Inqilab Logo

মঙ্গলবার ০৫ নভেম্বর ২০২৪, ২০ কার্তিক ১৪৩১, ০২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

উত্তর কোরিয়ার পরিস্থিতি আসলেই কতোটা বিপদজনক?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১০ মে, ২০২২, ২:৩০ পিএম

দক্ষিণ কোরিয়ায় যখন কট্টরপন্থী নতুন এক প্রেসিডেন্ট দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন তার আগে উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন একের পর এক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছেন। দেশটির সঙ্গে ব্যর্থ পরমাণু আলোচনা এবং তার পরে কয়েক বছর ধরে চলা অচলাবস্থার পর কোরীয় উপদ্বীপে এখন উত্তেজনা ক্রমশই বাড়ছে।

উত্তর কোরিয়ার বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে খুব সামান্যই জানা যায়। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সীমান্ত বন্ধ করে দেওয়ায় লোকজন দেশ ছেড়ে কোথাও যেতে পারছে না, এবং সেকারণে তথ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। তবে যেটা নিশ্চিত করে জানা যায় তা হচ্ছে আন্তর্জাতিক নানা নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও কিম জং-আন পরমাণু অস্ত্র তৈরির করার কাজ অব্যাহত রেখেছেন। তার অস্ত্র ক্রমশই অত্যাধুনিক ও বিপদজনক হয়ে উঠছে।

মার্চ মাসে তারা ২০১৮ সালের সম্মেলনগুলোর পর প্রথমবারের মতো আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালায় যা পূর্বের পরীক্ষিত যেকোনো ক্ষেপণাস্ত্রের চেয়ে বেশি দূরত্ব অতিক্রম করে। পাশাপাশি দুই কোরিয়ার নেতাদের আলিঙ্গন ও করমর্দনের দিন শেষ হয়ে গেছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় নতুন একজন প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন যিনি বেশ কড়া কথাবার্তা বলে থাকেন।

তিনি একজন সাবেক কৌসুলি এবং তার কোনো রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই। সম্প্রতি দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নব-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ইওন সুক-ইওল উত্তর কোরিয়াকে দক্ষিণের "প্রধান শত্রু" বলে উল্লেখ করে দেশটির সামরিক শক্তি বৃদ্ধির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণের ব্যাপারে উত্তর কোরিয়া যদি আন্তরিক হয় তবেই শুধু তিনি তার প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে আলোচনা করবেন। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞই একমত যে উত্তর কোরিয়ার এখন পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ করার কোন ইচ্ছাই নেই।

এধরনের অস্ত্র ত্যাগ করার ফলে কী বিপদ হতে পারে সেটা ইউক্রেনের যুদ্ধে দেখা গেছে এবং উত্তর কোরিয়া এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার অনেক আগেই পরমাণু অস্ত্র পরিত্যাগ না করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। এর ফলে নতুন প্রেসিডেন্ট ইওনের ঘোষিত কৌশল "কাজ করার কোন সম্ভাবনা নেই" বলে মনে করেন যুদ্ধ প্রতিরোধে কাজ করে এমন একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের বিশেষজ্ঞ ক্রিস গ্রিন।

ইওন তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানের সময় বলেছেন উত্তর কোরিয়া তাদের জন্য হুমকি হয়ে উঠলে এবং দেশটি তাদের ওপর হামলা চালাতে যাচ্ছে - এমন কোন ইঙ্গিত পাওয়ার সাথে সাথেই ওই দেশের অস্ত্র ধ্বংস করার জন্য তিনি উত্তর কোরিয়ার ওপর আক্রমণ চালাবেন। এটা দক্ষিণ কোরিয়ার দীর্ঘ দিনের প্রতিরক্ষা কৌশলের অংশ হলেও এই নীতির কথা এর আগে এতো জোরে খুব কমই উচ্চারিত হয়েছে। কারণ এর ফলে উত্তর কোরিয়া যে ক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে সেটা মোটামুটি নিশ্চিত করেই বলা চলে।

গত মাসে উত্তর কোরিয়া তার শক্তি প্রদর্শনের সবশেষ চেষ্টায় সামরিক কুচকাওয়াজে তাদের ক্ষেপণাস্ত্র তুলে ধরেছে। কিম জং-উন সাদা সামরিক ইউনিফর্মে হাজির হয়ে কড়া ভাষায় হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন: কোন শক্তি উত্তর কোরিয়াকে হুমকি দিলে তার "অস্তিত্ব ধ্বংস" হয়ে যাবে। কেউ কেউ তার এই হুঁশিয়ারিকে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে দেওয়া হুমকি বলেও ব্যাখ্যা করেছেন।

উত্তর কোরিয়া স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করছে এবং গতমাসেই তারা প্রথমবারের মতো ইঙ্গিত দিয়েছে যে এসব অস্ত্র পরমাণু অস্ত্র বহনে ব্যবহার করা হতে পারে। এবং এই অস্ত্র দক্ষিণ কোরিয়ার সাথে যুদ্ধে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। উত্তর কোরিয়া যে এখন এরকম একটি পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালাতে পারে তারা লক্ষণও দেখা যাচ্ছে। কিন্তু ক্রিস গ্রিন এখনও বিশ্বাস করেন উত্তর কোরিয়ার প্রধান উদ্দেশ্য টিকে থাকা। "তারা যদি পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করে, যে কোন পরিস্থিতিতে, এর ফলে এই শাসকদের পতন ঘটবে এবং উত্তর কোরিয়া সেটা জানে," বলেন তিনি।

গ্রিন মনে করেন এর পরিবর্তে উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে অস্ত্র প্রতিযোগিতা অব্যাহত থাকবে। উভয়েই তাদের অস্ত্র তৈরি করবে এবং আরো ঘন ঘন এসব অস্ত্রের পরীক্ষা চালাবে। তাদের এসব তৎপরতা যুদ্ধের দিকে যাবে না, তবে এসব করতে গিয়ে কোন এক পক্ষ ভুল হিসেব করে ফেলতে পারে এবং এই মুহূর্তে সেটাই সবচেয়ে বড় বিপদ বলে তিনি মনে করেন। সূত্র: বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উত্তর কোরিয়া


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ