Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কমছে দেশি বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ

| প্রকাশের সময় : ২ ডিসেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

কর্পোরেট রিপোর্টার : দেশি বিনিয়োগ কমছে বাড়ছে বিদেশি বিনিয়োগ। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিক জুলাই-সেপ্টেম্বরে দেশি বিনিয়োগ নিবন্ধন কমেছে ১০ হাজার কোটি টাকা, শতকরা হিসেবে যা ৩৩ শতাংশ। এই সময়ে বিদেশি বিনিয়োগের নিবন্ধন বেড়েছে ১৭৬ শতাংশ। এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শিল্প ঋণ বিতরণ কমেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও অবকাঠামো দুর্বলতা প্রকট। বর্তমানে উদ্যোক্তারাই পুঁজি বিনিয়োগ করছেন না, যে কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে মন্থর গতি বিরাজ করছে। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ সূত্র জানায়, চলতি বছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর (তৃতীয় প্রান্তিক) সময়ে মোট ৩০৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধিত হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৫০ হাজার ২৫১ কোটি ৬ লাখ ৯২ হাজার টাকা। আলোচ্য সময়ে স্থানীয় ও বিদেশি উভয় ক্ষেত্রেই সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে প্রকৌশল শিল্প খাত থেকে। প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের ৬৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ এসেছে এ খাত থেকে। এরপরই রয়েছে রাসায়নিক শিল্প খাত। মোট বিনিয়োগের ১০ শতাংশ এসেছে এ খাত থেকে। এছাড়া টেক্সটাইল ও প্রিন্টিং অ্যান্ড পাবলিকেশন খাতের অবদান যথাক্রমে ৫ দশমিক ৭৪ ও ৩ দশমিক ১৩ শতাংশ। অন্যান্য খাত থেকে এসেছে বাকি ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বিনিয়োগ প্রস্তাব। তৃতীয় প্রান্তিকে স্থানীয় বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত ২৬৯টি শিল্প ইউনিটে প্রস্তাবিত অর্থের পরিমাণ ১৯ হাজার ৫১০ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। একই উৎস থেকে দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) নিবন্ধিত ৩৯৪টি শিল্প ইউনিটে প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২৯ হাজার ১০৬ কোটি ৯১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। অন্যদিকে গত প্রান্তিকে শতভাগ ও যৌথ মিলিয়ে বিদেশি বিনিয়োগের জন্য নিবন্ধিত মোট প্রকল্প সংখ্যা ছিল ৩৬। এরমধ্যে ২১টি প্রকল্প শতভাগ বিদেশি। এসব প্রকল্পে প্রস্তাবিত মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ৩০ হাজার ৭৪০ কোটি ৮৯ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। দ্বিতীয় প্রান্তিকে এক্ষেত্রে ৫০টি বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধিত হয়েছিল। আর প্রস্তাবিত বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ১১ হাজার ১২৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। অর্থাৎ দ্বিতীয় প্রান্তিকে মোট ৪৪৪টি প্রকল্পের বিপরীতে বিনিয়োগ প্রস্তাবনা ছিল ৪০ হাজার ২৩৪ কোটি ১১ লাখ ৮৯ হাজার টাকা। বিআইডিএর সদস্য নাভাস চন্দ্র মÐল বলেন, সাম্প্রতিককালে বিনিয়োগ পরিবেশ আগের চেয়ে অনেক ভাল হয়েছে। দেশি ও বিদেশি উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ আগ্রহও বেড়েছে, যার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে বিনিয়োগ প্রস্তাব নিবন্ধনের পরিসংখ্যানে। সংস্থা হিসেবে আমরাও নিবন্ধন প্রক্রিয়াগুলোকে অনেক সহজ ও আরও উন্নত করার চেষ্টা করছি। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, গত এপ্রিল-জুন প্রান্তিকে শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ বিতরণ করা হয়েছে ১৬ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। এর আগে জানুয়ারি-মার্চ প্রান্তিকে বিতরণ করা হয়েছিল ১৮ হাজার ২৭০ কোটি টাকা। এক প্রান্তিকের ব্যবধানে ব্যাংকগুলোর শিল্প খাতে মেয়াদি ঋণ কমেছে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা। গ্রামীণ শিল্পে ঋণ বিতরণের হার সামান্য বাড়লেও তা পরিমাণে খুব কম। গত ২০১৫-১৬ অর্থবছরে এই খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে মাত্র ৫ শতাংশ। এর আগের ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ঋণ বিতরণ কমেছিল ২১ শতাংশ। ওই কমার হার থেকে ৫ শতাংশ বৃদ্ধিকে প্রবৃদ্ধি বলা ঠিক হবে না বলে মন্তব্য করেন অর্থনীতিবিদরা। বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, উদ্যোক্তাদের পুঁজি বিনিয়োগ হলে সেখানে ব্যাংক ঋণ নিয়ে এগিয়ে আসে। কিন্তু বর্তমানে উদ্যোক্তারাই পুঁজি বিনিয়োগ করছেন না, যে কারণে ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণে মন্থর গতি বিরাজ করছে। জানা গেছে, গত ১ সেপ্টেম্বর থেকে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন কার্যকর হয়েছে। এর মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্প কারখানার নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে বলে মনে করছে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা। বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের কর্মকর্তারা বলছেন, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষে রাখা হয়েছে ওয়ান স্টফ সার্ভিস। সেখানে অনুমোদিত শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সেবা প্রদান দ্রæত নিশ্চিত করার লক্ষ্যে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় ওয়ান স্টপ সার্ভিস কেন্দ্র কাজ করবে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম এ বিষয়ে বলেন, বিনিয়োগ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা পাশাপাশি অন্য অনেক ফ্যাক্টর গুরুত্বপূর্ণ। দেশে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকলেও অবকাঠামো দুর্বলতা প্রকট। এফবিসিসিআইয়ের ভাইস প্রেসিডেন্ট শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, গ্যাস-বিদ্যুৎ নিয়ে অনেক কথা হলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছে না। পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বিনিয়োগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ