শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
পূর্ব প্রকাশিতে পর
ডানিয়েলের বাবা-মাকে প্রস্তাবটি দেয়া মাত্রই তারা নারাজ হয় এবং অপমানবোধ করে। শেষে ডানিয়েলকে সে স্কুল থেকে সরিয়ে দেশের বাইরে সুদূর আমেরিকায় অন্য এক দূর সম্পর্কের আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। গুনিলা ডানিয়েলকে মনে মনে তার মাতৃত্বের স্থানটিতে জায়গা করে দিয়েছে।
ডানিয়েলের শূন্যস্থান পূর্ণ করা কঠিন হয়ে পড়ে। শেষে গুনিলা স্কুলের চাকরি ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায়, ফলে সাইমন একা হয়ে যায়। সাইমন কেন যেন বাঁধা দিলো না গুনিলার যাবার বেলায়। বরং সেদিন গুনিলাকে বলেছিল, ‘আমি তোমাকে প্রথম দেখেই পছন্দ করেছি, তোমাকে প্রথম দেখার পর বহিঃপ্রকাশ আমার চিত্রাঙ্কন যা দেওয়ালে ঝুলছে। যদি তুমি সুখি হও অন্য কারো সঙ্গে তবে চলে যাও।’
গুনিলা সবকিছুর পরও বাড়ি ছেড়ে চলে গেল। শূন্যতায় ভরা বাড়িতে বসে বসে সাইমন একের পর এক চিত্রাঙ্কনে ভরে ফেলতে লাগলো তার গ্যালারি। সাইমন নামকরা চিত্রশিল্পী, তার খ্যাতি শুধু দেশ নয় বিশ্বজুড়ে জায়গা করে নিয়েছে।
বছরখানেক যেতে হঠাৎ একদিন গুনিলা সাইমনের জীবনে ফিরে এলো, সেই যে এলো আর গেলো না। সাইমন হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। বয়স হয়েছে, কখন শেষ নিঃশ্বাসটুকু বেরিয়ে যায়, এমন অবস্থায় শুয়ে শুয়ে এসব গল্প করছে জেসিকার সঙ্গে। জেসিকা পার্ট টাইম হাসপাতালে জব করে পড়ালেখার ফাঁকে।
জেসিকার শখ চিত্রশিল্পী হবে, সাইমনের মতো একজন চিত্রশিল্পীর সেবা করা, তার জীবনের সমস্ত ভালো-মন্দ, হাসি-কান্না, প্রেম-বিরহের গল্প জানার সৌভাগ্য কয়জনের হয়? জেসিকা স্বাভাবিকভাবে সাইমনের সঙ্গে তার ব্যক্তিজীবনের অনেক কিছু শেয়ার করে। আজ জেসিকার মন খারাপ, খুব খারাপ। সাইমন বিষয়টি লক্ষ্য করেছে কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করছে না।
এদিকে জেসিকাও কিছু বলছে না। একটা সময় সাইমন নিজ থেকেই বহু বছর আগে তার স্ত্রী গুনিলার সঙ্গে মান-অভিমান নিয়ে যে মনোমালিন্য হয়েছিল তার ওপর গল্প করতে শুরু করে। গল্প শুনতে শুনতে কোনো এক সময় জেসিকাও তার ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে সাইমনের সঙ্গে আলোচনা করতে শুরু করে তার বয়ফ্রেন্ডকে নিয়ে। জেসিকার বয়ফ্রেন্ড টমাস, সে একজন নাম করা বুল টামার (নঁষষ ঃধসবৎ)। বুল টামার কী? ষাঁড়ের ঘাড়ে বসে যে ষাঁড়কে নানাভাবে বিরক্ত করে তাকে বুল টামার বলে। একটি নির্দিষ্ট সময় ষাঁড়ের প্রচÐ লাফালাফির পরও যদি বুল টামার ষাঁড়ের ঘাড়ে বসে থাকতে পারে তখন সে জয়ী হয়। এটা ভীষণ একটি ভয়ঙ্কর খেলা। অনেক সময় রাগান্বিত ষাঁড় যখন তার ঘাড় থেকে বুল টামারকে মাটিতে ফেলে তখন শিং বা পা দিয়ে বুল টামারকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করে না।
টমাসের বাবা একজন খ্যাতনামা বুল টামার ছিলেন। দীর্ঘ সময় ষাঁড়ের ঘাড়ে বসে ষাঁড়কে ক্লান্ত করতে যে পারদর্শিতার পরিচয় তিনি দিয়েছেন সেটা ছিল বিরল। তবে অল্প বয়সেই কোনো একদিন ষাঁড়যুদ্ধের ময়দানে ষাঁড়ের শিং-এর গুঁতোয় অকালে মৃত্যুবরণ করেন তিনি। টমাস ঠিক বাবার পেশাটি বেছে নিয়েছে, যা টমাসের মাকে প্রতিনিয়ত স্বামীর অকাল মৃত্যুর কথাই মনে করিয়ে দেয়।
জেসিকা সাইমনের সঙ্গে সমস্ত কথা একের পর এক বর্ণনা করে চলছে। জেসিকা হারাতে চায় না টমাসকে যেমনটি হারিয়েছে টমাসের মা তার স্বামীকে। জেসিকা টমাসকে নিষেধ করেছে সে যেন ষাঁড়যুদ্ধ প্রতিযোগিতা ছেড়ে দেয়। টমাস জেসিকার কথায় রাজি না হওয়ায় সম্পর্কের ইতি টেনেছে সে, যার ফলে জেসিকার মন খারাপ।
সাইমন মন দিয়ে সব কথা শোনার পর শুধু এতটুকুই বলে সেদিন জেসিকাকে, ত্যাগের মধ্যেও রয়েছে জীবনের ভালোবাসা তবে সবাই সেই ত্যাগ স্বীকার করতে পারে না। জেসিকা কাজ শেষে বাড়ি ফিরতে পথে টেলিফোনে জানতে পারে সে নিউইর্য়ক আর্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছে। এটা তার জন্য একটি খুশির খবর।
টমাস যখন তার পেশা থেকে সরতে রাজি হয়নি তখন সে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিউইর্য়কে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। ঘটনাটি টমাসের মা জানতে পারে এবং টমাসকে নতুন করে বোঝাতে চেষ্টা করে। বাবা টমাস, ‘ষাঁড়ের পিঠে বড় জোর আট সেকেন্ড বা তারচেয়ে কিছু বেশি সময় বসে থাকা সম্ভব। কিন্তু জেসিকার সঙ্গে তোমার সারা জীবনের সম্পর্ক। সেখানে থাকবে পরস্পরের গভীর ভালোবাসা। সেটা চিন্তা করে তুমি ষাঁড়যুদ্ধ খেলা ছেড়ে দাও।’ টমাস মায়ের কথা সেদিনও রাখেনি।
যাইহোক চলছে জীবন যার যার গতিতে। জেসিকা নিউইর্য়কে মুভ করেছে। সাইমন পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। মৃত্যুকালে সে তার সমস্ত চিত্রাঙ্কন ডোনেট করেছে এক শর্তে যেটা সাইমনের উকিলই শুধু জানে। (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।