Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৮ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

১ হাজার বছরের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে গরম সবচেয়ে বেশি

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৯ জানুয়ারি, ২০২৩, ২:৫৬ পিএম

১ হাজার বছরের মধ্যে গ্রিনল্যান্ডে সবচেয়ে বেশি তাপমাত্রা বেড়েছে। বুধবার (১৮ জানুয়ারি) বিজ্ঞান সাময়িকী নেচারের এক গবেষণা প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এ তথ্য। প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৯৫ সাল থেকে বিংশ শতাব্দীর গড় তাপমাত্রা সর্বোচ্চ দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, গ্রিনল্যান্ডের বরফের স্তর ও হিমবাহের গভীর থেকে নেওয়া নমুনা পরীক্ষা করেন হিমবিজ্ঞানীরা। ফলাফলে দেখা যায়, গত ১ হাজার বছরে এটিই সবচেয়ে উষ্ণ তাপমাত্রা। মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেই তাপমাত্রা বেড়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
গবেষণা দলের প্রধান জার্মানির আলফ্রেড ওয়েজেনার ইনস্টিটিউটের হিমবিজ্ঞানী মারিয়া হোরহোল্ড বলেন, ‘আমরা ১৯৯০ ও ২০১১ সালের মধ্যে তাপমাত্রা বৃদ্ধির বিষয়টি লক্ষ্য করেছি। আমাদের কাছে এখন বিশ্ব উষ্ণায়নের স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে।’
ইতিমধ্যে বিজ্ঞানীরা সতর্কবার্তা দিয়ে বলেছেন, বিভিন্ন দেশের সরকার বিশ্ব উষ্ণায়ন ঠেকাতে এখনো পদক্ষেপ নেয়নি। জাতিসংঘের আশঙ্কা, আগামী ২০৫০ সালের মধ্যে পৃথিবী অনেক উষ্ণ হয়ে যাবে এবং বড় বড় হিমবাহের অধিকাংশ গলে যাবে। বর্তমানে বিশ্বে ১৮ হাজার ৬০০ হিমবাহ বিদ্যমান। চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি এগুলোর এক-তৃতীয়াংশ গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ অদৃশ্য হয়ে যাবে। গত ১৫ বছরে বিশ্বের উষ্ণতা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। ড্যানিশ আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিজ্ঞানী মার্টিন স্টেন্ডেল বলেন, গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার কারণে সমুদ্রে পানি বাড়ছে। এতে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে।
গ্রিনল্যান্ডের তাপমাত্রার চার্ট তৈরি করতে আনুমানিক ১ হাজার বছরেরও বেশি সময়সীমা ব্যবহার করে থাকেন হিমবিজ্ঞানীরা। ১০০০ থেকে ২০১১ সাল সময় পর্যন্ত প্রসারিত হওয়া বরফের স্তরের গভীর থেকে নমুনাগুলো নেওয়া হয়। আর এতে দেখা যায় গত ১ হাজার বছরে তাপমাত্রা বেড়েছে দেড় ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ড্যানিশ আবহাওয়া ইনস্টিটিউটের হিমবিজ্ঞানী জেসন বক্স বলেন, নর্থ গ্রিনল্যান্ডের উষ্ণতা সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত সবার। কারণ তাপমাত্রা বাড়তে থাকলে সমুদ্রে থাকা বৃহদাকার হিমবাহ গলে বিশ্ব প্রাকৃতিক ভারসাম্য হারাবে।
গত নভেম্বরে জাতিসংঘের একটি রিপোর্টে দেখা গেছে, বিশ্ব উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে বিশ্বের অনেক বিখ্যাত হিমবাহ ২০৫০ সালের মধ্যে অদৃশ্য হয়ে যেতে পারে। সংস্থাটি বিশ্বের ১৮ হাজার ৬০০টিরও বেশি হিমবাহ পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং চলতি শতাব্দীর মাঝামাঝি নাগাদ সেগুলোর প্রায় এক-তৃতীয়াংশ অদৃশ্য হবে বা গলে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে, আগামী ২১০০ সালের মধ্যে বিশ্বের দুই-তৃতীয়াংশ হিমবাহ অদৃশ্য বা গলে যাবে বলে শঙ্কা রয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, গ্রিনল্যান্ডের বরফ কোর দীর্ঘমেয়াদী তাপমাত্রার পরিবর্তন সম্পর্কে তথ্য প্রকাশ করে, যেটির বিশ্লেষণ করতেও সময় লাগে। কোর থেকে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য ১৯৯৫ সালে আপডেট করা হয়েছিল এবং পূর্বে সেটি ইঙ্গিত দিয়েছিল যে, গ্রিনল্যান্ড আর্কটিক অঞ্চল বাকি অংশের মতো দ্রুত উষ্ণ হচ্ছে না।
তবে ২০১১ সালে নেওয়া তথ্যের নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে, গত ১৫ বছরে উষ্ণায়ন ব্যাপকভাবে বেড়েছে।
ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের জলবায়ু বিজ্ঞানী মার্টিন স্টেন্ডেল এই গবেষণা সম্পর্কে বলছেন, এটি গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধান। তিনি বলছেন, গ্রিনল্যান্ডের বরফ গলে যাওয়ার ফলে সমুদ্রে পানি বাড়ছে। এতে সমুদ্রপৃষ্টের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে।
এছাড়া উত্তর গ্রিনল্যান্ডের উষ্ণতা সম্পর্কে সবার খুব উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ডেনিশ মেটেরোলজিক্যাল ইনস্টিটিউটের বরফ বিজ্ঞানী জেসন বক্স।
এর আগে বিজ্ঞানীদের বরাত দিয়ে ২০২০ সালে এক প্রতিবেদনে সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে জানিয়েছিল, এই শতকে ২০১২ সালে সব চেয়ে বেশি বরফ গলেছিল গ্রিনল্যান্ডে। ২০১৯ সালে সেই রেকর্ডও ভেঙে যায়।
কেবল ২০১৯ সালেই ৫৩২ গিগাটন বরফ গলে গেছে গ্রিনল্যান্ডে। এই হারে বরফ গলতে থাকলে গোটা বিশ্ব ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে বলে সেসময় জানিয়েছিলেন বিজ্ঞানীরা।
তবে বিজ্ঞানীদের বক্তব্য, প্রতি বছর একই হারে বরফ গলছে না। ২০১৬ সালে যে হারে বরফ গলেছিল, ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে সেই হারে বরফ গলেনি। বরং ওই দুই বছরে গরমকালেও যথেষ্ট ঠান্ডা ছিল মেরু অঞ্চল। ২০১৮ সালে গরমে বরফও পড়েছে সেখানে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এক বছর, দুই বছর পর পর একবার করে উষ্ণপ্রবাহ আসে গ্রিনল্যান্ডে। সে সময় বায়ুর চাপও বেড়ে যায় কয়েকগুণ। তারই জেরে এই পরিমাণ বরফ গলতে থাকে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পরিবেশ

৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ