Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে বিবিসির বিশ্লেষণ কে হচ্ছেন প্রেসিডেন্ট, কেমন হবে সরকার

প্রকাশের সময় : ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন এখনো ঢের দেরি। সেই নভেম্বরে। তাই বলে শীর্ষস্থানীয় প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ প্রশাসনের নীতি নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী করা যাবে না তেমন কিন্তু নয়। কারণ, এরই মধ্যে প্রকাশিত তাদের সব ভাষণ ও সাক্ষাৎকার জানান দিচ্ছে তাদের আদর্শ, অগ্রাধিকার আর কর্ম-পরিকল্পনার কথা। দেশটির শীর্ষস্থানীয় চার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী টেড ক্রুজ, ডোনাল্ড ট্রাম্প, হিলারি ক্লিনটন এবং বার্নি স্যান্ডার্সের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সরকার কেমন হবে এবং কে হবেন প্রেসিডেন্ট এ নিয়ে বিশ্লেষণ করেছে প্রভাবশালী আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম বিবিসি।
সাম্প্রতিক প্রচার-প্রচারণায় দেখা যাচ্ছে, রিপাবলিকান পার্টির সিনিয়র নেতা রীতিমতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন টেড ক্রুজ; বিশেষ করে তার রাজনৈতিক অনভিজ্ঞতার জন্য তার প্রতি আস্থা রাখতে পারছেন না অনেকেই। কিন্তু টেড ক্রুজও নিরঙ্কুশ সমর্থন পাচ্ছেন না পার্টির কাছ থেকে। কারণ, অনেকের মতে রাজনীতিতে পারদর্শী হলেও কিছুটা একগুঁয়ে স্বভাবের তিনি। তাই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে দলের প্রতি আনুগত্যের চেয়ে তিনি নিজ আদর্শেই অটল থাকবেন বলে অনেকের ধারণা। ফলে এবারের নির্বাচনে ওবামার উত্তরসূরি হলে তিনিই হবেন আধুনিক যুগে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে রক্ষণশীল প্রেসিডেন্ট।
রিপাবলিকান পার্টির ভেতরই অনেক শত্রু রয়েছে ক্রুজের। তাই তৃণমূল সমর্থক ঘাঁটি এবং ডানপন্থী থিঙ্কট্যাঙ্কদের ওপরই তাকে বেশি নির্ভর করতে দেখা যাবে। প্রেসিডেন্ট হলে ডেনাল্ড ট্রাম্পকেও কাজে লাগানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি। ট্রাম্পের সহযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র-মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনাও রয়েছে তার। তার কর্ম-পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে, ফ্ল্যাটের দামের ওপর ১০ শতাংশ কর আরোপ, ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি ছিড়ে ফেলে দেয়া এবং ওবামা প্রশাসনের স্বাস্থ্যসেবা সংস্কার গুটিয়ে আনা ইত্যাদি
আসছে নভেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হলে ডোনাল্ড ট্রাম্পই হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট, যিনি সরকার বা সেনাবাহিনীর দাপ্তরিক পূর্ব-অভিজ্ঞতা ছাড়াই নির্বাচিত। ট্রাম্পের বক্তব্যে তার সম্ভাব্য সরকারের নীতিমালার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। কোটিপতি কার্ল ইকাহনকে অর্থমন্ত্রী এবং ২০০৮ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির ভাইস প্রেসিডেন্ট প্রার্থী সারাহ পালিনকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেয়ার ইচ্ছাও প্রকাশ করেছেন তিনি। এছাড়া বিশ্বখ্যাত ধনী ওয়ারেন বাফেটকে উপদেষ্টা হিসেবেও রাখতে চান তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে কড়াকড়ি আরোপের পক্ষপাতী ট্রাম্প। সীমান্ত দিয়ে যেন মেক্সিকানরা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে না পারে, এর ব্যবস্থা করার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি। একই সঙ্গে ট্রাম্প কট্টর মুসলিমবিদ্বেষীর খেতাবও পেয়েছেন এরই মধ্যে। কোনো মুসলিমকে যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে ঢুকতে দেয়ার নীতির বিরোধিতা করেছেন। তার অগ্রাধিকার বিষয়গুলোর মধ্যে রয়েছে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সংস্কার, সীমান্ত নিরাপত্তা বৃদ্ধি এবং অবৈধ অভিবাসীদের দমন করা।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেটিক পার্টি থেকে আলো ছড়াচ্ছেন হিলারি ক্লিনটন। এ ক্ষেত্রে বর্তমানে যত শীর্ষস্থানীয় প্রার্থী রয়েছেন, তাদের মধ্যে তাকেই সবচেয়ে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট ও তার স্বামী বিল ক্লিনটনের চিফ এক্সিকিউটিভ অফিসার এবং বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করা জন পোডেস্টাকেই নির্বাচনী প্রচারণার চেয়ার হিসেবে নিয়োজিত করেছেন হিলারি। গত বছরের জুনে নির্বাচনী প্রচার শুরুর সময় হিলারি বলেছিলেন, তার ভবিষ্যৎ প্রশাসনের মূল লক্ষ্য থাকবে চারটি লড়াই। সেগুলো হচ্ছেÑ মার্কিনিদের জন্য কার্যকর অর্থনীতি, দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, যুক্তরাষ্ট্রের সম্প্রদায়গুলোকে শক্তিশালীকরণ এবং রাজনৈতিক ত্রুটি দূরীকরণ। সাম্প্রতিক একটি বিতর্কে হিলারি তার ক্ষমতার প্রথম ১০০ দিনে করণীয় তিনটি লক্ষ্য পূরণের কথা জানিয়েছেন। এতে তিনি নতুন চাকরির ক্ষেত্রে তৈরি ও অবকাঠামো উন্নয়ন, ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধি এবং কর্মক্ষেত্রে নারীর সমান বেতনের নিশ্চয়তার কথা বলেছেন। এছাড়া, ওবামার স্বাস্থ্যসেবা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি করতেও ইচ্ছুক তিনি। তার অগ্রাধিকারের মধ্যে থাকছে বিচারব্যবস্থার সংস্কার, উচ্চ শিক্ষায় ব্যয় হ্রাস এবং ব্যাপক অভিবাসন সংস্কার। গত জুলাইয়ে এক টিভি সাক্ষাৎকারে ডেমোক্রেটিক পার্টির মনোনয়নপ্রত্যাশী বার্নি স্যান্ডার্স বলেন, আমার মন্ত্রিসভায় ওয়াল স্ট্রিটের প্রতিনিধি প্রধান হবেন না। আমাদের আশপাশেই অনেক করিৎকর্মা জনসেবক, অর্থনীতিবিদ রয়েছেন, যারা বছরের পর বছর ধরে দেশের মধ্যবিত্ত ও কর্মজীবীদের জন্য চিন্তা করেছেন।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ডেমোক্রেটিক ও রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টরা ধনী ব্যবসায়ীদের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগের রীতি ধরে রেখেছেন। স্যান্ডার্স এই প্রথা ভাঙতে চান। ক্ষমতায় বসার প্রথম ১০০ দিনে সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার আইন পাস, ঘণ্টায় ন্যূনতম মজুরি ১৫ ডলারে উন্নীতকরণ এবং অবকাঠামোতে বিনিয়োগ বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আমার ক্ষমতার প্রথমদিকের দিনগুলোতে মার্কিনীদের একত্র করতে চাই। আমরা মধ্যবিত্তদের অবক্ষয় রোধ করতে চাই। আমরা এমন একটা সরকার চাই, যেটা শুধু বৃহৎ প্রতিষ্ঠানের জন্য নয়, দেশের সব মানুষের জন্যই কাজ করবে। তার অগ্রাধিকারের মধ্যে রয়েছে ধনীদের ওপর করের পরিমাণ বৃদ্ধি, বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভেঙে ছোট করা এবং উচ্চ শিক্ষা সব মার্কিনীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া ইত্যাদি। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: য


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ