Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি থেকে আমাদের সতর্ক হতে হবে

কামরুল হাসান দর্পণ | প্রকাশের সময় : ১৫ জুলাই, ২০২২, ১২:০৩ এএম

খাদ্য, জ্বালানি সংকটের তীব্র সংকট এবং সার্বিক অর্থনীতি পর্যুদস্ত হয়ে পড়ায় গত মে মাসে শ্রীলঙ্কার জনগণ রাজাপাকসের সরকারের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে ব্যাপক আন্দোলন শুরু করে। আন্দোলন এতটাই তীব্র ছিল যে, প্রধানমন্ত্রী রাজাপাকসেকে ক্ষমতা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে এবং গত সপ্তাহে আন্দোলনের মুখে তার ছোট ভাই গোতাবায়া পদত্যাগ করে পালিয়ে মালদ্বীপে আশ্রয় নিয়েছেন। ১৯৪৮ সালে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে শ্রীলঙ্কা এমন বিপর্যয়ের মুখে আর কখনো পড়েনি। উন্নয়নশীল দেশ হয়ে বেশ ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছিল দেশটি। হঠাৎ করেই যেন দেশটি আকাশ থেকে মাটিতে পড়ে যায়। একেবারে দেউলিয়া হয়ে গেছে। দেশটির বর্তমান অবস্থা এতটাই শোচনীয় যে, এর কোষাগার পুরোপুরি খালি। জ্বালানি, খাদ্য ও ওষুধ আমদানি করতে পারছে না। জাতিসংঘের মতে, দেশটি এক ভয়াবহ মানবিক সংকটে পড়েছে। দিনে একবার খাবার জোগাড় করতে অনেককে সংগ্রাম করতে হচ্ছে। অস্ত্রোপচার, ক্যান্সারে আক্রান্ত জটিল রোগীর চিকিৎসা বন্ধ হয়ে গেছে, স্কুল বন্ধ হয়ে গেছে, জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ায় পেট্রোল বিক্রি বন্ধ হয়ে গেছে। অর্থাৎ শ্রীলঙ্কার জনগণ এখন খাদ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্যর মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। এ থেকে কবে উত্তরণ ঘটবে, তা বলা যাচ্ছে না। শ্রীলঙ্কার আজকের এই পরিণতির জন্য পর্যবেক্ষকরা রাজাপাকসে ও তার পরিবারের স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থাকে দায়ী করছেন। তারা ঋণ করে দেশটিকে পরনির্ভরশীল যেমন করেছে, তেমনি এন্তার দুর্নীতি, লুটপাট ও অর্থপাচার করে দেউলিয়া করে দিয়েছে। স্বাধীনতার প্রায় পৌনে এক শতাব্দী পর এসে একটি দেশ ভুলুণ্ঠিত হয়ে পড়া অত্যন্ত দুঃখজনক এবং বেদনাদায়ক।

দুই.
শ্রীলঙ্কার জনগণ যখন সরকারের বিরুদ্ধে তুমুল আন্দোলন শুরু করে, তখন তার কিছু প্রভাব আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে পড়েছে। একটা শঙ্কা জাগিয়েছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বলতে শুরু করেছে, আমাদেরও অনেকটা শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ নিয়ে সচেতন মহলেও আলোচনা শুরু হয়েছে। অনেকে বলছেন, আমাদের পরিস্থিতি অতটা খারাপ নয়। শ্রীলঙ্কার মতো হবে না। গত মে মাসে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিপিডি সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিল, শ্রীলঙ্কার মতো না হলেও আগামী দুই-তিন বছরের মধ্যে আমাদের পরিস্থিতিও খারাপের দিকে যাবে। সরকারের তরফ থেকে বরাবরই জোর দিয়ে বলা হয়েছে, শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি আমাদের মনে কেন প্রভাব ফেলবে? কেন এমন চিন্তা আসবে? আমাদের যদি শ্রীলঙ্কার মতো সমস্যা না থাকে, তাহলে তো এ চিন্তা আসার কথা নয়। তার অর্থ হচ্ছে, আমাদেরও সমস্যা রয়েছে। এ সমস্যা শাসন ব্যবস্থায়। মূলত একটি দেশের অর্থনীতির ভিত্তি দৃঢ় হয়, সুশাসনের ওপর। শ্রীলঙ্কায় আজকের যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, তা গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে রাজাপাকসের অপশাসন এবং তার পরিবারের দুর্নীতি ও লুটপাটের কারণে। বিচ্ছিন্নতাবাদী তামিলদের নির্মমভাবে দমন করে তার সরকার শ্রীলঙ্কার জনগণের বিপুল সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় আরোহন করেছিল বটে। তবে ক্ষমতার দম্ভে এবং অপশাসনের কারণে তারা দেশটিকে দেউলিয়াত্বের দিকে ঠেলে দেয়। কৌশল হিসেবে বড় বড় মেগা প্রকল্প নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে উন্নত দেশে পরিণত করার স্বপ্ন দেখায়। এসব প্রকল্প করতে গিয়ে বেসুমার বিদেশি ঋণ নিতে থাকে। সড়ক-মহাসড়ক, বিমানবন্দর, স্টেডিয়াম, বিদ্যুত প্রকল্পের মতো মেগা প্রজেক্ট নিয়ে ‘সুপার গ্রোথ’ উন্নয়ন দেখায়। ঋণ নিয়ে শ্রীলঙ্কার জিডিপি ২০ বিলিয়ন ডলার থেকে ৮০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যায়। এ ঋণের ১৯ বিলিয়নই রাজাপাকসে এবং তার পরিবার দুর্নীতি ও পাচার করে দেয়। এ হিসেবে দেশটির মূল জিডিপি’র অর্থই তারা লুটপাট করে নিয়ে গেছে। বাকি যা ছিল তা শুধু ঋণের। এ হিসেবে দেশটির কোষাগার শূন্য। রাজাপকসের সরকার একদিকে ঋণ করে ঘি খাওয়ার মতো নীতি অবলম্বন করে, অন্যদিকে দেশের সম্পদ দুর্নীতির মাধ্যমে লুটে নিয়েছে। এর ফলে দেশটির জনগণ সীমাহীন বিপদে পড়েছে, এমনকি দুর্ভিক্ষাবস্থার শিকার হচ্ছে। একটি দেশের সরকার দুর্বীনিত ও দুর্নীতিপরায়ন হলে জনগণের কি অবস্থা হয়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। রাজাপাকসের সরকার এ দুর্নীতির আশ্রয় নিয়েছে উন্নয়নের ধোয়া তুলে এবং বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে ঋণ নিয়ে তা লুটপাট করে দেশটির অর্থনীতি ফোকলা করে দিয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে দুর্নীতির এই কৌশল খুব কম দেশেই রয়েছে। এসব প্রকল্প দেখতে সুন্দর এবং তা জনগণের কাছেও পছন্দ হয়। এগুলো দেখিয়ে বেসুমার বিদেশী ঋণও নেয়া হয়। তবে এর আড়ালে যে সরকারের দুর্নীতি ও অর্থ লুটপাটের মূল উদ্দেশ্য লুকিয়ে ছিল, তা শ্রীলঙ্কার জনগণ বুঝতে পারেনি। সরকার যে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার দুর্নীতি ও লুটপাট করে পাচার করে দিয়েছে, তা এখন বুঝতে পেরেছে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর মতো প্রতিষ্ঠান যখন তাদের ঋণের অর্থ নেয়া শুরু করেছে, তখনই শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি হুড়মুড় করে ভেঙ্গে পড়ে। জনগণ নিদারুণ কষ্টের মধ্যে পড়ে যায়। বাধ্য হয়ে তারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন নামে এবং আন্দোলনের মুখে রাজাপাকসের পরিবারের পতন ঘটে। অথচ রাজাপাকসে যে জনসমর্থন নিয়ে ক্ষমতাসীন হয়েছিল, তা দেশের মানুষের স্বার্থে কাজে লাগায়নি। বরং সরকারকে পারিবারিকরণ এবং দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছিল। প্রায় দুই দশক ক্ষমতায় থেকে দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশটিকে ধ্বংস করে দিয়েছে। নিরঙ্কুশ ক্ষমতা যে শাসকদের বেপরোয়া করে তোলে এবং একটি উন্নয়নশীল দেশকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যায়, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। এ ধরনের শাসক যে টিকে থাকতে পারে না এবং জনরোষের মুখে পড়ে একসময় অসম্মানজনকভাবে বিদায় নিতে হয়, তা কালে কালে দেখা গেছে। শ্রীলঙ্কার জনগণও সে ধারাবাহিকতায় তা দেখিয়ে দিয়েছে। দেশটির ক্ষুধার্ত মানুষ প্রেসিডেন্টের বিলাসবহুল ভবনে ঢুকে তাদের তাড়িয়েছে। ক্ষুধা নিয়ে সুইমিং পুলে সাঁতার কেটেছে। শ্রীলঙ্কার এই দুর্দশা কবে কাটবে, তা অনিশ্চিত।

তিন.
চলমান বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার প্রভাব ধনী দেশগুলোতেও পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মতো পরাশক্তির দেশ অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছে। জো বাইডেনের জনপ্রিয়তা কমেছে। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন তো পদত্যাগই করেছেন। আর্জেন্টিনা, ইন্দোনেশিয়াসহ অন্যান্য দেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে জনগণ বিক্ষোভ করেছে। আফ্রিকার বেশিরভাগ দেশ চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার মধ্যে পড়েছে। জাতিসংঘের হিসাবে, বিশ্বজুড়ে ২৩০ কোটি মানুষ দুর্ভিক্ষের শিকার হতে পারে। এ এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব। অর্থনৈতিক মন্দার এ প্রভাব আমাদের দেশেও পড়তে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে জ্বালানি সংকট দেখা দেয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। সরকারকে বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করতে হচ্ছে। অন্যদিকে, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি অব্যাহত রয়েছে। সামনে অর্থনৈতিক সংকট ধেয়ে আসছে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। অনেকে শ্রীলঙ্কার মতো উপসর্গ রয়েছে বলেও তারা বলেছেন। তবে শ্রীলঙ্কায় যেভাবে হঠাৎ করে ধস নেমেছে, সেভাবে না হলেও ধীরে ধীরে অবনতির দিকে যেতে পারে। বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা কিছুটা স্তিমিত হয়ে আসার পরপর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে সংঘীন করে তুলেছে। অর্থনীতির অন্যতম চালিকা শক্তি জ্বালানি। এর সংকট হলে যোগাযোগ ব্যবস্থা, কৃষি ও উৎপাদন খাতে স্থবিরতা নেমে আসে। শ্রীলঙ্কার সংকটের অন্যতম কারণও জ্বালানি সংকট। আমাদের দেশে এখন এই সংকট দেখা দিয়েছে। রাশিয়ার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার কারণে জ্বালানি সংগ্রহ করা যাচ্ছে না বলে সরকার ইতোমধ্যে বলেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সময়োচিত প্রস্তুতি ও পরিকল্পনার অভাবে দেশ জ্বালানি সংকটের মুখে পড়েছে। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তারা অনেক আগে থেকেই দেশের নতুন এবং পুরাতন গ্যাসক্ষেত্রগুলো থেকে গ্যাস উৎপাদনের কথা বলে আসছেন। সরকার সেদিকে নজর না দিয়ে আমদানির দিকে ঝুঁকেছে। কিছু সুবিধাভোগী ব্যবসায়ীর স্বার্থে এলএনজি আমদানির দিকে বেশি মনোযোগী হয়েছে। সরকারের এ নীতিকে বিশেষজ্ঞরা ভুল বলে আখ্যায়িত করেছেন। তারা বলছেন, এলএনজি আমদানি করলে ব্যবসায়ীদের লাভ বেশি। গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলন করলে তাদের কোনো লাভ নেই। সরকার ব্যবসায়ীদের ফাঁদে পড়ে আমদানি নির্ভর হয়ে পড়ায় এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। যদি গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান অব্যাহত থাকত এবং কিছু গ্যাস উৎপাদিত হতো, তাহলে তা দিয়ে বর্তমান সংকট সমাল দেয়া যেত। বলার অপেক্ষা রাখে না, সরকারকে কেন্দ্র করে একটি সুবিধাভোগী চক্র গড়ে উঠেছে। সরকারও তাদের অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এর ফলে দেশের অর্থনীতি অনেকটা এককেন্দ্রিক হয়ে পড়েছে। এই সুবিধাভোগী চক্রই দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিচ্ছে। এক হিসাব অনুযায়ী, বিগত এক যুগে দেশ থেকে প্রায় দুই অর্থবছরের বাজেটের সমপরিমান অর্থ বিদেশে পাচার হয়ে গেছে। যে বাজেট এবং ঋণ ও ভর্তুকি দিয়ে দেশ চলে, সেই দুই বাজেটের সমপরিমান অর্থ যদি পাচার হয়ে যায়, তাহলে দেশের অর্থনীতি কতটা পিছিয়ে আছে, তা অনুমান করতে কষ্ট হয় না। এই ঘাটতি কি সহজে পূরণ করা সম্ভব? বলা বাহুল্য, সরকার তা স্বীকার করবে না। তবে সরকার স্বীকার করুক বা না করুক, দেশের অর্থনীতি যে ভাল নেই, তা সাধারণ মানুষের কষ্টকর জীবনযাপন থেকেই বোঝা যায়। বিশ্লেষকদের শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের তুলনার অন্যতম কারণ হতে পারে রাজাপাকসের সরকারের মতো বড় বড় মেগা প্রকল্প নিয়ে জনগণের সামনে সরকারের ব্যাপক উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরা। কারণ এসব মেগা প্রকল্পেও বিদেশী ঋণ রয়েছে। দুই-তিন বছর পর এই ঋণ পরিশোধ শুরু হলে তখন অর্থনীতিতে টান ধরতে পারে। রিজার্ভে ঘাটতি দেখা দিতে পারে। ইতোমধ্যে অর্থনৈতিক মন্দার কারণে রিজার্ভ ৪০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমেছে। রিজার্ভ বৃদ্ধির পরিবর্তে কমার আলামত অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে। বলা বাহুল্য, বিভিন্ন সময়ে এসব মেগা প্রকল্পের ক্ষেত্রে কম-বেশি দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্পের ধীরগতি, প্রকল্প পরিকল্পনার ত্রুটি, নতুন করে প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণসহ নানা বিষয়ে দুর্নীতি জড়িয়ে থাকা অস্বাভাবিক নয়। তবে তা কতটা, এখনই তা বোঝা যাবে না। আমাদের দেশে বড় বড় দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বেশিরভাগই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সরকারের মধ্যে একধরনের শৈথিল্য থাকে। দুর্নীতি দমন কমিশন দুর্নীতিবাজ রাঘব-বোয়ালদের এড়িয়ে যায়। এ সুযোগে তারা দেশ থেকে প্রতিবছর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সেকেন্ড হোম গড়ে তুলেছে। সুইস ব্যাংকে তাদের অর্থ জমা হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। অর্থনৈতিক মন্দাবস্থার মধ্যেও অর্থ পাচার থেমে নেই। আমাদের মতো উন্নয়নশীল একটি দেশ থেকে যদি বিপুল অর্থ পাচার হয়ে যায়, তাহলে যতই উন্নয়নের কথা বলা হোক না কেন, তা এক সময় ফাঁকা বুলিতে পরিণত হতে বাধ্য।

চার.
অর্থনৈতিক মন্দাবস্থা মোকাবেলায় সরকার যদি এখন থেকেই সতর্ক না হয়, দুর্নীতির রাস টেনে না ধরে, তাহলে সামনে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হবে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। তখন যতই মেগা প্রকল্পের উন্নয়নের কথা বলা হোক না কেন, তা কাজে আসবে না। এসব মেগা প্রকল্প জনগণের কল্যাণে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না। মেগা প্রকল্পের ব্যয় অনুযায়ী এর সুফল পেতে পেতে জনগণের অর্থনৈতিক অবস্থা শোচনীয় হয়ে পড়বে। তখন শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি না হলেও আমরা যে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি, তা থেকে অনেক পিছিয়ে যাব। ফলে আশঙ্কার অর্থনৈতিক মন্দা মোকাবেলায় সরকারের নীতিনির্ধারকদের জরুরী ভিত্তিতে সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। সুশাসনের দিকে নজর দিতে হবে। অর্থনীতির সবক্ষেত্রে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে।

[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শ্রীলঙ্কা


আরও
আরও পড়ুন