মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ক্রামাটরস্ক রেলস্টেশনে তোচকা-ইউ ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জন্য ইউক্রেনের নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া। যদিও হামলার পর পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়াকেই এর জন্য দুষেছে। তবে রাশিয়া স্পষ্ট করে জানিয়েছে যে, এ হামলা তারা চালায়নি। এমনকি যে রকেট সেখানে পড়েছে সেটি তারা ব্যবহারই করে না। এর একদিন পর রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে হামলার নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দেয়া হয়। একইসঙ্গে পশ্চিমা দেশগুলোকে ইউক্রেনকে অস্ত্র না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়।
এদিকে রাশিয়ার তদন্ত কমিটি ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর ছোঁড়া একটি তোচকা-ইউ ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলার ফলে ব্যাপক বেসামরিক হতাহতের ঘটনায় একটি ফৌজদারি মামলা শুরু করেছে। সংস্থাটি একটি বিবৃতিতে একথা জানিয়েছে।
সংস্থাটি এক বিবৃতিতে বলেছে ‘রাশিয়ান তদন্ত কমিটির প্রধান তদন্ত বিভাগ ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একজন ব্রিগেড কমান্ডার এবং অন্যান্য অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে একটি ফৌজদারি মামলা শুরু করেছে’। ‘তদন্ত প্রতিষ্ঠিত করেছে যে, তাদের কর্মগুলো ফৌজদারি কোডের ৩৫৬ ধারার অংশ ১-এ প্রদত্ত অপরাধের লক্ষণ’। এ ধারাটি বেসামরিক নাগরিকদের সাথে নিষ্ঠুর আচরণ এবং সশস্ত্র সংঘর্ষে অস্ত্রের ব্যবহার সম্পর্কে যা রাশিয়া স্বাক্ষরিত একটি আন্তর্জাতিক চুক্তিতে নিষিদ্ধ।
বিবৃতি অনুসারে, তদন্তে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে, ইউক্রেনীয় সশস্ত্র বাহিনীর ১৯তম পৃথক ক্ষেপণাস্ত্র ব্রিগেডের সৈন্যরা ব্রিগেডের কমান্ডার এবং ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের ইচ্ছাকৃতভাবে অপরাধমূলক আদেশ কার্যকর করেছিল। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইচ্ছাকৃতভাবে কাজ করে, তারা ডোনেটস্ক পিপলস রিপাবলিকের ক্রামাটরস্ক শহরের একটি রেলস্টেশন এলাকায় বেসামরিক অবকাঠামোর দিকে একটি তোচকা-ইউ কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা নিক্ষেপ করেছে। গোলাগুলির ফলস্বরূপ, শিশুসহ কমপক্ষে ৫২ জন বেসামরিক লোক নিহত হয়েছে এবং কমপক্ষে ১০০ জন বিভিন্ন গুরুতর আহত হয়েছে, সংস্থাটি জানিয়েছে।
তদন্ত কমিটি বলেছে যে, তাদের কাছে তথ্য রয়েছে যে, কর্নেল এফ.এস. ইয়ারোশেভিচ ১৯তম পৃথক মিসাইল ব্রিগেডের কমান্ডার। তদন্তকারীরা ফৌজদারি আদেশ বহনকারী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করার চেষ্টা করছে, এটি বলেছে।
সংস্থাটি বলেছে, ‘ইউক্রেনীয় পক্ষ ইচ্ছাকৃতভাবে মিথ্যা তথ্য প্রচার করেছে যে, শহরে হামলাটি রাশিয়ান সেনাদের দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল’। ‘এ সত্যটি দেখার জন্য একটি ফৌজদারি মামলা খোলা হয়েছে, কারণ এটি রাশিয়ান ফৌজদারি কোডের ২০৭.৩ অনুচ্ছেদে (রাশিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর ব্যবহার সম্পর্কে মিথ্যা তথ্যের জনসাধারণের প্রচার) এর জন্য প্রদত্ত অপরাধের লক্ষণ দেখায়’।
এদিকে ওই হামলায় অন্তত ৫২ বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে বিবিসি। রাশিয়া ও হামলা চালিয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেন ও তার পশ্চিমা মিত্ররা। তবে রাশিয়া বলছে, ওই এলাকায় তাদের হামলার কোনো পরিকল্পনাই ছিল না। এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে নিরপেক্ষ তদন্তের অনুরোধ জানিয়েছে মস্কো। একইসঙ্গে পশ্চিমাদেরকে ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো থামানোর আহ্বান জানিয়েছে রাশিয়া। ওই বিবৃতিতে বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা বন্ধে ইউক্রেনকে অনুরোধ জানানো হয়েছে। ক্রামাটরস্ক ইউক্রেনের দনেৎস্ক অঞ্চলের উত্তরাংশের একটি শহর। এটিকে নিজের অংশ বলে দাবি করে দনেৎস্ক রিপাবলিক। যদিও রাশিয়া ছাড়া কেউ তাদের স্বাধীনতার স্বীকৃতি দেয়নি। বিদ্রোহীরা ওই অঞ্চলের বিশাল এলাকা দখলে নিলেও ক্রামাটরস্ক সবসময় ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণে ছিল।
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ওই স্টেশনে যে তোচকা-ইউ ব্যালিস্টিক মিসাইল আঘাত হেনেছে তা ইউক্রেনের সেনারাই ব্যবহার করছে। যেখান থেকে মিসাইলটি ছোড়া হয়েছে তাও চিহ্নিত করেছে রাশিয়া। এটি ইউক্রেনের দোবরোপোল থেকে ছোড়া হয়েছে যা ইউক্রেনের সেনাবাহিনীদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়ে একে ‘বর্বর’ বলে আখ্যা দিয়ে বলেছে, এই হামলা প্রমাণ করে ডনবাসের সাধারণ মানুষকে রক্ষায় রাশিয়ার অভিযান সঠিক ছিল। এ হত্যাকাণ্ডের জন্য কিয়েভ কর্তৃপক্ষকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে। হামলার পরপরই ইউক্রেনের কিছু কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন যে, রাশিয়ার ইস্কান্দার মিসাইল স্টেশনে আঘাত হেনেছে। পরে সেখান থেকে পাওয়া ছবিতে দেখা যায় হামলা হওয়া মিসাইলটি টচকা-ইউ মডেলের।
শিল্পোন্নত সাইটগুলোতে অপারেশনের পরে মারিউপোলের মুক্তি চূড়ান্ত
মারিউপোল শহর মুক্ত করার জন্য রাশিয়ার সামরিক বিশেষ অভিযান প্রায় শেষের দিকে, তবে, শিল্প সাইটগুলো মুছতে এখনও সমস্যা রয়েছে। ডনেটস্ক পিপলস রিপাবলিকের পিপলস মিলিশিয়ার ডেপুটি হেড এডুয়ার্ড বাসুরিন শুক্রবার একথা বলেছেন।
রাশিয়ার চ্যানেল ওয়ান টেলিভিশনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বসুরিন বলেন, ‘সামগ্রিকভাবে এই শহরটি [মারিউপোল] উচ্ছেদ করার অভিযান প্রায় শেষের দিকে, তবে শিল্প সাইটগুলোর ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা বাকি আছে। তবে শেষ পর্যন্ত সেগুলো সমাধান করা হবে’।
বাসুরিন বলে চলেন, ‘আমরা উত্তর দিকে অগ্রসর হচ্ছি’। ‘আমাদের সৈন্যরা বর্তমানে মেরিঙ্কা অবস্থানের এলাকাগুলোকে মুছে ফেলছে এবং আভদেয়েভকা এবং গোরলোভকার অবস্থানগুলোর মধ্যে আরও এগিয়ে যাচ্ছে’।
চেচেন প্রধান রমজান কাদিরভ আগের দিন ঘোষণা করেছিলেন যে, ডনবাসের মারিউপোল শহরটি ৯৮ শতাংশ মুক্ত করা হয়েছে এবং ইউক্রেনীয় পক্ষ শুধুমাত্র পৃথক দুর্গ বজায় রেখেছে। কাদিরভ তার টেলিগ্রামে লিখেছেন যে, ‘ব্যান্ডারাইটরা আজভস্টাল ফ্যাক্টরিসহ শুধুমাত্র পৃথক সুরক্ষিত স্থাপনাগুলো বজায় রাখছে, যেটিকে নাৎসিরা সত্যিকারের দুর্গে পরিণত করেছে’।
‘আমি একটি ভিডিও লিঙ্ক-আপের মাধ্যমে আমাদের ভাইদের সাথে যোগাযোগ করেছি, কর্ম পরিকল্পনায় আমার প্রস্তাবগুলো উপস্থাপন করেছি এবং যোদ্ধাদের ভাগ্য ও সাফল্য কামনা করছি’ কাদিরভ তার টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে দিনের শুরুতে বলেছিলেন।
বিশেষ অভিযান অদূর ভবিষ্যতে শেষ হবে : ক্রেমলিন
ইউক্রেনে রাশিয়ার ‘বিশেষ অভিযান অদূর ভবিষ্যতে’ শেষ হবে বলে জানিয়েছে ক্রেমলিন। শুক্রবার ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ জানিয়েছেন, রাশিয়ার সামরিক বাহিনী এবং শান্তি আলোচকরা যৌথ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জিত হলেই সামরিক অভিযান বন্ধ হবে। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা অভিযানে ইউক্রেনের বেশ কিছু অঞ্চল দখল করেছে রাশিয়া। আবার রাজধানী কিয়েভের আশেপাশের কিছু এলাকা দখল করলেও পরে সেখান থেকে সরে আসে। সঙ্ঘাত নিরসনে একাধিকবার উভয় পক্ষে বৈঠক হলেও কোনো সমাধান হয়নি। পেসকভ জানান, মস্কো বুঝতে পেরেছে যে, কিছু দেশ যারা ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান গ্রহণের চেষ্টা করেছিল, তাদেরকে বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কারে ভোট দেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয়েছিল।
প্রসঙ্গত, রাশিয়ার সেনাবাহিনী ইউক্রেনে ‘গণহারে এবং পরিকল্পিতভাবে নিপীড়ন এবং মানবাধিকারের লঙ্ঘন’ করেছে জানিয়ে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ বৃহস্পতিবার সংস্থাটির মানবাধিকার কাউন্সিল থেকে রাশিয়াকে বরখাস্ত করেছে। সূত্র : তাস, রাশিয়া টুডে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।