Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দিনে গার্মেন্টসকর্মী ড্রাইভার রাজমিস্ত্রী হলেও রাতে ভয়ংকর ডাকাত তারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | প্রকাশের সময় : ১৩ আগস্ট, ২০২২, ১:৪৯ পিএম

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বন্দর এলাকা থেকে মহাসড়কে পণ্যবাহী গাড়ি ডাকাতির সময় ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাস ও দেশীয় ধারালো অস্ত্রসহ ডাকাত চক্রের ৬ সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব।

র‍্যাব বলছে, ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধ এই ডাকাত দলেরচক্রটির গ্রেপ্তার মূসা এই ডাকাত চক্রের মূল হোতা। বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ভাবে ডাকাতি করত চক্রটি। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে। তারা ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে। মূসা গত ১০/১২ বছর ধরে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে।

 


শুক্রবার রাতে র‌্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‌্যাব-১১ এর একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ ও বন্দর থানা এলাকার মহাসড়ক থেকে ডাকাত চক্রের সরদার মূসা আলী (৪০) ও তার সহযোগী যথাক্রমে নাঈম মিয়া (২৪), শামিম (৩৫), রনি (২৬), আবু সুফিয়ান (২০) ও মামুনকে (২৪) গ্রেপ্তার করা হয়।


এসময় ২টি চাপাতি, ১টি চাইনিজ কুড়াল, ১টি ছোরা ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১টি বাস জব্দ করা হয়। উদ্ধার করা হয় ডাকাতির শিকার ২জন ভিকটিমসহ পণ্যবাহী পিকআপ।


শনিবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।

 

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব জানায়, গতকাল রাতে নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জের ভূলতা গোলাকান্দাইল এশিয়ান হাইওয়েতে র‌্যাব-১১ এর টহল চলাকালীন সময়ে, একটি ডিম বোঝাই পিকআপ এর সন্দেহজনক গতিবিধি পরিলক্ষিত হলে উক্ত টহল দল পিকআপটি গতিরোধ করে। র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে উক্ত পিকআপ থেকে ২ জন ব্যক্তি পালানোর চেষ্টা করলে তাদেরকে আটক করা হয়।


আটকদের জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কথা বার্তায় অসংলগ্ন আচরণ প্রকাশ পাওয়ায় তাদেরকে তল্লাশী করলে তাদের কাছ থেকে ১টি চাপাতি ও ১টি চাইনিজ কুড়াল উদ্ধার করা হয়।


গ্রেপ্তার আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাব জানায়, তারা সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। তারা ডাকাতির উদ্দেশ্যে যুব কল্যান এক্সপ্রেস লি. এর একটি বাসের মাধ্যেমে ভূলতা থেকে রূপসী যাওয়ার পথে এশিয়ান হাইওয়েতে ডিমের পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য পিকআপের পিছু নেয়।

 

র‍্যাব মুখপাত্র খন্দকার মঈন জানান, ভূলতা-রূপসী সড়কে পিকআপটির সামনে বাস দ্বারা রাস্তা আটক করে পিকআপের গতিরোধ করে। এরপর পিকআপের ড্রাইভার ও তার সহকারীকে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে জোরপূর্বক পিকআপটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেয় এবং ড্রাইভার ও তার সহকারীকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে মারপিট করে ও তাদের সাথে থাকা বাসে উঠিয়ে নেয়। এরপর উক্ত ডাকাত দলের সরদার মূসা ও তার প্রধান সহকারী নাঈম পিকআপটি নিয়ে গাউছিয়া-মদনপুরমুখী রাস্তায় নিয়ে যায় এবং ডাকাত দলের বাকি সদস্যরা পিকআপ এর চালক ও হেলপারকে তাদের সাথে থাকা বাসে করে মদনপুরের দিকে নিয়ে যায়।


এরপর গ্রেপ্তার ডাকাতদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী পিকআপের ড্রাইভার ও হেলপারকে উদ্ধারের উদ্দেশ্যে আভিযানিক দলটি মদনপুর পৌঁছায়।


গ্রেপ্তার আসামিদের দেয়া তথ্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জ জেলার বন্দর থানার মদনপুরে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক থেকে যুব কল্যান এক্সপ্রেস লি. এর বাসটি আটক করতে সক্ষম হয়। এ সময় র‌্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতদলের সদস্যরা দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে র‌্যাব সদস্যরা ৪ জন ডাকাতকে আটক করে এবং অজ্ঞাতনামা ৪/৫ জন ডাকাত বাস থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়। এসময় বাসের ভিতর থেকে হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধা অবস্থায় পিকআপ এর ড্রাইভার ও তার সহকারীকে উদ্ধার করা হয়।


গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে কমান্ডার খন্দকার মঈন বলেন, ১০/১২ জনের সংঘবদ্ধ এই ডাকাত চক্রটি বেশ কয়েক বছর ধরে নারায়ণগঞ্জ জেলার সোনারগাঁও, রূপগঞ্জ ও আড়াইহাজার এলাকায় বিভিন্ন মহাসড়কে নিয়মিত ভাবে ডাকাতি করে আসছে। তারা পেশায় কেউ গার্মেন্টসকর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার। দিনে নিজ নিজ পেশায় নিয়োজিত থাকলেও বিভিন্ন সময় তারা সংঘবদ্ধভাবে দুর্ধর্ষ ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে থাকে।


জিজ্ঞাসাবাদে আরো জানা যায় যে, এই চক্রটি মূলত ৩টি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে ডাকাতি সংঘটন করে এবং ডাকাতির কাজে একটি বাস ব্যবহার করে।


র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার মূসার নির্দেশে প্রথম গ্রুপটি ডাকাতির জন্য বিভিন্ন গার্মেন্টস এর পণ্যবাহী ট্রাক ও মহাসড়কে চলাচলকারী পণ্যবাহী যানবাহন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করে এবং ডাকাতির জন্য সম্ভ্যাব্য স্থান নির্ধারণ করে। এই দলের সদস্যরা পেশায় গার্মেন্টস কর্মী, ড্রাইভার, হেলপার আবার কেউ রাজমিস্ত্রী ও কাপড়ের দোকানের কাটিং মাস্টার।


র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, দ্বিতীয় দলটি বাস নিয়ে মহাসড়কে সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান নিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে ডাকাতির জন্য টার্গেট পণ্যবাহী যানবাহনটির পিছু নেয়। পরবর্তীতে সুবিধাজনক স্থানে টার্গেট করা পণ্যবাহী গাড়ীটিকে বাস দ্বারা গতিরোধ করে এবং দ্রত পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে এলোপাথারি মারপিট করে হাত-পা ও চোখ-মুখ বেঁধে বাসে তুলে নেয়।

 

তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে পণ্যবাহী গাড়ীর চালক ও হেলপারকে জিম্মি করে বাসে নিয়ে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যায় ও তাদের মারপিট করে মুক্তিপণ দাবী করে এবং ডাকাতি শেষে পরবর্তীতে তাদের হাত-পা ও চোখ-মুখ বাধাঁ অবস্থায় মহাসড়কের নির্জন স্থানে ফেলে দেয়। তৃতীয় দলটির নেতৃত্বে থাকা ডাকাত দলের প্রধান মূসা ডাকাতিকৃত পণ্যবাহী গাড়ীটি চালিয়ে ডাকাতিকৃত পণ্য বিক্রি করার জন্য পূর্ব নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যায় এবং মালামাল আনলোড করে।


এছাড়াও, ডাকাত দলটি পণ্যবাহী গাড়িটি সুবিধাজনক স্থানে বিক্রি করে দেয়ার চেষ্টা করে অথবা ব্যর্থ হলে পরিত্যাক্ত অবস্থায় কোন নির্জন স্থানে ফেলে যায়। বিগত ০১ বছর ধরে যুব কল্যাণ এক্সপ্রেস লি. এর বাসটি দিয়ে তারা বেশ কয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। আগে তারা অন্যান্য বাস অথবা পিকআপ দিয়ে ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করত।


গ্রেপ্তার মূসাকে জিজ্ঞাসাবাদে র‍্যাবের এই কর্মকর্তা জানায়, সে উক্ত ডাকাত চক্রের মূল হোতা। সে গত ১০/১২ বছর ধরে বিভিন্ন মহাসড়কে ডাকাতি করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা- সিলেট মহাসড়কে বেশ কয়েকটি ডাকাতির ঘটনা তার নেতৃত্বে সংঘঠিত হয়েছে এবং প্রত্যেকটি ডাকাতিতে সে নিজে স্বশরীরে অংশগ্রহণ করে। তার নামে দেশের বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এর আগে ডাকাতির মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাভোগ করেছে।


গ্রেপ্তার শামিম ডাকাত সর্দার মূসার প্রধান সহযোগী এবং ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির চালক। গত ২০০৬ সালে স্ত্রীর হত্যার দায়ে সে ৭ বছর কারাভোগ করে।


র‍্যাব মুখপাত্র খন্দকার মঈন জানান, গ্রেপ্তার রনি ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বাসটির গাড়ী চালকের হেলপার। গ্রেপ্তার নাঈম পেশায় একজন গাড়ী চালক। গ্রেপ্তার মামুন স্থানীয় একটি সেলাই কারখানায় কার্টিং মাস্টার এর কাজ করে। সম্প্রতি তারা মূসার নির্দেশে বেশকয়েকটি ডাকাতিতে অংশগ্রহণ করে। তাদের নামে বিভিন্ন থানায় একাধিক ডাকাতির মামলা রয়েছে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ডাকাত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ