পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হলের ১৭৭ নং রুমে নিয়মিত চলে ছাত্রলীগের নির্যাতন। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা থাকেন এই রুমে। তারা নিয়মিত ছাত্রলীগের প্রোগ্রামে না যাওয়া ও কথিত গেস্টরুমে উপস্থিত না হওয়ায় ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের এই রুমে ডেকে জবাবদিহি করেন। ইনকিলাবের কাছে এমন তথ্য তুলে ধরেন গত রোববার ছাত্রলীগের ধারাবাহিক নির্যাতনের শিকার হওয়া এক শিক্ষার্থী।
ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার ওই শিক্ষার্থীর নাম শিপন মিয়া। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্য বিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
ঘটনার বর্ণনায় শিপন মিয়া বলেন, পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে ছাত্রলীগের পরিচালিত কথিত গেস্টরুমে উপস্থিত হতে পারিনি। তাই রোববার রাত প্রায় সাড়ে এগারোটায় ১৭৭ নাম্বার রুমে ডেকে আমাকে চড়-থাপ্পড় ও মানসিক নির্যাতন করা হয়।
নির্যাতনের শিকার হয়ে এবং ছাত্রলীগের ভয়ে ঘটনার দিন মধ্য রাতেই হল ছেড়ে অন্য হলে বন্ধুর কাছে আশ্রয় নেন এই শিক্ষাথী। পরীক্ষার আগের রাতে এ ধরনের ঘটনায় মানসিকভাবে চাপ অনুভব করেন বলে জানান তিনি। এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী হল প্রভোস্ট ও প্রক্টরের নিকট একটি অভিযোগ পত্র জমা দেন এবং তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছেন বলে জানান তিনি।
শিপন মিয়া ইনকিলাবকে বলেন, মারধর করার বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারছি না। মারধরের পাশাপাশি স্টাম্প দিয়ে পেটে কয়েকবার খোঁচা দেওয়া হয়। মা-বাবাকেও গালি দেওয়া হয়। আমার সঙ্গে চরম খারাপ ব্যবহার করেছে তারা। তিনি আরো বলেন, সেদিন আমার আরো অন্তত পাঁচজন বন্ধুকে নির্যাতন করেছে। কিন্তু তারা কেউই ভয়ে মুখ খুলছে না। আমি কথা বলছি বিধায় আমার এক বন্ধু আমাকে বলে, হলে তো থাকতেই হবে; এসব (নিউজ) করে লাভ কী? আমরা এখন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এসময় এসেও যদি এভাবে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হয় তাহলে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার স্বার্থকতা কোথায়?
ওই শিক্ষার্থীকে চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনায় অভিযুক্ত ইয়াসির আরাফাত প্লাবন রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্রলীগের সক্রিয়কর্মী এবং হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদারের অনুসারী।
শিপন মিয়ার অভিযোগ, ছাত্রলীগ কর্মী আল ইমরান তাকে স্টাম্প দিয়ে পেটে খোঁচা মেরেছেন। ইয়াছিন আল শাহীন তার ফোন কেড়ে নিয়েছেন। তারা সবাই ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
পুরো ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বিভাগের পরীক্ষার জন্য ছাত্রলীগের কর্মসূচীতে অংশ নিতে পারিনি। এজন্য আমাকে রাতে ছাত্রলীগের পলিটিক্যাল রুমে যেতে কয়েকবার ফোন দেন বড় ভাইয়েরা। কিন্তু পরীক্ষার প্রস্তুতির কারণে তাদের ফোন ধরতে পারিনি। পরে আমাকে খুঁজে ধরে নিয়ে যেতে কয়েকজনকে পাঠানো হয়। তারা আমাকে হলের ১৭৭ নাম্বার রুমে (পলিটিক্যাল রুম) ডেকে নিয়ে যায়। সেখানে গেলে শাহীন আমার হাত থেকে ফোন কেড়ে নেন। কেন ফোন ধরিনি তা জানতে চান। আমাকে গালিগালাজ করেন। এক পর্যায়ে প্লাবন আমার গালে চড় মারেন। ইমরান আমাকে স্ট্যাম্প দিয়ে পেটে খোঁচা মারেন। পরীক্ষার দিন রাতে এধরনের নির্যাতন করায় মানসিকভাবে আমি ভেঙে পড়ি। আমি এখন তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আমার সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঘটায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি।
এসব বিষয়ে জানতে অভিযুক্ত ছাত্রলীগ কর্মীদের একাধিকবার ফোন দিলেও তারা ফোন রিসিভ করেননি।
এর আগে ২০১৮ সালে সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের নির্যাতনে চোখ নষ্ট হয়ে যায় এহসান রফিকের। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাকর্মীদের বহিষ্কার করা হয়। ভারতে চোখের চিকিৎসা নিয়ে এরপর এহসান দেশ ছেড়ে মালয়েশিয়ায় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে গেছেন।
গত এপ্রিলে হল কর্তৃপক্ষকে সলিমুল্লাহ মুসলিম (এসএম) হল ছাত্রলীগের সভাপতির বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ জানানোর পর ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ভুক্তভোগী এক শিক্ষার্থীকে হল ছাড়া করেছে বলে অভিযোগ উঠেছিল। পরবর্তীতে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর পূনরায় তাকে হলে উঠায় হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদার।
এছাড়াও হল সংসদের রুম দখল করে ছাত্রলীগের কার্যালয় ঘোষণার অভিযোগ রয়েছে তানভীর শিকদারের বিরুদ্ধে। এখনো তিনি ওই রুমে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করে থাকেন বলে জানা গেছে। সম্প্রতি ঈদুল আজহা উপলক্ষে হাতখরচের জন্য পলাশির বুয়েট মার্কেটের এক জুস বিক্রেতার কাছ থেকে ১ লাখ টাকা চাঁদা দাবিরও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। পরবর্তীতে ছাত্রলীগের এক বড় নেতার ফোন পেয়ে চাঁদার দাবি থেকে সরে আসেন তানভীর।
টর্চার সেল গঠন করে শিক্ষার্থী নির্যাতনের বিষয়টি জানতে চাইলে হল ছাত্রলীগের সভাপতি তানভীর শিকদার বলেন, এ ধরনের ঘটনার খবর আমার জানা নেই। আমি খোঁজ নেব। যদি কিছু হয়ে থাকে তাহলে, প্রমাণ সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
হল প্রভোস্ট (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর ড. মুহাম্মদ বেলাল হোসাইন জানান, আজ মঙ্গলবার একটি মিটিং ডেকে তদন্ত কমিটি গঠন করে দিবেন।#
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।