পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বাংলাদেশকে কমদামে ক্রুড অয়েল কেনার প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া। জ্বালানি তেলের অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধি ও জ্বালানি নিরাপত্তায় চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রাশিয়ার এই প্রস্তাব আমাদের জন্য অনেক বড় সুযোগ হিসেবে গণ্য হতে পারে। তবে ভূ-রাজনৈতিক নানা হিসাব নিকাশ বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ রাশিয়ার এই প্রস্তাবে সাড়া দিবে কিনা এ নিয়ে সংশয় থাকা অস্বাভাবিক নয়। মূলত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অসন্তোষ ও নিষেধাজ্ঞা এক্ষেত্রে অন্তরায় হতে পারে। তবে সাম্প্রতিক বিশ্ববাস্তবতা হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কৌশলগত সম্পর্ক থাকা সত্তে¡ও চীন ও ভারতসহ কোনো কোনো দেশ রাশিয়ার কাছ থেকে তেল কেনা বন্ধ করেনি। এমনকি ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশও রাশিয়ার সাথে তেলচুক্তি প্রত্যাহার করেনি। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার গ্যাস ও পেট্টোলিয়াম সরবরাহ ব্যবস্থায় অস্থিতিশীলতা দেখা দেয়ায় বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়েই চলেছে। গত এক বছরে বিশ্ববাজারে ক্রুড অয়েলের মূল্য ব্যারেল প্রতি শতকরা ৮০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। জ্বালানি তেলে আমাদের মত আমদানি নির্ভর দেশগুলোর জন্য এই মূল্যবৃদ্ধি সামাজিক-অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বড় ধরণের চাপ সৃষ্টি করেছে। সরবরাহ লাইনে ব্যত্যয় এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে পরিবহন খরচ ও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে বাজারে প্রতিটি পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে। আয়ের সাথে সঙ্গতিহীন মূল্যস্ফীতির কারণে দরিদ্র ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এসব বিবেচনায় আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধি সত্তে¡ও সম্প্রতি ভারত সরকার পেট্রোলিয়ামের মূল্য কমিয়েছে।
বিশ্ববাজারে অব্যাহত মূল্যবৃদ্ধির কারণে জ্বালানি ও খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়েছে। এ সময়ে জ্বালানি তেল সংগ্রহ এবং মূল্য নিয়ন্ত্রণে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া জরুরি। ভূরাজনৈতিক কৌশলগত কারণে আঞ্চলিক রাজনীতিতে বাংলাদেশ বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। সবার সাথে সুসম্পর্ক কারো সাথে বৈরীতা নয়, এটি হচ্ছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতির মূল বৈশিষ্ট্য। যেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বিশেষ বাণিজ্য ও কৌশলগত সম্পর্ক থাকা সত্তে¡ও ভারত ও চীন রাশিয়া থেকে তেল কিনে মজুত গড়ে তুলছে, সেখানে বাংলাদেশকে অবশ্যই নিজের অর্থনৈতিক স্বার্থ ও জ্বালানি নিরাপত্তার বিষয়টিকে বিবেচনায় রাখতে হবে। এই মুহুর্তে চীন ও রাশিয়া বাংলাদেশের অন্যতম উন্নয়ন অংশীদার। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুত প্রকল্পের মত উচ্চাভিলাসী মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে রাশিয়া। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের উন্নয়ন ও নিরাপত্তায় রাশিয়ার ভূমিকা উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র হিসেবে পরিচিত সউদী আরবও এখন রাশিয়ার সাথে সুসম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হয়ে উঠেছে। এমনকি ডলারের পরিবর্তে রুবলে তেল কেনার প্রস্তাবেও সম্মতি দিচ্ছে তারা। যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞাকে অনেক দেশই উপেক্ষা করে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক অব্যাহত রেখেছে।
ডিজেল-পেট্রোলের পাশাপাশি দেশে নিত্যপণ্যের মূল্য অতীতের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন শ্রেণী পেশার মানুষ মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে দাবি জানাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্নভাবে ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। ভারতকে তার চাহিদার আশি শতাংশের বেশি পেট্রোলিয়াম আমদানি করতে হয়। ইউক্রেন যুদ্ধের পর আন্তর্জাতিক বাজারে মূল্যবৃদ্ধির সাথে সঙ্গতি রেখে ভারতেও বার বার পেট্রোল-ডিজেলের মূল্য বাড়ানো হয়েছিল। জনজীবনে এই মূল্যবৃদ্ধির বিরূপ প্রভাব লক্ষ্য করে এ সপ্তাহে মূল্য কমানো হয়েছে। গত বছরের শেষদিকেও ভারতে ডিজেল ও পেট্রোলের দাম কমিয়েছিল। অন্যদিকে আন্তর্জাতিক বাজারে অব্যাহত মূল্য পতনের সময়েও মূল্য সমন্বয় ও ভর্তুকি কমিয়ে আনার কথা বলে আমাদের দেশে গ্যাস-বিদ্যুৎ ও পেট্রোলিয়ামের মূল্য বাড়ানো হয়েছে। গত কিছুদিন ধরে আবারো গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধির কথা শোনা যাচ্ছে। ইতিমধ্যে দেশের নাগরিক সমাজ এবং এফবিসিসিআইসহ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য বাড়ানোর প্রস্তাবকে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলে সতর্কবার্তা দিয়েছে। মানুষের আয় বাড়েনি, কর্মসংস্থান বাড়েনি। কিন্তু খাদ্যসহ নিত্যপণ্যের মূল্য দরিদ্র মানুষের ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। এমন একটি পরিস্থিতিকে ভোক্তা পর্যায়ে জ্বালানি বা গ্যাস-বিদ্যুতের মূল্য আরো কমিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে। রাশিয়া থেকে কমদামে অপরিশোধিত জ্বালানি তেল কেনার প্রস্তাব একটি ভালো সুযোগ। সরকারের কোনো কোনো মহল ক্রুড অয়েল পরিশোধন এবং সংরক্ষণের সক্ষমতার অজুহাত দেখিয়ে এই প্রস্তাব সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব দেখাচ্ছে। বাস্তবতার নিরিখে এ ধরনের গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যেখানে কমদামে জ্বালানি তেল কেনার সুযোগ অন্যদেশগুলো নিচ্ছে, সেখানে আমাদের পিছিয়ে থাকা উচিৎ হবে না। যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থে নিষেধাজ্ঞা দিলেও তা অনেক দেশই মানছে না। তারা নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে রাশিয়া থেকে কমদামে জ্বালানি তেল কিনছে। আমাদেরও পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।