শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
গল্প আশরাফ পিন্টু
অমানিশা। চারদিকে যেমন নিñিদ্র অন্ধকার তেমনি সুনশান নীরবতা। ঝিঁঝিঁ পোকাদের ছন্দময় ডাক সে নীরবতাকে যেন আরও গহীন-রহস্যময় করে তুলছে। কখনও বা পেঁচার চিৎকারে তার ছন্দপতন ঘটছে, ভেঙে খান খান হয়ে যাচ্ছে সুনশান নীরবতা।
পেঁচাটি ডেকে ওঠার পরেই একটি শেয়াল গর্ত থেকে মাথা বের করে। ডেকে ওঠে “হুক্কাহুয়া” বলে। পরপরই পাশের গর্ত থেকে একাধিক প্রতিধ্বনি শোনা যায়। নিষ্প্রাণ গোরস্থানটি যেন মুহূর্তে প্রাণ ফিরে পায়।
ইতোমধ্যে শেয়ালগুলো বেরিয়ে এসেছে গর্ত থেকে। একটি নতুন কবরের চারপাশে বৃত্তাকারে ঘুরছে। একটি শিশুর কবর এটি। শিশুটি পানিতে ডুবে মারা গিয়েছিল। গতকাল বিকেলে কবর হয়েছে।
শেয়ালগুলো এবার সামনের দু’পা দিয়ে কবরের মাটি আঁচড়াতে থাকে। দেখতে দেখতে মৃতের কাফন টেনে বের করে ফেলে। এরইমধ্যে জুটে যায় আরও কয়েকটি শিয়াল। ওরা ওদের পিছনে দাঁড়িয়ে আনন্দে হুক্কাহুয়া ধ্বনি করতে থাকে।
একে একে মৃত দেহটিকে থাবা বসাতে উদ্যত হয় তারা। ঠিক তখনই কিছু জোনাকি উড়ে আসে ওদের কাছে। জোনাকিগুলো ওদের আশপাশে ছিল। কিন্তু শেয়ালগুলো উল্লাসে এতই মেতেছিল যে খেয়াল করেনি। জোনাকিরা শেয়ালগুলোর চারপাশ ঘিরে উড়তে থাকে। শেয়ালগুলো কী ভেবে কিছুক্ষণের জন্যে মৃত দেহটিতে থাবা বসানো থেকে বিরত থাকে।
কবরটির পাশেই ওরা বৃত্তাকার হয়ে বসে পড়ে। ক্রমাগত শিয়ালের সদস্য যেন গুণিতকহারে বাড়তে থাকে। ১৩টি শেয়াল যেন ২৬টি কিংবা ৩৯টিতে রূপান্তরিত হয়। তারা পরস্পরের মধ্যে মত বিনিময় করে।
জোনাকিরা ওদের আশপাশ দিয়েই উড়তে থাকে। ওদের সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি হয় না। ৭টি জোনাকি একটু দূরে দূরেই যেন উড়তে থাকে শিশুটিকে ঘিরে।
এক সময় জোনাকিরা সংখ্যায় অনেক বেশি ছিল। ঝাঁকে ঝাঁকে তারা আলো জ্বালাত রাত্রিতে। কিন্তু এখন ক্রমাগত কমতে কমতে মাত্র ৭টিতে এসে দাঁড়িয়েছে। কেউবা চলে গেছে গোরস্থান ছেড়ে কেউবা রূপান্তরিত হয়েছে শেয়াল কিংবা গুবরেপোকায়। অথচ একদনি জোনাকিরাই দল বেঁধে শেয়ালগুলোকে তাড়া করেছিল। অবশ্য সেদিন শেয়ালদের সদস্য ছিল নিতান্তই কম। দুটি কিংবা তিনটি। পেঁচারাও ভয়ে গাছের ডালে বসত না। লাখে-লাখে ঝাঁকে-ঝাঁকে জোনাকি সমস্ত গোরস্থানে তারার মতো মেলা বসাত। মোমবাতির মতো আলো জ্বালিয়ে তারা গোরস্থানের পবিত্রতা রক্ষা করত।
কিন্তু সময় বদলেছে। এখন গোরস্থানের পবিত্রতা চলে গেছে শেয়াল, পেঁচা আর গুবরেপোকাদের দখলে। সংখ্যায়ও ওরা এখন অনেক বেশি। ক্রমাগত ওদের সংখ্যা বাড়ছে; অন্যদিকে জোনাকিরা কমছে।
শেয়ালেরা পরামর্শ শেষ করে পুনরায় ঝাঁপিয়ে পড়ে মৃত দেহটির উপর। মুহূর্তে তারা ছিঁড়ে-খুঁড়ে খেয়ে ফেলে শিশুটিকে। পড়ে থাকে
শুধু শিশুটির কঙ্কাল। খাওয়া শেষে কেউবা তৃপ্তির ঢেকুর তোলে হুক্কাহুয়া বলে। কেউবা জয় ঘোষণা করে।
জোনাকিরা বেশ দূরে দূরেই উড়তে থাকে। হয়ত কিছুটা ভীত হয়েই এতক্ষণ দেখতেছিল ওদের পৈশাচিক উল্লাস। ধীরে ধীরে তারা স্থান ত্যাগ করে। কেউবা উড়ে চলে যেতে চায় গোরস্থানের বাইরে। কিন্তু যেতে পারে না। কী এক অদৃশ্য মমতায় তারা গোরস্থানেই থেকে যায়। তবে সর্বত্র বিচরণ করতে নয়, দূর থেকে আলো জ্বেলে পথ দেখাতে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।