Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পরিবেশের বিপর্যয় রুখতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০২২, ১২:০২ এএম

পৃথিবীর উষ্ণায়ন ও জলবায়ুর পরিবর্তনজণিত প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বৈশ্বিক এজেন্ডা হিসেবে স্বীকৃত। গত দশকের শুরুতে এবং আগের দশকে আটলান্টিক ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের কয়েকটি দেশে বেশ কয়েকটি সামুদ্রিক জলোচ্ছাস ও প্রলয়ঙ্করী সুনামির জন্য জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত বৈশ্বিক উষ্ণতাবৃদ্ধিকেই দায়ী করা হয়। অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক প্রতিযোগিতায় অপরিকল্পিত শিল্পায়ন, নগরায়ন ও ফসিল জ্বালানির অস্বাভাবিক ও অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার এবং গাছপালা ও প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে ক্রমশ ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে ঝুঁকির সূচকে শুরু থেকেই বাংলাদেশ প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। এ থেকে উত্তরণে পরিবেশবাদী সংস্থা ও নাগরিক সমাজের দাবি এবং বৈশ্বিক ইনিশিয়েটিভের আলোকে বাংলাদেশ সরকারও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সঙ্গতভাবেই সরকার বৈশ্বিক জলবায়ু ঝুঁকি তহবিল থেকে হিস্যা দাবি করছে। সেই সাথে জনগণের রাজস্ব থেকে সরকার নিজস্ব তহবিলেও জলবায়ু ইস্যু মোকাবেলায় নানা রকম পদক্ষেপের কথা বলছে, কিন্তু বাস্তবে তার কোনো সুফল দেখা যাচ্ছে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পরিবেশ সুরক্ষা এজেন্সি ইপিআই কলাম্বিয়া ও ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের নিয়ে পরিচালিত গবেষণা জরিপের ফলাফলে ২০২১ সালে বিশ্বের ১৮০টি দেশের মধ্যে পরিবেশ সুরক্ষায় বাংলাদেশ ১৭৭তম স্থান লাভ করেছে। এই সূচকে আগের বছর(২০২০সালে) বাংলাদেশ ১৬২ তম অবস্থানে ছিল। মাত্র এক বছরে ১৫ ধাপ পিছিয়েছে বাংলাদেশ। অন্যদিকে আফগানিস্তান ২০২০ সালের ১৭৮তম অবস্থান থেকে পরিবেশ সুরক্ষায় এবার ৯৭ ধাপ এগিয়ে ৮১তম স্থানে উঠে গেছে।

এক দশক ধরে সরকার টেকসই উন্নয়নের কথা বলছে। পরিবেশগত সুরক্ষায় নানা দিক নির্দেশনা দিচ্ছে এবং আন্তর্জাতিক ফোরামগুলোতেও জোরালো ভ’মিকা রাখতে দেখা যাচ্ছে। দেশের পরিবেশগত উন্নয়নে তার বাস্তব প্রতিফলন সেভাবে দেখা যাচ্ছে না। দেশি-বিদেশি পরিবেশবাদী ও ইউনেস্কোসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর উদ্বেগ ও প্রতিবাদ উপেক্ষা করেই সুন্দরবনের সন্নিহিত এলাকায় রামপাল কয়লাবিদ্যুত কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা অব্যাহত রয়েছে। বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশের রাজধানী শহর ঢাকা বিশ্বের অন্যতম দূষিত ও বসবাসের অযোগ্য শহরের তালিকায় অবস্থান করলেও শহরের পরিবেশ ও বাসযোগ্যতা উন্নয়নে বাস্তবসম্মত কোনো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। শহরের চারপাশের নদীগুলোকে ভয়াবহ রাসায়নিক দূষণ ও দখলবাজি থেকে রক্ষায় সরকারি উদ্যোগগুলো চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। মারাত্মক বায়ুদূষণের কারণে মানুষ বুক ভরে নির্মল বায়ু সেবনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মানুষ। চারপাশের নদনদী, খাল ও জলাশয়গুলো ভরাট, দখল ও কলকারখানার বিষাক্ত রাসায়নিক বর্জ্যে দূষিত হয়ে পড়েছে। এগুলো কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ নয়। সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর ব্যর্থতার সুযোগে মানবসৃষ্ট বিপর্যয়। দেশকে পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের গলাবাজি চলছে। ভ’মিদস্যু, বনখেকো, নদী-খাল ও জলাশয় দখল-দূষণকারীদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আফগানিস্তানের তালেবানরা মার্কিন দখলদার বাহিনীর কাছ থেকে রাষ্ট্রক্ষমতা পুনরুদ্ধারের পর পরিবেশগত চরম বিপর্যয়ের শেষপ্রান্ত থেকে দেশকে ৯৭ধাপ উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে। এ থেকে স্পষ্টতই বোঝা যায়, সরকারের কঠোর নির্দেশনা ও ইতিবাচক পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে অল্প সময়ের মধ্যেও দৃশ্যমান পরিবেশগত সুরক্ষা ও উন্নয়ন সম্ভব। বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, বালু. তুরাগ, কর্ণফুলীসহ ঢাকা চট্টগ্রামসহ বিভাগীয় শহরগুলোর পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদনদীগুলোকে শিল্পকারখানার দূষণ থেকে মুক্ত করার জন্য একটি থ্রাশ প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। প্রতিটি শিল্প কারখানায় নিজস্ব ইটিপি স্থাপন বাধ্যতামূলক করতে সরকারি নির্দেশনা ও সহায়তা নিশ্চিত হওয়া দরকার। বৈধ-অবৈধ ইটভাটা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। জ্বালানি হিসেবে গাছ কর্তন এবং নি¤œমানের কয়লার ব্যবহার কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। দেশের কৃষি ব্যবস্থায় মাত্রাতিরিক্ত সেচ, রাসায়নিক সার, কীটনাশক ও আগাছানাশক ব্যবহার কমিয়ে আনার বাস্তবসম্মত উদ্যোগ নিতে হবে। যেনতেন প্রকারে শিল্পায়নের মাধ্যমে জিডিপি প্রবৃদ্ধির প্রতিযোগিতা থেকে বেরিয়ে এসে দীর্ঘ মেয়াদী টেকসই ও পরিবেশবান্ধব উন্নয়নের লক্ষ্য অর্জনে সরকারকে মনোযোগ দিতে হবে। কোটি কোটি মানুষকে স্বাস্থ্যঝুঁকি ও খাদ্যনিরাপত্তার ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়ার অর্থনৈতিক ও অবকাঠামো উন্নয়নের রাজনৈতিক শ্লোগানবাজি জাতির জন্য বুমেরাং হয়ে দাঁড়াচ্ছে। স্বাস্থ্যবান নাগরিক ও বাসযোগ্য স্বদেশ নিশ্চিত করতে হলে পরিবেশগত সুরক্ষায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

 

 



 

Show all comments
  • রাফি ১৬ জুন, ২০২২, ১:৫৩ এএম says : 0
    পরিবেশ ঠিক থাকলে দেশের সৌন্দর্য ঠিক থাকে। এছাড়া পরিবেশের কারণে দেশ উন্নত হয়
    Total Reply(0) Reply
  • হামজা ১৬ জুন, ২০২২, ১:৫৬ এএম says : 0
    বর্তমানে দেশকে পরিবেশগত ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দিয়ে অবকাঠামো উন্নয়নের গলাবাজি চলছে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবেশ

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন