পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বিশ্বে খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ধরণের সংকটের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। যুদ্ধ ও জ্বালানি সংকটের পাশাপাশি অনাবৃষ্টি, অতিবৃষ্টি ও বন্যার মত প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে চলতি মওসুমে খাদ্যোৎপাদন হ্রাস পাওয়ার আশঙ্কা বেড়ে গেছে। রাশিয়া, ইউক্রেন, চীন, ভারত, ব্রাজিলসহ বিশ্বের খাদ্যশস্য উৎপাদনকারী দেশগুলোর স্বাভাবিক কৃষি উৎপাদন ব্যবস্থা ব্যহত হচ্ছে। সবকিছু স্বাভাবিক থাকলেও আমাদের মত দেশে হঠাৎ বর্ধিত জ্বালানি মূল্য ও বিদ্যুত সংকট, গ্যাসের কারণে সার কারখানা বন্ধ থাকার মত পরিস্থিতি দেশের কৃষি ব্যবস্থা ও খাদ্য উৎপাদনে বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করবে। ইতিমধ্যে সোমালিয়াসহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশে নিরব দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছে। জাতিসংঘের কৃষি ও খাদ্য সংস্থার তরফে এসব দেশে খাদ্য সংকট ও দুর্ভিক্ষাবস্থা মোকাবেলায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও সহায়তার তাগিদ দেয়া হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর এমন মানবিক তাগিদ পশ্চিমা শিল্পোন্নত দেশগুলোর শাসকদের তেমন প্রভাবিত করতে পারেনা। পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনের শিকার হওয়া ইরাক, আফগানিস্তান, সিরিয়া, ইয়েমেন, ফিলিস্তিনসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে দারিদ্র্য, খাদ্য সংকটসহ মানবিক সংকট চলছে তাতে পশ্চিমাদের তেমন কোনো মাথাব্যথা নেই। তারা যুদ্ধ বন্ধের রাজনৈতিক-ক’টনৈতিক উদ্যোগের বদলে ইসরাইল-ইউক্রেনের হাতে যুদ্ধের রসদ ও সমরাস্ত্রের যোগান দিয়ে যুদ্ধ ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টির নেপথ্যে ভ’মিকা রাখছে।
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরুতেই ইউক্রেন ও রাশিয়া থেকে খাদ্য ও জ্বালানি রফতানির সরবরাহ লাইন ভেঙ্গে পড়ায় বিশ্বজুড়ে একই সঙ্গে খাদ্য ও জ্বালানিমূল্য বৃদ্ধি পায়। যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হলে সংকট আরো তীব্র ও ঘণীভ’ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। খাদ্য রফতানিকারক দেশগুলোর মধ্যে ভারত একটি। কিছুদিন আগে ভারতের উত্তরপূবাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে পাহাড়ি ঢল ও বন্যায় ফসলের ক্ষতি হয়েছে। ভাটিরদেশ বাংলাদেশ আরো বড় ধরণের দুর্যোগের শিকার হয়েছে। যৌথনদীর উপর উজানে ভারতের বাঁধগুলো খুলে দেয়া এবং পাহাড়ি ঢলে সিলেট-সুনামগঞ্জসহ দেশের কয়েকটি জেলায় ফসলহানি এবং জনজীবনে অভাবনীয় দুর্ভোগ নেমে আসে। চলতি মওসুমে ভারতে বিভিন্ন রাজ্যে খরার কারণে কৃষি উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের ক্ষেত্রে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পুর্ণতা অর্জনে সক্ষম হলেও প্রতি বছর ভারত থেকে চাল-ডাল, পেঁয়াজসহ লাখ লাখ টন খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। তবে ভারত থেকে চাল আমদানি নিয়ে দেশে এক ধরণের অস্বচ্ছতা ও বিভ্রান্তিও আছে।
গ্যাস, বিদ্যুত, সার ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির সাথে সাথে দেশে সব পণ্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে জনজীবনে চরম দুর্ভোগ নেমে এসেছে। আয়ের সাথে ব্যয়ের সঙ্গতিহীন নি¤œ আয়ের কোটি কোটি মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে এসেছে। এহেন বাস্তবতায় বিদ্যুত সংকট ও ডিজেলের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে কৃষি উৎপাদন খরচ অন্তত ২৫ভাগ বেড়ে যেতে পারে। অতিরিক্ত খরচের পাশাপাশি কৃষিপণ্যের ন্যায্যমূল্য প্রাপ্তিতে অনিশ্চয়তার কারণে অনেক কৃষক চাষাবাদে অনাগ্রহী হয়ে পড়তে পারে। এহেন বাস্তবতা আমাদের কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তার জন্য বড় ঝুঁকি হিসেবে দেখা দিয়েছে। এটি শুধু কৃষকদের সংকট নয়, খাদ্য নিরাপত্তার মত ইস্যু অন্যতম জাতীয় সংকট হিসেবে দেখা হয়। বৈশ্বিক সংকটের সময় দেশে বৈদেশিক মূদ্রার পর্যাপ্ত রিজার্ভ থাকলেও খাদ্য ও জ্বালানির তাৎক্ষণিক চাহিদা পূরণ সম্ভব হয়না। ইতিমধ্যে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে শুরু করেছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা ও করোনাকালীন বাস্তবতায় আমরা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি স্থিতিশীল রাখতে সক্ষম হয়েছি। গত চার দশকে এ দেশের কৃষকরা জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও চাহিদার সাথে পাল্লা দিয়ে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধি করে দেশকে খাদ্যে প্রায় স্বয়ংসম্পুর্ন করতে সক্ষম হয়েছে। দেশের গুণী কৃষকসমাজ, কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোর উদ্ভাবক এবং সরকারের সমন্বিত উদ্যোগের ফলেই এটি সম্ভব হয়েছে। এবারের সংকট মোকাবেলায় সকলকে আরো সতর্ক ও সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। করোনাকালে সরকারের পক্ষ থেকে কৃষকদের জন্য প্রণোদনা দেয়া হলেও তা যথাযথভাবে প্রকৃত কৃষকদের কাছে কতটুকু পৌছেছে তা নিয়ে অনেক অভিযোগ আছে। এবারের বৈশ্বিক খাদ্য ও জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করে দেশকে খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিমুক্ত রাখতে হলে কৃষকদেরকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। কৃষিখাতে আর্থিক প্রণোদনাসহ ডিজেল, সার ও বীজ সরবরাহের ক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে। কৃষি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ঠিক রেখে খাদ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ এবং জনদুর্ভোগ লাঘবে সরকারকে অবশ্যই কৃষকের পাশে দাঁড়াতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।