পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
টাঙ্গাইলে দারুল উলুম কামিল মাদরাসায় হিন্দু ধর্মাবলম্বী বাংলার অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করা নিয়ে দেশের আলেম-ওলামা, বিভিন্ন ইসলামী দল, প্রতিষ্ঠান এবং ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র নিন্দা, ক্ষোভ, উদ্বেগ ও প্রতিবাদের সঞ্চার করেছে। মাদরাসায় কেন একজন হিন্দু অধ্যাপককে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল করা হয়েছে এবং এর পেছনে কি উদ্দেশ্য রয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। মাদরাসা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য বিশেষায়িত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এখানে অন্য কোনো ধর্মাবলম্বী শিক্ষক বা প্রিন্সিপাল, তিনি যত বড় পন্ডিত হোন না কেন, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। ইসলামী পন্ডিত ও আলেম-ওলামারা প্রতিবাদ করে বলেছেন, এ ধরনের নিয়োগ দিয়ে চরম ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয়েছে। তারা বলেছেন, মাদরাসার প্রিন্সিপালের পদটি কোনো গতানুগতিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পদ নয়। এ পদের সাথে ঈমান জড়িত। আরবী ভাষা জানা, কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও পন্ডিত হওয়া জরুরি। সেই সাথে কোরআন-সুন্নাহর ওপর পরিপূর্ণ আমল থাকা প্রয়োজন। মাদরাসা শিক্ষা ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি পবিত্র ও অন্যতম শ্রদ্ধাস্থল। এমতাবস্থায় একজন হিন্দু ধর্মাবলম্বীকে মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল পদে নিযুক্ত করে ইসলামী শিক্ষা ও কোরআন-সুন্নাহর সাথে চরম ধৃষ্টতা দেখানো হয়েছে। তারা অনতিবিলম্বে এ নিয়োগ বাতিল করার দবি জানিয়েছেন। মাদরাসা শিক্ষকদের একমাত্র সংগঠন জমিয়াতুল মোদার্রেছীনসহ দেশের সকল ইসলামী দল এ ব্যাপারে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ প্রকাশ করেছে।
৯২ ভাগ মুসলমানের এই দেশে মাদরাসা শিক্ষা শত শত বছর ধরে চলে আসছে। সময়ের সাথে সামঞ্জস্য রেখে মাদরাসা শিক্ষার ব্যাপক উন্নয়ন, পরিবর্তন হলেও এ শিক্ষা ব্যবস্থার প্রধান ও নীতিনির্ধারণী পরিষদে সবসময়ই ইসলাম ধর্মাবলম্বী পন্ডিতদের অগ্রাধিকারের বিষয়টি অপরিবর্তিত রয়েছে। মাদরাসায় অন্য ধর্মাবলম্বী, যে বা যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নন, কিংবা কোরআন ও সুন্নাহ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাকে বা তাদের নিয়োগ দেয়ার কোনো যৌক্তিকতা থাকতে পারে না। এ কথা শুধু ইসলাম ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য নয়, অন্য ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। মসজিদের ইমাম যেমন একজন হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বী হতে পারে না, তেমনি হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানদের উপাসনালয়ে কিংবা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের প্রধান মুসলমান বা অন্য কোনো ধর্মের হতে পারে না। সেটা সংশ্লিষ্ট ধর্মাবলম্বীরা গ্রহণ করবে না। এক্ষেত্রে অস্বস্তি ও ও ক্ষোভ সঞ্চার হওয়া স্বাভাবিক। এমনকি মাদরাসায় একজন হিন্দুকে ভারপ্রাপ্ত প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেয়ার বিষয়টিও সচেতন হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের গ্রহণ করার কারণ নেই। তারাও জানে, একজন হিন্দু যেমন ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী নন, তেমনি তার পক্ষে কোরআন ও সুন্নাহ শিক্ষা দেয়ার মতো জ্ঞানবান ও বিশেষজ্ঞ হওয়া সম্ভব নয়। মাদরাসায় ভিন্ন ধর্মাবলম্বী নিয়োগ দেয়া ইসলাম ও মাদরাসা শিক্ষাকে অবজ্ঞা করার শামিল। বলার অপেক্ষা রাখে না, এ সরকারের আমলে একশ্রেণীর তথাকথিত প্রগতিশীল ও নাস্তিক্যবাদী বরাবরই মাদরাসা শিক্ষার বিরোধিতা করে আসছে। মাদরাসা শিক্ষাকে নানা অপবাদ দিয়ে দেশ থেকে তা তুলে দেয়ার কথা বলেছে এবং বলছে। তাদের যত ক্ষোভ ইসলাম, মুসলমান ও মাদরাসা শিক্ষার প্রতি। সরকারও প্রচ্ছন্নভাবে তাদের প্রশ্রয় দিচ্ছে। ফলে মাদরাসা শিক্ষা নিয়ে তথাকথিত প্রগতিশীলরা অনবরত বিদ্বেষ প্রকাশ করে যাচ্ছে। কিছুদিন আগে এই তথাকথিত প্রগতিশীলরা ১১৬ জন আলেমের বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কথা বলে দুর্নীতি দমন কমিশনে আবেদন করেছে। এটা যে মাদরাসা শিক্ষার টুঁটি চেপে ধরা এবং আলেম-ওলামার হেয়প্রতিপন্ন করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ তা দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা ভালোভাবেই অবগত। এই শ্রেণীটি নানাভাবে মাদরাসা শিক্ষা তথা ইসলামী শিক্ষাকে বাধাগ্রস্ত ও বন্ধ করার নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মাদরাসায় হিন্দু প্রিন্সিপাল নিয়োগ দেয়া তারই ধারাবাহিকতার অংশ ছাড়া কিছু নয়। তারা আরো বলেছেন, মাদরাসায় হিন্দু প্রিন্সিপাল নিয়োগ দিয়ে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের সেন্টিমেন্টে আঘাত করা হয়েছে। এটা দেশে বিরাজমান সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করার ষড়যন্ত্রের অংশ। তারা প্রশ্ন তুলেছেন, আমাদের দেশে কি কোরআন-সুন্নাহয় পন্ডিত শিক্ষকের অভাব রয়েছে যে, একজন হিন্দু অধ্যক্ষকে নিয়োগ দিতে হবে? এটা কিছু সংখ্যক কর্মকর্তার বিবেকবর্জিত এবং মাদরাসা শিক্ষা ও ইসলামকে হেয় করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার ষড়যন্ত্র। তারা বলেছেন, ঐ মাদরাসায় যদি যোগ্য কোনো আলোম না থাকে, তাহলে অন্য কোনো আলেমকে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে নিয়োগ দেয়া যেত। উল্লেখ্য, মাদরাসা পাঠ্যসূচিতে সাধারণ শিক্ষা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। তবে কোরআন ও হাদিস শিক্ষাই মূল পাঠ্য বিষয়।
মাদরাসায় ভারপ্রাপ্ত হিন্দু অধ্যক্ষ নিয়োগ নিয়ে দেশের আলেম-ওলামা ও বিভিন্ন ইসলামী দল সর্বোপরি সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষ সৃষ্টি হলেও বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী তা আমলে নিচ্ছেন না। তিনি দেখেও না দেখার ভান করে আছেন। তার এই নীরবতা অস্বাভাবিক ও গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বলা বাহুল্য, এই শিক্ষামন্ত্রীর অধীনে শিক্ষাক্ষেত্রে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। বলা যায়, তার মন্ত্রীত্বকালে মাদরাসা শিক্ষা ও শিক্ষকরা হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে। ইসলামী বিশেষজ্ঞরা এই শিক্ষামন্ত্রীকে অনতিবিলম্বে সরিয়ে দেয়া উচিৎ বলে মনে করেন। শিক্ষামন্ত্রীর শোচনীয় ব্যর্থতার কারণে সরকারের বিশেষে করে প্রধানমন্ত্রীর দুর্নাম হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এদিকে আশু দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন। মাদরাসায় ভারপ্রাপ্ত হিন্দু প্রিন্সিপাল নিয়োগ নিয়ে যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে প্রধানমন্ত্রী জরুরি ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ করবেন বলে আমরা আশা করি। ভবিষ্যতে যাতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি না হয়, সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।