Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পি কে হালদার এস কে সুর এবং তথাকথিত গণকমিশনের তালিকা

জামালউদ্দিন বারী | প্রকাশের সময় : ১৮ মে, ২০২২, ১২:০৪ এএম

কয়েক বছর আগেও দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি নিয়ে যতটা আলোচনা হত এখন তার সিকিভাগও হয়না। তাহলে কি দেশে বিচারহীনতার সংস্কৃতি পাল্টে ন্যায়বিচারের সংস্কৃতি তৈরী হয়েছে? এ কথা ঠিক যে, র‌্যাব ও পুলিশের সাবেক ও বর্তমান কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ঘোষিত হওয়ার পর দেশে তথাকথিত ক্রসফায়ার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গুম-খুনের ঘটনা অনেকটা কমে এসেছে। এর মানে এই নয় যে, দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আইনশৃঙ্খলা ও জননিরাপত্তায় অনেকটাই সফল ও জনবান্ধব হয়ে উঠেছে। এই সেদিনও ঢাকা কলেজ এবং নিউমার্কেট এলাকায় ছাত্রলীগ ও আওয়ামীলীগের কয়েকটি অঙ্গসংগঠন ও হেলমেট বাহিনীর তাÐবে পুরো এলাকা রণক্ষেত্রে পরিনত হয় এতে একজন সাধারণ পথচারিসহ একাধিক ব্যক্তি নিহত এবং অর্ধশতাধিক মানুষ আহত হয়। বিবদমান পক্ষগুলো প্রকাশ্যেই নিজেদের দলীয় পরিচয় এবং সংশ্লিষ্টতা নিশ্চিত করলেও এই ঘটনায় দায়ের করা মামলায় প্রথমেই একজন বিএনপি নেতাকে গ্রেফতারের খবরটি বেশ ডামাডোলের সাথে প্রচার করা হয়। নিউ মার্কেট ঢাকা কলেজ এলাকায় প্রায় তিনদিন ধরে চলা সংর্ঘষের সাথে জড়িত ব্যবসায়ীদের দুইপক্ষ এবং ঢাকা কলেজের ছাত্রদের প্রায় সকলেই নিজেদের আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগকর্মী বলে পরিচয় নিশ্চিত করেছেন এবং বিভিন্ন ভিডিও ফুটেজে ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবিতে অনেকের পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তবে নিউ মার্কেটের যে ফাস্টফুডের দোকানের কর্মচারিদের সাথে বচসা ও হাতাহাতির মধ্য দিয়ে সংর্ঘষের সুত্রপাত হয়েছিল সে দোকান দু’টি নাকি নিউমার্কেট থানা বিএনপি’ নেতা এডভোকেট মকবুল হোসেনের নামে বরাদ্দ করা হয়েছিল। তার কাছ থেকে ভাড়া নিয়ে দুই ব্যক্তি দোকান দুটিতে ওয়েলকাম ও ক্যাপিটাল ফাস্টফুড নামে ব্যবসা করছিলেন। মকবুলের নামে দোকান বরাদ্দ হওয়ায় নিউমার্কেটের সংর্ঘষের ঘটনায় বিএনপি নেতা মকবুলকে পুলিশের দায়ের করা মামলায় এক নম্বর আসামি করা হয়েছে। এই রমজানেই দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে লিফলেট বিলি করতে গিয়ে গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি দলীয় প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন পুলিশের হাতে আটক হয়ে কয়েকদিন জেল খেটে জামিনে বেরিয়ে এসেছেন। জামিন নাকচ করে মাসের পর মাস বা বছরের পর বছর ধরে জেলে আটক রাখার দুর্ভোগ অবিচারের সম্মুখীন হতে হয়নি ইশরাক হোসেনকে। এটুকু পরিবর্তনকে অবশ্যই ইতিবাচক বলে গণ্য করা যায়। তবে আটকের পর মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা অর্পিত ঠাকুরের আবেদনে ৩ দিনের রিমান্ড শেষে নিউ মার্কেট থানার বিএনপি নেতার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

দেশে আইনের শাসন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতির অনুপস্থিতিতে কোনো একটি পক্ষ দেশে এক ধরণের সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অনেকে অভিযোগ তুলেছেন। একদিকে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও দেশ থেকে টাকা পাচারের ঘটনায় দীর্ঘদিন ধরাছোয়ার বাইরে থাকা এনআরবি গেøাবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফিন্যান্স লিমিটেডের এমডি পিকে হালদার ভারতীয় পুলিশের হাতে আটক হওয়ার পর এ ধরণের রাঘব বোয়াল দুর্নীতিবাজ ও টাকা পাচারকারীর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও উপদেষ্টা এস কে সুর চৌধুরীর নাম জোরালোভাবে উঠে আসছে। যেখানে দু’চার কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে দেশে শীর্ষ রাজনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে, সেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার দুর্নীতি ও পাচারের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগের পরও পিকে হালদার বা এসকে সুর চৌধুরীদের ধরতে পারে না কেন বাংলাদেশ পুলিশ? তবে সংবিধানের সংশোধনী ও সরকারের বৈধতা সম্পর্কিত রায়ের কারণে সাবেক প্রধান বিচারপতিকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করার পর তার বিরুদ্ধেও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির অভিযোগে মামলা হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে এ দেশে দুর্নীতির অভিযোগে পুলিশ ও দুর্নীতিদমন কমিশনের মামলাবাজির বেশিরভাগই সরকারের রাজনৈতিক স্বার্থের সাথে সংশ্লিষ্ট বলে প্রতিয়মান হয়েছে। পুলিশ, দুর্নীতিদমন কমিশন, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন কিংবা নির্বাচন কমিশনের মত সাংবিধানিকভাবে স্বাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো যখন সরকারের দলীয় স্বার্থের অনুকুলে বেশি তৎপর হয়ে ওঠে তখন আর এসব প্রতিষ্ঠানের আদৌ কোনো অস্তিত্ব বা প্রয়োজনীয়তা থাকে না। কারণ এসব প্রতিষ্ঠান ও সংস্থার মূল উদ্দেশ্যই হচ্ছে নাগরিকের মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকার রক্ষা করা। বহুদলীয় সংসদীয় গণতন্ত্রের দেশে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সরকারের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার বাস্তবতাকে কর্তৃত্ববাদী শাসন হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। উন্নয়নের নামে জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকারকে নিয়ন্ত্রিত করা এবং একটি পারিবারিক গোষ্ঠির হাতে রাষ্ট্রক্ষমতার একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার জেরে সম্প্রতি শৃলঙ্কায় একটি গণবিষ্ফোরণ ঘটেছে। গণবিদ্রোহের মুখে সরকারের সব মন্ত্রী-এমপিরা পদত্যাগ করেও শেষরক্ষা হয়নি। কলম্বোর রাস্তায় তাদের অনেকে লজ্জাজনকভাবে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। শ্রীলঙ্কার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্নীতিবাজ মন্ত্রী এমপিদের রক্ষা করতে জনগণের উপর লাঠি-গুলি-টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ করেনি। দেশের গণতন্ত্রকামী নাগরিক হিসেবে হয়তো তারাও জনতার সংক্ষোভের প্রতি নিরব সমর্থন যুগিয়েছে।

দেশের অর্থনীতির একটা বড় অংশই কালোটাকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে বিদেশে পাচার হয়ে যায়। গত ১৬ বছর দেশ থেকে ১১ লক্ষকোটি টাকা পাচার হয়ে যাওয়ার তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। পানামা পেপার্সসহ বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত তালিকায় সরকারের মন্ত্রী-এমপি, সাবেক ও বর্তমান আমলা, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিবিদের নাম রয়েছে। দেশ থেকে প্রতিবছর পাচার হয়ে যাওয়া হাজার হাজার কোটি টাকা এরাই পাচার করেছে এবং করছে। ডেস্টিনির নুরুল আমীন, হলমার্ক গ্রপের তানভির, জেসমিন, কামরুল, বিসমিল্লাহ গ্রæপের খাজা সোলেমান ও নওরিনসহ প্রতিষ্ঠানের অর্ধশতাধিক কর্মকতা, বেসিক ব্যাংকের আব্দুল হাই বাচ্চুসহ তার পরিবারের সদস্যদের পুলিশ আটক করলেও বিশেষ ধর্মীয় সম্প্রদায়ের রাঘববোয়াল দুর্নীতিবাজ ও অর্থপাচারকারিরা বরাবরই ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকতে দেখা যাচ্ছে। তবে তথাকথিত গণতদন্ত কমিশন নামের একটি গোষ্ঠি দেশের আলেম-ওলামার মধ্যে ১১৬ জনের নামের তালিকা দুর্নীতিদমন কমিশনের কাছে হস্তান্তর করেছে। এ নিয়ে দেশে বেশ তোলপাড় চলছে। কথিত গণতদন্ত কমিশন এসব রাঘববোয়াল দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে দেশের আলেম-ওলামা ও ওয়ায়েজিনদের নামে কেন দুর্নীতির তদন্ত রিপোর্ট জমা দিল? শুধু তাই নয়, জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ সংশ্লিষ্টতার কাল্পনিক অভিযোগ তুলে তারা এক হাজারের বেশি মাদরাসার একটি তালিকাও উপস্থাপন করেছে। এ নিয়ে দেশের আলেম সমাজ ও সাধারণ ধর্মপ্রাণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ ও উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশের অর্থনীতিকে ফোঁকলা করে দেয়া বড় বড় দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে দেশের সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও নতুন রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটকে ধামাচাপা দিতেই কি তথাকথিত গণকমিশন দেশে-বিদেশে জনপ্রিয় শতাধিক আলেমের নাম দুদকে জমা দিয়ে একটি বিভ্রান্তি সৃষ্টির অপপ্রয়াস চালাচ্ছে? ধর্মীয় বক্তাদের সব বক্তব্য বা সব কর্মকান্ড সবার সমর্থনযোগ্য নাও হতে পারে। এটাই স্বাভাবিক। কোনো কোনো ধর্মীয় বক্তা অর্থের বিনিময়ে ওয়াজ করেন, এটা নিয়ে সমাজে ভিন্নমত ও বিতর্ক আছে, থাকতেই পারে। তবে গণতদন্ত কমিশণ যদি দেশের স্বার্থে কাজ করত, তাহলে দেশ থেকে লক্ষকোটি টাকা পাচারের সাথে জড়িত গডফাদার ও রাঘব বোয়ালদের নিয়েই তাদের প্রথমে তদন্ত রিপোর্ট দুদকে জমা দিত। এ সময়ে দেশের জনপ্রিয় আলেম ও ধর্মীয় বক্তাদেরকে দুর্নীতিবাজ বা ধর্মব্যবসায়ী তকমা দিয়ে তাদের কর্মকান্ডের উপর মানুষের দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখার মাধ্যমে দেশের প্রকৃত দুর্নীতিবাজদের আড়াল করার অপপ্রয়াস বলে কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন। গত প্রায় এক দশক ধরে দেশে বিরোধিদলের রাজনৈতিক সভা-সমাবেশের উপর একটি অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ওয়াজ মাহফিলের উপর নানা ধরণের শর্ত, প্রশাসন ও পুলিশের অনুমোদন ইত্যাদি বাধ্যবাধকতা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। দেশের ৯০ ভাগ মানুষের ধর্মীয় শিক্ষা, বিশ্বাস, আবেগ ও ঐতিহ্যের সাথে সম্পর্কযুক্ত বিষয়গুলোকে এভাবে নিয়ন্ত্রণ বা বন্ধ করা যায় না। এখন জনপ্রিয় ধর্মীয় বক্তাদের নামে দুর্নীতি ও ধর্মব্যবসার তকমা দিয়ে তাদের মুখ বন্ধ রাখার অপচেষ্টার পেছনে একটি ইসলাম বিদ্বেষী গোষ্ঠির নেপথ্য তৎপরতা ও ষড়যন্ত্র কাজ করছে বলে জনসাধারণের মধ্য থেকেই সন্দেহ ও অভিযোগ উঠেছে। বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মন্তব্যে এর প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে।

ভিন্ন বিষয়কে সামনে এনে চলমান গুরত্বপূর্ণ মূল বিষয়কে আড়াল করার মতলবি প্রচেষ্টা গোয়েবলসীয় প্রপাগান্ডার অন্যতম লক্ষ্য। দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশের নির্বাচনব্যবস্থা ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নিয়ে যখন নতুন চিন্তাভাবনা ও সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে, ঠিক তখন নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে একটি মহল ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের মওকা খুঁজতে শুরু করেছে। দেশে বড় বড় আর্থিক কেলেঙ্কারির কোনোটিরই বিচার বা অর্থ ফিরিয়ে আনার পথে কোনো সাফল্য নেই। ডেস্টিনি, হলমার্ক, বিসমিল্লাহ গ্রæপ, বেসিক ব্যাংক বা বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা নিয়ে যে সব মামলা হয়েছে সেখানেও নানা ধরণের অস্বচ্ছতা ও দূরভিসন্ধিমূলক ফাঁক-ফোঁকড় রয়েছে। দুদকের দায়ের করা অধিকাংশ মামলাই আদালতে খারিজ হয়ে যাচ্ছে। উচ্চ আদালতে দুদকের মামলা খারিজের হার শতকরা ৯৫ ভাগ বলে জানা যায়। দেশের আদালতগুলোতে পুলিশবাদী অধিকাংশ মামলার এই অবস্থা। বছরের পর বছর পার হয়ে যায় পুলিশ তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনা। ফলে দশ-পনের বছরেও মামলা বিচারে গড়ায় না। চাঞ্চল্যকর সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যামামলাটি ১০ বছর পেরিয়ে এলেও ৮৮বার সময় নিয়েও তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে পারেনি পুলিশ। ‘জাস্টিস ডিলেইড জাস্টিস ডিনাইড’ বয়েস বেড়ে মামলার বাদীরা মরে যায় কিন্তু মামলা শেষ হয়না! এটা হচ্ছে বিচারহীনতার সংস্কৃতির আরেক রূপ। সাড়ে ৬ বছর আগে ২০১৬ সালের ফেব্রæয়ারির প্রথম সপ্তাহে বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনা আমরা প্রথম জানতে পারি ফিলিপাইনের একটি পত্রিকা থেকে। বাংলাদেশ ব্যাংক বা বাংলাদেশ সরকারের অর্থমন্ত্রনালয় কি ব্যাপারটা জাতির কাছে গোপণ রাখতে চেয়েছিল? সন্দেহ করার যথেষ্ট কারণ আছে। ঘটনার তিন বছর পর বাংলাদেশ ব্যাংক নিউ ইয়র্কের আদালতে চুরি হয়ে যাওয়া টাকা উদ্ধারে যে মামলা করেছিল গত মাসে সেই মামলাটি নাকি খারিজ হয়ে গেছে। এ সংবাদটিও বাংলাদেশ ব্যাংক বা দেশের সরকারি সুত্রে পাওয়া যায়নি। দেশের গণমাধ্যমে যে সংবাদটি এসেছে তার সুত্রও ফিলিপাইনের গণমাধ্যম। সুইফ্ট কোড হ্যাক করে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ থেকে কোটি কোটি ডলার চুরির মত বিরল ও চাঞ্চল্যকর ঘটনার মামলাটির দিন-তারিখ কি বাংলাদেশ ব্যাংক বা দেশের গণমাধ্যমের কর্তারা জানতেন না। বিশ্বের অর্থনৈতিক রাজধানী হিসেবে পরিগণিত নিউইয়র্কে দেশের বেশিরভাগ টিভি চ্যানেল এবং প্রথম সারির সংবাদপত্রের প্রতিনিধি রয়েছে। অথচ তারা কেউই এ বিষয়ে কোনো তথ্য পরিবেশন করতে পারল কেন? মুক্ত গণমাধ্যম ও অবাধ তথ্য প্রবাহ ছাড়া দুর্নীতিমুক্ত গণতান্ত্রিক দেশ বিনির্মান করা অসম্ভব।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সুইফ্টকোড হ্যাক করে শত শত কোটি ডলার হাতিয়ে নেয়ার সব আয়োজনই শেষ করেছিল হ্যাকাররা। একটি প্রতিষ্ঠানের নামের বানান ভুল এবং জুপিটার নামের আরেকটি প্রতিষ্ঠানের নাম থাকায় ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক সন্দেহবশত টাকা ছাড় আটকে দেয়ায় শতকোটি ডলার বেহাত হওয়া থেকে রক্ষা পায়। বেহাত হয়ে যাওয়া প্রায় ১০ কোটি ডলারের মধ্যে পৌনে দুইকোটি ডলার ফেরত আনতে পারলেও অবশিষ্ট্য টাকার জন্য নিউইয়র্কের আদালতে মামলা করেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। কিন্তু এখানেও দুদক বা পুলিশ বাদী মামলার মত তথ্যগত অস্বচ্ছতা ও দুর্বলতার কারণে মামলাটি খারিজ করে দেয় আদালত। এরপর বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফ থেকে কোনো সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা বা টাকা উদ্ধারে পরবর্তি পরিকল্পনার কথাও তাৎক্ষনিকভাবে জানানো হয়নি। নিউ মার্কেট এলাকায় ছাত্র ও ব্যবসায়ীদের সংর্ঘষের ঘটনায় দোকানের বরাদ্দপত্রে নাম থাকায় যেভাবে বিএনপি নেতা এডভোকেট মকবুল হোসেনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ঠিক একইভাবে দূরবর্তি সম্পর্কের জেরে বিভিন্ন দুর্নীতি মামলায় অনেককেই গ্রেফতার ও অভিযুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের সুইফ্ট কোড হ্যাকিংয়ের মামলায় ব্যাংকের আইটি কনসালটেন্ট ভারতীয় নাগরিক রাকেশ আস্তানাকে জিজ্ঞাসাবাদের আওতায় আনার বদলে তাকেই আবার ঘটনা তদন্তের সাথে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছিল। তৎকালীন ডেপুটি গর্ভনর এসকে সুর চৌধুরীকে দায়িত্ব শেষ হওয়ার পর ব্যাংকের উপদেষ্টা পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছিল। কেন্দ্রীয় ব্যাংকে এমনসব ব্যক্তিদের বিশেষ ক্ষমতা দিয়ে বসানো হয়েছিল যাদের অর্থবিত্ত ও সম্পদের মূল্য গন্তব্য ও ক্ষমতার উৎস ছিল ভারত। পিকে হালদার প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ভারতসহ বিভিন্ন দেশে পাচার করেছেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। স্বচ্ছ তদন্তে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের রিজার্ভ চুরিতে সুইফ্ট কোড হ্যাকিং এবং আলামত বিনষ্ট করাসহ গত এক দশকে ব্যাংকিং খাতের বড় বড় কেলেঙ্কারির সাথে রাকেশ আস্তানাসহ আমাদের দেশের বেশ কিছু ভিভিআইপি ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা বেরিয়ে আসার আশঙ্কা রয়েছে। হয়তো এ কারণেই এসব কেলেঙ্কারির ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার প্রচেষ্টা এখনো অব্যাহত আছে। তবে সব অপরাধিই অপরাধের আলামত রেখে যায়। শেয়ারবাজারে কারসাজির মাধ্যমে হাজার হাজার বিনিয়োগকারিকে নি:স্ব করে দেয়াসহ বড় বড় ব্যাংক ও লিজিং কোম্পানির জালিয়াতির মধ্য দিয়ে দেশের লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। দেশের অর্থনীতিকে চরম ঝুঁকির মধ্যে ঠেলে দেয়া এবং লাখো মানুষের নি:স্ব হয়ে যাওয়া এসব কেলেঙ্কারির হোঁতারা তথাকথিত সুশীল সমাজ ও গণকমিশনের কাছে কোনো সমস্যা নয়! ইসলাম ধর্ম ও মূল্যবোধে বিশ্বাসী অধিকাংশ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য ধর্মীয় বক্তারা এ সময়ে তাদের কাছে গুরুতর সমস্যা হয়ে দেখা দিল কেন? সরকারকে বিষয়ে নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করতে হবে।
[email protected]



 

Show all comments
  • saiful ১৮ মে, ২০২২, ১১:২১ এএম says : 0
    পাচার করা অর্থ ভারতে পাঠিয়েছেন,গ্রেপ্তার হওয়া পি কে হালদারকে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তরে ভারত রাজি হবে না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পি কে হালদার


আরও
আরও পড়ুন