Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

পানি সংরক্ষণ ব্যবস্থাপনায় গুরুত্ব দিতে হবে

| প্রকাশের সময় : ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১২:০২ এএম

সুপেয় পানির উৎসগুলো ক্রমে সঙ্কুচিত ও দূষিত হয়ে পড়ার প্রেক্ষাপটে সহজলভ্য বিকল্প উৎগুলোকে কাজে লাগানোর উপর গুরুত্ব দেয়া এখন অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও বর্ষা মওসুমে পানি ধরে রাখার মাধ্যমে শুকনো মওসুমে ব্যবহারের কথা বলা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এ নিয়ে কার্যকর উদ্যোগ ও কর্মপরিকল্পনা সরকারকেই নিতে হবে। গত সোমবার বিশ্ব পানি দিবসের আলোচনায় ভার্চুয়াল প্ল্যাটফর্মে দেয়া বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্বারোপ করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে পানি সংকটের চিত্র এবং এর সম্ভাব্য সমাধানের দিক নির্দেশনাও রয়েছে। এ প্রসঙ্গে তিনি প্রকৃতিভিত্তিক উন্নয়ন দর্শনের কথা বলেছেন। এতদিন আমরা টেকসই উন্নয়নের কথা শুনে আসছি। প্রকৃতিভিত্তিক উন্নয়নের চিন্তা আরো একধাপ এগিয়ে। প্রকৃতি ধ্বংস করে কোনো উন্নয়নই ফলপ্রসূ হতে পারেনা। বিভিন্ন ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর কণ্ঠে প্রকৃতি সংরক্ষণ ও দূষণ বিরোধী নির্দেশনা লক্ষ্য করা যায়। কৃষিজমি রক্ষা, নদী ও পানি ব্যবস্থাপনার মত ইস্যুতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাগুলো যথাযথ প্রক্রিয়ায় বাস্তবায়নের উদ্যোগ খুব একটা পরিলক্ষিত হয় না।

গত চার দশকে ঢাকা শহরের ভূগর্ভস্ত পানির স্তর ৯ মিটার থেকে ৭৪ মিটার নিচে নেমে গেছে। দেশের সর্বত্রই কমবেশি এ অবস্থা দেখা দিয়েছে। নদ-নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে বড় বড় সেচ প্রকল্পগুলো ভূ-গর্ভের পানির উপর নির্ভরশীল। এতে পানির স্তরে বেশ চাপ পড়ছে। প্রতিদিন কোটি কোটি গ্যালন পানি উত্তোলন করা হলেও প্রাকৃতিক নিয়মে তা পুরণ না হওয়ায় ভূ-গর্ভে পানির রিজার্ভ অস্বাভাবিক হারে কমে গেছে। এর ফলে ঢাকাসহ ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় মধ্যম মাত্রার ভূমিকম্পে বড় ধরণের ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে। চলতি বছরের জাতিসংঘ ওয়াটার ডেভেলপমেন্ট রিপোর্টে বিশ্বের যে দেশগুলো বিপজ্জনকভাবে ভূগর্ভ থেকে পানি উত্তোলন করে চাহিদা মেটাচ্ছে সে তালিকার শীর্ষ ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম রয়েছে। নদীমাতৃক আমাদের দেশ এই তালিকায় থাকার কথা নয়। নদীর পানি সংরক্ষণ ও পানি ব্যবস্থাপনায় চরম ব্যর্থতা রয়েছে আমাদের। একদিকে উজানের ঢলে প্রতিবছরই হাওরের ফসল পানিতে তলিয়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়, অন্যদিকে সেচের অভাবে হাজার হাজার হেক্টর জমি অনাবাদী থাকার চিত্র উঠে আসতে দেখা যায়। গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে ভারতের পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের হাওরে লাখ লাখ একর জমির ধান তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কার কথা বলা হয়েছে। হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধগুলোর নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণে অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যস্থাপনার অভিযোগ দীর্ঘদিনের।

সত্তুরের দশকে ফারাক্কা বাঁধ চালুর মধ্য দিয়ে আমাদের নদ-নদীর উপর যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া পড়া শুরু হয়েছে তা ক্রমেই প্রকট আকার ধারণ করেছে। গত চারদশকে দেশের অধিকাংশ নদীর শাখানদীগুলো নাব্য হারিয়ে শুকিয়ে অস্তিত্বহীন হয়ে পড়েছে। সিকি শতাব্দী আগে ভারতের সাথে গঙ্গার পানি বন্টনের একটি চুক্তি হলেও বাংলাদেশ কখনোই পানির ন্যায্য হিস্যা পায়নি। এরপর গজলডোবা বাঁধ নির্মাণ করে তিস্তার পানি আটকে দেয়া হয়েছে। আন্তর্জাতিক নদী আইন লঙ্ঘন করে আন্তনদীসংযোগ প্রকল্পের আওতায় অভিন্ন নদীর পানি প্রবাহ রুদ্ধ করে বাংলাদেশকে চরম পানি সংকটের দিকে ঠেলে দিচ্ছে ভারত। এসব বিষয়ে যথাযথ কূটনৈতিক উদ্যোগের ঘাটতি রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদের করতে হবে।

কিভাবে পানি সংরক্ষণ করা যায় এ পরিকল্পনা নিতে হবে। বিশুদ্ধ পানির সংকট মোকাবেলায় বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে নদী ব্যবস্থাপনায় ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে পানি সংরক্ষণে বাফারজোন এবং ভূ-গর্ভস্থ পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণের উপর গুরুত্ব দিতে হবে। দেশের পানি ব্যবস্থাপনায় একটি স্থায়ী সমাধানের রূপরেখা হিসেবে গৃহীত ডেল্টা প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করতে হবে। তবে পানি দূষণ রোধ এবং নদ-নদী, খাল ও জলাধার দখলমুক্ত করে ভূ-গর্ভস্থ পানির ব্যবহার ও সেচের পানি সংকট অনেকটা কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও তার বাস্তবায়ন জরুরি।



 

Show all comments
  • Asmot Ali ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০১ এএম says : 0
    বৃষ্টির পানি ধরে রাখতে পারলে খুবই ভাল হতো,সেই উদোুগ নিলে জনগনের অনেক উপকার হবে ইনশাল্লাহ।
    Total Reply(0) Reply
  • Biplob Das Chowdhury ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০১ এএম says : 0
    হাওরের সরকারি বিলগুলো খনন করা প্রয়োজন
    Total Reply(0) Reply
  • MD JINARUL ISLAM ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০৩ এএম says : 0
    মাঝে মাঝেই পানি সংকটে পড়তে হয় নগরবাসীর। ওয়াসাও পানি সরবরাহ দিতে হিমশিম খায়। বাসার জমানো পানিও শেষ হয়ে যায়। তাই সবসময়ই পানি সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। সে ক্ষেত্রে কিছু পদ্ধতি অনুসরণ করলে পানি সংকট দূর হতে পারে।
    Total Reply(0) Reply
  • K M Rashedul Islam ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০৩ এএম says : 0
    মানুষের নানা কর্মকাণ্ডের কারণে দেশে নদ-নদীসহ প্রাকৃতিক জলাশয়ের অস্তিত্ব ক্রমেই বিপন্ন হচ্ছে। ভূগর্ভের পানির স্তর প্রতিনিয়তই নিচে নামছে। এটা আমাদের জন্য অশনিসংকেত।
    Total Reply(0) Reply
  • J Alam Khan ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০৪ এএম says : 0
    আমাদের দেশে বিশুদ্ধ পানি দিন দিন দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠছে। এখানে বিশুদ্ধ পানির প্রধান উৎস ভূগর্ভস্থ পানি। কিন্তু এই পানিও এখন আর নিরাপদ নয়। ভূগর্ভের পানিতে একদিকে রয়েছে আর্সেনিকের আগ্রাসন, অপরদিকে পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। শুষ্ক মৌসুমে বিভিন্ন অঞ্চলে নলকূপে পানি ওঠে না। এই অবস্থায় বিশুদ্ধ পানির জন্য বৃষ্টির পানির ওপর নির্ভর করা ছাড়া আমাদের উপায় নেই। কিন্তু এটা যদি ভবন নির্মাণের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো না বোঝে, তা হলে তা দেশের ভবিষ্যতের জন্য বিপজ্জনক।
    Total Reply(0) Reply
  • MD AZGOR ALI ৬ এপ্রিল, ২০২২, ১১:০৪ এএম says : 0
    ভবিষ্যতে পানির সংকট মোকাবিলা করতে আমাদের এখন থেকেই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু সরকারি ভবন নয়, বেসরকারি ভবনগুলোতেও এই বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের উপায় রাখতে হবে।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পানি

২৫ অক্টোবর, ২০২২
২১ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন