পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
একটি দেশের রাজনীতি ও অর্থনীতি কিভাবে চলবে, তা তার একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। এক্ষেত্রে যদি অন্য কেউ যেচে বলে এভাবে না ওভাবে চলতে হবে, তবে সে দেশের স্বাধীনভাবে চলার পথে তা অন্তরায় হয়ে উঠে। বাংলাদেশের রাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিদেশিদের মধ্যে মাঝে মাঝে এটা লক্ষ্য করা গেছে। এ ধরনের হস্তক্ষেপের ঘটনা বিরল নয়। স্বাধীনতার পর থেকেই চলে আসছে। সদ্য স্বাধীন হওয়া অর্থনৈতিকভাবে বিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য বন্ধু প্রতিম দেশগুলোর সাহায্য-সহযোগিতা থাকা অস্বাভাবিক কিছু নয়। তবে তা যদি যুগের পর যুগ চলতে থাকে, তখন দেশটির নিজের পায়ে দাঁড়ানো বা আত্মমর্যাদা নিয়ে চলা কঠিন হয়ে পড়ে। এ থেকে বের হওয়ার জন্য যোগ্য নেতৃত্বের প্রয়োজন পড়ে, যে নেতৃত্ব দেশকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে সম্মানজনক অবস্থানে নিয়ে যাবে। এ কাজটি করতে ব্যর্থ হলে, যারা বন্ধু হয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় বা দিয়েছে, তারা পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে কতৃর্ত্ব করতে শুরু করে। দুঃখের বিষয়, স্বাধীনতার ৫০ বছরেও বাংলাদেশ বন্ধুরূপী বিদেশীদের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রভাব থেকে পুরোপুরি বের হতে পারেনি। এ সময়ে যত সরকার ক্ষমতায় এসেছে, তাদের কেউই সুদৃঢ় নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশকে স্বাবলম্বী করে গড়ে তুলতে সমর্থ্য হয়নি। বরং বিদেশীদের সাহায্য-সহযোগিতা ও ঋণের জন্য তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করতে হয়। মুখে মুখে দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির কথা বললেও বিদেশী ঋণ বা সাহায্যেরে ঘেরাটোপ থেকে বের হতে পারেনি। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে ঋণ বা সহায়তা নিতে গিয়ে উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর হাতের মুঠোয় চলে গেছে। এ প্রবণতা যে কতটা ভয়ংকর, তা শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিস্থিতি থেকে স্পষ্ট। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ দেশটি এখন খাদ্য সংকট, উচ্চমূল্যসহ নানা অর্থনৈতিক সংকটে পড়েছে। জনগণ ঘটি-বাটি নিয়ে রাস্তায় নেমে এসেছে। এ অবস্থা হলো কেন? পর্যবেক্ষকরা বলছেন, উন্নয়ন সহযোগী দেশগুলোর ঋণের বা সহায়তার ফাঁদে পড়ে, তার উন্নয়নটি ফাঁকা হয়ে গেছে। ঋণ শোধ করতে করতেই দেউলিয়ার পথে। অবশ্য শ্রীলঙ্কার এই সংকট গত বছর থেকেই শুরু হয়। তখন বাংলাদেশও আর্থিক সহায়তা দেয়। দেখা যাচ্ছে, উন্নয়নশীল দেশতগুলোতে এখন উন্নয়ন সহযোগী দেশের নামে নব্য কাবুলিওয়ালাদের ব্যাপক আগমন ঘটছে। তারা সুন্দর সুন্দর কথা বলে ঋণ দিয়ে এমন এক ফাঁদে ফেলে যে, পরবর্তীতে তাদের ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে অর্থনীতি ফাঁকা হয়ে পড়ে। অনেকে বলছেন, উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তা নিয়ে যেসব বড় বড় প্রকল্প গড়ে তুলছি, তার ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে না আবার আমাদের অবস্থা শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে দাঁড়ায়। সরকার জোর দিয়ে এ আশঙ্কা উড়িয়ে দিলেও বিচক্ষণ ব্যক্তিগণ তা উড়িয়ে দিতে পারছেন না। এর কয়েকটি কারণ রয়েছে, প্রথমত, দেশ থেকে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার হয়ে যাচ্ছে। এ অর্থের মধ্যে দেশের মানুষের ও বিদেশ থেকে ধার করে আনা অর্থ রয়েছে। দ্বিতীয়ত, উন্নয়ন সহযোগী দেশ থেকে ঋণ নিয়ে তা শোধ করা। তৃতীয়ত, দুর্নীতির ব্যাপকতা। চতুর্থ, এসবের প্রতিক্রিয়া নিত্যপণ্যের দামের ওপর পড়েছে। মানুষের আয় কমে গেছে, ব্যয় বেড়ে গেছে। অসংখ্য মানুষ অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করছে। সরকার যতই মাথাপিছু আয় আড়াই হাজারের উপর কিংবা জিডিপি বৃদ্ধির কথা বলুক না কেন, সরকারকে কিন্তু এক কোটি পরিবার তথা পাঁচ কোটি মানুষকে রেশনিং কার্ড দিতে হয়েছে। শত শত টিসিবি’র গাড়ি নামাতে হয়েছে। তাতেও যে স্বস্তি এসেছে, তা বলা যাচ্ছে না। প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের দাবি মোতাবেক মানুষের ক্রয় ক্ষমতা ও মাথাপিছু আয় যদি বেড়ে থাকে, তাহলে সরকারকে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হলো কেন? সরকারের এই রেশনিং ব্যবস্থাই প্রমাণ করে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা কতটা বেড়েছে। এই ৫ কোটির বাইরে আরও কোটি কোটি মানুষ রয়েছে যাদের অবস্থায় বেগতকি। এ অবস্থায়, দেশ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতিতে না পড়লেও তার কাছাকাছি যদি চলে যায়, তাহলে সাধারণ মানুষের জীবনযাপন আরও কঠিন ও দুর্বিষহ হয়ে উঠবে।
দুই.
সরকারের মধ্যে উন্নতি করার মধ্যে এক ধরনের তাড়া রয়েছে। কত দ্রæত অর্থনীতির সূচকগুলোকে ঊর্ধ্বমুখী করা যায়, এ নিয়ে এক ধরনের টেনশন রয়েছে। দেখা যায়, ঊর্ধ্বমুখী না হলেও কিছুদিন পরপর মাথাপিছু আয়, ক্রয় ক্ষমতা, জিডিপি ইত্যাদি অর্থনীতির সূচকগুলো ঊর্ধ্বমুখী বলে ঘোষণা করে দেয়া হয়। বাস্তবাতার সাথে যার ফারাক বিস্তর। এই তাড়াহুড়োর উন্নয়ন করতে গিয়ে সরকার যেখান থেকে পারছে অর্থ জোগাড় করছে। বলা হচ্ছে, পদ্মাসেতুসহ বড় বড় মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে দেশের উন্নয়ন অনেক দূর এগিয়ে যাবে। তবে এ কথা বলা হচ্ছে না, এসব করতে গিয়ে বিদেশী যে সহযোগিতা ও ঋণ নেয়া হয়েছে, তা পরিশোধ করতে গিয়ে কতটা মাশুল দিতে হবে। শ্রীলঙ্কাও উন্নয়ন সহযোগীদের মাধ্যমে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। হাম্বানটোটা বন্দর নির্মাণ থেকে আরও অনেক অর্থনৈতিক প্রকল্প। এসব প্রকল্পের কারণে তো শ্রীলঙ্কার অর্থনীতি আরও বেগবান হওয়ার কথা। তা না হয়ে উল্টো ঋণাত্মক হয়ে পড়ল কেন? কারণ, এসব প্রকল্পে বিদেশি ঋণ সুদে-আসলে শোধ করতে গিয়ে সংকটে পড়ে গেছে। প্রকল্প থেকে ঋণ পরিশোধের মতো আয় হচ্ছে না। বড় বড় প্রকল্পে যে অর্থ বিনিয়োগ হয়, তা উঠে আসতে এবং লাভ করতে অনেক সময় লাগে। তার আগে ঋণ পরিশোধ করতে গিয়ে বিনিয়োগ ও লাভ উঠে আসার পথ সংকুচিত হয়ে পড়ে। ফলে প্রকল্প থেকে যে সুফল পাওয়ার কথা তা পেতে পেতে দেশে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেয়া অস্বাভাবিক নয়। বলা হচ্ছে, পদ্মাসেতু আমাদের নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এটা পুরোপুরি সত্য নয়, এতে চীনসহ অন্যান্য দাতা সংস্থার সহযোগিতা রয়েছে। রূপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র রাশিয়ার বিনিয়োগে হচ্ছে। পায়রা বন্দর, বঙ্গবন্ধু টানেলসহ অন্যান্য প্রকল্পে চীনসহ বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ রয়েছে। দেখা যাচ্ছে, উন্নয়ন সহযোগী ও দাতা সংস্থাদের ঋণ সহযোগিতার মধ্যে আমরা উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হয়েছি। তবে তাদের ঋণ তো শোধ করতে হবে। এ ঋণ শোধ করতে গিয়ে দেখা যাবে মানুষের কাছ থেকে অধিক হারে সরকারকে অর্থ আদায় করতে হবে। এতে মানুষের জীবনে টানাপড়েন সৃষ্টি হবেই। তখন যদি শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হয় তাহলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না। বলা হয়, আমাদের দেশে বিদেশিদের যে ঋণ রয়েছে, মাথাপিছু তার পরিমাণ প্রায় ১৭ হাজার টাকা। আজ যে শিশুটি জন্ম নেবে তাকে এই ঋণ মাথায় নিয়েই জন্ম নিতে হবে। বছর পাঁচেক আগেও এই ঋণের পরিমান ছিল ৫ হাজার টাকা। তার অর্থ হচ্ছে, আমার ধার করে ঘি খাওয়ার মতো উন্নয়ন প্রক্রিয়ার মধ্যে আছি। ধারের মাত্রাও তিন গুণ করে ফেলেছি। অর্থনীতির জন্য তা মোটেও ইতিবাচক নয়। দেখা যাবে, এ ধার শোধ করতে করতেই আমাদের অর্থনীতির গতি স্থবির হয়ে পড়বে। সরকার কিন্তু ফুরফুরে মেজাজেই আছে। তার প্রবণতা এমন, ধার করে ঘি খাও। তারপর কি হবে পরে দেখা যাবে। এ ধরনের প্রবণতা জনগণকে ভয়াবহ সংকটের দিকে ঠেলে দেয়ার শামিল। সরকারের সুবিধাভোগী ধনিক ও আমলা শ্রেণী ইতোমধ্যে বিদেশে বসবাসের স্থায়ী বন্দোবস্ত করে ফেলেছে। দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করে নিয়ে গেছে। তাদের কোনো সমস্যা হবে না। সরকার যারা চালাচ্ছে, তাদেরও কোনো অসুবিধা হবে না। বহাল তবিয়তেই থেকে যাবে। শুধু অকূল পাথারে ভেসে থাকবে দেশের সাধারণ মানুষ। দেশে উন্নয়ন হয়নি এ কথা বলা যায় না। একটি সরকার যখন এক যুগেরও অধিক সময় ধরে ক্ষমতায় থাকে, তখন যদি উন্নয়ন না হয়, তাহলে তো সরকারের মান সম্মান বা জনগণের কাছে জবাব দেয়ার মতো কিছু থাকে না। ফলে কমবেশি উন্নয়ন হয়েই থাকে। বর্তমানে উন্নয়নের ধারণা বদলে গেছে। সরকার উন্নয়ন বলতে কেবল বড় বড় স্থাপনাগত উন্নয়নকে বোঝাতে চায়। আর মাঝে মাঝে মাথাপিছু আয় ও জিডিপি বৃদ্ধির ঘোষণা দেয়া হয়। তবে এসব উন্নয়ন কতটা জনসম্পৃক্ত এবং মানুষ কতটা উপকৃত হবে তা নিয়ে ভাবার অবকাশ রয়েছে। উন্নয়ন বলতে শুধু যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নয়নকে বোঝায় না, মানুষের জীবনমানের উন্নয়ন কতটা হলো সেটাই মূল বিবেচ্য বিষয়। আমরা এখন দেখছি, নি¤œ, নি¤œমধ্যবিত্ত এমনকি মধ্যবিত্ত মানুষ কষ্টে দিনাতিপাত করছে। এখন পেটে যদি খাবার না থাকে তখন শোকেস যত সুন্দর করে সাজানো থাক না কেন, তা ভালো লাগে না। আমাদের উন্নয়নের মূল ধারাটাই হচ্ছে, মনুমেন্টাল বা শোকেস জাতীয়। এতে নান্দনিক দৃশ্য উপভোগ করা যাবে, বিনোদনের খোরাক হবে। সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক ও জীবনমান উন্নয়নে কতটা ভূমিকা রাখবে, তা প্রশ্নের মধ্যেই থেকে যাবে। জুনে পদ্মাসেতু চালু হলে বোঝা যাবে এর প্রভাব সাধারণ মানুষের জীবনে কতটা পড়েছে। যদিও এটা নিশ্চিত, চালু হওয়ার এক মাসের মধ্যেই সরকারের পরিসংখ্যানবিদরা জোর দিয়েই বলবেন, অর্থনীতিতে বা জিডিপিতে এ সেতু এখন বড় ভূমিকা পালন করছে। সমস্যা হচ্ছে, পরিসংখ্যান এখন কেউই বিশ্বাস করতে চায় না। এসব উন্নয়নের যে প্রয়োজন নেই, তা নয়। তবে মানুষের জীবনযাত্রার উন্নয়ন করে যদি এসব উন্নয়ন প্রকল্প করা হতো, তাহলে এগুলো নিয়ে তাদের প্রবল উচ্ছ¡াস থাকত।
তিন.
শ্রীলঙ্কার মতো একটি মধ্যম আয়ের দেশের পরিস্থিতি এমন হবে, তা কল্পনাও করা যায় না। দেশটির মানুষ এখন না খেয়ে থাকছে। খাবারের জন্য আন্দোলন করছে। সরকারের অনেক মন্ত্রী-এমপি পদত্যাগ করেছেন। সরকার কোনোভাবেই পরিস্থিতি সমাল দিতে পারছে না। আর্থিক সংকট চরমে পৌঁছেছে। এখন আর ধার চেয়েও পাচ্ছে না। না পাওয়ারই কথা। ধার করতে করতে দেশটির আর ধার করার জায়গা নেই। ধার শোধ করলে ধার পাওয়া যায়। এখন এ অবস্থাও নেই। সরকারের অবিমৃষ্যকারী এবং অবিবেচনাপ্রসূত চিন্তা একটি দেশকে কত অধঃপতনের দিকে নিয়ে যায়, তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ শ্রীলঙ্কা। ঋণের ফাঁদ যে কত ভয়ংকর এবং একটি দেশকে নিঃস্ব করে দিতে পারে তা শ্রীলঙ্কার দিকে দৃষ্টি দিলেই বোঝা যায়। আমাদের সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে এ বছর দুয়েকটি প্রকল্প উদ্বোধনের আশার দোলনায় দুলছে। ফুরফুরে মেজাজে আছে। যেন এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন হয়ে যাবে। মানুষের যে দুর্দশা-দুর্ভোগ তা আতশবাজি ও বিদ্যুতের ঝলকানিতে হয়তো ভুলিয়ে রাখতে চাইবে। তাতে কি সাধারণ মানুষের ক্ষুধা মিটে যাবে? যাবে না। তাদের দুর্দশা বাড়তেই থাকবে। আরও প্রবল হয়ে দেখা দেবে এসব প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করা যখন শুরু হবে এবং গতি পাবে। যেমনটি ঘটেছে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে। এমন আশঙ্কা একেবারে উড়িয়ে দেয়া যায় না। সদ্য সমাপ্ত সংসদ অধিবেশনে বিরোধী দলও এ আশঙ্কা ব্যক্ত করেছে। বলেছে, দেশে বিদেশি ঋণের পরিমান ৩ লাখ কোটি টাকার বেশি। অর্থাৎ বাজেটের অর্ধেকের বেশি। ঋণ পরিশোধ করতেই বাজেটের বিশাল একটি অংশ চলে যাচ্ছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, বাংলাদেশ স্বাধীনতা অর্জনের ৪৫ বছর পর্যন্ত বিদেশি ঋণ নিয়েছে ৩৮ বিলিয়ন ডলার। আর গত ৫ বছরেই সরকার নিয়েছে ৯০ বিলিয়ন ডলার। বৈদেশিক ঋণ নেয়ার এ এক ভয়াবহ চিত্র। প্রশ্ন আসতে পারে, বাংলাদেশ কি তাহলে শ্রীলঙ্কার মতো ঋণের ফাঁদে পড়তে যাচ্ছে? অর্থনীতিবিদরা এ প্রশ্ন একেবারে উড়িয়ে দিচ্ছেন না। তারা বৈদেশিক ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন। তা নাহলে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে। সরকার এখন হয়তো ‘কিচ্ছু হবে না’ বলে সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দেবে। তবে ঋণের ফাঁদ যে প্রশস্ত হয়ে দেখা দিতে পারে, তার আলামত ইতোমধ্যে দেখা দিয়েছে। দেশের অর্থনীতির জটিল প্যাঁচগোচ সাধারণ মানুষ না বুঝলেও তারা তাদের পকেটের এবং ঘর-সংসারের অর্থনীতি ঠিকই বোঝে। ঠিক মতো স্বচ্ছন্দে খাওয়ার সংস্থান করাই তাদের মূল টার্গেট থাকে। এতে টান পড়লেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে পড়ে। টান পড়ে তখনই যখন আয়ের সাথে ব্যয়ের সংকুলান করতে পারে না। এখন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে কত টাকা লাগবে এ হিসাব করে বাজারে যাওয়া যায় না। আগে মোটামুটি একটি ধারণা থাকত, এত টাকার মধ্যে বাজার হয়ে যাবে। এখন এ হিসাব করা যায় না। জিনিসপত্রের দাম বৃদ্ধিতে মানুষের অর্থের দাম কমে গেছে। তাদের পকেটের এবং সংসারের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদেরকেও ধারদেনা ও ঋণ করতে হচ্ছে। ঋণের ফাঁদে পড়তে হচ্ছে। অনেকের এমন অবস্থা ঋণ নিতে নিতে এখন আর ঋণ করার জায়গা হারিয়ে ফেলেছে। আগের ঋণ পরিশোধ করতে না পারায় পুরনো জায়গা থেকে ঋণ নিতে পারছে না। সরকারও এমন ঋণের ফাঁদে পড়েছে কিনা, তা সরকারই ভালো বলতে পারবে।
চার.
সরকারের উন্নয়নের ক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কার মতোই জনপ্রিয় উন্নয়নমূলক উদ্যোগ নিয়েছে। যেমন পদ্মাসেতু, মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে, কর্ণফুলী টানেল ইত্যাদি। এসব শুনতে খুব ভালো লাগে। এক্সট্রাঅর্ডিনারি ও জনপ্রিয় প্রজেক্ট যেগুলো মানুষের মধ্যে চমক জাগায়। শ্রীলঙ্কাও বাস্তবভিত্তিক অর্থনৈতিক পদক্ষেপ না নিয়ে এমন চমক জাগানিয়া উদ্যোগ নিতে গিয়েই বিপদে পড়েছে। আমরা এখনও এ বিপদে পড়িনি। তবে শঙ্কা জেগেছে। আমরা এখনও বুঝতে পারছি না, দেশ কতটা বৈদেশিক ঋণের ফাঁদে পড়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশের জিডিপির তুলনায় ঋণের পরিমাণ ৩৮ শতাংশ। গত বছরের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশের মোট ঋণের পরিমান ছিল ১১ লাখ ৪৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। এর প্রায় ৩৭ শতাংশ বা ৪ লাখ ২০ হাজার ৩৫৮ কোটি টাকা এসেছে বিদেশি উৎস থেকে। অর্থাৎ বিদেশি ঋণ। আইএমএম-এর হিসাব অনুযায়ী, কোনো দেশের ঋণের পরিমাণ জিডিপির ৫৫ শতাংশের বেশি হলে তা বিপজ্জনক। সরকার যে হারে বিদেশি ঋণ নিচ্ছে তাতে বিপজ্জনক মার্জিনটা খুব বেশি দূরে নয়। আবার যেসব প্রকল্পের জন্য বাণিজ্যিক ভিত্তিতে ঋণ নিয়েছে সেগুলো চালু হওয়ার পর দ্রæত রিটার্ন দিতে পারবে কিনা তার নিশ্চয়তা নেই। যদি প্রত্যাশা অনুযায়ী দিতে না পারে, তাহলেই বিপদ। শ্রীলঙ্কার মতো ঋণের পরিমাণ বাড়তে বাড়তে গভীর খাদে পড়ে যেতে হবে।
[email protected]
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।