গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
নিউমার্কেটে একটি শার্টের দোকানে মাসে নয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন মোরসালিন। মঙ্গলবার সকালে নিউমার্কেটে কর্মস্থলের উদ্দেশে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। দুপুরে ইটের আঘাতে আহত হন তিনি।
রাজধানীর নিউমার্কেট এলাকায় ব্যবসায়ী ও ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত দোকান কর্মচারী মো. মোরসালিনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় দুজনের মৃত্যু হলো।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার ভোররাত ৪টা ৩৬ মিনিটে মৃত্যু হয় তার। ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত ডেলিভারিম্যান নাহিদের মৃত্যু হয় মঙ্গলবার রাতে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের সময় নুরজাহান মার্কেটের সামনে ইটের আঘাতে আহত হয়েছিলেন মোরসালিন। পরে শাকিল ও আরেক যুবক রিকশায় করে অচেতন মোরসালিনকে ঢামেক হাসপাতালে নিয়ে যান।
মোরসালিন কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার কালাইনগর গ্রামের প্রয়াত মানিক মিয়ার ছেলে। তিনি রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরের পশ্চিম রসুলপুর এলাকায় পরিবার নিয়ে থাকতেন।
তার স্ত্রীর নাম অনি আখতার মিতু। তাদের হুমাইরা ইসলাম লামহা ও আমির হামজা নামে দুই সন্তান রয়েছে।
ঘটনার দিন মোরসালিনের স্ত্রী মিতু সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, নিউমার্কেটে একটি শার্টের দোকানে মাসে নয় হাজার টাকা বেতনে চাকরি করতেন তার স্বামী। মঙ্গলবার সকালে নিউমার্কেটে কর্মস্থলের উদ্দেশে তিনি বাসা থেকে বের হয়েছিলেন। দুপুরে ইটের আঘাতে আহত হন তিনি।
নিহত মোরসালিনের বড় ভাই নূর মোহাম্মদ বলেন, আমার ভাই মার্কেটে একটি রেডিমেট দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করত। মঙ্গলবার সকালে সংঘর্ষের সময় আমার ভাই গুরুতর আহত হয়। পরে তাকে ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে নিয়ে আসা হয়। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে তাকে জরুরি বিভাগে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়। পরে সেখান থেকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। আজ ভোরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আমার ভাই মারা যায়।
এর আগে সংঘর্ষের ঘটনায় আহত নাহিদ (১৮) নামে এক তরুণ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলবার রাত ৯টা ৪০ মিনিটে মারা যান। তিনি একটি কুরিয়ার সার্ভিসের কর্মী ছিলেন। এছাড়া ঢাকা কলেজের এক শিক্ষার্থী আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি আছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে।
গত সোমবার রাত ১২টার দিকে রাজধানীর নিউ মার্কেট এলাকায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা ধরে চলা এ সংঘর্ষে কয়েকজন শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ টিয়ার শেল ও রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এসময় আহত হন বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও।
মঙ্গলবার সকালে আবারও সংঘর্ষে জড়ান শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরা। মুখোমুখি অবস্থান নিয়ে তারা ইট-পাটকেল ছুড়তে থাকেন। ছাত্রদের অনেকে হেলমেট পরে এবং লাঠি হাতে নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। ব্যবসায়ী-কর্মচারীরাও লাঠিসোটা ও লোহার রড নিয়ে ছাত্রদের ওপর হামলা চালানো শুরু করেন।
বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এ সংঘর্ষ ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে গোটা নিউ মার্কেট ও সায়েন্সল্যাব এলাকায়। থেমে থেমে সারাদিন চলে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এতে শতাধিক শিক্ষার্থী এবং প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী-কর্মচারী আহত হন। দুই শিক্ষার্থীসহ বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হন।
সংঘর্ষের রেশ চলে বুধবার দিনভর। দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেন ব্যবসায়ীরা। বিকেলে ব্যবসায়ীদের বক্তব্য প্রত্যাখান করে শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নামেন। এরপর রাতে তারা সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশের ‘প্রশ্নবিদ্ধ’ ভূমিকায় সংশ্লিষ্ট ডিসি, এডিসি ও নিউ মার্কেট থানার ওসির প্রত্যাহারসহ ১০ দফা দাবি জানান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।