পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির উদ্যোগে গঠিত গণকমিশন দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দেশের ইসলামী বক্তা বা আলোচকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছে। তথাকথিত গণকমিশনের এই তালিকা তৈরি ও অভিযোগকে দেশের আলেম-ওলামারা মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন বলে অভিহিত করেছেন। তারা গণকমিশনের এই অপতৎপরতাকে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, তারা দেশ-জাতি, সমাজ এবং ইসলামের বিরুদ্ধে নেমেছে। ইসলামের প্রচার-প্রসার স্তব্ধ করে দেয়া এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মাদরাসাকে হেয়প্রতিপন্ন করে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করা তাদের অপপ্রয়াসের লক্ষ্য। তারা আলেম-ওলামাকে সরকারের মুখোমুখি দাঁড় করানোরও চক্রান্ত করছে। এর মাধ্যমে তথাকথিত ঘাদানিক তার ইসলামবিদ্বেষী চেহারা উন্মোচিত করেছে। আলেম-ওলামা এবং বিভিন্ন ইসলামী দলের নেতৃবৃন্দ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, সরকারকে কথিত গণকমিশন ও ঘাদানিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। তা নাহলে, ইসলামপ্রিয় তৌহিদী জনতা কঠোর আন্দোলনে নামতে বাধ্য হবে। তারা গণকমিশনের এই অভিযোগকে চ্যালেঞ্জ করে বলেছেন, আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদ, উগ্রবাদ কিংবা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। আলেম সমাজ ওয়াজ নছিহতের মাধ্যমে মানুষকে সুদ, ঘুষ, দুর্নীতিসহ সব ধরনের অপরাধ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে থাকেন। প্রকৃত আলেম-ওলামা দুর্নীতি বা দেশবিরোধী কোনো কাজে জড়িত থাকতে পারে না। ঘাদানিক ‘বাংলাদেশ মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাস তদন্তে গণকমিশন’ গঠন করে ‘বাংলাদেশে মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের ২০০০ দিন’ শীর্ষক শ্বেতপত্র তৈরি করে। ১০০০ মাদরাসা ও ১১৬ জন ওয়ায়েজীনের ওপর তদন্ত করে শ্বেতপত্র তৈরি করা হয়। গত ১২ মার্চ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে এই শ্বেতপত্রের মোড়ক উন্মোচন করেন। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন ও দুদকের কাছে শ্বেতপত্র হস্তান্তর করেন গণকমিশনের চেয়ারম্যান বিচারপতি শামসুদ্দীন চৌধুরী মানিক ও সদস্যসচিব ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ।
দেশ এখন অর্থনৈতিক সমস্যা, মূল্যস্ফীতি, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিসহ নানামাত্রিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। এমন এক কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দেশের আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে দুদকে তথাকথিত গণকমিশনের অভিযোগ দায়ের করার বিষয়টি পর্যবেক্ষকরা ভালো দৃষ্টিতে দেখছেন না। তারা মনে করেন, এ সময়ে একটি ইস্যু বানিয়ে তা সামনে এনে দেশের সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট এবং সামগ্রিক পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলার দুরভিসন্ধি ও মতলবী উদ্দেশ্য রয়েছে গণকমিশনের। গণকমিশন কার্যত দেশের আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে একধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করেছে। বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ঘাদানিক ও গণকমিশনের সঙ্গে যারা জড়িত তারা সবসময়ই আলেম-ওলামা ও ইসলামের বিরুদ্ধে কাজ করে আসছে। যদি তা না হতো, তবে দেশে যে বড় বড় দুর্নীতি হচ্ছে, লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে এবং অসংখ্য প্রভাবশালীর দুর্নীতির খবর বের হচ্ছে, এসবের বিরুদ্ধে কেন তারা তদন্ত করে দুদকে প্রতিবেদন দাখিল করেনি? শুধু আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদের অপবাদ দিয়ে অভিযোগ তুলেছে কেন? আলেম-ওলামা ওয়াজ-মাহফিল করে যে হাদিয়া পায় তাতে কোনো লুকোচুরি নেই। এটা প্রকাশ্য বিষয়। এ নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করা অবান্তর। অন্যদিকে, ঘাদানিক ও গণকমিশনের সাথে যারা জড়িত তাদের আয়ের উৎস কি? তাদের কারো কারো বিরুদ্ধে নানা অনৈতিকতার অভিযোগও রয়েছে। ঘাদানিকের এই নতুন ইস্যু নিয়ে হাজির হওয়া ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের উদ্দেশ্য কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। দেশে এত সমস্যা ও সংকট বিরাজমান, সেদিকে দৃষ্টি না দিয়ে আলেম-ওলামা ও মাদরাসাকে টার্গেট করে এই শ্বেতপত্র প্রকাশ দেশকে অস্থিতিশীল করে তোলার অভিসন্ধিপ্রসূত বলেই অনেকে মনে করছেন। গণকমিশন তদন্ত করার কে? সে কি কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা? ঘাদানিক বা গণকমিশন কি দেশটাকে ভারতের উত্তর প্রদেশের আদিত্যনাথের রাজ্যে পরিণত করতে চায়? সেখানে যেমন মুসলমানদের প্রতিনিয়ত নিপীড়ন-নির্যাতন চালানো হচ্ছে, আমাদের দেশেও কি তেমনি আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে শ্বেতপত্র প্রকাশ করে তাদের নিপীড়নের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা চালানো হচ্ছে? বলার অপেক্ষা রাখে না, দেশের আলেম-ওলামাদের প্রতি দেশের ৯২ ভাগ মুসলমানের শ্রদ্ধা ও ভক্তি রয়েছে। তথাকথিত গুটিকয় জনবিচ্ছিন্ন ব্যক্তির সমন্বয়ে গঠিত ঘাদানিকের কথা ও গণকমিশনের শ্বেতপত্র প্রকাশ যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং ইসলামের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র, তা কারো বুঝতে অসুবিধা হয় না। গণকমিশনের এই শ্বেতপত্র নিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন কেন সক্রিয় হবে ও গরজ দেখাবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। যেখানে দুর্নীতি দমন কমিশন বড় বড় দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে তদন্ত ও ব্যবস্থা নিতে অপারগ, সেখানে আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসা তার দ্বিমুখী নীতির পরিচয়কে তুলে ধরবে। পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, আলেম-ওলামা ও মাদরাসার বিরুদ্ধে গণকমিশনের শ্বেতপত্র প্রকাশ অন্য কোনো দেশের এজেন্ডার অংশ হতে পারে। শ্বেতপত্রের মোড়ক উন্মোচনের পরপরই সংশ্লিষ্টরা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গণ যখন উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে এবং নানা সংকট ও সমস্যা তীব্র হয়ে উঠেছে, তখন তারা কেন একটি অনাকাক্সিক্ষত ও অনাহূত বিষয় সামনে নিয়ে এলো? দেশের আলেম সমাজ ও সাধারণ মানুষের সেন্টিমেন্টের জায়গায় আঘাত করে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করে আগুনে ঘৃতাহূতি দেওয়ার পাঁয়তারা করছে কেন? সরকারকে এসব বিষয় গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করতে হবে। এ ধরনের স্পর্শকাতর ইস্যু সামনে এনে সরকারকে বেকায়দার মুখোমুখি করা হচ্ছে কিনা, তা নিয়েও ভাবতে হবে।
আমরা দেখেছি, ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে মুসলমানদের ওপর নিপীড়ন ও নির্যাতন চললেও পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানরা ঐক্যবদ্ধ থাকার কারণে তা প্রতিরোধ করতে পেরেছে। জনভিত্তি ও গ্রহণযোগ্যতাহীন ঘাদানিক বরাবরই ইসলাম সম্পর্কে বিরূপ মনোভাব পোষণ করে থাকে। আলেম সমাজকে টার্গেট করে তার এই উদ্যোগ তারই প্রমাণ দেয়। তথাকথিত শাহবাগের আন্দোলনের পেছনে সে সময় কারা জড়িত ও মদদ দিয়েছে, তা কারো অজানা নয়। এ ধরনের উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মতলবী সংগঠনের ইসলামবিরোধী অপতৎপরতাকে রুখতে আলেম সমাজ, ইসলামী দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। ইসলামবিরোধী সংগঠনের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে সতর্ক ও সচেতন থাকতে হবে। কোনো আলেম-ওলামার বিরুদ্ধে যদি আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি বা অন্যকোনো অনাকাক্সিক্ষত কর্মে লিপ্ত থাকার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ থাকে, তাহলে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তদন্ত এবং প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিচার হতেই পারে। এ নিয়ে কারো আপত্তি থাকার কথা নয়। যদি এমন কোনো সংগঠন, যার কর্মকাণ্ডে ইসলাম বিদ্বেষ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্টের তৎপরতা ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি এবং অন্য কারো এজেন্ডা বাস্তবায়নের উদ্দেশ্য স্পষ্ট হয়ে উঠে, তবে তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো ছাড়া উপায় নেই। সরকারকে এ ব্যাপারে সচেতন ও সতর্ক হবে। যারা অহেতুক একটি ইস্যুকে সামনে এনে অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি সৃষ্টি করার পাঁয়তারা করছে, আমরা আশা করব, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে ত্বরিৎ হস্তক্ষেপ করবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।