Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের ক্ষেত্রে সতর্ক পদক্ষেপ নিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ২০ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

বিদ্যুৎ খাতের উন্নয়ন সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। বিগত একযুগে এখাতের উন্নয়নে সরকার নিরলস চেষ্টা চালিয়েছে। এর ফলে বিদ্যুতকেন্দ্রগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ২০ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত হয়েছে। লোডশেডিং বলতে কিছু ছিল না। ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছেছে। এমনকি সঞ্চালন লাইনের অভাবে উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরবরাহের জটিলতার কথাও বলা হয়েছে। তবে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়ার প্রভাব দেশেও পড়েছে। সরকার ইতোমধ্যে সতর্ক ব্যবস্থা হিসেবে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। বিশ্বে এলএনজি ও পেট্রোলিয়ামের দাম বেড়ে যাওয়ায় তা আমদানি বন্ধ রেখেছে। ডিজেল নির্ভর বিদ্যুতকেন্দ্রে উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে। এছাড়া বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের জন্য মসজিদে নামাজের সময় ছাড়া এসি বন্ধ, রাত ৮টার মধ্যে দোকানপাট, মার্কেট, শপিংমল বাধ্যতামূলক বন্ধ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এছাড়া সরকারি- বেসরকারি অফিসের কিছু কার্যক্রম ভার্চুয়ালি করা, সপ্তাহে একদিন পেট্রোলপাম্প বন্ধ রাখার চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। গতকাল থেকে এলাকাভিত্তিক পর্যায়ক্রমে দুই ঘন্টা করে লোডশেডিং শুরু করা হয়েছে। এর মধ্যে মসজিদে এসির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি নিয়ে ইতোমধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, দেশের মসজিদের শতকরা ১ ভাগ মসজিদে নামাজের সময় এসি চালানো হয়। এতে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সঠিক হয়নি। এর ফলে সরকারের ভাবমর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। বরং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কাজটি সবার আগে প্রশাসনের বিভিন্ন অফিস থেকে শুরু করা প্রয়োজন।

দেশে জ্বালানি সংকট নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই আমরা কৃচ্ছসাধনের কথা বলেছি। তবে তা হতে হবে পরিকল্পিতভাবে। সরকারকে খতিয়ে দেখতে হবে কোথায় কোথায় বিদ্যুৎ অপ্রয়োজনীয় এবং কম প্রয়োজনীয় সেসব খাত খুঁজে বিদ্যুৎ ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা। সরকার এখন যে উদ্যোগ নিয়েছে তা সাধুবাদযোগ্য। তবে তা সবার আগে সর্বসাধারণের ওপর না চাপিয়ে এ কাজ শুরু করতে হবে সরকারি পর্যায় থেকে। সরকার আগে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে তারপর সাধারণ মানুষের কৃচ্ছসাধনের দিকে নজর দিতে হবে। তা নাহলে, এ ধারণা প্রতিষ্ঠিত হবে, সরকার সব ভার সাধারণ মানুষের ওপরই চাপিয়ে দিতে চায় এবং সরকার কেবল তার কর্মকর্তা-কর্মচারিদের স্বার্থ দেখছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, জ্বালানি ও বিদ্যুতখাতে ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির চাপ দেশের প্রতিটি সেক্টরেই বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিদ্যুত-জ্বালানিসহ সর্বক্ষেত্রে কৃচ্ছ্রতা গ্রহণ করতে সাধারণ মানুষকে উদ্বুদ্ধকরণ এবং নির্দেশনা দিয়ে সংকট উত্তরণের প্রয়াস অগ্রাহ্য করা যায়না। আবার লোডশেডিং দিয়ে সংকট উত্তরণ সম্ভব নয়। অনির্দিষ্টকাল ধরে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি চলতে পারে না। এ খাতের টেকসই উন্নয়নে নজর দেয়ার কোনো বিকল্প নেই। বিদ্যুত ও জ্বালানি সাশ্রয়ে সরকারি অফিস-আদালত, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ অন্যান্য যেসব খাতে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার হয় সেখানে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের গাড়ী ব্যবহার নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিদ্যুতখাতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও ভর্তুকি দিয়ে এ খাতের সাফল্য নিশ্চিত করার পরও কেন হঠাৎ এমন সংকটের মুখে পড়তে হল তা নিয়ে আত্মপোলব্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। বলা বাহুল্য, শিল্পোন্নত দেশেও জ্বালানি সংকটের প্রভাব পড়েছে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলো গভীর সংকটে পড়বে বা পড়তে যাচ্ছে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। সরকার ভাড়াভিত্তিক ও বহুমাত্রিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ এবং জ্বালানি আমদানির ওপর জোর দিলেও গ্যাস উত্তোলন বা নতুন গ্যাস ক্ষেত্রের দিকে কম নজর দেয়ায় সংকট দেখা দিয়েছে। কিছু নতুন গ্যাস ক্ষেত্র আবিষ্কার ও উত্তোলনের ব্যবস্থা করলে এ সংকট মোকাবেলা অনেকটাই সহজ হয়ে যেত। বিশেষজ্ঞরা বারবার এ ব্যাপারে তাকিদ দিলেও সরকার তা খুব একটা আমলে নেয়নি। বিদ্যুৎ খাতে কৃচ্ছসাধনের ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিল্পকারখানার উৎপাদন খরচ ও ব্যয় বৃদ্ধি পাবে। ব্যবসা-বাণিজ্যে স্থবিরতা নেমে আসবে। এর বিরূপ প্রভাব সামগ্রিক অর্থনীতিতে পড়বে। অর্থনীতিতে স্থবিরতা বিরাজ করলে তা পুনরায় ঘুরে দাঁড়াতে অনেক সময় লাগবে। এসব বিবেচনায়, বিদ্যুতের কৃচ্ছসাধনের ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক থাকতে হবে। সুপরিকল্পিতভাবে পদক্ষেপ নিতে হবে। জ্বালানি সঙ্কট কাটাতে দেশীয় উৎসগুলোর উপর বেশি জোর দিতে হবে। নতুন গ্যাসক্ষেত্রের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের ত্বরিৎ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারকে নিজের ঘর থেকে এই কৃচ্ছসাধন শুরু করতে হবে। কেবল সব ভার সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেয়া উচিৎ হবে না।



 

Show all comments
  • আবুল ২০ জুলাই, ২০২২, ২:০৫ এএম says : 0
    দেশের মসজিদের শতকরা ১ ভাগ মসজিদে নামাজের সময় এসি চালানো হয়। এতে নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সঠিক হয়নি। এর ফলে সরকারের ভাবমর্যাদা প্রশ্নের মুখে পড়তে পারে। বরং বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের কাজটি সবার আগে প্রশাসনের বিভিন্ন অফিস থেকে শুরু করা প্রয়োজন।
    Total Reply(0) Reply
  • আবুল ২০ জুলাই, ২০২২, ২:০৪ এএম says : 0
    সরকার যদি লোডশেডিং বন্ধ না করার ব্যবস্থা করে তাহলে তাদের সব উন্নয়ন বিলীন হয়ে যাবে।
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ২০ জুলাই, ২০২২, ২:০৭ এএম says : 0
    হঠাৎ করে দেশের এ অবস্থা হওয়ার কারণ কি? একটু বলবেন সরকারের কর্তা ব্যাক্তিরা। সারা বছর উন্নয়নের বুলি উড়াইছেন। এতো উন্নয়ন গেলো কোথায়?
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ২০ জুলাই, ২০২২, ২:০৮ এএম says : 0
    বিদ্যুতখাতে ব্যাপক বিনিয়োগ ও ভর্তুকি দিয়ে এ খাতের সাফল্য নিশ্চিত করার পরও কেন হঠাৎ এমন সংকটের মুখে পড়তে হল তা নিয়ে আত্মপোলব্ধির প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
    Total Reply(0) Reply
  • ইমরান ২০ জুলাই, ২০২২, ২:১০ এএম says : 0
    বলার অপেক্ষা রাখে না, জ্বালানি ও বিদ্যুতখাতে ঘাটতি ও মূল্যবৃদ্ধির চাপ দেশের প্রতিটি সেক্টরেই বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে। মানুষের জীবনযাত্রা কঠিন হয়ে পড়েছে। লোডশেডিং বেড়ে যাওয়ায় মানুষকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন