Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতের আম আদমি পার্টি মুসলিমদের বিরুদ্ধে সুর তুলছে কেনো ?

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ২৫ এপ্রিল, ২০২২, ১:৩৮ পিএম

মুসলিমদের ইস্যুতে আম আদমি পার্টির (এএপি) রাজনৈতিক অবস্থানে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। এতদিন তারা এসব ইস্যুতে সাধারণত চুপ থাকতো এবং দূরত্ব বজায় রাখতো। সেখানে তারা এখন দিল্লির জাহাঙ্গীরপুরীতে হওয়া সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার জন্য বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের দুষছেন! তবে দলের অনেকেই এই পরিবর্তনকে সমর্থন করছেন না। দলের আভ্যন্তরীণ সূত্র বলছে, মূলত জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতি করার লক্ষ্যেই ভারতজুড়ে হিন্দু ভোটারদের কাছে টানার চেষ্টা করছে এএপি।

এর আগেও দেখা গেছে, নাগরিকত্ব সংশোধন আইন নিয়ে ২০১৯ ও ২০২০ সালে শাহীনবাগে মুসলিম নারীদের যে বিক্ষোভ হয়েছিল তা থেকে দূরত্ব বজায় রেখেছে এএপি। গত দুই বছরে মুসলিমদের বিভিন্ন ইস্যুতেই এএপি’র অবস্থান একই ছিল। আবার একই সময়ে দলটি হিন্দুদের কাছে টানতে নিজেদের রাজনীতির ধরণ পাল্টেছে। অযোধ্যায় যে রাম মন্দির নির্মিত হচ্ছে তার আদলে তৈরি মঞ্চে দিওয়ালির বিশাল আয়োজন করেছে।
সর্বশেষ জাহাঙ্গীরপুরী ঘটনার মধ্য দিয়ে তাদের পরিবর্তন একেবারেই স্পষ্ট হয়ে গেলো।
এ দাঙ্গার পর দলটির নেতারা রীতিমত মুসলিমদের আক্রমণ করে বক্তব্য দিয়েছেন। ভারতীয় জনতা পার্টি বা বিজেপি যে কৌশলে মুসলিম সম্প্রদায়কে আক্রমণ করে, এএপিও তাই করছে। সাম্প্রদায়িক ইস্যুতে এএপির এমন ভাষা ব্যবহার তাদের রাজনীতির ধরণে বড় পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত দেয়। জাহাঙ্গীরপুরীর ঘটনা নিয়ে দিল্লির ডেপুটি মুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসোদিয়া বলেন, বিজেপি ভারতজুড়ে বাংলাদেশি নাগরিক এবং রোহিঙ্গাদের স্থায়ী করেছে যাতে দাঙ্গা লাগানো যায়। বিজেপি নেতারা নিজেরাও ওই দুই সম্প্রদায়কে দায়ী করে বক্তব্য দিয়ে থাকেন।

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সিসোদিয়া বলেন, বিজেপির কারণে পুরো ভারতজুড়ে গুণ্ডামি চলছে। গত ৮ বছর ধরে বিজেপি কেনো বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের দেশজুড়ে আশ্রয় দিয়েছে? তাদেরকে আশ্রয় দিয়ে ভারতজুড়ে বিভিন্ন দাঙ্গায় তাদেরকে ব্যবহার করেছে বিজেপি। আম আদমি দলের সিনিয়র নেতারা এখন বলছেন, মূলত ভারতজুড়ে হিন্দু ভোটারদের কাছে টানতেই দলের মধ্যে এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। ভারতে অনেক হিন্দু আছে যারা বেকারত্ব, উন্নয়ন কম হওয়া ও মুদ্রাস্ফীতি নিয়ে সরকারের ওপর অসন্তষ্ট। কিন্তু আদর্শিক ভাবে তারা বিজেপির হিন্দুত্ববাদকে পছন্দ করায় তাদেরকে ভোট দিয়ে যায়। আম আদমি পার্টি এই হিন্দুদের টার্গেট করে নিজেদের ভোট ব্যাংক বড় করতে চায়। গুজরাট ও হিমাচল প্রদেশে এ বছরের শেষে বিজেপির সঙ্গে লড়বে এএপি। সেখানেই বেশি ভোট পেতে এই কৌশল কাজে দেবে বলে বিশ্বাস দলের শীর্ষ নেতাদের।

যদিও দলের আরেক দল নেতা মনে করছেন, এই কৌশল ব্যাকফায়ার বা পাল্টা আঘাত হানতে পারে। কারণ, গুজরাট, কর্ণাটক এবং তেলেঙ্গানায় মুসলিমরা এএপিকে ভোট দিয়ে আসছে। তাই দলটি হিন্দুদের দিকে বেশি ঝুঁকে পড়লে মুসলিমদের ভোট হারানোর ঝুঁকি আছে। আগামি বছর সেখানেও নির্বাচন আয়োজিত হচ্ছে। আর কর্ণাটক ও তেলেঙ্গানায় মুসলিমদের ভোট অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে সিসোদিয়া শাহীন বাগের আন্দোলনকারীদের সমর্থন দেয়ার কথা জানিয়েছিলেন। এরপরই তিনি বিজেপি সমর্থকদের ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন। পরে আম আদমি পার্টি জানায়, শাহীন বাগের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে তাদের কোনো দায়বদ্ধতা নেই। দলের প্রধান এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল একাধিকবার বলেন, তার দল সিএএ’র বিরোধিতা করবে। কিন্তু সেটি আর পরে দেখা যায়নি। উল্টো তিনি বলেন, দিল্লি পুলিশ যদি তার অধীনে থাকতো তাহলে তিনি শাহীনবাগের আন্দোলনকারীদের রাস্তা থেকে হটিয়ে দিতেন। গত বছর ২৫ বছর বয়স্ক রিঙ্কু শর্মা নামের একজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হলে কেজরিওয়াল দাবি করেন, ‘জয় শ্রীরাম’ বলার কারণেই তাকে হত্যা করা হয়েছে। অথচ দিল্লি পুলিশ এমনকি বিজেপিও ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে হামলার সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিল। ২০২১ সালে বিজেপির একটি সমাবেশ থেকে মুসলিমবিরোধী স্লোগান দেয়া হলেও চুপ থাকেন কেজরিওয়াল।

জাহাঙ্গীরপুরীর ঘটনার জন্য বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদের দায়ী করা নিয়ে এএপি দলেরই এক নেতা বলেন, কখনো দলের পক্ষ থেকে রাজনৈতিক ব্লেম-গেম খেলার জন্য কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে আক্রমণ করা হয়েছে বলে তার মনে পড়ে না। তিনি নিজের নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই কথা বলেন। শুধু এএপি নয়, বিজেপিও ওই দাঙ্গার জন্য বাংলাদেশি ও রোহিঙ্গাদেরই দায়ী করছে। ওই দাঙ্গার সময় এবং পরবর্তীতে কোনো এএপি নেতা জাহাঙ্গীরপুরী পরিদর্শন করেননি।

আম আদমি দলের আরেক শীর্ষ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, দলের এই ভাষায় পরিবর্তন আনার সঙ্গে নির্বাচনি রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের দল এখন দেশজুড়ে জনপ্রিয় হচ্ছে। বিজেপিকে ভোট দেয়া অনেকেই এখন চাকরি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আয় এবং জীবন-যাপনের মান নিয়ে অসন্তষ্ট। আম আদমি দলকে অবশ্যই এই ভোটগুলো নিয়ে আসতে হবে।

দলের অনেক নেতাই এই পরিবর্তন নিয়ে খুশি নন। তারা বলছেন, আম আদমি পার্টি জেনে শুনে সাম্প্রদায়িক রাজনীতিতে নামছে। এটি ভয়ানক হতে পারে। কেজরিওয়াল নিজেকে হিন্দুদের মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চাচ্ছেন। কিন্তু ২০২০ সালের নির্বাচনে ওখলা, জাফরাবাদ, সিলামপুর, মাতিয়া মহল এবং মুস্তাফাবাদের মতো মুসলিম প্রধান এলাকাগুলোতে জয় পেয়েছিল আম আদমি পার্টি। সেটি এখন হুমকিতে পড়বে। দ্য প্রিন্টের রিপোর্ট



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ