Inqilab Logo

শুক্রবার ১৪ নভেম্বর ২০২৪, ৩০ কার্তিক ১৪৩১, ১২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পাঞ্জাবে রামের সমালোচনা করে বরখাস্ত হলেন শিক্ষিকা

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৬ এপ্রিল, ২০২২, ৪:০২ পিএম

ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষিকা অনলাইন ক্লাসে হিন্দুদের দেবতা রামচন্দ্র সম্পর্কে কিছু সমালোচনামূলক মন্তব্য করার পর কর্তৃপক্ষ তাকে বরখাস্ত করেছে।

লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপিকার লেকচারের ওই অংশটুকু রেকর্ড করে কেউ বা কারা সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে দিয়েছিল - সেটি ভাইরাল হয়ে যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একটি বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে তারা ওই বক্তব্য সমর্থন করে না, এবং ওই অধ্যাপিকাকে অবিলম্বে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছে। এর আগেও ভারতে রামচন্দ্রকে নিয়ে কৌতুক করে স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকিকে হিন্দুত্ববাদীদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছিল।

পাঞ্জাবের ফাগওয়ারাতে লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি বা এলপিইউ ওই রাজ্যের একটি নামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবেই পরিচিত। ওই প্রতিষ্ঠানের একজন ফ্যাকাল্টি গুরসঙ্ঘপ্রীত কাউর গত সপ্তাহে একটি অনলাইন ক্লাস নিতে গিয়ে রামায়ণের চরিত্র রাম ও রাবণের তুলনা করে কিছু মন্তব্য করেছিলেন। কেউ সেই অনলাইন ক্লাসরুমের বক্তৃতা রেকর্ড করে সোশ্যাল মিডিয়াতে ছেড়ে দিলে তা গোটা রাজ্যে নিমেষে ছড়িয়ে পড়ে।

সেই অডিও ক্লিপে অধ্যাপক কাউরকে বলতে শোনা যায়, "রাম কিন্তু মোটেও ভাল লোক নন - বরং সত্যিকারের ভালো লোক ছিলেন রাবণ।" "রামকে তো আমার খুব ধূর্ত মনে হয় - তিনি রীতিমতো পরিকল্পনা করে সীতাকে ফাঁদে ফেলেছিলেন ও তারপর রাবণের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছিলেন। ষড়যন্ত্রটা রামের, অথচ সারা দুনিয়া সেই তাকেই পুজো করছে - আর বলছে রাবণ না কি খারাপ লোক।" ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশে তিনি আরও বলেন, "তোমরা এই ধরনের যুক্তি দেবে - তাহলে মানুষ এই বিষয়গুলো নিয়ে ভাববে।"

গোটা উত্তর ভারতেই রামচন্দ্র হিন্দুদের অন্যতম প্রধান আরাধ্য দেবতা - একজন শিখ অধ্যাপক কীভাবে সেই রামচন্দ্র সম্বন্ধে এমন অবমাননাকর মন্তব্য করতে পারেন, সোশ্যাল মিডিয়াতে সেই প্রশ্ন তুলে বহু লোক মিস কাউরকে আক্রমণ করা শুরু করেন। এরপরই এলপিইউ কর্তৃপক্ষ শনিবার একটি বিবৃতি দিয়ে বলে, ওই অধ্যাপকের যে মন্তব্যে অনেকের ধর্মীয় ভাবাবেগ আহত হয়েছে সেটা পুরোপুরি তার ব্যক্তিগত মতামত - বিশ্ববিদ্যালয় তা কোনও মতেই বিশ্বাস করে না।

এলপিইউকে একটি ধর্মনিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান বলে বর্ণনা করে ওই শিক্ষিকাকে তৎক্ষণাৎ বরখাস্ত করার কথাও জানিয়ে দেওয়া হয়। পাঞ্জাবের একজন ছাত্র নেতা সর্বজিৎ নেগি এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "ওই প্রফেসর ভগবান রাম সম্বন্ধে অত্যন্ত ঘৃণ্য মন্তব্য করেছিলেন এবং রাবণের প্রশস্তি করেছিলেন - যেটা মেনে নেওয়া যায় না।" "কিন্তু এসব ব্যাপারে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্স নীতি নিয়ে চলেছে এবং সঙ্গে সঙ্গে তাকে ছাঁটাই করা হয়েছে - যেটা আমি বলব খুব ভাল পদক্ষেপ।"

রামচন্দ্রের সমালোচনা করে তোপের মুখে পড়া অবশ্য ভারতে নতুন ঘটনা নয় - এমন কী স্ট্যান্ড আপ কমেডির শো-তেও রামকে নিয়ে ঠাট্টা রসিকতা করে গত বছরেই জেল খাটতে হয়েছিল কমেডিয়ান মুনাওয়ার ফারুকিকে। 'মেরা পিয়া ঘর আয়া ও রামজী' নামে বলিউডের একটি জনপ্রিয় গান নিয়ে রসিকতার জেরে ইন্দোরের পুলিশ ফারুকিকে শো-র মাঝপথে থানায় ধরে নিয়ে গিয়েছিল।

এরপর গোটা দেশ জুড়েই তার একের পর এক শো বাতিল হতে থাকে, বাধ্য হয়ে এই পেশা ছেড়ে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন মি ফারুকি। অধ্যাপক গুরসঙ্ঘপ্রীত কাউরের যে মন্তব্য নিয়ে এখন বিতর্ক শুরু হয়েছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে অনেকেই কিন্তু আবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন ভারতের অনেক জায়গায়, বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতে কিন্তু রামের পরিবর্তে রাবণকেই পূজার আসনে বসানো হয়, রাবণকেই দেখা হয় নায়ক হিসেবে। সূত্র: বিবিসি।



 

Show all comments
  • Dr. Miah Muhammad Adel ২৭ এপ্রিল, ২০২২, ৯:৪৬ পিএম says : 0
    একজন লোককে কেমন করে দেবতার আসনে বসায় হিন্দুরা?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ