Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইতিহাসের জঘন্যতম নির্যাতন চলছে মিয়ানমারে

রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় নিকি নিউজের বিশ্লেষণ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় এশিয়ার মুসলিমদের মধ্যে উদ্বেগ বাড়ছে। গত সপ্তাহে কয়েক হাজার মানুষ এশিয়ার বিভিন্ন দেশের রাজধানীতে বিক্ষোভ করেছে। তারা মিয়ানমারের এক সময়ের গৃহবন্দি নেত্রী ও বর্তমানে রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সুচির তীব্র সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বর্বর নির্যাতন চালাচ্ছে। এ ধরনের কর্মকা-ের জন্য নীরব ভূমিকা পালন করার জন্য সুচিকে বর্বর বলেও আখ্যা দিয়েছে কোনো কোনো দেশের নাগরিকরা। ইন্দোনেশিয়ায় রাজধানী জাকার্তায় ২৫ নভেম্বর ইসলামিক রাজনৈতিক দলের নেতাসহ প্রায় চার শতাধিক মানুষ মিয়ানমারের দূতাবাসের সামনে রোহিঙ্গা মুসলিমদের উপর বর্বর হামলায় মানববন্ধন করেছে। তারা মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচির নোবেল পুরস্কার ফেরত নেয়ার আহ্বান জানান। ১৯৯১ সালে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনীর হাতে গৃহবন্দি থাকার সময় শান্তিতে নোবেল পান অং সান সুচি।
জাকার্তা মানববন্ধনের প্রধান সমন্বয়ক জুলকাইফ আলী বলেন, আমরা দুঃখিত সুচি। আমরা জানি, আপনি শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন। তবে শান্তিতে নোবেল পেলেও আপনার দেশ মিয়ানমারে শান্তি কোথায়? আপনার দেশে মুসলিমরা শান্তিতে নেই। শান্তিতে নোবেল পেয়েও অশান্তির আগুনে জ্বলছে মিয়ানমার। দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করার আহ্বান জানানো হয় জাকার্তার ওই মানববন্ধন থেকে। মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে প্রায় ১১ লাখ রোহিঙ্গা মুসলিম রয়েছে। যুগযুগ ধরে তারা মৌলিক অধিকার পাওয়া থেকে বঞ্চিত ও অবহেলিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের নাগরিকত্ব নিয়ে কাঠখড় পোহাতে হয়েছে সামরিক সরকারের শাসনামলে। ২০১৫ সালের নভেম্বরের নির্বাচনের মাধ্যমে অং সান সুচির নেতৃত্বাধীন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি সরকার গঠন করে। নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় থাকা সত্ত্বেও দেশটির মুসলিমরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছে দেশটিতে।
সুচির সরকার এখনো দেশটিতে মুসলিম রোহিঙ্গাদের নির্যাতন রোধে কার্যকরী কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। ৯ অক্টোবরের পরে এই পর্যন্ত আড়াইশ’ রোহিঙ্গা মুসলিম হত্যার শিকার হয়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তে বিশেষ অভিযানের সময় মিয়ানমারের ৯ পুলিশ সন্ত্রাসীদের আক্রমণে নিহত হয়। ৯ পুলিশ নিহতের জের ধরে দেশটির সেনাবাহিনী নিরীহ রোহিঙ্গাদের উপর নির্যাতন শুরু করে হত্যা করছে। ওই দুর্ঘটনার পরে মিয়ানমার সেনারা মংড়– শহর ঘিড়ে ফেলে। এটি রোহিঙ্গা অধ্যুষিত এলাকা। মংড়–তে সন্দেহভাজন প্রায় একশ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে বলে মিয়ানমারের সেনা বাহিনীর সূত্রে জানা যায়। তবে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো এই সংখ্যা আরো বেশি হবে বলে দাবি করেছে। সর্বশেষ হামলায় প্রায় ৩০ হাজার গ্রামবাসীর ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলেও মানবাধিকার সংস্থাগুলো উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমতাবস্থায় মিয়ানমারের সরকার সংঘাতপূর্ণ এলাকায় গণমাধ্যমের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়। প্রকৃতপক্ষে রাখাইনে কি হচ্ছে তা এখনো সঠিকভাবে বলা যাচ্ছে না। জাতিসংঘের কর্মকর্তা জন ম্যাকেসিন ২৪ নভেম্বর বিবিসিকে জানান, মিয়ানমার রাখাইন রাজ্য থেকে রোহিঙ্গা মুসলিম নিধনে নেমেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের সীমান্ত খুলে দিতে বলা কঠিন। কেননা মিয়ানমারে এই ধরনের কর্মকা- নিয়মিতই করছে। মিয়ানমারের লক্ষ্যই যেন সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিধন করা। এদিকে জাতিসংঘের কর্মকর্তা জন ম্যাকেসিনের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন মিয়ানমারের প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র জাও হতাই। তিনি বলেন, জাতিসংঘের কর্মকর্তার পেশাদারিত্ব বজায় রেখে কথা বলা উচিৎ। মিয়ানমারের সরকারের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা তা আদৌ যথাযথ নয়। মুখপাত্র আরো বলেন, মিয়ানমারের সেনাবাহিনী কোনো ভুল কাজ করছে না। সেনাবাহিনী কেবল সশস্ত্র বিদ্রোহ থেকে দেশকে সুরক্ষার জন্য কাজ করছে।
তবে জাও এর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তব চিত্রের অমিল রয়েছে। বিভিন্ন প্রত্যাক্ষদর্শী ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো অভিযোগ করেছে বেসামরিক পুরুষদের উপর ব্যাপক নির্যাতন করছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। আর নারীদের ধর্ষণ করার অভিযোগ করেছেন। স্যাটেলাইটের বিভিন্ন চিত্রে ১ হাজার বাড়িঘর পুড়িয়ে দেয়ার খবর প্রকাশিত হয়েছে।
অপর এক খবরে জানা যায়, দক্ষিণ কোরিয়ার সিউলে রোহিঙ্গাদের হত্যা ও নারীদের ধর্ষণের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের দূতাবাস ঘেরাও এবং মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে দেশটির মুসলিম কমিউনিটি। মানববন্ধন এবং দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচিতে বাংলাদেশিসহ অন্যান্য দেশের কয়েক হাজার মুসলমান অংশগ্রহণ করেছেন। সিউলের স্থানীয় সরকারের অনুমতিক্রমে মুসলিম কমিউনিটি গত রোববার দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত মিয়ানমার দূতাবাস ঘেরাও কর্মসূচি পালন করে। বিবিসি, ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • সাব্বির ২৯ নভেম্বর, ২০১৬, ১:১৮ এএম says : 0
    জেগে ওঠো বিশ্ব মানবতা ....................
    Total Reply(0) Reply
  • md mijanur rahman ৬ ডিসেম্বর, ২০১৬, ৬:১৮ পিএম says : 0
    জাতিসংঘ কোথায় তারা কেন এগিয়ে আসে না?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: মিয়ানমার


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ