীনদলের কোনো কোনো নেতা ‘গণতন্ত্রের চর্চা বাদ দিয়ে যেনতেন প্রকারে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ও হুমকি দিচ্ছেন’।

গোপন কথাটি প্রকাশ্য ফাঁস করে দেয়ায় আব্দুল মোমেনের মন্ত্রীত্ব এবং ক’টনৈতিক যোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে ট্রল করছেন, তিনি ফ্রুটিকা খেয়ে আসল গোমর বলে দিয়েছেন। অনেকে আব্দুল মোমেনের গোষ্ঠি উদ্ধার করতেও ছাড়ছেন না। সামনে গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচন। পরপর তিনটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচনে ক্ষমতায় থাকার পর জাতি আজ যে রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ওসামাজিক সংকটে নিপতিত হয়েছে তাতে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় পুনরুদ্ধারের কোনো সম্ভাবনা এখনো দেখা যাচ্ছে না। ওয়ান ইলেভেন বিশেষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নবম জাতীয় নির্বাচনে একটি আন্তর্জাতিক সমঝোতা থাকলেও বাংলাদেশে একতরফা, ভোটারবিহীন ও রাতের ভোটের দশম ও একাদশ জাতীয় নির্বাচনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কোনো সমর্থন ছিল না। শুধুমাত্র ভারতের ইচ্ছায় জনমত উপেক্ষা করে সে সব নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। প্রায় দেড় দশক ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকার শেষ সময়ে এসে দেশকে সামাজিক-অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ঠেলে দেয়ার প্রেক্ষাপটে নিরপেক্ষ নির্বাচনী ব্যবস্থায় আগামী নির্বাচনের বৈতরণী পার হওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেও চলে। এহেন বাস্তবতায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেন আবারো ভারতের সমর্থন ও ম্যাকানিজম চাইছেন। এতে দেশের ভাবমর্যাদা ক্ষুন্ন হয়েছে, দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে বলে দেশপ্রেমিক জনসাধারণ বিক্ষুব্ধ হবেন, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আওয়ামী লীগ নেতাদের বিক্ষুব্ধ হওয়ার মূল কারণ ভিন্ন। ওপেন সিক্রেট হলেও বাংলাদেশে ক্ষমতার মসনদ নিয়ে ভারতের সাথে এমন একটি গোপন সমঝোতার পুরনো বøু-প্রিন্ট ফাঁস হওয়ায় বাংলাদেশের ক্ষমতাসীনদের জন্য তো বটেই, ভারতের বিজেপি সরকারের জন্যও অস্বস্তি ও বিব্রতকর। সাম্প্রতিক সময়ে রাজনীতির বিভিন্ন স্তরে যারাই অপরাধ ও বিব্রতকর ভ’মিকা পালন করে দলের ভেতর-বাইরে জনরোষের সম্মুখীন হয়ে বরখাস্ত বা শাস্তির সম্মুখীন হয়েছেন, তাদের বেশিরভাগই এক পর্যায়ে দলের কাছে অবার্চীন-হাইব্রিড, বহিরাগত অথবা বিএনপি-জামায়াতের সাথে দূর সংশ্লিষ্টতার তকমা পেয়েছেন। ড. আব্দুল মোমেনের আগে বিতর্কিত মন্তব্য ও কর্মকান্ডের জেরে মন্ত্রীত্ব হারানো সর্বশেষ ব্যক্তি হচ্ছেন, সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মুরাদ হাসান। ইসলাম বিদ্বেষী কথাবার্তা বলে লাইমলাইটে এসে শেষ পর্যন্ত জনৈক মডেল-অভিনেত্রিকে ধর্ষণ করার হুমকি সম্বলিত অডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর মন্ত্রীত্ব থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হন তিনি। এরপরই আওয়ামীলীগের টিকেটে একাধিকবার নির্বাচিত এমপি মুরাদের এক সময়কার বিএনপি সংশ্লিষ্টতার তথ্য প্রচার করা হয়।

দলের ভেতরে এবং দেশের মানুষের কাছে আব্দুল মোমেনও অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন। দলের এমপি বা মন্ত্রী নন এমন একজন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ নেতা বলেছেন, আব্দুল মোমেন আওয়ামী লীগের কেউ নন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সরকারকে ক্ষমতায় রাখতে ভারতের সাথে দূতিয়ালি করতে আব্দুল মোমেনকে কোনো দায়িত্ব দেয়া হয়নি। অর্থাৎ দল ও সরকারের পক্ষ থেকে মোমেনকে অস্বীকার করা হয়েছে। এরপর কি বলা হবে আমরা জানি না। তবে আব্দুল মোমেন একটি ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের সদস্য। তার পিতা আবু আহমেদ আব্দুল হাফিজ ছিলেন সিলেটে অল-ইন্ডিয়া মুসলিম লীগের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা। তার মা সৈয়দা সাহারবানু ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনে অন্যতম নারী সংগঠক হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছিলেন। একে আব্দুল মোমেনের বড় ভাই আবুল মাল আব্দুল মুহিত দীর্ঘদিন এই সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছিলেন। গণমাধ্যমের সামনে প্রায়শ ‘রাবিশ,’ ‘স্টুপিড’ ইত্যাদি শব্দ প্রয়োগের পাশাপাশি অপ্রিয় সত্য প্রকাশ করে তিনিও বার বার আলোচিত হয়েছিলেন। একটি গোপন বাস্তবতাকে উলঙ্গ করে দেয়ার মধ্য দিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন দেশের গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে জাতির সামনে এক নতুন ক্লাইমেক্সে দাঁড় করিয়েছেন। আগামি নির্বাচনের আগে দেশের সব রাজনৈতিক দলকে এ বিষয়ে একটি ঐক্যমতের সিদ্ধান্তে আসতে হবে। আরেকটা প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন, অর্থপাচারের মচ্ছব, মূল্যস্ফীতি ও অর্থনৈতিক সংকটের চলমান ধারাক্রম দেশকে শ্রীলঙ্কার মত পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। দলনিরপেক্ষ সরকারের অধীনে একটি স্বচ্ছ, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহনমূলক নির্বাচনের মাধ্যমে শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতার পালাবদল নিশ্চিত করা এবং দুর্নীতি ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমেই কেবল পরিস্থিতির ইতিবাচক পরিবর্তন প্রত্যাশা করা যায়।

[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আব্দুল মোমেন


আরও
আরও পড়ুন