Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইরানে ঐতিহাসিক সফরে পুতিন-এরদোগান

রাশিয়ার ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে আরে সতর্ক ইইউ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২২, ১২:০২ এএম

গঠনমূলক ভ‚মিকা পালন করবে চীন : পররাষ্ট্রমন্ত্রী :: ডনবাস পুনর্র্নির্মাণের জন্য শ্রমিক পাঠাবে উত্তর কোরিয়া
মাত্র তিনদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সউদী আরব সফর করে গেছেন। তারপরই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন তেহরান গিয়েছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা খামেনেইয়ের সঙ্গে তার পঞ্চম বৈঠক করার জন্য। পুতিনের পররাষ্ট্রনীতি সংক্রান্ত পরামর্শদাতা ইউরি উসাকভ মস্কোতে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, দ্বিপাক্ষিক ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মতৈক্য গড়ে তোলাই পুতিনের সফরের উদ্দেশ্য। অধিকাংশ বিষয়েই দুই নেতার অবস্থান এক বা প্রায় এক।

ইউক্রেনে রাশিয়ার হামলার পর পুতিন একদা সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্গত দুই দেশে সফর করেছেন। কিন্তু তার বাইরে এই প্রথম তিনি কোনো দেশে গেলেন। তার এই সফর খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, পশ্চিমা দেশগুলি এখন রাশিয়ার অর্থনীতিকে অচল করে দেয়ার জন্য যাবতীয় পদক্ষেপ নিচ্ছে। রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণ করার পর থেকে তারা মস্কোকে ভাতে মারার চেষ্টা করছে। এই অবস্থায় পুতিন চীন, ইরান এবং ভারতের আরো কাছাকাছি আসার চেষ্টা করছেন। তুরস্কের প্রেসিডন্ট এরদোগান গতকাল সকালে তেহরান পৌঁছে গেছেন। আলজাজিরা জানাচ্ছে, ইরানের প্রেসিডেন্ট রাইসি, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন এবং এরদোগানের মধ্যে ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হবে। সেই বৈঠকে সিরিয়া এবং ইউক্রেন নিয়ে কথা হবে। এছাড়া আলাদাভাবে দ্বিপাক্ষিক আলোচনা হবে। রাইসি ও পুতিনের মধ্যে আলোচনায় ইরানের পরমাণু চুক্তি গুরুত্ব পাবে।

সিরিয়া নিয়ে রাশিয়া ও ইরানের সঙ্গে তুরস্কের মতভেদ আছে। রাশিয়া ও ইরান সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদকে সমর্থন করে। তুরস্ক জানিয়েছে, তারা শীঘ্রই উত্তর সিরিয়ার দুইটি শহরে সামরিক অভিযান চালাবে। সেই অভিযানের উদ্দেশ্য হবে সশস্ত্র কুর্দি গোষ্ঠীগুলির বিরুদ্ধে অভিযান। ইরান সফরের মধ্য দিয়ে পুতিন একটি বার্তা পাঠাতে চাইছেন। তা হলো, আমেরিকার শত্রæ দেশ ইরানের সঙ্গে রাশিয়া এখন সম্পর্ক আরো ভালো করতে চাইছে। সফরের আগে পুতিনের মুখপাত্র পেসকভ বলেছেন, রাশিয়া ও ইরান দীর্ঘদিন ধরে পশ্চিমা দেশগুলির নিষেধাজ্ঞার মুখে পড়েছে। তেহরানের কাছেও রাশিয়ার সমর্থন জরুরি। কারণ, আমেরিকা, ইসরাইল ও একাধিক আরব দেশের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক ভালো নয়। ইরানের এক সরকারি কর্মকর্তা বলেছেন, ‘মস্কো হলো সুপারপাওয়ার। আমাদের এরকমই শক্তিশালী বন্ধু দেশ চাই।’ বিবিসি বলছে, মঙ্গলবারের এই সফর পুতিনকে ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করার সুযোগ তৈরি করে দেবে। মস্কোর আন্তর্জাতিক যে অল্প কয়েকটি মিত্র এবং পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার কবলে থাকা দেশ রয়েছে তাদের অন্যতম ইরান।

রাশিয়ার উপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপে আরও সতর্ক ইইউ : ইউরোপীয় ইউনিয়ন রাশিয়ার উপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞাগুলি থেকে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে, তাই তারা নতুন বিধিনিষেধ নিয়ে আসার বিষয়ে আরও সতর্ক হচ্ছে। ভালদাই ইন্টারন্যাশনাল ডিসকাশন ক্লাবের ডেভেলপমেন্ট অ্যান্ড সাপোর্ট ফাউন্ডেশনের বোর্ডের চেয়ারম্যান অ্যান্ড্রে বিস্ট্রিটস্কি সোমবার বার্তা সংস্থা তাসকে বলেছেন। রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞার সপ্তম প্যাকেজের জন্য ইইউ পরিকল্পনার বিষয়ে মন্তব্য করতে বলা হলে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞার নীতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষতি করে এবং তারা ইতিমধ্যে অনেক ক্ষতি স্বীকার করেছে।’

তিনি বলেন, ‘অবশ্যই, তারা একটু বেশি সতর্ক হয়ে উঠেছে, তাদের পক্ষে নিষেধাজ্ঞার নতুন প্যাকেজ তৈরি করা সহজ নয়।’ জ্বালানীর ক্ষেত্রে, ইইউ সম্ভবত তারা যা করতে পারে তার সীমাতে পৌঁছেছে, বিস্ট্রিটস্কি বলেছেন। তিনি পরামর্শ দিয়েছিলেন যে, আরও নিষেধাজ্ঞাগুলি কেবলমাত্র আর্থিক খাত এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিদের লক্ষ্য হতে পারে। বিশ্লেষক বলেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারা সম্ভবত এমন বিকল্পগুলি সন্ধান করবেন যা রাশিয়াকে ব্যথা দেবে তবে বøকটিকে যতটা সম্ভব বাঁচাবে, যদিও তারা কিছু ক্ষতি পুরোপুরি এড়াতে সক্ষম হবে না। তিনি বলেন, ইউরোপীয়রা জ্বালানির দাম বাড়ায় আনন্দিত হয় না এবং এটি সাম্প্রতিক সরকারের পরিবর্তনের একটি পরোক্ষ কারণ। তবুও, বিশ্লেষকের মতে, ইইউ নেতারা নিষেধাজ্ঞাগুলি বাড়ানোর লক্ষ্য রাখে, এমনকি তারা তাদের অর্থনীতিকেও কঠোরভাবে আঘাত করে। তিনি বলেন, ‘রাশিয়ার এই বিষয়ে কোনো বিভ্রম লালন করা উচিত নয়।’

গঠনমূলক ভ‚মিকা পালন করবে চীন : ইউক্রেনের সঙ্কট প্রসারিত হওয়ার প্রবণতা দেখাচ্ছে এবং চীন যুদ্ধবিরতির জন্য গঠনমূলক ভ‚মিকা পালন করবে। চীনা পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই সোমবার এ তথ্য জানিয়েছেন। ফরাসি প্রেসিডেন্টের ক‚টনৈতিক পরামর্শদাতা ইমানুয়েল বোনের সাথে ফোনালাপের পরে ওয়াং ই বলেন, ‘ইউক্রেন সঙ্কট দীর্ঘায়িত এবং জটিল হয়ে ওঠার প্রবণতা দেখিয়েছে, যা বিশ্ব দেখতে চায় না।’ তিনি বলেন, চীন প্রথম থেকেই শান্তি আলোচনাকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ এবং যুদ্ধবিরতি এবং শত্রæতা বন্ধের জন্য গঠনমূলক ভ‚মিকা পালনের জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবে। চীন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাখোঁর সক্রিয় মধ্যস্থতা প্রচেষ্টার প্রশংসা করে এবং সমর্থন করে, ওয়াং বলেন, চীন ‘বিশ্বাস করে যে ফ্রান্স শান্তি পুনরুদ্ধারে একটি প্রধান ইউরোপীয় দেশ হিসেবে অনন্য এবং গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করবে।’ মন্ত্রী বলেন, ইউক্রেন সঙ্কটের ফলে খাদ্য ও শক্তির ঘাটতি দেখা দিয়েছে, ‘বৈশ্বিক পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য চ্যালেঞ্জ ও ঝুঁকি নিয়ে এসেছে।’

ডনবাস পুনর্র্নির্মাণে শ্রমিক পাঠাবে উত্তর কোরিয়া : পিয়ংইয়ং-এ রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের মতে, উত্তর কোরিয়া পূর্ব ইউক্রেনের দুটি রাশিয়ান-নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলে কর্মী পাঠাতে পারে - এমন একটি পদক্ষেপ যা উত্তরের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার জন্য একটি চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে। সিউল-ভিত্তিক ওয়েবসাইট এনকে নিউজ অনুসারে, রাষ্ট্রদূত আলেকজান্ডার মাতসেগোরা বলেছেন যে, উত্তর কোরিয়ার কর্মীরা ডোনেৎস্ক এবং লুহানস্ক পিপলস রিপাবলিকের যুদ্ধ-বিধ্বস্ত অবকাঠামো পুনর্র্নিমাণে সহায়তা করতে পারে। তিনি বলেছেন, জাতিসংঘের নিষেধাজ্ঞা সত্তে¡ও ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে উত্তর কোরিয়া এবং স্বঘোষিত প্রজাতন্ত্রের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার জন্য সম্ভাব্য ‘অনেক সুযোগ’ রয়েছে।

মাতসেগোরা রাশিয়ান সংবাদপত্র ইজভেস্টিয়াকে একটি সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, এনকে নিউজ অনুসারে, ‘অত্যন্ত যোগ্য এবং কঠোর পরিশ্রমী কোরিয়ান নির্মাতা, যারা সবচেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে কাজ করতে সক্ষম, তারা আমাদের সামাজিক, অবকাঠামো এবং শিল্প সুবিধাগুলি পুনরুদ্ধার করতে সাহায্য করতে পারে।’ ইউক্রেনীয় সরকারকে পিয়ংইয়ংয়ের প্রতি ওয়াশিংটনের ‘শত্রæ’ অবস্থানের অংশ বলে অভিযুক্ত করে উত্তর কোরিয়া দুটি অঞ্চলকে স্বীকৃতি দেয়ার কয়েকদিন পরেই তার মন্তব্য এসেছে। উত্তরের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় বলেছে: ‘ইউক্রেনের অতীতে মার্কিন অন্যায় ও অবৈধ শত্রæতামূলক নীতিতে সক্রিয়ভাবে যোগদানের মাধ্যমে জাতিগুলির মধ্যে ন্যায্যতা এবং ন্যায়বিচারের গুরুতর অভাব রয়েছে এমন একটি কাজ করার পরে আমাদের সার্বভৌমত্বের বৈধ অনুশীলনের ইস্যু উত্থাপন বা বিতর্ক করার কোনও অধিকার নেই।’ সূত্র : দ্য গার্ডিয়ান, তাস, রয়টার্স, আলজাজিরা, বিবিসি নিউজ।

 

 

 



 

Show all comments
  • আবুল ২০ জুলাই, ২০২২, ২:০১ এএম says : 0
    তুরস্ক কৌশলে সবাইকে কাছে টানছে। এটা ভালো, কারণ তারা বিশ্বে শান্তি চায়।
    Total Reply(0) Reply
  • আবুল ২০ জুলাই, ২০২২, ২:০৩ এএম says : 0
    তুরস্কের মতো আরো কিছূ রাষ্ট্র দরকার যারা বিশ্ব থেকে অন্যায় দূরীভূত করার চিন্তা করে।
    Total Reply(0) Reply
  • আবুল ২০ জুলাই, ২০২২, ২:০১ এএম says : 0
    তুরস্ক ও রাশিয়া এক সময় সারা বিশ্বে শাষন করবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: এরদোগান


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ