মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
একের পর এক মানবতা ও নৈতিকতাবর্জিত মার্কিন যুদ্ধগুলোর ভুক্তভোগী শুধু সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর সাধারণ মানুষই নয়, সেইসাথে ক্রমেই মার্কিন সেনারাও। যুদ্ধের সহিংসতা ও আত্মদংশন তাদের মানসিক রোগ, মাদকাসক্তি ও অন্যান্য পারিবারিক জটিলতার দিকে ঠেলে দিয়েছে এবং তাদেরকে ধ্বংস করে দিয়েছে। তাদের একজন মার্কিন বিমান বাহিনীর ড্রোন স্কোয়াড রিপারের গোয়েন্দা বিশ্লেষক বেনেট মিলার। মিলার ও তার দল ২০১৯ সালে আফগানিস্তানে এক ব্যক্তিকে উচ্চ-স্তরের তালেবান অর্থদাতা সন্দেহে এক সপ্তাহ ধরে পর্যক্ষেণ করে ড্রোনের মাধ্যমে হত্যা করে। হত্যার এক সপ্তাহ পর তাদেরকে আসল তালেবান অর্থদাতার নাম পাঠিয়ে পুনরায় হত্যার নির্দেশ দেয়া হয়।
প্রাক্তন এই টেকনিক্যাল সার্জেন্ট এবং তার মতো আরো অনেকে প্রতি মাসেই এ ধরনের বেসামরিক হতাহতের ঘটনার মধ্য দিয়ে গেছেন এবং প্রশাসন থেকে তাদের বলা হয়েছে ঘটনাগুলো অবজ্ঞা করে সামনে এগিয়ে যেতে।
মিলার জানান, ‘আমরা ভুল লোককে হত্যা করি।’ তিনি বলেন, ‘প্রথমে এটা আমাকে খুব একটা বিরক্ত করেনি। আমি ভেবেছিলাম এটি খারাপ লোকদের আক্রমণ করার অংশ ছিল।’ কিন্তু এরপর থেকে তিনি আত্মপীড়নে ভুগতে শুরু করেন এবং ক্রমেই নিদ্রাহীন এবং বদমেজাজি হয়ে ওঠেন। মিলার বলেন, ‘আমি এইমাত্র একজনের বাবাকে হত্যা করেছি। আমি তার বাচ্চাদের দেখেছি তার শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলি কুড়াতে। তারপর আমি বাড়িতে গিয়ে আমার নিজের বাচ্চাদের জড়িয়ে ধরেছি। আমি এই অপরাধবোধ বা উদ্বেগের সাথে মোকাবিলা করতে পারিনি যেহেতু এটি সম্ভবত আবার ঘটতে চলেছে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা যা করেছি তা ছিল হত্যা, এবং মনে হয়নি কেউ ধর্তব্যে নিয়েছে।’
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে মিলার ১৫ ঘন্টার নাইট শিফ্ট শেষে বাড়ি ফিরে নিজেকে বেডরুমে লক করে রাখেন, একটি গুলিভর্তি রিভলভার তার মাথায় ঠেকিয়ে তার স্ত্রীকে বলেন যে, তিনি আর এটি নিতে পারবেন না। মিলারকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তার পোস্ট-ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার (পিটিএসডি) ধারা পড়ে, যা কোনো ভয়ঙ্কর ঘটনার দ্বারা উদ্ভূত একটি মানসিক রোগ। মার্কিন ড্রোন ক্রুদের পিটিএসডি এবং আত্মহত্যার চিন্তা সংক্রান্ত এধরণের ঘটনা প্রথাগত মার্কিন সেনাদের তুলনায় অনেক বেশি। এতে কাজের চাপ, ক্রমাগত কাজের সময় পরিবর্তন, নেতৃত্বের সমস্যা এবং যুদ্ধের সহিংসতার অবদান রয়েছে। তবে, সাম্প্রতিক গবেষণায় নেতৃত্বদানকারী মার্কিন বিমান বাহিনীর মনোবিজ্ঞানী ওয়েন চ্যাপেলের মতে সবচেয়ে ক্ষতিকর হল বেসামরিক মৃত্যু।
২০২০ সালে প্রকাশিত একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ৪০ শতাংশ ড্রোন ক্রু এক থেকে পাঁচটি বেসামরিক হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট। সাত শতাংশ ছয় বা তারও বেশি বেসামরিক হত্যার সাথে সংশ্লিষ্ট। বেশ কয়েকজন প্রাক্তন ড্রোন ক্রু সদস্য বলেছেন, এই নিরলস চাপের মধ্যে তারা ভেঙে পড়েছেন। তাদের মদ্যপান এবং বিবাহবিচ্ছেদ নিত্যনৈমত্তিক ঘটনা হয়ে উঠেছে। কেউ কেউ অসংলগ্ন হয়ে কাঁদতে কাঁদতে অপারেশন ফ্লোর ত্যাগ করেন। অন্যরা আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। একটি সমীক্ষার তথ্য বলছে যে, ২০ শতাংশ ননকম্ব্যাট এয়ার ফোর্স কর্মীরা মধ্যে দ্বিগুণ হারে মানসিক চাপে ভুগছেন। বহু ড্রোন ক্রু মন্তব্য করেছেন যে, দূর থেকে হত্যা করা মাটিতে হত্যার থেকে আলাদা, এটি মনে মধ্যে গভীর ক্ষত তৈরি করে।
২০১৯ সালে এয়ার ফোর্স থেকে মাস্টার সার্জেন্ট হিসাবে অবসর নেওয়া একজন ড্রোন সেন্সর অপারেটর নিল শেউনম্যান বলেন, ‘অনেকভাবে এটি আরও তীব্র। একটি ফাইটার জেট মাত্র ২০ মিনিটের জন্য লক্ষ্যবস্তু পর্যবেক্ষণ করে। আমাদের দিন, সপ্তাহ এমনকি মাস পর্যন্ত একটি লক্ষ্যবস্তু পর্যক্ষেণ করতে হয়। আমরা তাকে তার বাচ্চাদের সাথে খেলতে দেখি। আমরা তাকে তার পরিবারের সাথে অন্তরঙ্গ হতে দেখি। আমরা তার পুরো জীবনের উন্মোচন দেখি। আপনি দূরে থেকেও ঘনিষ্ঠভাবে সংযুক্ত। তারপর একদিন, যখন পরিস্থিতিগত সমস্ত শর্ত পূরণ হয়, আপনি তাকে হত্যা করেন। তারপর আপনি মৃত্যুটি পর্যবেক্ষণ করেন। আপনি আহাজারি এবং দাফন চাক্ষুষ করেন।’
ড্রোন যুদ্ধ চালানোর একটি ভাল উপায় হিসেবে পরিচিত, যা হাজার হাজার মাইল দূর থেকে নির্ভুলতার সাথে হত্যা করতে পারে এবং মার্কিন সেনাদের নিরাপদ রাখতে পারে। এটি যা ২০০১ সালে একটি ছোট, উচ্চ-স্তরের লক্ষ্যবস্তু শিকারের জন্য কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত অপারেশন হিসাবে শুরু হয়েছিল। ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে ওবামা প্রশাসন ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান লড়াইয়ের জন্য নিয়মগুলি শিথিল করে। পরের বছর, ট্রাম্প প্রশাসন গোপনে আরও নিয়ম শিথিল করে দেয়। ফলে, গত এক দশকে আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন স্থানে মার্কিন যুদ্ধগুলি তীব্র হওয়ার সাথে সাথে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষার সংক্রান্ত মার্কিন নিয়মগুলি ভেঙ্গে যায়।
দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের সাম্প্রতিক তদন্তে দেখা গেছে যে, মার্কিন বিমান যুদ্ধে নিহত নিরীহ মানুষের সংখ্যা পেন্টাগনের প্রকাশ্যে স্বীকার করা সংখ্যার থেকে চেয়ে বহু বেশি। যে আক্রমণের সিদ্ধান্ত একসময় জেনারেল বা প্রেসিডেন্টের জন্য সংরক্ষিত ছিল, তা কার্যকরভাবে সৈন্যদের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এবং তারা কঠোর গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া ছাড়া প্রায়শই স্কুল, বাজার এবং মহিলা ও শিশুদের বড় দলগুলিকে হতাহত করছে।
একজন মার্কিন ড্রোন ক্রু বলেছেন, তাকে সিরিয়ার একটি নদীর পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়া দুই ব্যক্তির উপর গুলি চালানোর জন্য চাপ দেয়া হয়েছিল এই বলে যে, তারা কাঁধে অস্ত্র বহন করছে, যা ছিল বাস্তবে মাছ ধরার বর্শি। তিনি জানান, তার এক সহযোগী পাইলটকে একজন সন্দেহভাজন ইসলামিক স্টেট যোদ্ধাকে আক্রমণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। সন্দেহভাজন ব্যক্তি একটি ব্যস্ত শহরের রাস্তায় হুইলচেয়ারে বসে থাকা আরেকজনকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছিলেন। নির্দেশ অনুযায়ী তাদের একজনকে হত্যা করা হয়। কিন্তু এতে তিন পথচারীও নিহত হয়। ক্রুরা বেসামরিক হতাহতের প্রতিবেদন দাখিল করেছিল, কিন্তু তদন্ত প্রক্রিয়া এতটাই ত্রুটিপূর্ণ ছিল যে, তারা এর কোনো প্রতিক্রিয়া দেখতে পাননি।
২০১৫ সাল থেকে বিমান বাহিনী ক্রুদের কৌশল এবং কর্মক্ষমতা বাড়ানোর জন্য মনোবিজ্ঞানী ও অপারেশনাল ফিজিওলজিস্ট নিয়োগ করে। তবে ক্রুরা বলেছে যে, এটি খুব কমই কার্যকর। ২০১৮ সালের একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে যে, ড্রোন অপারেটরদের মাত্র ৮ শতাংশ এই পরিষেবা ব্যবহার করেছে, এবং যারা মানসিক যন্ত্রণা ভোগ করছে, তাদের দুই-তৃতীয়াংশ তা গ্রহন করেনি। যুদ্ধের মানসিক ক্ষতগুলি মোকাবেলা করতে ক্রমবর্ধমান সংখ্যক যুদ্ধ-অভিজ্ঞ সৈন্যরা অবৈধ মাদকের দিকে ঝুঁকে পড়েছে। শত শত রিপার মিশনের পর হতাশা এবং নৈতিক সঙ্ঘাতে ভোগা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রাক্তন এয়ার ফোর্স অফিসার অবৈধ মাদকের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা করতে যেয়ে বলেন, ‘এটি কিছুটা আত্ম-ক্ষমা দেয়। এটি একটি বিশাল প্রথম পদক্ষেপ।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।