পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
দীর্ঘ ছয় বছরেও শেষ হয়নি বহুল আলোচিত সাবেক এসপি বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু হত্যাকাণ্ডের তদন্ত। এ মামলার গুরুত্বপূর্ণ আসামি মিতুর স্বামী বাবুল আক্তারের বিরুদ্ধে তদন্ত কখন শেষ হবে, কবে চার্জশিট হবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না তদন্ত সংস্থা পিবিআই। তদন্ত কর্মকর্তারা বলছেন, হত্যার ঘটনায় বাবুল আক্তারই প্রধান সন্দেহভাজন। তার পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। তিনি বর্তমানে ফেনী কারাগারে রয়েছেন। এ বিষয়ে পিবিআইয়ের প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, তদন্তে এখন পর্যন্ত যা জানা গেছে, তাতে বাবুলই প্রধান সন্দেহভাজন। বাবুল-মাহমুদা দম্পতির সন্তানদের সঙ্গে পিবিআই কথা বলতে চেয়েছিল, এখনো সেটি হয়নি। তাদের সঙ্গে কথা বলা গেলে সবকিছু আরও পরিষ্কার হয়ে যাবে। গতকাল রোববার ৬ বছর পূর্ণ হলো মিতু হত্যাকান্ডের। ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে সন্তানের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয় মিতুকে।
তদন্ত-সংশ্নিষ্টরা বলছেন, চার ব্যক্তির চাঞ্চল্যকর তথ্যে ফেঁসে গেছেন সাবেক এসপি বাবুল। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে দালিলিক ও প্রযুক্তিগত প্রমাণ পাওয়া গেছে দাবি পিবিআইর।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা চট্টগ্রাম পিবিআইর ইন্সপেক্টর আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, মিতুকে খুন করতে বাবুলের বিরুদ্ধে অর্থ সরবরাহ, অস্ত্র সংগ্রহ, অনৈতিক সম্পর্ক, অন্য আসামিদের সঙ্গে যোগাযোগের দালিলিক ও প্রযুক্তিগত বহু অকাট্য প্রমাণ তদন্তে উঠে এসেছে। অচিরেই তদন্ত শেষ হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামি একজন পুলিশ অফিসার ছিলেন। আইনের ফাঁকফোকর তার জানা। তাই তদন্তে কোনো ফাঁক পেলে তিনি তা সামনে এনে সুবিধা পেতে চাইবেন। তাই তদন্ত শেষ করতে সময় লাগছে। বাবলু আক্তার প্রথম থেকেই দাবি করছেন- মিতু খুনের মামলায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে।
পিবিআইয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, বাবুলের পরিবার আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে। অন্যদিকে বাবুলের পরিবারের আইনজীবীর অভিযোগ, পিবিআই আদালতের নির্দেশ মানেনি।
গত ২৬ এপ্রিল মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই চট্টগ্রামের পরিদর্শক আবু জাফর মুহাম্মদ ওমর ফারুক চট্টগ্রামে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেটের আদালতে চিঠি দেন। ওই চিঠিতে আদালতের আদেশ অনুযায়ী বাবুল-মাহমুদা দম্পতির সন্তানদের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হাজির করা নিয়ে কী ঘটেছে, তার বিবরণ দেন। ওমর ফারুক বলেন, প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষী হিসেবে বাবুল-মাহমুদা দম্পতির ছেলের জবানবন্দি প্রয়োজন। ছোট মেয়েও সাক্ষী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ। ছেলে–মেয়ে দুটি এখন মাগুরায় দাদা আবদুল ওয়াদুদ মিয়া ও চাচা হাবিবুর রহমানের কাছে আছে। চট্টগ্রামে চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্টেট দুই সপ্তাহের মধ্যে শিশুদের তদন্ত কর্মকর্তার কাছে হাজির করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। তবে হাবিবুর রহমান মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদেশটি পুনর্বিবেচনার আবেদন করেন। আদালত গত ১৬ মার্চ এই আবেদন খারিজ করে দিয়ে শিশু আইন, ২০১৩ মেনে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেন। এরপর হাবিবুর রহমান হাইকোর্টে আরেকটি আবেদন করেন। বর্তমানে তা হাইকোর্টে রয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পিবিআইয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, মিতু হত্যায় আর্থিক লেনদেনের অকাট্য প্রমাণ আছে। বাবুলকে জড়িয়ে এ পর্যন্ত আটজন স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। বাবুলের দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। এই বিবেচনায় শিশুদের সাক্ষ্য ছাড়াই অভিযোগপত্র দেয়ার বিকল্প চিন্তা করা হচ্ছে।
তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, বাবুল কক্সবাজারে চাকরিরত থাকা অবস্থায় গায়ত্রী অমর সিং নামের এক বিদেশিনীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন বলে প্রমাণ পায় পিবিআই। এর আগে মিতু খুনের হোতা মুছাকে অর্থ পাঠানোর প্রযুক্তিগত ও দালিলিক তথ্য সংগ্রহ করে পিবিআই। মিতু হত্যা মামলার আসামিদের বিকাশে ৩ লাখ টাকা পাঠানোর কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন বাবুলের ঘনিষ্ঠ সাইফুলের কর্মচারী মোখলেসুর রহমান ইরাদ। ২৫ মে আদালতে জবানবন্দি দেন ইরাদ। বাবুলের ঘনিষ্ঠ সাইফুল ও মামুনও আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা দু›জনই বাবুলের নির্দেশে মিতু হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের টাকা দেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন।
ক্লিলিং মিশনে অংশ নেয়া নিখোঁজ আসামি কামরুল ইসলাম শিকদার মুছার স্ত্রী পান্না আক্তার আদালতে জবানবন্দিতে জানান, মিতুকে খুন করতে দেরি হওয়ায় মুছাকেই গুম করে ফেলার হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল। বাবুলের সঙ্গে মুছার গভীর যোগাযোগ থাকার বিস্তারিত তথ্যও তুলে ধরেন তিনি। তার দাবি, বাবুলের নির্দেশে এহেতাশেমুল হক ভোলা মুছাকে মিতু হত্যায় অস্ত্র দিয়েছেন। এগুলোকে বাবুলের বিরুদ্ধে ‹অকাট্য প্রমাণ› বলে দাবি পিবিআইর।
উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন ভোরে চট্টগ্রাম নগরের জিইসি মোড়ে সন্তানের সামনে কুপিয়ে খুন করা হয় মিতুকে। পরে ঢাকায় অবস্থান করা বাবুল বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। সেই এজাহারে মিতুকে জঙ্গিরা খুন করতে পাবেন বলে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন বাবুল। চট্টগ্রাম মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) দীর্ঘসময় মামলার তদন্ত করলেও তেমন অগ্রগতি ছিল না। তাই আদালতের নির্দেশে মামলার তদন্ত যায় পিবিআইয়ে। তারপরই মোড় ঘুরে যায়। ২০২১ সালের ১১ মে বাবুলকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পিবিআই। পরদিন পাঁচলাইশ থানার মামলায় বাবুলকে প্রধান আসামি করে আদালতে পাঠানো হয়। এরপর থেকে কারাগারেই আছেন মিতুর স্বামী সাবেক এসপি বাবুল আক্তার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।