Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ইউক্রেন সঙ্কটে বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি ধ্বংসের মুখে

ইমরান খানের সাথে ফোনালাপ জেলেনস্কির

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০২২, ১২:০০ এএম

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে একটি ফোন কল পেয়েছেন যিনি রাশিয়ার সাথে সামরিক সংঘর্ষের মধ্যে দেশটির চলমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। এদিকে, জাতিসংঘের খাদ্য বিভাগের প্রধান মঙ্গলবার সতর্ক করে দিয়েছিলেন যে, ইউক্রেনের যুদ্ধ বিশ্বব্যাপী প্রায় ১২ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে খাওয়ানোর জন্য বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির প্রচেষ্টাকে ধ্বংস করার হুমকি দিচ্ছে। কারণ ‘বিশ্বের রুটির বাস্কেট’ থেকে ইউক্রেন রুটি বাদ পড়েছে।

ডব্লিউএফপির নির্বাহী পরিচালক ডেভিড বিসলে ১৫ সদস্যের জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে বলেছেন ‘এটি কেবল গতিশীলভাবে ইউক্রেন এবং অঞ্চলকে ধ্বংস করছে না, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমরা যা দেখেছি তার বাইরেও এটি বিশ্বব্যাপী প্রেক্ষাপটে প্রভাব ফেলবে।’ তিনি জানান, জাতিসংঘের খাদ্য-সহায়তা শাখা ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ দ্বারা কেনা শস্যের ৫০ শতাংশ ইউক্রেন থেকে আসে, ফলে এ কর্মসূচি এখন হুমকিন মুখে। বেসলে যোগ করেছেন যে, বেলারুশ এবং রাশিয়া থেকে আসা সার পণ্যের অভাবের কারণে সঙ্কট আরও জটিল হয়েছে। ‘আপনি যদি ফসলে সার না দেন তবে আপনার ফলন কমপক্ষে ৫০ শতাংশ হ্রাস পাবে। তাই আমরা সামনের মাসগুলিতে একটি বিপর্যয়ের উপরে কী কী বিপর্যয় হতে পারে তা দেখছি,’ তিনি কাউন্সিলকে বলেছিলেন।

২৪ ফেব্রুয়ারী প্রতিবেশী ইউক্রেনে রাশিয়ার অভিযান শুরুর আগে, বিসলে বলেছিলেন যে, ‘বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি’ ইতিমধ্যেই উচ্চ জ্বালানী এবং খাদ্যের দাম এবং শিপিং খরচের সাথে লড়াই করছে যা ইয়েমেনের মতো জায়গায় লাখ লাখ মানুষের জন্য রেশন কাটতে বাধ্য করছে। ইউক্রেনের সংঘাতের অবসান না হলে বিসলে হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ‘বিশ্বকে একটি কঠিন মূল্য দিতে হবে এবং আমরা চাই নাক্ষুধার্ত শিশুদের কাছ থেকে খাবার কেড়ে নিতে।’ রাশিয়ার জাতিসংঘের রাষ্ট্রদূত ভ্যাসিলি নেবেনজিয়া অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন যে, ইউক্রেনে মস্কোর পদক্ষেপগুলো এর জন্য দায়ী নয়। বরং রাশিয়ার উপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞাগুলো বিশ্বব্যাপী খাদ্য বাজারে ‘গুরুতর অশান্তি’ সৃষ্টি করেছে।

এদিকে, মঙ্গলবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি অফিসিয়াল টুইটারে নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সাথে ফোনালাপ করেছেন। তিনি বলেন, ‘রুশ আগ্রাসনের বিরুদ্ধে আমাদের সংগ্রামের বিষয়ে কথা হয়েছে। ইউক্রেনের মানুষ শান্তি চায়। এটি আমাদের নিঃশর্ত অগ্রাধিকার।’পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ও একটি বিবৃতি জারি করে বলেছে যে, প্রধানমন্ত্রী দিনের শুরুতে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির কাছ থেকে একটি টেলিফোন কল পেয়েছেন। মঙ্গলবার দুই নেতা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন যখন প্রধানমন্ত্রী ইমরান গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছেন যে, সামরিক সংঘাত অব্যাহত রয়েছে এবং সংলাপ এবং কূটনীতির মাধ্যমে অবিলম্বে শত্রুতা বন্ধ এবং সংঘাতের সমাধানের সমর্থনে ইসলামাবাদের নীতিগত অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

ইমরান খান যোগ করেছেন যে, তিনি ক্রমাগতভাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর উপর সংঘাতের প্রতিকূল অর্থনৈতিক প্রভাব তুলে ধরেছেন, যা তেল ও পণ্যদ্রব্যের ক্রমবর্ধমান দামে প্রকাশিত হয়েছে। কথোপকথনের সময়, খান আন্ডারলাইন করেছেন যে, তিনি দুস্থ ইউক্রেনীয়দের জন্য মানবিক ত্রাণ সহায়তা সহ দুটি বিমান প্রেরণ করেছেন। তিনি ওআইসি-সিএফএম অধিবেশনের কথাও স্মরণ করেন, যা গত সপ্তাহে শেষ হয়েছিল, বলেছেন যে, ইসলামিক দেশগুলি পূর্ব ইউরোপের দেশটিতে সংঘাতের ফলে উদ্ভূত নিরাপত্তা এবং মানবিক পরিস্থিতির অবনতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে।

পাকিস্তানের মতো নির্দলীয় দেশগুলো শত্রুতা বন্ধ করার প্রচেষ্টাকে শক্তিশালী করতে এবং একটি কূটনৈতিক সমাধানের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করার অবস্থানে ছিল, ইমরান খান সংঘাতের অবসানের লক্ষ্যে শান্তিপূর্ণ সংলাপের উপর জোর দেয়ার সময় বলেছিলেন। তিনি পাকিস্তানি ছাত্র ও নাগরিকদের পাশাপাশি দূতাবাসের কর্মীদের সরিয়ে নেয়ার জন্য ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষের সহায়তার জন্যও ধন্যবাদ জানান।

মঙ্গলবার ইস্তাম্বুলে রাশিয়া ও ইউক্রেনের নতুন রাউন্ডের দুই দিনব্যাপী আলোচনা শুরু হয়েছে। প্রথম দিন ৩ ঘণ্টা ধরে চলে আলোচনা শেষে রাশিয়া ও ইউক্রেনের আলোচকরা ফলাফল সম্পর্কে বিশ্বকে অবহিত করার জন্য পৃথকভাবে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় ইউক্রেনের প্রতিনিধিরা সম্ভাব্য ভবিষ্যতের শান্তি চুক্তির ক্ষেত্রে তুরস্কসহ ৮টি দেশকে গ্যারান্টার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। অপরদিকে, রাশিয়া পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এটি ভবিষ্যতের আলোচনার জন্য আস্থা বাড়াতে ইউক্রেনীয় শহর কিয়েভ এবং চেরনিহিভের দিকে সামরিক কার্যকলাপ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করবে। এ শান্তি আলোচনাকে ‘ইতিবাচক’ বলা যেতে পারে বলে মনে করেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। ইউক্রেনে সামরিক অভিযান শুরুর পর এই প্রথম দুই শহর কিয়েভ ও চেরনিহিভ থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয় রাশিয়া।

বার্তা সংন্থা রয়টার্রসের খবরে জানা গেছে, দুই শহরের কাছ থেকে সৈন্য সাময়িকভাবে সরালেও রাশিয়া সম্ভবত ইউক্রেনের অন্যান্য অংশে আক্রমণ আরও জোরদার করতে যাচ্ছে। পশ্চিমা কয়েকটি দেশ থেকে এমন আশঙ্কার কথা জানা যায়। নিজের টেলিগ্রাম অ্যাকাউন্টে জেলেনস্কি বলেছেন, ‘আলোচনার প্ল্যাটফর্ম থেকে আমরা যে ইঙ্গিত পাচ্ছি, তাতে একে ইতিবাচক বলা যেতে পারে। কিন্তু এই ইঙ্গিত রাশিয়ার গোলাবর্ষণে ফাটল তৈরি হয়েছে সেটাকে অপসারণ করবে না।’ ‘তাছাড়া আমাদের ধ্বংসের জন্য যারা হামলা অব্যাহত রেখেছে সে রকম একটি রাষ্ট্রের নির্দিষ্ট প্রতিনিধিদের কথায় বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই,’ তিনি বলেন, ইউক্রেনিয়ানরা নির্বোধ নয়। ইতোমধ্যে বিগত ৩৪ দিনের আগ্রাসন থেকে তারা অনেক কিছু শিখেছে। এ ছাড়া ডনবাসে গত ৮ বছরের যুদ্ধের অভিজ্ঞতা তো আছেই। যে কারণে এই ইঙ্গিতেই একটি সুনির্দিষ্ট ফলাফল বিশ্বাস করা যেতে পারে না। সূত্র : সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, রয়টার্স, ডেইলি পাকিস্তান।



 

Show all comments
  • Mahmud Safa ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৩ এএম says : 0
    ইউক্রেন কে গম চাষ বাদ দিয়ে গাঁজা চাষ করতে বলেন যাতে আমেরিকায় রফতানি করতে পারে ।
    Total Reply(0) Reply
  • Najmul Huda ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৪ এএম says : 0
    সবাই অনাহারে থাকলেও পুটিনের সমর্থন গোষ্ঠী সুদ্ধ খাবার পাবে
    Total Reply(0) Reply
  • মুক্তিকামী জনতা ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৪ এএম says : 0
    অচিরেই এই যুদ্ধ বন্ধ হওয়া জরুরি।
    Total Reply(0) Reply
  • জোবায়ের খাঁন ৩১ মার্চ, ২০২২, ৭:৫৫ এএম says : 0
    মানবকি সংকট তৈরির জন্য পশ্চিমারাই মুল দায়ী।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ইউক্রেন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ